![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডাক্তার দরজা লাগিয়ে চলে যাবার পর আমার রুমে আর তেমন কোন শব্দ নেই। শুধু বাঁদিকে মাথার উপর মিটমিট করে একটুকরো সবুজ আলো অস্ফুট স্বরে অবিরাম কি যেন বলার চেষ্টা করছে... আমি চশমা ছাড়া তা শুনতে পাচ্ছি না। শব্দ বলতে এটুকুই। মৃদু আলোর কিছু ব্যাপার অবশ্য রুমে আছে। ডানদিকের মেঝেটাকে রহস্যময় করে রেখেছে সিপিইউ থেকে বের হয়ে আসা নীল রঙের নরম আলোটা। ওদিকে তাকিয়ে আমি কাঁথার ভেতরে নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিলাম। টাইলসে নীল আলোর রিফ্লেকশন সিলিঙ্গে ছায়া ফেলেছে ফ্যানের তিনটি ডানার। আর সেই ছায়ার কিনার ঘেঁষে খুব সাবধানে দাঁড়িয়ে আছে প্রকান্ড আলমারিটা।
আমি খুঁটিয়ে খুটিয়ে সবাইকে দেখতে থাকলাম- টেবিলের কাঁচে অস্ফুট আলোর ছায়া, মেঝে রাঙ্গানো নীলচে আলো আর দেয়ালে টাঙ্গানো প্রিয়োতির ২টি পেইন্টিং। সবাই কতটা আলাদা আমার থেকে – কতটা অচেনা। আমার চেনা এই জগতের প্রতিটি সত্ত্বা থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন এই আমি- আমার এই ছোট্টো শরীরটার মাঝে। আবেগটাকে আরেকটু উস্কে দিতে বামপাশের দেয়ালে সেঁটে থাকা ত্রিমুখী আলোটা জ্বালালাম। নীল দেয়ালের খাঁজ কাটা নকশায় লাল আলোর প্রতিচ্ছবি তীরের মত বিঁধতে থাকলো আমার চোখের রেটিনায়। নকশাগুলো পাল্টে যেতে থাকলো কোন এক প্রাগৈতিহাসিক সাপের মত। আমি অবাক হয়ে দেয়ালে তাদের গতিপথ দেখতে থাকলাম...
চোখ ব্যাথা করছে। উপলের মত আজ আমারও আর এই সাইকেডেলিক প্যারা নিতে ভাল লাগছে না। আমি আলোটা নেভালাম। আবার প্রশান্তি নেমে এলো আমার দুই চোখে।
আমি জীবিত- অনেকদিন ধরে জীবিত। আমি বেঁচে আছি আজস্র মৃত স্বত্বার মাঝে- হাজার বছর আগের কোন এক বিস্মৃত আগন্তুকের মত।
অর্থ কি এই জীবনের? কি করলে শান্তি পাবে আমার এই সদাচঞ্চল জীবন্ত স্বত্বাটা? জ্ঞান হবার পর থেকে এই প্রশ্নটাই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে অনেকদিন ধরে।
আমি কখনো খুব বেশী বই পড়িনি, পারিনি খুব ভাল কোন ছাত্র হতে, উড়াতে পারিনি দেশের হয়ে বিশ্ব আসরে আমার দেশের পতাকা। আমি কখনো জানিনি উগান্ডার রাষ্ট্রপতির নাম, পাইনি স্রষ্টা প্রদত্ত বিশেষ কোন ক্ষমতা...
আমি শুধু দুটো চোখ পেয়েছি- জীবন্ত এক জোড়া চোখ। যা দিয়ে আমি এই সদা মৃত প্রকৃতিকে দেখেছি ২৪টি বছর ধরে, দেখেছি নিজের অব্যয় অপুর্ণতা আর ধোঁয়াটে অস্তিত্বকে।
আমি বৃষ্টি দেখেছি, দেখেছি ভেজা চশমার মাঝে এ পৃথিবীর অপূর্ব অলীক সৌন্দর্য। আমি জ্যোৎস্না ভরা রাতে হেঁটে গিয়েছি শান্ত সাগরের পাড় ঘেঁষে, আমি পায়ে লাগিয়েছি অতলান্তিকের হিম শীতল পানি... আমি শীতের রাতে পাগল হয়ে শুয়ে থেকেছি অসংখ্য তারার নিচে, আমি বুনেছি অজস্র স্বপ্নের জাল।
আমি ভালবেসেছি- আমি শিহরিত হয়েছি প্রেয়সীর সিক্ত লাজুক চুম্বনে, আমি কেঁপে উঠেছি প্রচন্ড আবেগে, ভেঙ্গে পড়েছি ক্রন্দনে...
আমি আরো কিছুক্ষন ভাবলাম। বুঝলাম ক্ষুদ্র এ জীবনে এগুলোর থেকে বেশী কিছু আসলে পাওয়ার নেই। তাই চাওয়ারও কোন মানে নেই। অর্থহীন এ সমগ্র সৃষ্টির মেলায় এই প্রাপ্তিগুলোই তো বরং অনেক অনেক বেশী...
আমি প্রশান্তিতে চোখ বুদলাম। আমার সারাটি মন ভরে গেল অস্তিত্বের আনন্দে, ভরে গেল একদম কানায় কানায়...
আমি পরিপুর্ণ হলাম আজ, তৃপ্ত হলাম দুই যুগ দীর্ঘ এক লোভাতুর জীবনের শেষে।
এমন সময় আমি দেবদূতের আগমন টের পেলাম। সে আসছে... আমি তা অনুভব করতে পারছি আমার সারা শরীর দিয়ে ... সে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে আমার এই ক্ষুদ্র স্বত্বার দিকে। উজ্জ্বল এক আলোর দরজা পার হয়ে সে ছায়া হয়ে এলো আমার বিছানার পাশে। তার দীর্ঘ রেশমী চুল উড়তে থাকলো শীতল এক স্নিগ্ধ বাতাসের ঝাপটায়। সে আমার বুকে হাত রাখলো। আমি প্রস্তুত হলাম। সে ঝুঁকে এসে চুমু খেলো আমার খসখসে ঠোঁটে। তার চুলের গন্ধে আমি মাতাল হলাম যেন। সে আমার বুকে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো... হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো কোন এক আবেগবান মাঝির হাতের বৈঠার মত। তার সেই হাতরূপী বৈঠার মৃদু ধাক্কায় আমি এগিয়ে যেতে থাকলাম অদ্ভুত এক ঘুমের রাজ্যে... আমি তলিয়ে যেতে থাকলাম প্রশান্তিমাখানো চির অধরা এক ক্লান্তিহীন বিস্মৃতিতে...
হ্যাঁ, আমার জীবন সার্থক ছিল...
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৪
ভেজা চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৪০
মাদিহা মৌ বলেছেন: খুব সুন্দর করে সাজিয়ে আনলেও শেষটা আমার ভালো লাগেনি। ফিনিশিংএ ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, বলেন তো?
পুরো লেখাটাই দ্বিত্ব এসেছে। এডিট করে নেবেন।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬
ভেজা চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ আপু- এডিট করে নিয়েছি।
শেষে আসলে আমি মৃত্যু দেবতাকে আমার মত করে কল্পনা করেছি। মৃত্যু আমাদের কাছে খুব হার্শ এবং ভয়ের একটা ব্যাপার। আর সেজন্যই বোধ করি মৃত্যু দেবতাকেও বেশীরভাগ সময় ওভাবেই দেখানো হয়। আসলে জীবন যেরকম সহজ (আমরা জটিল করে চিন্তা করে জটিল বানাই) মৃত্যুও সেরকম- নিজের আদি অবস্থায় ফেরত যাওয়ার মত- এটাকে খুব মায়াবী একটা ব্যাপার হিসেবে চিন্তা করা যেতে পারে। এই ব্যাপারটাই লেখার চেষ্টা করেছিলাম শেষের দিকে। ভাল লাগেনি- মাই ব্যাড
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২২
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: লেখায় কেমন যেন শীতল একটা আবহ ছিল। ভালো লেগেছে।