![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বড়লোক জগবন্ধুবাবুর ছোটো মেয়ে অনুপমা মাত্র এগারো বছর বয়সেই নভেল পড়ে পড়ে নিজের মাথাটি খেয়েছিল। তার অস্বাভাবিক আচরণে শঙ্কিত-বিচলিত হয়ে অভিভাবকেরা তার বিয়ে ঠিক করে। এদিকে অনুপমা গ্রামের রাখাল মজুমদারের সুদর্শন পুত্র সুরেশকে মনে মনে নিজের স্বামীত্বে বরণ করে তারই প্রেমে কাতর হয়ে অভিভাবকদের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে বসে। কন্যাস্নেহে অন্ধ অনুপমার মাও মেয়ের আবদার মেনে নিলেন। কিন্তু সুরেশ বিএ পাঠরত। তাই অনুপমার মা যখন সুরেশের বাড়িতে বিবাহপ্রস্তাব নিয়ে গেলেন তখন প্রথমে তাঁকে প্রত্যাখ্যাত হতে হল। সুরেশ পরীক্ষার জন্য বিবাহে মত দিল না। তার অভিভাবকেরাও একই গ্রামে ছেলের বিয়ে দিতে চাইলেন না। অগত্যা অনুপমার মা জগবন্ধুবাবুকে বলে কয়ে নগদ পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের রাজি করানোর ব্যবস্থা করলেন। টাকার লোভ বড় লোভ। বিয়ে স্থির হতে বেশি সময় লাগল না।
এদিকে দুর্লভ বসুর একমাত্র পুত্র ললিতমোহন ভালবেসে ফেলেছিল অনুপমাকে। ললিতমোহন একটি অপদার্থ ও মুর্খ। বড়লোক বাপের মৃত্যুর পর তার লেখাপড়ায় ইতি ঘটল। নেশাভাঙ করে তার দিন কাটতে লাগল। এই কারণে গ্রামের কেউই তাকে সুনজরে দেখত না। ললিতমোহন নিজেও জানত, অনুপমার যোগ্য সে নয়। তবু জগবন্ধুবাবুদের বাড়ির পাঁচিলে উঠে অনুপমাকে রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত সে। একদিন অনুপমার বৈমাত্রেয় দাদা চন্দ্রবাবুর চোখে ধরা পড়ে গেল ললিতমোহন। চন্দ্রবাবু তার উপর নানা কারণে ক্ষিপ্ত ছিলেন। তিনি মোকদ্দমা রুজু করে সুকৌশলে ললিতমোহনকে তিন বছরের জন্য জেলে পাঠালেন। এদিকে সুরেশের বিএ পরীক্ষার ফল বের হল। কৃতিত্বের সঙ্গে পরীক্ষায় পাস করে গিলক্রিস্ট স্কলারশিপ পেল সে। তার ইচ্ছে, এখনি বিয়ে না করে এবার বিলেত গিয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু রক্ষণশীল রাখাল মজুমদার বাধ সাধলেন।
সুরেশ বাপের মুখের উপর কথা বলল না বটে, কিন্তু বিয়ের পূর্বমুহুর্তেই সে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। অগত্যা জাতি-কুল-মান রক্ষার্থে পঞ্চাশ বছরের কাশরোগী বুড়ো রামদুলাল দত্তের সঙ্গে অনুপমার বিয়ে দেওয়া হল। অনুপমা আত্মঘাতী হতে গেল। কিন্তু পারল না। রামদুলাল ঘরজামাই হল। কিছুকাল বাদে তার যক্ষ্মারোগ ধরা পড়ল। দুই বছর যেতে না যেতেই তার মৃত্যুতে বিধবা হতে হল অনুপমাকে।
বিধবা হয়ে অনুপমা স্বেচ্ছায় কঠোর বৈধব্য ব্রত পালন করতে লাগল। জগবন্ধুবাবু তার আবার বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু সে বিয়ে করতে চাইল না।
এদিকে তিন বছর পর ছাড়া পেয়ে ললিতমোহন গ্রামে ফিরল না। আরও দুই বছর এখান সেখান ঘুরে যখন সে ফিরে এল তখন জগবন্ধুবাবু বা তাঁর গৃহিনী কেউই জীবিত নেই। চন্দ্রবাবু ও তাঁর গৃহিনী তখন অনুপমার উপর যথেচ্ছ অত্যাচার চালাচ্ছেন। অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেলে একদিন সে নিজের দাদাকে চোর অপবাদ দিতেও কুণ্ঠিত হল না। তখন চন্দ্রবাবুও তাকে পাল্টা কুলটা অপবাদ দিয়ে ঘর থেকে দূর করে দিলেন।
অনুপমা এবার আঁচলে কলসি বেঁধে আত্মহত্যা করতে গেল। ঠিক তখনই ললিতমোহন এগিয়ে এসে তাকে আত্মহত্যা করতে নিষেধ করল। অনুপমাকে সে বিবাহের প্রস্তাবও দিল। কিন্তু সে প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে অনুপমা ঝাঁপ দিল জলে। পরিশেষে , “অনুপমা জ্ঞান হইলে দেখিল সুসজ্জিত হর্ম্যে পালঙ্কের উপর সে শয়ন করিয়া আছে, পার্শ্বে ললিতমোহন। অনুপমা চক্ষুরুন্মীলন করিয়া কাতরস্বরে বলিল, কেন আমাকে বাঁচালে?”
©somewhere in net ltd.