![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঝুঁকিতে কিশোরীরা
বাংলাদেশের বিখ্যাত মনোজগত পত্রিকার সম্পাদক মনো ও যৌনরোগের চিকিৎসক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফিরোজ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মন্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে যে সব পতিতা পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত তাদের অধিকাংশই জোরপূর্বক এ পেশায় নিয়োজিত। সম্প্রতি অনুর্ধ ১৮ বহু কিশোরীই এ পেশায় বাধ্যতামূলকভাবে জড়িত। সমাজের দৃষ্টিতে এ পেশা নিন্দনীয়। তিনি কিশোরী পতিতাদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, একজন কিশোরী পতিতা প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জনের সঙ্গে মিলিত হয়। এর জন্য তারা Oradexon নামে এক ধরনের ওষুধ সেবন করে। এই ওষুধ কিশোরীর শরীরকে সুগঠিত করে। কিন্তু তারা হয়ত জানে না এ ওষুধ কিশোরী শরীরের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন Ordexon সেবন করলে কিডনি ঝুঁকিতে থাকে।
বাংলাদেশে শিশু পতিতাদের প্রবণতা
পতিতাবৃত্তিকে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ ঘৃণার দৃষ্টিতে বিবেচনা করে। কিন্তু এই সভ্য মানুষদের মধ্যে থেকেই আবার বিরাট একটা অংশই রাতের আঁধারে কিশোরী পতিতাদের নিকট নিত্য যাতায়াত করে। ড. লুৎফর রহমান যথার্থই বলেছিলেন, এই দেশে যদি পতিতাদের কোন প্রয়োজন না থাকত তবে অনেক আগেই পতিতাবৃত্তি বন্ধ হয়ে যেত। বাংলাদেশে কি পরিমাণ কিশোরী মেয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত তার যথাযথ পরিসংখ্যান দেয়া সহজ বিষয় নয়। The Global March Against Child Labour-এর বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এ দেশে ১৫-২০ হাজারেরও বেশি কিশোরী পতিতা।
পাচারের শিকার
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘সার্ভে ইন দ্য এরিয়া অব চাইল্ড এ্যান্ড উইমেন ট্রাফিকিং’-এর তথ্য মতে, ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে তিন লাখেরও বেশি বাংলাদেশী শিশু পতিতাবৃত্তিতে রয়েছে। অন্যদিকে প্রায় চল্লিশ হাজারেরও বেশী কিশোরী পাচারের শিকার হয়ে পাকিস্তানে যৌনপল্লীতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পতিতাদের পতিতা না বলে যৌনকর্মী বলে আখ্যায়িত করার দাবি জানিয়েছে। তাদের প্রকাশিত তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১৪টি বৈধ পতিতালয় আছে। হিউম্যান রাইট ওয়াচের সর্বশেষ তথ্য মতে, প্রায় ২০ হাজার পতিতা বসবাস করে বাংলাদেশে। এসব পতিতালয়ে সাধারণত ১৪-১৮ বছরের কিশোরী মেয়েদের চাহিদা বেশি থাকে। পতিতালয়সমূহে কিশোরী মেয়েদের যোগান দেয় মানব পাচারকারীরা।
প্রতিবেদনটিতে কিশোরী পতিতাদের সরাসরি সাক্ষাতকার গ্রহণকালে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ার যে সব সুনির্দিষ্ট কারণ বের করা হয়েছে তা নিম্নরূপ, যথা-
* কিশোরীর উঠতি বয়সে পাচারকারীর প্রেমে পড়ে বিয়ে ও সংসারের প্রত্যাশায় ফাঁদে পা দেয়। পরে পাচারকারী সুযোগ বুঝে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়;
* সৎমার সংসারে নির্যাতিত হয়ে কেউ কেউ দালালদের পাল্লায় পড়ে ঢাকায় চাকরির খোঁজে এসে আটকা পড়ে যায়;
* গৃহপরিচারিকা কিশোরীরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়ি হতে পলায়নকালে ঢাকার রাজপথ, বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন হতে খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়ে যৌনপল্লীর অন্ধকার পেশায় পতিত হয়;
* পাচার হওয়ার পর কিশোরী মেয়েরা বাধ্য হয়ে এ অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বেঁচে থাকে;
* পথে বসবাসকারী গৃহহীন কিশোরীদের বিকল্প পথ খোলা থাকে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ পথে প্রবেশ করে।
দালাল চক্র এবং অসাধু আইনজীবী
বিশাল দালাল চক্র এবং কিছু অসাধু আইনজীবীও জড়িত। যারা শুধু টাকার জন্য পাচার হয়ে যাওয়া অপরিচিত কিশোরীদের মিথ্যা পরিচয়ে বেশি বয়স দেখিয়ে পতিতাবৃত্তির জন্য হলফনামা তৈরি করে দিচ্ছে। দালালদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এক শ্রেণীর আইনজীবী তাদের মুক্ত করে আনতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
কিশোরী পতিতাদের সমস্যা
এ কিশোরীরা স্ট্রিট বেজ প্রস্টিটিউট হলেও তাদের কারও না কারও অধীনে থেকে কাজ পরিচালনা করতে হয়। রাজধানী ঢাকার কিশোরীদের পতিতাবৃত্তিতে হাজারো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যেমন-
* সর্দারণী দ্বারা নির্যাতিত হয় এবং কথা না শুনলে মৃত্যুর ঝুঁকি;
* কিশোরীরা বাধ্যতামূলক দেহব্যবসায় নিয়োজিত কিন্তু টাকা সংগ্রহ করে সর্দারণী;
* চিকিৎসার সুযোগ হতে বঞ্চিত ওরা;
* ওদের খাদ্য তালিকাও খুব বেশি সমৃদ্ধ নয়;
* প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। টাকা না দিলে মস্তানদের নির্যাতন সহ্য করতে হয়;
আইনী প্রতিকার
কিশোরীদের পতিতাবৃত্তি থেকে বাঁচানোর জন্য আইন রয়েছে। দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০-এর ধারা: ৩৬৬, ৩৭২, ২৬৬, ৩৭৩-এ শাস্তি উল্লেখ রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা: ৫-এ বিধান রয়েছে। পাশাপাশি শিশু অধিকার আইন ১৯৭৪-এর ১৭ ধারায় এবং শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ: ১৯, ৩৪-এ কিশোরীদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে কিশোরী পতিতাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তেমন কোন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই। রাজধানী ঢাকায় লালবাতির নিচে অপেক্ষমাণ এ কিশোরীদের অধিকার নিয়ে কারও যেন ভাবার সময় নেই। আইন এখানে অসহায়, রাষ্ট্রতন্ত্রও নীরব। সভ্য জগত ওদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখে।
আঙ্গুল উঁচিয়ে মোটা দাগের বিভাজনের দেয়াল করে দেয়। প্রতিনিয়ত অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকতে হয় ওদের। ওরা মৃত্যুবরণ করলে মাটি দিতে দেয়া হয় না সাধারণ কবরস্থানে এ রকম হাজারো সমস্যার আবর্তে ওদের জীবন। জীবন তো নয়, এ যেন নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে মৃত্যু অবধি ধারাবাহিক সংগ্রামের অসমাপ্ত কাহিনী।
০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১
সাদা-কালো মন বলেছেন: এদের প্রতি সরকারের কোন নজর নেই
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
বকবক প্রধানমন্ত্রী নাকি 'চার্টাড বিমান' দিয়ে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের ভারতের কোন এলাকায় পাঠাচ্ছে? সেই টাকা দিয়ে এসব মেয়েদের পুনর্বাসন করার দরকার ছিল।