নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৌদি আরব ডায়েরি – ২৭ (তায়েফ শহরে কয়েকদিন-২...)

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৫১

১ নভেম্বর বিকাল ৪.৩০ SAPTCO এ বাসে উঠি। যেমন ভীড় আশা করেছিলাম তেমন ভীড় দেখলাম না। তবে জানলাম ২-৩ দিন পর হতেই ভীড় শুরু হবে। অনেকেই তায়েফ হয়ে পালিয়ে হজ্জ্ব করতে যায়। এখানে নতুন নিয়ম হয়েছে ৫ বছরের মাঝে কেউ ২য় বার হজ্জ্ব করতে পারবেনা। অনুমোদিত কাফেলা ছাড়াও হজ্জ্ব করতে দেয়না। তাই যারা ৫ বছরের মাঝে ২য় বার হজ্জ্ব করতে চায় অথবা কম খরচে হজ্জ্ব করতে চায় তারা পালিয়ে হজ্জ্ব করে। হজ্জ্বের সময় মক্কা প্রবেশের পথে পুলিশি চেকিং হয়, তাই এসব অবৈধ হাজীরা পাহাড়ের অলি গলি দিয়ে পুলিশদের ফাঁকি দেয়। হজ্জ্বের অন্যতম প্রধান শর্ত “নিয়্যাত”, এভাবে পালিয়ে হজ্জ্ব করে আল্লাহকে কতটুকু খুশী করা যায় তা আল্লাহই ভালো বলতে পারবেন।



রাত ১২.৩০ এ পৌছার কথা থাকলেও আমরা তায়েফ পৌছলাম ৩.৩০ এর দিকে। বেশ ঠান্ডা লাগছিল। আদিল ভাই আমাদের গাইড মাহমুদ ভাইকে ফোন দিলেন। ১০ মিনিটেই উনি হাজির। বেশ স্মার্ট। উনি আমাদেরকে হোটেলে নিয়ে গেলেন। হোটেলের নামটি শুনেই আমার বেশ ভালো লাগলো। Hotel Casablanca। সুন্দর একটি হোটেল, প্রতি রাতে ১৫০ রিয়াল দিতে হবে। Casablanca (1942) আমার অন্যতম প্রিয় একটি মুভি। বিটিভিতে যখন মুভিটি দেখেছিলাম, এর নায়িকা Ingrid Bergman আমাকে মোহিত করেছিল। আজও তার সেই রূপশ্রী আমাকে আবিষ্ট করে।







Casablanca'র এই গানটি আমাকে এখনও আলোড়িত করে





Hotel Casablanca



রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে ৫ টা বেজে গেল। উঠলাম সকাল ৮.৩০ এ। কিন্তু কেউই ক্লান্ত নই। নতুন একটি শহর দেখব, ঘুরে বেড়াব সেই আনন্দ সবার চোখে মুখে। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় আমাদের সাথে একজন ইংলিশের টিচার আছেন যিনি ঘুরতে পছন্দ করেননা, একা একা থাকেন। তার মতে টাকা খরচ করে ঘুরার কি আছে? ...

কিন্তু আমাদের এ ৬ জনের কোন কিছুতেই “না” নেই – আড্ডাবাজি, খাওয়া, ঘুরাঘুরি সব সমানতালে চলছে- এতেই আমাদের বেঁচে থাকার আনন্দ।



নাস্তা করার জন্য মাহমুদ ভাই আমাদেরকে একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন। অনেকদিন পর পারোটা, ডাল ও ডিমভাজি দিয়ে নাস্তা করলাম।





শহর হতে ৫ মিনিটের ড্রাইভে হযরত আলী (রাঃ) মসজিদ। আমরা প্রথমে সেখানে গেলাম। পাথরের তৈরি ১ তলা ছোট একটি মসজিদ। সাথে মিনার আছে। প্রায় ২০জন একসাথে নামাজ পড়তে পারবে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। মিনারের ভেতর দিয়ে সিড়ি আছে, মিনার চূড়ায় উঠলাম। মিনারের উপরে কিছুটা অংশ ভাঙ্গা।











হযরত আলী (রাঃ) মসজিদ



হযরত আলী (রাঃ) মসজিদের একটু সামনে গেলেই চোখে পড়লো তায়েফের সেই বিখ্যাত বুড়ি'র বাড়ি আর তার বড়ই গাছ। পাশেই একটা মসজিদ আছে যেখানে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নামাজ পড়তে আসতেন। মনকে ভীষণ নাড়া দিল। ছোটবেলায় কত গল্প শুনেছি … দুষ্ট বুড়ি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর যাত্রা পথে গাছের কাটা বিছিয়ে রাখতো, কিন্তু মহানবী (সাঃ) কখনো অভিযোগ করেননি। পরপর কয়েকদিন তিনি দেখলেন পথে কোন কাটা নেই, চিন্তিত হয়ে তিনি বুড়িকে দেখতে যান,নিশ্চয়ই বুড়ি অসুস্থ। গিয়ে দেখেন তাই, বুড়ি বিছানায় পড়ে আছে। মহানবী (সাঃ) তার সেবা করে সুস্থ করে তুললেন। বুড়িতো অবাক ... যাকে রোজ কষ্ট দেই, সেই আমাকে সারিয়ে তুললো? বুড়ি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ইসলাম গ্রহন করে।



মসজিদটি ...



বুড়ির বাড়ি আর মসজিদটি নিতান্তই সাদামাটা ভাবে রয়েছে। এটা যে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন, কোথাও লেখা নেই, কোন সাইন বোর্ড নেই। বর্তমান সরকার এসব নিদর্শন সংরক্ষণ করতে চায় না। এসব স্থানে দর্শনার্থীরা যে আবেগ প্রকাশ করে তা নাকি অনেক সময়ই শিরকের পর্যায়ে পড়ে যায়। তাই সৌদি সরকার ঢালাওভাবে প্রচুর ইসলামী স্থাপনা, নিদর্শন, সাহাবীদের কবর, ঐতিহাসিক পাহাড় নষ্ট করে ফেলেছে।



মসজিদটি বেশ পরিপাটি। কয়েকজন পাকিস্তানিকে দেখলাম আবেগী হয়ে মসজিদের ময়লা পরিস্কার করছে, ঝাড়ু দিচ্ছে।পাশেই বুড়ির বাড়িতে গেলাম। প্রথমেই তার বড়ই (?) গাছটি চোখে পড়লো। এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কালপরিক্রমায় শুকনো কান্ডটাই শুধু আছে। বুড়ির বাসাটিও ভাঙ্গা, তবে স্ট্রাকচার ঠিকই বুঝা যায়।



বড়ই (?) গাছটি



বুড়ির বাড়ির ভেতরে ...



তায়েফে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যখন ইসলাম প্রচারে আসেন তখন তায়েফবাসীরা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে রক্তাক্ত করে ফেলে। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার শরীরের রক্ত মাটিতে পড়তে দেননি, কেননা তা হলে ফেরেশতারা তায়েফকে ধ্বংস করে ফেলত। তারপরও ফেরেশতারা একটি পাহাড়ের পাথর দিয়ে তায়েফবাসীদেরকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। বুড়ির বাড়ি আর মসজিদের পেছনেই পাহাড়টিকে দেখতে পেলাম। তায়েফবাসীদেরকে মারার উদ্দেশ্যে বড় একটি পাথর গড়িয়ে নামছিল, শেষ মূহুর্তে ছোট একটি পাথর দিয়ে তা আটকানো হয়। এখনো পাথর দুটি সেভাবেই আছে।



বুড়ির বাড়ি ও পেছনে সেই পাহাড় ...





এখান হতে আমরা চললাম আল সাফা পাহাড়ে। সেখানে বিভিন্ন হলিডে রিসোর্ট আর পার্ক আছে। সামারে পর্যটকরা সেখানে বেড়াতে আসে। এখন সবকিছুই ফাঁকা, লোকজন তেমন ছিল না। এক যায়গায় উট দেখে আমরা থামলাম। শাকিলা আগেই উটের পিঠে চড়েছিল। আমিতো চড়িনি, সুতরাং এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। এক সৌদি বেদুঈন গান শুনিয়ে আমাদের বেশ আনন্দ দিলো,আমরা ৫ রিয়াল দেই, সে বেশ খুশী। আমি ও শাকিলা উটের পিঠে উঠলাম, ১০ রিয়াল দিতে হবে। সে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। উটের পিঠ হতে নামার পর সৌদি ২০ রিয়াল চেয়ে বসল। সে নাকি জনপ্রতি ১০ রিয়াল বলেছে। কথার মারপ্যাচে অনেক সৌদিই প্রতারনা করে থাকে। শেষে ১৫ রিয়াল দিয়ে মুক্তি পেলাম। সৌদি বলেই তারা যে ভালো মানুষ তা কিন্তু নয়। আমাদের দেখাদেখি মিলন ও লিজাও উটের পিঠে চড়লো।





বিকেলে আমরা দূরে কোথাও যাইনি। আশে পাশেই হেটে বেড়ালাম। আমাদের হোটেলের পাশেই মহানবী (সঃ) এর চাচা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস মসজিদ। বেশ বড়। মসজিদ দেখে, বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম।



আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস মসজিদ



মসজিদের কবরাস্থানে বাংলায় লেখা নির্দেশাবলী



(চলবে)

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৬

শিকদার বলেছেন: প্রত্যেক এপিসোড শেষে আগের এপিসোডের লিংক দিলে অনেক ভাল হয়।

পোস্ট টি অনেক ভাল লেগেছে।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:০৪

মধুমিতা বলেছেন: যেহেতু আমি সিরিয়ালি লিখছি, তাই ডান পাশের মেনু থেকে খুঁজে পেতে সমস্যা হবার কথা নয়।
তবে লিঙ্ক দিলেতো অবশ্যই ভালো হতো।

পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:১৫

রবিন-৭৭ বলেছেন: ভালো লিখেন

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:০৫

মধুমিতা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:৪৬

মোঃমোজাম হক বলেছেন: আমাদের সাথে একজন ইংলিশের টিচার আছেন যিনি ঘুরতে পছন্দ করেননা, একা একা থাকেন। তার মতে টাকা খরচ করে ঘুরার কি আছে? . =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

ভাল লাগছে,পরবর্তি লেখাগুলির প্রতীক্ষায় রইলাম

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:০৭

মধুমিতা বলেছেন: আপনি কিন্তু নতুন কোন লেখা দিচ্ছেন না। দেশে গেলে তো আরো বিজি হয়ে যাবেন। ছুটি কত দিনের জন্য?

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:২৪

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: খুব ভাল লাগলো। ভ্রমন এবং ইতিহাস একই সাথে বর্ননা করেছেন। ছবি দেওয়ার জন্য মনে হয়েছে যেন আমিও ভ্রমনে আছি।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:২৯

মধুমিতা বলেছেন: আপনাদেরকে যদি আমি ভার্চুয়ালি ভ্রমন করাতে পারি তবেই তো আমার লেখা স্বার্থক।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২৮

জানতেএলাম বলেছেন: Click This Link

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২৭

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১০

মোঃমোজাম হক বলেছেন: আবারো একটু হেসে নিলাম।

খুব ব্যস্ত এখনো।তবে দেশে গিয়ে অন্তত রাতে বসতে পারব।কারন আমার মতো গভীররাত পর্যন্ত কেউ জেগে থাকেনা ;)

১২ই ফেব্রয়ারি ফিরছি ইনশাল্লাহ

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৩৭

মধুমিতা বলেছেন: যাক লেখা তাহলে মিস করবো না। আশা করি ভালোভাবে ফিরে আসবেন।

৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪০

বড় বিলাই বলেছেন: ভালো লাগল।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১৭

মধুমিতা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

৮| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:৩৪

ম্যাকানিক বলেছেন: মধুমিতা ভাই
লেখা আর ছবি ব্লগ ভালো হইছে তবে
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্টের লোকেশন দিলে আমরাও তায়েফ গেলে আপনার মত পরোটা ডাল আর ডিম ভাজি দিয়ে নাস্তা করতাম।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:০০

মধুমিতা বলেছেন: সঠিকভাবেতো বলতে পারব না, তবে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস মসজিদের পাশেই। ওখানে ১টিই রেস্টুরেন্ট, সবাই দেখিয়ে দিবে।
সত্যিই অনেকদিন পরে মজা করে পরোটা ডাল আর ডিম ভাজি দিয়ে নাস্তা করেছি?

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৯| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:৩৮

দ্যা ডক্টর বলেছেন: তায়েফ অনেক সুন্দর, বিশেষ করে তায়েশ শহরের বাইরে খামারগুলো। তায়েফে আমার অভিজ্ঞতা হল প্রচন্ড মাথা ধরা আর নাক-কান জ্যাম হয়ে যাওয়া :)

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:০৩

মধুমিতা বলেছেন: ইচ্ছে ছিল গোলাপ বাগান দেখব। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি, সিজন ছিলনা।
তায়েফ কিন্তু আমার বেশ ভালো লেগেছে।

১০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৫৪

রিয়াযান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:০৩

মধুমিতা বলেছেন: আপনাকেও ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.