নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারিবারিক দায়বদ্ধতাই নারীনির্যাতন রোধে সহায়ক !

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

বর্তমান জ্ঞান বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির ক্রমমান বিকাশের যুগে আমাদের নারীরা আগের চেয়ে অনেক টা প্রতিবাদী হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা পরিমান তেমন টি পরিবর্তন হয় নি। তবে আমাদের নারীরা আগের চেয়ে অনেকটা প্রতিবাদী হয়েছে বলেই আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা খবর জানতে পরছি আবার প্রতিবাদের কারণেই বেড়েছে সসিংসতা ও। স্বামী দু-চারটা চড়-থাপ্পড় মারবে দুটো গালমন্দ করবে এটাই তো স্বাভাবিক আর তা মুখবুজে সহ্যকরে নেয়াটাই তো একজন আদর্শ নারীর পরিচয় । কিছু দিন আগে আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত ছিল যে স্বামীর হাতের মার খাওয়াটা নাকি মেয়েদের জন্য সৌভাগ্যের লক্ষন যদিও কালের বিবর্তনে সেই সৌভাগ্যই আমাদের নারীসমাজের দুর্ভাগ্যের বড় কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস অথচ চলতি নভেম্বর মাসেই আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি আলোচিত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুরের টঙ্গীর জামাই বাজার এলাকায় স্বামী জুয়েল ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চোখ তুলে নেন শিউলির। এরপর তাঁকে তালাবদ্ধ ঘরের ভেতর রেখে চলে যান। চোখ হারিয়ে অন্ধত্ব বরন করেন শিউলি। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আরেক ঘটনায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তপতী দাস (২২) নামে এক গৃহবধূর শরীরে তাঁর স্বামী কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে তার স্বামী সঞ্জয় কুমার দাস । রাজশাহীর নুরেসা বিবি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ তুলতে না দেয়ায় আঙুল দিয়ে ঘুতিয়ে চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা চালায় স্বামী সিরাজুল ইসলাম। শিউলি তাপতী কিংবা নুরেসা বিবি ই নয় আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত কোন না কোন নারী কোন ভাবে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক জরিপ বলছে, জানুয়ারি ২০১৫ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯২ জন নারী। তার মধ্যে ১৬৭ জন নারী স্বামীর হাতে মারা গেছেন। ২৮ জন নির্যাতিত হয়েছেন। এর মধ্যে মামলা হয়েছে মাত্র ১১৭।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮৮ জন নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। স্বামী হাতে খুন হতে হয়েছে ২৬২ জন নারীকে তবে মামলা হয়েছিল ২৬১টি। স্বামীর হাতে সরাসরি নির্যাতিত হয়েছেন ৩৬ জন। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশে প্রথমবারের মতো " ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১ " নামে নারী নির্যাতন নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যে খানে বলা হয়েছে দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো সময়ে, কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করেছেন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিস্ময়কর আরও তথ্য হচ্ছে, এসব নারীর ৭৭ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বিগত এক বছরেও একই ধরনের নির্যাতন ভোগ করেছেন। বড় অংশের নারীকেই তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক গড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। বিবিএসের এ জরিপ আরো বলাহয়েছে , শারীরিক নির্যাতনের শিকার নারীদের মাত্র অর্ধেক চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পান। এক-তৃতীয়াংশ নারীই স্বামীর ভয়ে বা স্বামী সম্মতি না দেওয়ায় চিকিৎসকের কাছ পর্যন্ত যেতেই পারেননি।

বাংলাদেশ পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যৌতুকের কারণে ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৯২টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌতুক কেবল গরিবের ঘরে নয়, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, ধনী সব ধরনের পরিবারেই ছড়িয়ে আছে এই অভিশাপ। তাদের মতে, নির্যাতনের অনেক কম অংশ জানাজানি হয়, গ্রাম-শহরে বহু নারী লোকলজ্জা এবং পারিবারিক অসম্মানের ভয়ে মুখ বুজে সয়ে যাচ্ছেন নির্যাতন। পত্রিকার কাটিং থেকে সংগ্রহ করা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ২৩৬ নারীকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯৫ নারী। আমরা পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট দেশের সব কটি বিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত একটি গবেষণা পরিচালনা করে। এই গবেষণায় দেখা যায়, ছয়টি বিভাগে সচেতনতার হার বেড়েছে গড়ে ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় রংপুর ও সিলেটে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির হার কম। এতে আরও উঠে আসে, ৯৬ দশমিক ২৫ শতাংশ নারীকে স্বামীরা মারেন, আজেবাজে নামে ডাকেন ও গালাগাল করেন। ৯৫ দশমিক ৬৩ শতাংশের ওপর প্রতিনিয়ত যৌতুকের জন্য মানসিক চাপ দেওয়া হয়। ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন স্বামীরা। শারীরিক নির্যাতনের শিকার নারীদের ৯৩ দশমিক ১৩ শতাংশকে লাথি ও আঘাত করা হয়। স্বামীর হাতে লাঠির মার খান ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৫৫ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য জোরালোভাবে সক্ষম। ৪৩ শতাংশ মোটামুটিভাবে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে পারবে। নারীর এই প্রতিবাদী রূপের সঙ্গে অনেক পুরুষই পরিচিত নন তাই স্বামীর নির্যতনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিতে হয় অনেক নারীকে ই । শুধু বাংলাদেশেই নয়, উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালেও দেখা যাবে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা। সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান-এর একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন স্বামীর হাতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষ জন্মগতভাবে সমান মর্যাদার অধিকারী এই স্লোগান মাধ্যমে ১৯৪৫ সালে বিশ্বের সকল মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে শান্তি ও প্রগতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের জন্ম। বাস্তবে সমান মর্যাদায় সকল মানুষকে দিতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। পুরুষতান্ত্রিকতার কাছে জিম্মি এ সমাজে দেশে দেশে নারী চরমভাবে অবহেলিত। যা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্যকে পুরোপুরি ব্যাহত করেছে। সেই চরম সংকট থেকে উত্তরণে ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে Convention on Elimination of all forms of Discrimination Against women সংক্ষেপে CEDAW (সিডও) বা ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’ নামে একটি সনদ গৃহীত হয়।জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত সনদসমূহের অন্যতম ‘সিডও’। নারীর প্রতি অন্যায় এবং অবিবেচনামূলক বৈষম্য দূর করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ফসল ‘সিডও’ সনদ। ‘নারীর মানবাধিকার দলিল’। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত সিডও সনদ ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বব্যাপী কার্যকর হতে শুরু হয়। ১৯৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ CEDAW (সিডও) সনদে স্বাক্ষর করে এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘সিডও’ সনদের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ।একই সাথে নিজ দেশে তা বাস্তবায়নে অঙ্গিকরাবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ।

১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। জাতিসংঘ দিবসটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ উদযাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালন করছে। নারী নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই সঙ্গে দিবসটি পালন করা হয়। CEDAW (সিডও) সনদ স্বাক্ষর দীর্গদিন পার হলে ও সনদের গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবর্তন হয়নি নারী নির্যাতনের চিত্র আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র ও সত্যিকার অর্থে ই লজ্জাকর । শুধু আইন করেই আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে নারী নির্যাতন রোধ করা সম্ভব নয়
পারিবারিক পরিবেশ ও নারীনির্যাতন রোধে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। যে পরিবারে নারী-পুরুষ বৈষম্য থাকে সেই পরিবারের ছেলেটি নারীকে অবহেলার চোখে দেখবে এটাই স্বাভািক । সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অনেকগুলো ধাপ আমরা পূরণ করেছি কিন্তু পারিবারিক সহিংসতার হার কমিয়ে আনতে পারিনি বলে এই লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হয়নি , শুধু আইন করেই নয় সামাজিক ও পারিবারিক দৃষ্টি ভঙ্গি ই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে নারী নির্যাতন অনেক অংশে কমিয়ে আনতে পারে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.