নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাষ্ট্র, ধর্ম ও রাষ্ট্রধর্ম ।

৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩২

রাষ্ট্র, ধর্ম ও রাষ্ট্রধর্ম এ তিন টি বিষয় আমার দৃষ্টিতে সম্পুর্ণ আলাদা । আমরা একটি উক্তি সব সময় ই ব্যবহার কারি তা হলো " ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার " অর্থাৎ ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত কিন্তু রাষ্ট্র হলো একটি দেশের সব নাগরিকের । একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র সব নাগরিকের অধিকার ই সমান সে যে ধর্মের বা বর্ণের ই হউক না কেন । আমাদের এই উপমহাদেশের বেলায় অবশ্য গনতন্ত্রের এমন কথা আবার একটু ভিন্ন ভাবে ও সংজ্ঞায়িত হয় । ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্হান ভাগের মূল মন্ত্রই ছিল ধর্ম । ধর্মের ভিত্তিতেই ভাগ হয়েছিল ভারত-পাকিস্হান আর সেই থেকেই উপমহাদেশে ধর্ম নিয়ে নানা ভেল্কিবাজীর সৃষ্টি । অবশ্য এর আগ থেকে ই ধর্ম নিয়ে ব্যবসা ও রাজনীতি প্রমান আছে ।আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ও সে সময় হিন্দু- মুসলিম যুদ্ধ বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল এক শ্রেনীর ধর্ম ব্যবসায়ীরা যদিও তাদের একথায় মোটেও কর্ণপাত করেননি আমাদের মুক্তিকামী অগ্রজেরা । আর তাই ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ই জীবন বাজি রেখে শরিক হয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে । যদি ও তাদের সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নতেই রয়ে গেছে । স্বাধীনতার পর ই আমাদের প্রথম সংবিধন অর্থাৎ ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল ১. জাতীয়তাবাদ ২. গণতন্ত্র ৩. সমাজতন্ত্র ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা ৷ আর সেই সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ই ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা । অথচ আমাদের রাষ্ট্র পরিচানায় বার বার ই ধর্মকে উছিলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে । আমাদের দেশের প্রায় শতকরা নব্বই জন মানুষ ই মুসলমান ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী বাকীদের ও প্রায় সকলেই কোন না কোন ধর্ম বিশ্বাস করে । আর এসকল মানুষ অন্তর দিয়ে ই ধর্মপালন করে ধর্মকে ভালবাসে । সেই বিশ্বাস ও ভালবাসাকে পূজি করেই ধর্মব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল সহ রুজির বিভিন্ন ধান্দা করে আসছে যুগ যুগ ধরে । আমাদের দেশে নাজায়েজ ক্ষমতাকে জায়েজ করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) এই কথাটি সংযোজন করেন । পরে অবশ্য ১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংযুক্ত করে, ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন তাদেরকেও পল্টি দিয়ে ধর্ম নিয়ে কুলশীত রাজনীতির সৃষ্টি করেন তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ৷ ঐ সময় ই অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংযুক্ত করার প্রতিবাদে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে দেশের পনের জন বরেন্য ব্যক্তিত্ব মহামন্য হাইকোর্টে রিট করেন যা গত ২৮ মার্চ ২০১৬ সরাসরি খারিজ করে দেয় মহামন্য হাইকোর্ট । যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সংবিধনে বলবদ থকলো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ।

যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াত-ই-ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে কোণঠাসা বাকী সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো ও দুর্বল হয়ে পড়েছে তাদের নানা মতবিরোধ ও সাংগঠনিক দূর্বলতার কারনে । সেই সুযোগে ২০১৩ সালে হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজত ই ইসলামের ।যদি ও অনেকের ই ধরনা হেফাজত-ই-ইসলাম জামাত-ই-ইসলামের ই একটি ছায়া সংগঠন । সৃষ্টির পর থেকেই এই সংগঠনটি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে আসছিল অবশ্য সরকার ও রেলের জমিসহ আরও নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের নিজেদের আয়ত্বে রাখার চেষ্ঠা করে আসছে । এর পর ও গত কিছু দিন যাবৎ এই সংগঠটি বিশেষ ভাবে ফুসে গিয়েছিল ।রাষ্ট্রধর্ম মামলার রিটের প্রেক্ষিতে তারা দেশে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা করেছিল ৷ প্রকাশ্যেই তারা হুমকি দিয়ে বলে আসছিল রায় যদি তাদের বিপক্ষে যায়, তবে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে৷ লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে৷ অবশেষে মাহামন্য হাইকোর্ট রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম রাখার পক্ষে রায় দিয়ে হেফাজত-ই-ইসলাম সহ বিভিন্ন ইসলামিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গুলির ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরির পরিকল্পনাকে নৎসাত করে দিয়েছে ।

হেফাজত-ই-ইসলাম সহ বিভিন্ন ইসলামিক ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল গুলির হুংকারে বার বার মনের ভিতর প্রশ্ন জেগেছে যে আমাদের সংবিধানে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংযোজন করার আগে মুসলমান সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ কি সুষ্ঠ ভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে নি ? আমাদের দেশের মানুষ যে যেই ধর্মে বিশ্বাসী হউক না কেন অতীতে ও ধর্ম পালন করতে কোন অসুবিধা হয় নি বর্তমানে ও হয় না ভবিষ্যতে ও ধর্মপালনে কোন অসুবিধা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না । তবে আমাদের দেশের উগ্র ধর্মব্যবসায়ীরা সব সময় ই ধর্মকে ব্যবহার করে নানা আজুহাতে সমাজ তথা রাষ্ট্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত । এর জন্য তারা আমাদের ধর্মপ্রাণ সাধারন মানুষদের ভুল-ভাল বুঝিয়ে প্রপাগান্ডামূলক কৌশল অবলম্বন করে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারায় সর্বদা ব্যস্ত এমন কি তারা আদালতকে পর্যন্ত হুমকি দিতে কুন্ঠাবোধ করে না । বিশ্বের অনেক দেশেই রাষ্ট্রধর্ম আছে আবার অনেক দেশেই নেই আমাদের বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয় । তবে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির কৌশল অবলম্বন করে কোন জাতি বা গোষ্ঠি যদি আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তার করে সেই অপচেষ্টা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না বা মানব ও না ।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.