নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতির কাধে যখন শিক্ষকের লাশ ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২৮

নারায়ণগঞ্জের মদনপুরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কথা আজ কজনেরে ই বা মনে আছে ? এই বছরের ১৩ মে তথা কথিত ধর্ম নিয়ে কটূক্তি তথা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে স্হানীয় সাংসদের হুকুমেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে । অবশ্য ঐ ঘটনার পর সমগ্র দেশে প্রতিবাদের এক খন্ড ঝড় ওঠলে ও আরো অনেক ঝড়ের কবলে শ্যামল কান্তি ভক্তের ঝড় কোন এক অজানা রাজ্যে হাড়িয়ে গেছে । এর আগে ও পড়ে অনেক শিক্ষককে ই লাঞ্চনা ব্যঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে । শিক্ষদের আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্র অভিহিত করে থাকে মানুষ গড়ার কারিগড় হিসেবে । আমদের সমাজ বা রাষ্ট্র শিক্ষদের যে ভাবেই অভিহিত করুক না কেন শিক্ষকরা যে মানুষ তথা সমাজ গড়ার কাড়িগর একাই বাস্তব সত্য । প্রতি বছর ই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর আমাদের সরকার ,অভিবাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের উল্লাস ও গর্বের সীমা থাকে না । শিক্ষা ও স্বাক্ষরতার হার নিয়ে দেশ বিদেশে আমাদের সরকার গুলির অহংকারের ও শেষ থাকে না । এই উল্লাস আর অহংকারের মূলেই যে আমাদের শিক্ষক সমাজ এটা ই কিন্তু বাস্তবতা ।অথচ এই মানুষ তথা সমাজ গড়ার কারিগড় শিক্ষকদের আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র কতটুকু সম্মান দিতে পেরেছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ? আজ এ কথা গুলি বলার যুক্তি সংগত কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ঘটনার কারনে ই ।

অতিসম্প্রতি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষাকদের উপর পুলিশের বর্বোরোচিত হামলায় জীবন দিতে হয়েছে ঐ কলেজের ই উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রবীন শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও এলাকার দিনমজুর সফর আলীকে । যদিও পুলিশের ভাষ্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ আগে থেকেই অসুস্হ্য ছিলেন আর সফর আলীর লাশ পাওয়া গেছে ঘটনাস্হল থেকে একটু দূরে । জানিনা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কি বলবে ? তবে কথায় বলে না জোড় যার মুল্লুক ই তার । হয়তো ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ও তেমন কিছু ই হতে পারে । ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ অনেক পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজ ছাত্র সংখ্যা ও পাঁচ হাজারের অধিক । স্থানীয়দের অভিমত অনুযায়ী এ কলেজটি এলাকার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ হিসাবে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে আসছে। কলেজেটিতে সাতটি বিষয়ে অনার্স কোর্স ও চালু রয়েছে। জাতীয়করণের লক্ষে ২০১৫ সনে কলেজটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিদর্শন করা ও হয়ছিল অথচ জাতীয়করণের প্রকাশিত তালিকায় ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের নামের জায়গায় নন এমপিও ভুক্ত উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ৩০০ শিক্ষার্থীর বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিব মহিলা কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়। তাই অনিয়মের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন ঐ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীরা এমন কি সাথে এলাকাবাসী ও । প্রায় ৪৩ দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থী সহ এলকার মানুষ। প্রতিদিনই কলেজের ক্যাম্পাসে এই দাবিতে মিছিল-সমাবেশ চলছিল ।অবরোধ অনশন সহ সব কর্মসূচি ই পালন করেছিলেন আন্দোলনকারীরা ।কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ও মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিলেন সেখানকার আন্দোলনকারীরা সেই সাথে তারা আওয়ামী লীগ নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে একটি স্মারকলিপি ও প্রদান করেছিলেন । কিন্তু কাজের কাজ কিছুই না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থী সহ এলকার মানুষ। এর ই ফলশ্রুতি হলো শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও এলাকার দিনমজুর সফর আলীর হত্যা খুন বা মৃত্যু যেটাই বলিনা কেন ?

পুলিশের লাঠির আঘাতে বা পুলিশের নির্যাতনে শিক্ষকের মৃত্যু এটাই কি প্রথম ? হয়তো আমরা ভুলেগেছি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা । ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষা দিবসের ঠিক আগের দিন ঢাকার রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ও জলকামান বর্ষণ করা হয়েছিল। তাঁরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছিলেন চাকরি জাতীয়করণের দাবি নিয়ে। সেদিনের নির্যাতনে নির্যাতিত একজন শিক্ষক বাড়ি ফিরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ঐ শিক্ষকের জন্য বিন্দু মাত্র করুনা হয়নি আমাদের রাষ্ট্রের আমাদের সমাজের আমাদের বিবেকের ।এর পর ও শিক্ষকদের যো কোন ন্যায় সংগত দাবির জন্য আন্দোলন শান্ত ভাবে পালন করতে পরেন নি আমাদের শিক্ষকেরা ।হুমকি ধমকি লাঠি টিয়ার গ্যাস সব ই তারা করে বেড়ায় শিক্ষকদের ।

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ আমি তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না । তার পর ও তার চেহারা ভিতরেই খুজে পাই আমার স্কুলজীবনের প্রিয় শিক্ষক আব্দুল সালাম স্যারের কথা যিনি প্রতি দিন অন্তত প্রায় পচিশ থেকে ত্রিশ জন ছাত্র ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ই সকালের নাস্ত করতেন ।স্কুলের চাকুরীর বেতনে সংসার চলতো না বলেই স্যার স্কুল ছুটির পরে নেমে পরতেন কৃষি কাজে ।আবার সন্ধ্যার প্রায় প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে লেখা পড়ার খোজ খবর ও নিতেন । স্যার যেহেতু আমাদের প্রায় প্রতি দিন সকালে নাস্তা খাওয়াতেন তাই মাঝে মাঝে আমরা ও চেষ্ঠা করতা স্যারকে তার তার গরুপালন আর কৃষিকাজে সাহায্য করতে । আজো দেশে এমন হাজারো সলাম স্যার আছেন যারা তাদের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নিবেদিত প্রাণ । আবার শিক্ষক নামধারি অনেকেই আছেন যারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য সমাজের নষ্ট রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি সব বিলিন করে দেয় তথাকথিত রাজনৈতিক জীবিদের কাছে । অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও তার সহ যোদ্ধারা নিজেদের বিবেক বুদ্ধি আর চিন্তা কে আমাদের নষ্ট রাজনীতির কাছে বিসর্জন দিতে পারেন নাই বলেই তাকে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে । ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীরা সহ হাজারো মানুষের মনে প্রবল ইচ্ছে ছিল কারো বহু দিনের সহকর্মী আবার কারো প্রিয় শিক্ষকের নামাজে জানাযায় শরিক হয়ে তার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করা । তবে সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় হলো সরকার তথা প্রশাসন তাদের সেই ইচ্ছেকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে । প্রিয় সহকর্মী প্রিয় শিক্ষকের নামাজে জানাযায় শরিক হতে না পরে তারা হয় দূর থকে শুধু কেঁদে গেছেন । এক শিক্ষকের মৃত্যুতে হয়তো ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীরা ই কাঁদছেন না আজ কাঁদছে দেশের প্রতিটি বিবেক ।

আবুল কালাম আজাদ স্যার আপনি একটি ভূল সময়ে ভুল রাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছেন , যেখানে নীতির চেয়ে অর্থ আর পেশী শক্তি ই কদর সবচেয়ে বেশী । আপনাকে পিটিয়ে আহত করে যারা হত্যা করাছে তারা হয়তো আপনার মতই কোন শিক্ষকেই হাতে গড়া ছাত্র । কিন্তু আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের ভিতরে সেই মানবিকতার জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছে । অর্থ আর ক্ষমতা তাদের কে পুরোপুরি অন্ধ করে দিয়েছে । তারা ঘুনাক্ষরে ও ভাবতে পারেনা আপনার লাশ কট ভারী । কিন্তু সমাজ ও জাতীর বিবেক হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে আপনার লাশের ওজন । জাতি হিসেবে আমাদের জন্য সবচেয়ে দূর্ভাগ্য হলো দাবী আদায়ের জন্য খুন হওয়া আপনার মত একজন শিক্ষকের লাশ আমাদের কাধেই বহন করতে হলো । আবুল কালাম আজাদ স্যার জানি আপনার এই খুন হত্যা বা মৃত্যু বিচার এই রাষ্ট্র কখনো ই সুষ্ঠ ভাবে করবে না এর আশা করা টা ও আমাদের জন্য বোকামী তাই স্যার আমাদের ক্ষমা করবেন ।

লেখক: ওয়াসিম ফারুক , কলামিস্ট

view this link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:১১

এম এ কাশেম বলেছেন: চেতনার ফেরিওয়ালারা এখন শীত নিদ্রায়
তাহাদের ঘুম ভাঙ্গে তখন যখন অত্যাচারিতের
নামের শেষে থাকে কান্তি, দাস, রায় বা আচার্য্য।

তাছাড়া কানে ধরার অভিনয় সহজ
কানে ধরে বিখ্যাত হওয়া যায়;
মরার অভিনয় তো আর সহজ নয়
মরে কি কেউ বিখ্যাট হতে চাই?।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫

শূণ্য পুরাণ বলেছেন: হাচা কথা কইতে মানা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.