নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধেও পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে জীবন দিতে হয়েছিল সিরাজুদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ সাংবাদিকদের। স্বাধীনতার পরও এই তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে নিহত হন দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল। কেউ বলছেন শিমুল দুই গ্রুপের সংর্ঘষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আবার কেউ বলছেন, শিমুল দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় অস্ত্র মহড়ার ছবি তুলতে গেলে পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হকের অস্ত্রহাতে ছবি তুলছিলেন, এতে পৌর মেয়র হালিমুল হক রাগে সাংবাদিক শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। যেভাবেই হোক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ফলেই এ ঘটনা, এটাই সত্য। আমি এখানে দুইটা বিষয়কে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি যার প্রথমটি হলো সাংবাদিক হত্যা আর দ্বিতীয়টি হলো ক্ষমতাসীনদের অন্তঃদলীয় কোন্দল ও সংঘর্ষ।
বাংলাদেশে সাংবাদিকরা বরাবরই ক্ষমতাসীনদের চোখের শূল। যে যেভাবেই পেরেছে সাংবাদিকদের মুখ ও কলম বন্ধের চেষ্টা করেছে। এর জন্য জীবন দিতে হয়েছে অনেক সাংবাদিককেই। বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিকের দামি গাড়ি ও রাজকীয় বাড়ি থাকলেও শহরকেন্দ্রিক বেশিরভাগ সাংবাদিকেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা আর মফস্বল সাংবাদিকের অবস্থা না বলাই ভালো। শিমুল ছিলেন তেমনি একজন মফস্বল সাংবাদিক। সংবাদমাধ্যমের খবরে বিস্মিত হয়েছি শিমুল মারা যাওয়ার সময় ঠিকমতো ঘরে খাবারটুকুও রেখে যেতে পারেননি। শিমুল আহত হওয়ার পর তার রক্তমাখা পরিচয়পত্রটি সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শিমুলের রক্তমাখা ওই পরিচয়পত্র দেখে সকল সংবাদকর্মীরই অন্তত এক মুহূর্তের জন্য হলেও বুক কেঁপেছে, কারও কারও চোখ থেকে হয়তো অশ্রুও নেমেছে। সবার মনেই প্রশ্ন, কেন শিমুলকে জনপ্রতিনিধির মতো এক ঘাতকের বুলেটে জীবন দিতে হলো?
আমাদের রাজনীতি তথা রাষ্ট্র পরিচালনায় দীর্ঘদিন যাবৎ মেধার চেয়ে পেশীশক্তি ও অর্থের প্রভাবই বেশি। রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিটা দলীয় নির্বাচনে তাদের মনোনয়নপত্র দিয়ে থাকেন হয় টাকাওয়ালাদের, না হয় সন্ত্রাসীদের। ফলশ্রুতিতে সন্ত্রাসী ও টাকাওয়ালারাই জনপ্রতিনিধির পদ দখল করে নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও মনোনয়ন বাণিজ্যে অর্থে হচ্ছেন মহাবিত্তশালী। আর যারা নিলামে মনোনয়ন কিনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে লগ্নি করা টাকা সুদে আসলে তুলে নিবেন এটাই স্বাভাবিক। ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি এক রকম ভোটারবিহীন নির্বাচন ও তারপরে সবগুলো নির্বাচনই আমাদের ভাবনার বিশেষ কারণ ছিল। এরপরের প্রতিটি নির্বাচনই ছিল ওই একই ধাঁচের। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘ করা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণের জন্য তারা প্রত্যেকটা নির্বাচনকেই নানাভাবে কলুষিত করেছে। বর্তমানে হামলা মামলার ভয়ে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি একদিকে যেমন গর্তে ঢুকেছে অন্যদিকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অর্থ সম্পদ কামাতে কোমরে গামছা বেঁধে নেমেছে। এতে করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নানা ভাগে হয়ে পড়েছে বিভক্ত। এই বিভক্তি ও অর্থ সম্পদ কামানোর প্রতিযোগিতায়ই প্রতিনিয়ত ঘটছে নিজেদের মধ্যে নানা সংঘাত ও সংঘর্ষ। এসব সংঘাত, সংঘর্ষ জীবন কেড়ে নিচ্ছে হয়তো দলীয় নেতা-কর্মীদের না হয় দেশের নিরীহ জনসাধারণের।
একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালনের জন্য নিজের জীবনবাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিলেন আর ক্ষমতাসীনরা অর্থের লোভে, সম্পদের লোভে সংঘাত-সংঘর্ষের জন্যই নেমেছিলেন রাস্তায়। ক্ষমতা ও অর্থলোভের কাছেই জীবন দিতে হলো একজন প্রান্তিক নিরীহ সাংবাদিককে। যে মৃত্যুর ঘানি আজীবন বইতে হবে একটি পরিবারকে। জানি না সাংবাদিক শিমুলের পরিবারের ভাগ্যে কি আছে? সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির খুনিদের সরকারও আইনশৃঙ্খলা আজ পর্যন্ত ধরতে না পারলেও শিমুলের ঘাতক খুনি পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এজন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। তবে এই গ্রেফতার সম্পদ ও ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কতটুকু শৃঙ্খলার মধ্যে আনবে আর হত্যাকারীদেরই বা কি বিচার হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়
©somewhere in net ltd.