নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অতিসম্প্রতি রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের মামলায় ঢাকা দক্ষিন সিটির ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। ঘটনাটি শুনে যে কোন বিবেকবান মানুষ ই স্তম্ভিত ও সংকিত হবেন এবং হওয়ার ই কথা। গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষের ই ধারনা ছিল যে হয়তো বাংলাদেশ চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্বের হাত থেকে মুক্ত হলো। কিন্তু বাস্তবতা আমরা যা দেখলাম তা সম্পুর্ন ভিন্ন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন রাতের অন্ধকারে বরিশাল নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ডে কয়েকশ বছরের পুরোনো জনব্যবহার্য একটি পুকুর বালি দিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। একই সময়ে মুন্সিগঞ্জ লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ফেরিঘাট, মাছঘাট ও ট্রলারঘাট দখলে নেয় উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জনির নেতৃত্বে অনুসারীরা। গত ২৯ নভেম্বর
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার চন্নাপাড়া বায়তুল আতিন জামে মসজিদের কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির সহযোগী দুটি সংগঠনের দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। চর দখল, খাল দখল, নদীর বালু মহাল দখল, খাস জমি দখল, বাস ও ট্যাম্পু স্ট্যান্ড, লঞ্চ ঘাট, কাঁচাবাজার, ফুটপাত মাত্র এই কয়েক মাসে কি না দখল করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। শুধু দখলই না সেই সাথে ছিনতাই, চাঁদাবাজি তো আছেই। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনের ডাটা চালু করে গুগলে গিয়ে শুধু মাত্র " বিএনপির দখলদারি ও চাঁদাবাজি " লিখে সার্চ দিলে ই আপনি পেয়ে যাবেন গত ৫ ই আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের চাঁদাবাজি, ছিনতাই আর দখলদারিত্বের চাল চিত্র। আরো বেশি তথ্য জানতে চাইলে আপনি এর সাথে বাজার, মসজিদ, রাস্তা, জমি, স্কুল কলেজ ভিন্ন ভিন্ন আইটেম করে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন তাদের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি অনেক তথ্য। যা দেখে আপনি আঁতকে উঠবেন।
তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে দখল-চাঁদাবাজির বিষয়ে নেওয়া হয়েছে শূন্য সহনশীল নীতি। প্রত্যেকটি আলোচিত ঘটনার জন্যই দলের উচ্চ পর্যায়ের থেকে নেওয়া হয়েছে দলীয় শৃঙ্খলা ভংগকারীদের ব্যবস্হা। কাউকে কারন দর্শানো নোটিশ কাউকে দল থেকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার কাউকে আবার স্হায়ী ভাবে বহিষ্কার করা হলেও অনেকেই মানছে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশ। তাদের মুখে একই কথা এত দিন আওয়ামী লীগের লোকজন ভোগ করছে তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস পান নাই এখন আমরা করলে দোষ কোথায়? বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত যেই সকল নেতা কর্মীরাই আজ বিভিন্ন অপকর্ম করে আগের উদাহরণ টানছেন তাদের অবশ্যই বুঝার কথা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্তদের দখলদারি, লুট সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গুম হত্যা নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে পারে নাই করনেই শেখ হাসিনা তথা আওয়ামিলীগের এত বড় পতন। আর যারাই বিএনপির রাজনৈতিক পদ ও নাম ব্যবহার করে ফায়দা হসিলে ব্যস্ত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আর্দশ ও বিএনপির আর্দশের কথা বলছেন তারা কত জন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপির আর্দশ ও নীতি অবগত সেটা নিয়ে ও আমার প্রশ্ন আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, সেনা অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ যখন সম্পুর্ন ভাবে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা বঙ্গভবন থেকে সেনানিবাস সব স্থানেই আতংক আর অস্হিরতা নানা ঘটনা আর অঘটনের পরে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সিপাহী-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্রপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং মেজর জেনারেল জিয়াকে ডেপুটি সামরিক আইন প্রশাসক করে নতুন বাংলাদেশের পথ যাত্রা শুরু হয়।
১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম স্বাস্থ্যগত কারনে পদত্যাগ করলে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ১৯৭৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে অবসর গ্রহণ করেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনাশাসক থাকায় অবস্থায় বাংলাদেশেকে একটি বহুদলীয় গণতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিনত করার সকল বন্দোবস্তো করেন এর ই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিনত হয়। বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তন লক্ষ্যে শাহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথমে ১৯৭৭ সালে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সভাপতি করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে ১ লা সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) বিলুপ্ত করে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস,
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অর্থে সমাজতন্ত্র এই চারটি মুলধারার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি )। তবে এর আগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন এবং একই বছর ২২শে মে ১৯ দফা ঘোষণা করে জাতিকে এক নতুন পথের সম্ভাবনা দেখায়। এর পর নানা কর্মসূচি ও একের পর এক দুরদর্শিত পদক্ষেপের ফলে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রমেই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে শুরু করে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালীন সেনাবাহিনীর ভিতরে ও দেশের সাধারন মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। আর তার এই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা একটি বিশেষ মহল মোটেও সহ্য করতে পারেনি।
দেশী ও বিদেশী কিছু চক্র রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়। অনেক উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে গভীর রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার কারনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। এর পর ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বরের রাষ্টপতি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশের ৭ম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ও ক্ষমতালোভী স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতা লোভ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি পদে বেশি দিন টিকতে দেয় নাই। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবদুস সাত্তার সরকারের পতন ঘটিয়ে সামরিক আইন জারি করা হয়। বাংলাদেশে শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক সংকট। দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যাতাকলে পিষ্ট হয় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ও রক্তক্ষয়ের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন হয় স্বৈরশাসক এরশাদের। এর পর বাংলাদেশ নতুন গনতান্ত্রিক পথে হাটতে শুরু করে। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনগনের ভোটের নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি। নানা আলোচনা আর সমালোচনা মধ্য দিয়ে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনা করেন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির সরকার। এর পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বর্জনে অনুষ্ঠিত হয় বির্তকিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আসন দখল করলে ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে সেই সরকার বেশিদিন স্হায়ী হতে পারে নাই। ৩ মার্চ ১৯৯৬ জাতির উদ্দেশে ভাষণে খালেদা জিয়া ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনার ঘোষণা দেন৷ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শক্রমে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ রাষ্ট্রপতি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন৷ রাষ্ট্রপতি সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করেন৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভার গ্রহন করে। এর আমরা আবার ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জামাত জোট সরকার দেখলাম।
তার পর নানা নাটকীয় মধ্যে এলো ২২০৭ সালের ১১ জানুয়ারির তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদর পৃষ্ঠপোষকতায় ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই সরকারের অধীনেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটকে। উল্লেখ ২০০৭ সালের এক এগারোর ফখরুদ্দিন - মঈনউদ্দীনের সরকার আসার পর প্রথমে দেশকে বিরাজনীতি করনের প্রক্রিয়া শুরু হয় এর ই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ভাংগন ও ধ্বংসের নানা পায়তারায় লিপ্ত হয়। এর থেকে বাদ যায় নাই আওয়ামী লীগ ও। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা সহ দেশের অনেক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকে কারান্তরিন করা হয়। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। ২০০৭ সালের ৭ই মার্চ গ্রেফতার হম তারেক রহমান। গ্রেফতারের পর তারেক রহমানকে যেভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেটি দেখে অনেকেই চমকে উঠেছিলেন। র্যাবের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হেলমেট পরিয়ে ঢাকার একটি আদালতে তোলা হয়েছিল তাকে। এরপর তারেক রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। আদালতে দেয়া তারেক রহমানের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে ২০০৮ সালের ১০ই জানুয়ারি ভারতের দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা লিখেছিল, " রিমান্ডের সময় আমাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই হাত ও চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল ... আমাকে বেঁধে রুমের ছাদের সাথে ঝুলিয়ে আবার ফেলে দেয়া হয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।" ২০০৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাথেই ঢাকা সেনানিবাসে তাদের তখনকার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোকে ও। যদিও কোকোকে ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে প্রেরণ করেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন তত্বাবধায়ক সরকার। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কুয়ালালামপুরের মালয়েশিয়া জাতীয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আরাফাত রহমান কোকো। আর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নানা নাটকীয়তার মধ্যে দীর্ঘ আঠারো মাস কারাগারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ তারেক রহমান কারা মুক্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে যুক্তরাজ্যে গমন করেন এবং বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় এবং ফখরুদ্দিন ও মঈনউদ্দীনে পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী জোট সরকার। সেই সময় শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসেই রাষ্ট্র যন্ত্রের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে একে একে বিকল করার ষড়যন্ত্রেের মিশনে নামেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের উপর চালানো হয় নির্যাতনের স্টীমরোলার। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে একে একে ধ্বংস করে নিজের অনুগত করতে স্বার্থক হয় শেখ হাসিনার সরকার। প্রথমেই দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরন করা হয়। গুম খুনের মত ভয়াবহ মানবাধিকার ধ্বংসের পথ বেছে নেন শেখ হাসিনা। চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীর মত বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও বিরোধী মত পোষণকারী শত শত মানুষ গুম খুনের শিকার হন। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে শুধু বন্দুকযুদ্ধের নামে অন্তত ১ হাজার ৯২৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাব এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
জিয়া পরিবারের উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। বেগম জিয়ার সাজানো সংসার ভেঙে তছনছ করে দেন প্রতিহিংসা পরায়ন শেখ হাসিনা। ২০১০ সালের
১৩ নভেম্বর তথাকথিত আদালতের নির্দেশে ঢাকা সেনানিবাসের ৬ মইনুলের রোডের নিজ বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। এর পর একে একে বেগম জিয়ার উপর চালানো হয় নানা নির্যাতন।
মিথ্যা দুর্নীতির মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে জেলা রাখা হয় দীর্ঘদিন। অপ্রতুল চিকিৎসায় প্রায় মৃত্যুর পথ যাত্রী হয়ে পরেন বেগম খালেদা জিয়া। তার জীবিত একমাত্র সন্তান তারেক রহমান দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফিরতে পারছেন না স্বদেশে। ছোট ভাই মৃত্যুবরণ করলেও শেষবারের মতো তার মুখটিও দেখতে পারেননি তারেক রহমান । দলের নেতাকর্মীরা অবর্ণনীয় নির্যাতন, হত্যা, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন।
তবে এর মধ্যেই বিএনপির ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা এক শ্রেণীর আওয়ামী তথা ভারতীয় দালাল গোপনে শেখ হাসিনার কাছ থেকে নানা ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে এক দিকে দলের ভিতর নিজেদের অবস্থান সুসংগত করছেন অপর দিকে শেখ হাসিনার সরকারের সাথে ও সম্পর্ক ঠিক রেখেছেন। মাঝে মাঝে এই সকল সুবিধা ভোগী নেতারাই বিএনপির হাইকমান্ডের অনেক ত্যাগী নেতা থেকে শুরু করে তৃনমুল পর্যায়ের কর্মীদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করতে যেমন দ্বিধা করে নাই তেমন বিএনপিকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে ও চিন্তা করে নাই। রোজা আর কোরবানির ঈদের প্রহর গুনতে গুনতে বিএনপি যে আন্দোলন করতে সক্ষম সেই কথা আমরা এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি রাজধানীর নয়াপল্টনে লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীদের সমাগম করতে পারলে ও শেখ হাসিনার পালিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তান্ডবের কাছে রাস্তায় দাড়াতে সক্ষম হয় নাই বিএনপি।
জুলাই আগষ্টের ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসান হলে। বাংলাদেশ এক নতুন পথে হাটতে শুরু করে। এই সুযোগে বিএনপির কতিপয় নেতা কর্মী তাদের স্বার্থ হাসিলে জন্য নানা অপকর্মে ব্যস্ত হয়ে পরে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বার্থক করতে তারেক রহমান বলেছেন , " বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে হওয়া গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের ব্যর্থতা হবে সবার ব্যর্থতা। গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।" ইতোমধ্যে তার বিভিন্ন পদক্ষেপ ও বক্তব্যকে অসাধারণ, সময়োপযোগী, পরিপক্ক আখ্যা দিয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। তবে তার অনুপস্থিতিতে বিএনপির কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা কর্মী যেই ভাবে আওয়ামী লীগের পথ অনুসরণ করে দখলদারি, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ সহ যেই ধরনের নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাতে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগ কতটুকু মুল্যায়িত হবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: বিএনপির অতীত ইতিহাস কি ভুলে গেছেন?
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:১৮
নীল আকাশ বলেছেন: না হলে বিএনপির অবস্থাও আওয়ামী লীগের মতো হবে। দেশের জনগন এখন বুঝে গেছে কীভাবে দাবী আদায় করতে হয়।