![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাকে বুঝতে হলে জানতে হবে
সক্রেটিসের পর প্রগতিশীল চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে ইতিহাসের দণ্ডিত দ্বিতীয় পুরুষ, ড. ইউনুস। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের শেয়ার মার্কেট গুন্ডাগুলা ধরা পড়লেও বিচার করা যাবে না কারণ অর্থমন্ত্রীর মতে তারা নাকি অসম্ভব প্রভাবশালী। উপদেষ্টা মশিউর বলেছেন, এই দেশের মাটি ব্যবহার করলে ট্রানজিটের পয়সা চাওয়ার নাম অসভ্যতা। এই দেশেই বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করা স্বৈরাচারের সঙ্গে নির্বাচন করে পরবর্তীতে গদি থেকে টেনে নামানো সত্ত্বেও তাকেই নিয়ে মহাজোট। অতীতে জামাতিদের অফিসে ঘুরতে ঘুরতে জুতার সুকতলী ক্ষয় করে এখন জামাতের বিরুদ্ধে কিসাস ঘোষণা। এই দেশের রাষ্ট্রপতি ২৭ ফাঁসির আসামীকে ক্ষমার ইতিহাস লিখে গণতন্ত্রের বিলুপ্তি আর অলিখিত সামরিক শাসনের উদাহরণ হলেন। সামান্য পদ্মাসেতুর দরপত্র পর্যন্ত ঠিকমত লিখতে পারে না আবুল হোসেন আর যত্তো দোষ নন্দ ঘোষ ইউনুসের। ২০ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট শিল্পে ১জন শ্রমিক তার মজুরি দিয়ে নাস্তা পর্যন্ত কিনতে পারে না। জাতিসংঘে বিশ্ব শান্তির মডেল উপস্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী, এদিকে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে নাৎসী পার্টির মতো ভয়ংকর আচরণ। গবির দেশের সরকারের রাজকীয় ব্যয় দেখে একথা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ন্যূনতম ১০০ হাজার ডলার। গণতন্ত্রের নামে ৪২ বছর ধরে অব্যাহত স্বৈরাচার, ৪৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশ স্বাধীন করে ফেললাম কিন্তু ৪৬০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিরুদ্ধে ৫ বছর পরপর সুয়োরাণী-দুয়োরাণী খুঁজতে পার করে দিলাম ২২ বছর। এতো উদাহরণ স্বত্ত্বেও আন্দোলনের ইস্যু খুঁজে পায় না টকশো বিপ্লবীরা?
তৃতীয় শ্রেণীর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণীর আন্দোলন হয়েছিলো ’৬৯-এ। এখন প্রথম শ্রেণীর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণীর আন্দোলন পর্যন্ত জমাতে পারছে না। পুরুষ বলতে এখন একমাত্র খালেদা জিয়াাই, আহত সৈনিকের মতো রণাঙ্গণে রক্তাক্ত হাত তুলে হঠাৎ হঠাৎ হুংকার ছাড়েন, এখনো মরি নাই ইডিপাস! দেশজুড়ে স্বৈরশাসনের দহন। এই অবস্থায় একমাত্র খালেদা জিয়াই সকল সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও মাঝে মাঝে জনসভায় গিয়ে প্রমাণ করছেন, টকশোতে গলাবাজি করে লাভ হবে না। বলতে চাইলে রাস্তায় নেমে চিৎকার করতে হবে, গণতান্ত্রিক দেশে স্বৈরাচারি শাসন মানি না, মানবো না।
নির্বাচন ১৯৮৬: আওয়ামী লীগ তখন জামাতকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে গেলে ফলাফল, জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন, আওয়ামী লীগ ৭৬, জামাত ১০। ওই সাজানো নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিলো। উক্ত নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ এবং জামাতের সাথে গড়ে ওঠে নিবিড় সম্পর্ক। ’৮৬এর সংসদ থেকে একসঙ্গে পদত্যাগ এবং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নিজামীর সঙ্গে জোড়া কবুতরের মতো রাজপথ রক্তাক্ত করেছেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনেও সঙ্গে জামাত। এখন বলছেন যুদ্ধাপরাধী নিজামীদের বিচার না করলে মুক্তিযুদ্ধ ময়লা হয়ে যাবে। প্রতিবন্ধী মানুষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে পারে, ’৮৬ তে নিজামী যদি যুদ্ধাপরাধী না হয়ে থাকে, এখন কেন হলো? ন্যূরেমবার্গ ট্রায়ালের ধোয়া তুলে লাভ নেই কারণ পাবলিক সেন্টিমেন্টকে আমলে নিয়ে ওই বিচারটি ছিলো সম্পূর্ণ স্বান্ত্বনামূলক। ওই বিচারের মেরিট তখনো ছিলো না, এখনো নেই। এর কোনটারই ব্যাখ্যা শেখ হাসিনা দিলেও লাভ নেই কারণ তিনি হুজুগে বাঙালির দায়িত্বে আছেন। এরাই ৫ বছর পরপর ঠিক করে দেয়, দেশের চেয়ে দল এবং ব্যক্তি কতোবড় হওয়া উচিত।
১৯৯০তে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ১/১১এর চেয়ে অধিক স্বৈরাচারের যুগ, যাকে ছোটখাটো আইয়ূব যুগ বললেও অত্যুক্তি হবে না।
১৯৯১তে খালেদা জিয়া যখন জোট সরকার গঠন করেন, সঙ্গে নিলেন সাতভাগ মানুষের দল জামাত। এরশাদকে ঢোকালেন জেলে। শুরু হলো বিরোধীদলের সংসদ বর্জন, লাগাতার হরতাল, খুন আর জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন।
১৯৯৬এর নির্বাচনের আগে জামাতকে সঙ্গে নিয়ে পদত্যাগ করে জোটের আশায় শেখ হাসিনা সরাসরি গোলাম আযমের স্মরণাপন্ন হন। সেই গোলাম আযমই এতোবছর পর যুদ্ধাপরাধী? সরকার না শুনলেও আন্তর্জাতিক মহলে বিচারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক, যা আভ্যান্তরীণ স্থিতিশীলতায় ছড়িয়ে দিচ্ছে উত্তাপ। বিস্ফোরক বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করার কারণে ভয়ংকর সামাজিক অস্থিরতার আলামত ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। মহা আনন্দে চলছে খুনের মিছিল।
২০০৭এর নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয় জেনে মহাজোটের নৌকায় উঠলেন চরিত্রহীন এরশাদ যার বিরুদ্ধে দুই নেত্রী একদিন জোড়া কবুতরের মতো একসঙ্গে রক্তাক্ত করেছিলেন রাজপথ। সেদিনের বিপ্লবী শ্লোগান, “এরশাদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র।” তারপর কি হলো? অতীতেও জোটে নেয়ার জন্য খালেদার দেয়া মামলাগুলোকে ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ। ’৯৮তে খারিজ হয়ে গেলে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা রাখার জন্য দিলো নতুন মামলা। এই খুনি এরশাদের হাতে ’৬৯এর মতোই বাঙালির তাজা রক্ত। এরশাদ ভালো, ১/১১ খারাপ? জামাত খারাপ, এরশাদ ভালো? সংসদে বিলুপ্ত গনবাহিনীর খুনি সদস্য ভালো, রাস্তায় বন্দুক হাতে ছাত্রলীগ ভালো? এরশাদ সরকারে পুরো ক্যান্টমেন্ট, মাইনু-ফখরু সরকারের ভাগে আধাআধি। মানুষ জানতে চায়, শেখ হাসিনা যখন ১/১১এর বিরুদ্ধে মুখে এতোবার কামান দাগাচ্ছেন, বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখলকারী এরশাদ কেন মহাজোটে? দেশ ছাড়ার সময় এয়ারপোর্টে বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে ১/১১এর সবকিছুই বৈধ করবেন। আমরাও ইকোনোমিস্টের রিপোর্ট ছাড়াই বুঝতে পারি, ভারতের বস্তা বস্তা টাকায় ২০০৮এর নির্বাচন। মানুষ দেখছে, ১/১১ আর এরশাদের বন্দুকের নলের সব সুফল একাই খেয়েছে হাসিনার দল। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জামাত, এরশাদ, ১/১১… হানাদার বাহিনী বনাম মিত্রশক্তি প্রশ্নে প্রতিবারই তিনি মহাত্মা গান্ধি। আবার গান্ধি যখন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সহিংস হয়ে যান, সেই দৃশ্য অত্যাধিক ভয়ংকর।
বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণে ’৭০-এর সরকারকে পর্যন্ত পেছনে ফেলে দিয়েছে এই দলটি। অতীতে খালেদা জিয়ার অনেক সমালোচনা করেছি বর্তমানে স্যালুট করি। কারণ বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র পুরুষ যিনি ২০৬ খানা হাড় চুরমার হয়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন (ভবিষ্যতে তিনিও পাল্টাবেন না সেই গ্যারান্টিও নেই)। একমাত্র তিনিই ’৭৫এর মতো জরুরি অবস্থা জারির আশংকা ব্যাক্ত করেছেন। ১৭৩ দিন হরতাল দেয়ার বদলে আমি তার ধৈর্য, সহ্য, বাকসংযম, ভদ্রতা, মুখ ও শরীরের ভাষা, প্রশংসা করি। সর্বক্ষেত্রেই তিনি হাসিনার থেকে আলাদা বলে প্রতিষ্ঠা করেছেন। মানুষও তার এই গুণাবলীর প্রশংসা করতে শুরু করেছে। সংখ্যালঘু সমাজ বিএনপির দিকে ঝুঁকছে। হিন্দুরা কি ভুলে গেছে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার আর লাখে লাখে দেশত্যাগ? পরিকল্পিতভাবে হাজার বছরের বুদ্ধবিহার ধ্বংসের কথাও ভুলবে না। প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্পিত সম্পত্তি লুটপাটের সঙ্গে শত্র“ সম্পত্তি আইন বাতিলের উদ্দেশ্য বুঝে গেছে (পরবর্তীতে সব দলই লুটপাট করেছে)। প্রায় চার বছর ধরে ক্রমাগত আক্রমণের পরও খালেদা জিয়া যে সুস্থ্য থেকে দল চালাচ্ছেন, জনসভা করছেন, পুরুষ প্রশ্নে ‘ইউনুস’ পর্যন্ত ধরা খেলেন। অধিকারের সংগ্রামে প্রায় ৮ কোটি পুরুষ মানুষকে খালেদা জিয়া বড়ই লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন।
১৯৭২, ১৯৯৬ এবং ২০০৮এর সরকারগুলোর লাগাতার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে এরা মাঠকর্মী হতে পারে কিন্তু প্রশাসন চালানোর যোগ্যতা নেই। ’৭২এর সাড়ে তিন বছর ধরেই অপশাসন, দুই টার্মেই শেয়ার বাজারের গোডাউনে ঢুকে ডাকাতি, এই টার্মে ড. ইউনুস, পদ্মা সেতু, কুইকরেন্টাল, হলমার্ক, ফ্লাইওভার, গুম, ক্রসফায়ার…। ’৮৬, ’৯০, ২০০৮এ দলের রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে একটি কথাই স্পষ্ট, ৮৫% জন সমর্থন হারিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারই ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র কৌশল। বুঝলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কমুক্ত করছেন, আমার প্রশ্ন ডা. মিলন এবং নূর হোসেনের রক্ত যার হাতে সেই এরশাদকে মহাজোটে রেখে শহীদের মা’দেরকে কি ব্যাখ্যা করবেন শেখ হাসিনা? আমিও একজন মা, সেই জায়গা থেকে অবশ্যই বলতে পারি, সবার আগে আপনাকে খুনি এরশাদের বিচার করতে হবে এবং এরশাদের সঙ্গে যারা জোট করে তাদেরও বিচার করতে হবে। তারাই বা যুদ্ধাপরাধীর চেয়ে কম কিসে কারণ ’৭১এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়ে বরং ’৮২তে দেশে ফিরে ফুরফুরা এরশাদ সেনাবাহিনীতে ঢুকেই ’৮৩তে ক্ষমতা দখল। মুক্তিযুদ্ধকে মিলিটারির ব্যুটের তলে পিষে ফেলে বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখলের পর অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা খুন? সুতরাং জামাত নিষিদ্ধ হওয়ার আগে জাতীয় পার্টি কেন নিষিদ্ধ হবে না, আওয়ামী বিপ্লবীদের নিকট এই অধমটি প্রশ্ন তুলতেই পারে যে যারা বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করা এরশাদের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় গেছে তাদেরও বিচার হবে না কেন? ৮৩ বছরের বৃদ্ধ লম্পট এরশাদ যদি মুক্তিযোদ্ধা খুন করার পরেও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মহাভারত নোংরা হবে না কার নির্দেশে? মুখে কামান দাগানো কোন একপক্ষের অধিকার নয়। ইতোমধ্যেই চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই প্রজন্ম। এই অবস্থার উত্তোরণ ছাড়া ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে কঠিন অনিশ্চয়তা।
’৬৯এ যারা প্রথম শ্রেণীর রাজনীতি করে অষ্টম শ্রেণীর স্বৈরাচার দূর করতে চেয়েছেন, ২০০৮এ তারাই অষ্টম শ্রেণীর রাজনীতি করে প্রথম শ্রেণীর স্বৈরাচারকে বুকে আগলে রেখেছেন। ’৬৯এর সেই বীর বিপ্লবীরা দলের মধ্যে কোমর ভাঙ্গা বাঘ হয়ে ধুকে ধুকে কলঙ্কের ধুলা আর দুর্নীতির সম্পদ কুড়াচ্ছেন (এর চেয়ে বেকারত্বও সম্মানজনক)। ’৮৬, ’৯৬, ২০১২এর কর্মকান্ডে প্রমাণ হয়েছে মূল দল থেকে ভ্রষ্ট লীগের ইজ্জত কিংবা নীতি বলতে কিছুই নেই। ’৭৩এ দস্তখত দিয়ে ১৯৫ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তানের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এখন শিবের গীত গাওয়ার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকসহ প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনোমিস্ট। ২০০৮এর নির্বাচনে জামাতকে টানার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আমিনী টাইপের ইসলামী দলগুলোর সাথে গাঁটছড়া বেধে এই হাসিনাই ফতোয়ার পক্ষে হুংকার তুললে দেশ-বিদেশে সেদিন ছিঃ ছিঃ রব, নেত্রী কি পাগল হয়ে গেলেন? ৮৫% জনসমর্থন হারিয়ে তাহেরি স্কয়ার ঠেকাতে এই মুহূর্তে একটাই পথ, যে কোন মূল্যে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। সেই লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা খর্চ করে মানববন্ধন, মিছিল, বিস্ফোরক বক্তৃতা এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে মাসব্যাপী পাবলিক উত্তেজনার অনুষ্ঠান। বিচার করছেন আদালত, রায়ের ভবিষ্যত নিয়ে কামান দাগাচ্ছেন সরকার। ইকোনোমিস্টে প্রকাশিত, স্কাইপে বিচারকের ফাঁস হয়ে যাওয়া কথোপকথন থেকে নির্বিঘেœ বলা যায়, ট্রায়াল এখন মিসট্রায়াল হবার যথেষ্ট ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেছে। এই ট্রায়ালটি এখন ‘ওয়াটারগেট’ কেলেংকারির মতো ‘গণভবনগেট’ কেলেংকারি পর্যায় পৌঁছে গেছে। ওয়াশিংটন হলে এই মাপের কেলেংকারির কারণে তুলকালাম হয়ে যেতো। জনসভায় ৫টি মূর্তির গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে জাতিকে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা আদালতের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার। নখদন্তহীন আদালত, টিআইবি রিপোর্টেও সেকথাই উঠে এসেছে। এই আদালতেরই এক প্রাক্তন বিচারক হাসিনার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রায় লেখার কিছু আগে প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছিলেন, আইনত যা অবৈধ। সুতরাং আদালতের উপর আস্থা হারানোর যথেষ্ট কারণ আদালত নিজেই সৃষ্টি করেছেন। বিচার চলাকালীন সময়েও কামান দাগানো থামছে না, সব দোষ খালেদা জিয়ার কারণ তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাইছেন। বাস্তবে খালেদা জিয়া টু-শব্দটিও করছেন না, কারণ শেখ হাসিনার ফালতু উত্তেজনায় তিনি মোটেও উত্তেজিত নন। বরং তিনি বলছেন, বিচার সুষ্ঠু হতে হবে এবং ঘরের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধী হোক বেয়াই কিংবা তালই বিচার করতে হবে (আমি হলে ওই ১৯৫ জনের কথা আগে বলতাম)।
দেশপ্রেম আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ইজারা দিয়েছি। ৪২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছে, এই দেশ, দেশের পতাকা, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান সব শেখ পরিবারের উত্তরাধিকার। এর বাইরে দেশপ্রেমিক বলে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি থাকতে পারে না। পরিবার পরম্পরায় একমাত্র শেখ ডায়নেস্টি ছাড়া এই দেশে ক্ষমতায় যাওয়ার অধিকার অন্য কারোই নেই। ডিসেম্বর মাসে বিএনপি’র অবরোধ কর্মসূচির বিরুদ্ধে ডিসেম্বরেই জ্বালাও-পোড়াও, খুন হরতালকারী শেখ হাসিনার সর্বশেষ কামান দাগানো এখন চরম পর্যায়ে। আসুন আমরা সর্বশেষ দ্বৈত নীতির সুরতহাল করি।
ক্ষমতা গ্রহণের ২২ মাসে এদের হরতালের হার ৮০ঃ২।
হরতাল, ১৯৯১-৯৬ = ১৭৩ দিন।
হরতাল, ২০০১-০৬ = ১৩০ দিন।
হরতাল, ১৯৯৬-২০০১ = ৮৫ দিন।
২০০৯-১২ বিএনপি = ২দিন।
২০০১-০৬ আওয়ামী লীগ = ৮০ দিন।
প্রতি ডিসেম্বরেই হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, খুন করছে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ।
২০০৬ এর ১৮ এবং ২১শে ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সহিংসতায় প্রায় ২৩ জনের মৃত্যু। অক্টোবর মাসে বিএনপির পদত্যাগের পর ২০০৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালাও-পোড়াও, লগি-বৈঠা আন্দোলনে ৪৫ জনের অধিক মৃত্যু। নভেম্বর ১৫, ১৯৯৮ ডেইলি স্টার, হাসিনাকে কোট করে লিখেছেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছি যদি কখনো বিরোধীদলে যাই হরতাল করবো না।”
জুলাই ০৪, ২০০৬, শেখ হাসিনার ঘোষণা, হরতাল না দিলে এদেরকে সোজা করা যাবে না, হরতাল দিয়ে জনজীবন স্তব্ধ করে দিতে হবে, সুতরাং একটা লাশ পড়লেই আবার হরতাল।
চেম্বার অব কমার্স ২০১১, একদিনে হরতালের ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা।
সারমর্ম: বিজয় মাসেও হাসিনা জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল, লগি-বৈঠার আন্দোলন কোনটাই বাদ দেননি। অতীতে এবং সর্বশেষ এই বিজয়ের মাসেই বিশ্বজিৎ খুনের মাধ্যমে প্রমাণ হলো আওয়ামী লীগ পুরোপুরি ক্যাডারভিত্তিক দল। এদের ছাত্রলীগ, যুবলীগের ছেলেরা জ্যান্ত মানুষের গায়ে চাপাতি মারে। এরা পরোয়া করে না বিশ্বজিৎ কোন মৃত্যু নয় বরং একটি জীবন। ২০২১ সাল পর্যন্ত গদি আটকে রাখার জন্য এই দলটি লাশের রাজনীতি বেছে নিয়েছে। এরা বিচারপতিকে পর্যন্ত দলের ক্যাডার করে ফেলেছে। তার হাতে রাষ্ট্র এবং জানমাল অনিরাপদ বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়েছে। (শেখ মুজিবের সাড়ে তিন হাত গজারি কাঠ আর শেখ হাসিনার লগি-বৈঠা)। ‘চোরের মার বড় গলা’।
মিনা ফারাহ, নিউইয়র্ক।
জজ মিয়ার আগমণ! শুভেচ্ছা স্বাগতম!
মাথার উপর সূতোয় বাঁধা বিশাল এক খর্গ ঝুলছে, বিছানায় শুয়ে এক যুবক তার অলৌকিক শক্তির পরীক্ষা দিচ্ছে। গল্পটি এখানেই শেষ। ক্ষমার প্রয়োজন নেই। জগাখিচুরি লেখাটি প্রশাসনেরই জগাখিচুরির প্রতিচ্ছবি। এর কোন মাথামুন্ড না বুঝলে ডিকশনারিতে ‘জগাখিচুরি’ ঘেটে দেখতে পারেন।
টকশোগুলোর ৮৫% আলোচনায়ই নিয়ন্ত্রিত। ’৭৫-এও বাকস্বাধীনতা অপহরণের চেষ্টা কি কম হয়েছিলো? আইপ্যাডের পৃথিবীতে একই সঙ্গে এখন আমরা সিএনএন এবং বাংলা মিডিয়া দেখার মাধ্যমে গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারি যে, সরকারই বরাদ্দ দেন, কয় তোলা, কয় ছটাক। প্রশ্ন, প্রশাসন ১০০ ভাগ বাকস্বাধীনতা ভোগ করবে আর টকশোগুলো ১৫ ভাগেই থেমে যাবে? সংবিধানে গণতন্ত্র আর পুঁজিবাদের ফিউশন যেমন অবাস্তব, তেমনি ১৫ আর ৮৫%-এর অংকও বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকি। টকশোর বিরুদ্ধে সরকারের এইমাত্রার গাত্রদাহে প্রমাণ হয়েছে মিডিয়াকে উৎরে যাওয়ার ক্ষমতা কোন সরকারেরই আর নেই। ২২ তারিখে একটি লাইভ টকশোতে যে লঙ্কাকান্ডটি ঘটানো হলো তা টকশো বন্ধ করার ক্ষেত্র তৈরি করা। সব মানি কিন্তু তালগাছটি আমার। প্রশাসনের সকল অপকর্মের একমাত্র জজ মিয়া বিএনপি-জামাতের কপালটাই খারাপ। বুদ্ধবিহারের অপকর্মের পর প্রবাসী নাফিসের গলায়ও জামাত ঝুলিয়ে দিলেন মহাজ্ঞানী হানিফ। ২০০১ সনে তালেবানরা ধ্বংস করেছে বুদ্ধিমূর্তি, ২০১২ সনে রামু-উখিয়ার ঘটনা রাষ্ট্র সমর্থিত টেরোর। বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন সংখ্যালঘু সমাজ? যানজট, হলমার্ক, আইন-শৃংখলার পর্বত সমান সমস্যা রেখে দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর দুঃস্বপ্ন থেকে কিছুতেই সরবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন ব্যারিস্টার রফিকুল হক। সুশীল সমাজও চায় রাজনীতি যেন শৈশব অতিক্রম না করে। এদেশে ওবামা থাকলেও যেন আত্মপ্রকাশ না করতে পারে। অর্থাৎ “গড সেইভ দ্যা কুইন।”
জার্মানিকে মেধাশূন্য করার জন্য দেশজুড়ে লাইব্রেরি পোড়ানোর মহাউৎসবে লিপ্ত হয়েছিলেন হিটলার। আইনস্টাইনরা সেই বলির পাঠা। ’৬৬ সন থেকেই ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে যুব সমাজকে ধ্বংসের পরিকল্পনায় সফল হয়েছেন আমাদের এ্যামেচার রাজনীতিবিদেরা। ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকান পার্টির ছাত্রদের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধকে কেন্দ্র করে “কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে” ১৪৪ ধারা জারি হলে বিষয়টির তুলনামূলক আলোচনা করা যেতো। কিন্তু ৬ দফার হাত ধরে ছাত্র রাজনীতির যে বারোটা বেজে গেছে তাতে শিক্ষাঙ্গনগুলো থেকে শিক্ষা প্রায় বিতাড়িত। শিক্ষকরাই যখন জহওরলাল নেহেরু তখন ক্লাসের বদলে লগি-বৈঠা-বন্দুক-চাপাতির ক্লাসিক্যাল রাজনীতি খবর তো মিডিয়া দমন করবেই। নেত্রীদ্বয়কে বলছি, প্লিজ! ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করুন কারণ শিক্ষাঙ্গনগুলো ইতোমধ্যেই সন্ত্রাস তৈরির কর্মশালায় রূপান্তরিত হয়েছে।
আমার মেয়েটি বললো, প্রাক্তন ছাত্র রবার্ট লেফকুইজ যুক্তভাবে রসায়ন বিদ্যায় নোবেল পেলে, তাদের স্কুলের এটি ৮ম নোবেল। শুনে ভালো লাগলো। আরো ভালো লাগলো যখন বিখ্যাত ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রোশিওরে দেখলাম অনেকের সঙ্গে ড. ইউনূসের ছবিটি সবচে’ বড়। পৃথিবীটা ক্রমশ ছোট হচ্ছে। উত্তর মেরুতে তৈলদস্যুদের আক্রমণে বিপন্ন পরিবেশ। মিলিয়িন মিলিয়ন বছরের বরফ সমুদ্র ধ্বংস করে উত্তর মেরুর তলপৃষ্ঠ থেকে তেল উঠানো বন্ধ করতে সেল, বিপি, এক্সন মোবিল নামের তৈলদস্যুদের বিরুদ্ধে এক্টিভিস্টরা রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যা বলতে চাইছি, দেশের টেলিভিশনের পাশাপাশি সিএনএন, বিবিসি কারণে জ্ঞানীগুণিরা জানেন প্রতিটি কথার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং ডিবেট করে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা কি ভাষায় ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিগত ২২ বছর ধরে দুই নেত্রীকে আমরা ঝগড়া ছাড়া কথা বলতে দেখিনি। বুঝলাম দেশের ৫০ ভাগ মানুষ নিরক্ষর কিন্তু বিদ্যাবুদ্ধিতে যারা শ্রেষ্ঠ তারা কেন ডায়নাস্টি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন না, মানিক বন্দোপধ্যায়ের ভাষায়, “এই কথা ভাবিয়া মাথা গরম হইয়া ওঠে।”
শেয়ারবাজার থেকে বুদ্ধবিহার মাত্র সাড়ে তিন বছরে কতোগুলো দুর্ঘটনা? এতো আইন স্বত্বেও সমস্যা কোথায়? ওয়াশিংটনের চেয়ে বেশি আইন বাংলাদেশে। ব্রিটিশ আমল থেকে জড়ো হওয়া আইনের উপরে আইনের চাপে মানুষের মতোই আইন পর্যন্ত শংকর। যে দল যখন ক্ষমতায় যায়, আইন তাদের মতো প্রয়োগ না করলে প্রধামনন্ত্রীর সব মামলা খারিজ হলো কেন? আমজনতা কি গাধা? নেপোলিয়ানের কথা, “সর্বনাশ তখন যখন বুদ্ধিমানরা যখন চুপ থাকেন।” ওয়াটারগেট, রেলগেট, রামু, বেনগাজিগেট, সর্বশেষ নাফিসগেট। আটলান্টিকের পূর্ব দিকে সব ষড়যন্ত্রই এখন বিএনপি-জামাতের আপদ। অর্থাৎ ভূমিষ্ট হলেন নতুন আরেক জজ মিয়া।
সাম্প্রতিকালে কয়েকটি টেরোর আক্রমণের মধ্যে আন্ডারওয়্যার বোম্বিং, টাইমস্কয়ার, নাজিবুল্লা জাজি, ডালাস ফোর্টহুডের সবাই জেলে। ১লা মে ২০১০ সনে টাইমস্ স্কয়ারে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুবক ফয়সলের টেরোর এ্যাটাক ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তার ভিডিও ফুটেজ থেকে অপরাধী সনাক্ত করে কেনেডি রানওয়েতে প্রস্তুত এ্যামিরাসটের ফ্লাইট থামিয়ে দিয়ে এন্টি-টেরর বাহিনী ফয়সলকে তুলে আনলে আত্মস্বীকৃতির কারণে পরবর্তীতে যাবজ্জীবন হয়।
সর্বশেষ, কাজী নাফিসের ঘটনা আধ ঘণ্টার মধ্যে ওবামাকে জানানোর পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের প্রেস কনফারেন্স। কিন্তু গোপালগঞ্জের নাফিস সম্পর্কে একি বললেন, দিপুমনি? স্টুডেন্ট ভিসার জন্য মার্কিন নাগরিক হতে হয়? অর্থাৎ চোখ থাকতেও কানা ছেলে কেন পদ্মলোচন, উত্তর আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। ভাগ্যিস মার্কিন প্রশাসন বাংলা বোঝেন না। হানিফের কথায় প্রমাণ হয়েছে, নাফিসের মধ্যেও রামু ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে অর্থাৎ জামাত তাকে ট্রেনিং দিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা পাঠিয়েছে। বুঝলাম। কিন্তু এতো ক্ষমতা যাদের নির্বাচনে তাদের তো বিপুল আসন পাওয়া উচিত। তলে তলে ডায়নেস্টিবাজরা জানেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হলে নিরবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাস জরুরি। ১০ হাজার মাইল দূরের ওরা যে কতোবড় গাধা প্রশাসন সেটা বুঝে ফেলেছে। আর এই সুযোগে জিরো টলারেন্সের নামে চলছে মানুষ খুনের মহোৎসব, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিগড়ে গেলেও লাভ হচ্ছে না।
বাস্তবতা এই যে, নাফিসের ঘটনায় ওয়াশিংটন ইঁদুরকে হাতি বানান কিনা অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন ঠিক করতে পারেনি, বুদ্ধবিহার ইঁদুর না হাতি, কোনটা বানালে খুশি হবে ওয়াশিংটন। গানপাউডার এসেছে বাইরের সন্ত্রাসীদের থেকে। প্রায় ১০ হাজার সন্ত্রাসীর উপস্থিতিতে বুদ্ধবিহারে আগুন লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে এই গানপাউডার। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী হালকা করেননি, করেছেন সংখ্যালঘু যারা মেরুদন্ডহীন, গানপাউডারের নমুনা হাতে গণভবনে জজ মিয়া নাটকের ক্ষুতবা শোনেন এবং বিশ্বাস করেন। এদিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ১৩টি ইমেইল ফাঁস হওয়ার পর বেনগাজির ঘটনায় ধর্মীয় ছবির গল্প প্রত্যাখ্যান করা মার্কিন ভোটাররা ওবামার মধ্যে ওয়াটারগেট কেলেংকারী গন্ধ পেয়েছেন। আমাদের সরকারগুলোর সুবিধা ভোটের জন্য কাউকে জবাব দিতে হয় না। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পর বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগের ঘরের বৌ হিন্দুরা ভয়ে ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়াবেন না বুদ্ধরা। একটি সংখ্যালঘু পরিবারে জন্ম নিয়ে ধর্মের নামে দলগুলোর এসব নাটক আর মানতে পারছি না।
ইউটিউব বন্ধ করে সরকার বোঝাতে চাইছেন, তারাই ধার্মিক। বাস্তব যে, এদের হাতেই সবচে’ বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। রমনা-কালিবাড়ি নিয়ে শেখ মুজিবের বিভীষিকার কথা বেমালুম ভুলে গেছে হিন্দু সমাজ। এই সরকারের আমলে সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিয়ে, সংখ্যাগুরুদের খুশি করার পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মীয় ছবির জন্য হলে ঢাকেশ্বরী মন্দির রেখে বুদ্ধবিহার কেন? দেখা যাক কেন ঘটলো বুদ্ধবিহারের ঘটনা? সাম্প্রতিকালে রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দেয়ায় জলেস্থলে অসংখ্য রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। কথায় আছে, শিব দেখেছো কিন্তু শিবের নৃত্য দেখোনি। আমরা অহিংস ভিক্ষু দেখেছি কিন্তু রোহিঙ্গা খেদাও মিছিলে সহিংস ভিক্ষুদের উম্মাদনা বেমালুম চেপে গেছি। বুদ্ধ রাষ্ট্র মায়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়িত্ব সিএনএন-কে দিয়েছি। এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের প্রায় ৪ হাজার নৌকা পানিতে ভাসছে। রোহিঙ্গা এবং বুদ্ধ এক্টিভিস্ট দুইপক্ষই জাতিসংঘে যার যার অবস্থান তুলে ধরছেন। সবকিছু আমলে না নিলে চলবে? দীর্ঘকাল ধরে চরমপন্থী মুসলিম আর ওয়াশিংটনের বৈরি সম্পর্কের কারণে ৯/১১-এর আগে কয়েকটি ছোটখাটো এ্যাটাক হয়েছে। ৯/১১-এর মাধ্যমে চরমপন্থীরা তাদের চূড়ান্ত জবাব দিয়েছে। পরবর্তীতে আক্রান্ত হয়েছে ইরাক-আফগানিস্তান। বুদ্ধবিহারের মতো ঘটনা আমেরিকাতে ঘটলে আরেকটা ছোটখাটো আফগানিস্তান ঘটতো না বলা যাবে না কারণ বিষয়টা বহুমাত্রিকভাবে স্পর্শকাতর। সাম্প্রতিককালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশাসনের ভূমিকায় একটি জাতিগোষ্ঠির ক্ষুব্ধ হওয়ার সুযোগ নিয়েছে প্রশাসন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা। এদের মধ্যে সব দলেরই লোক। বুদ্ধবিহারে শান্তি আর মৈত্রী-বয়ান স্রেফ এ্যামেচার রাজনীতি যা এইরকম একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আরো ভয়ংকর করেছে। সবচে’ ন্যাক্কারজনক, বিচারের আগে জজ মিয়াকে ভূমিষ্ঠ করিয়ে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। মেরুদন্ডহীন সংখ্যালঘুরা কোনকালেও বুঝতে চায়নি যে তারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক ছাড়া কিছুই নয়।
২
কেন এতো বড় বড় অপরাধ ঘটছে। তানভীর মাহমুদ কি একা?
হলমার্ক প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের এড. আহমেদের গল্প বলতে হয়। এক সময় সাধারণ চাকুরে এরপর রিয়েলস্টেট ব্রোকার থেকে হলমার্কের মতোই রাতারাতি মিলিয়নিয়ার। মার্কিন অর্থ কেলেংকারি যখন তুঙ্গে তখন আবাসন খাত আর ওয়ালস্ট্রিটের কোন জবাবদিহিতা নেই; মার্জিন ছাড়াই লোন। অর্থাৎ গরুর চেয়ে ঘাসের দাম বেশি। সবরকম জালিয়াতির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো ১ টাকার বাড়ি ৩ টাকায় কিনে একই দিনে তিনবার বিক্রি অর্থাৎ সিটি প্রশাসনে রেকর্ড হওয়ার আগেই বারবার বিক্রি দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ। এরপর ভূয়া ক্রেতা হাওয়া। বাধ্য হয়ে ব্যাংক সেই বাড়িটি আবার বিক্রিতে তুললে আবার ফিরে আসে সাজানো ক্রেতা। গ্র“পটির মধ্যে ব্রোকার, উকিল, টাইটেল কোম্পানি, ইনসুরেন্স, ব্যাংক। এদের হাতেই পুরো নীল নকশা। এরা পাকিস্তানী, ইটালি, মেক্সিকান, আমেরিকান, পোর্টরিকান ইত্যাদি। এআইজি, গোল্ডম্যান সেক্স, ফেনি মে, ফেডিম্যাক, বিয়ারস্ট্যার্ণ, সিটি ব্যাংক, লেম্যান ব্রাদার্স… প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলার আবাসন আর স্টকমার্কেট জালিয়াতির সঙ্গে কয়েকজন বাংলাদেশীও জড়িত। দু’একজন জেল খাটছে, এফবিআইয়ের লিস্টে থাকা বাকিরা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। দু’একজন কুইকরেন্টাল করে বলেও জানা গেছে। অর্থাৎ সবাই মিলে যে হারে ব্যাংক লুট করেছে তা মার্কিন ইতিহাসে প্রথম।
গ্লোবাল ধ্বসের শুরুতে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জালিয়াতিতে ঝরতে শুরু করে মার্কিন অর্থনীতি। ২০০৮ সনে প্রথমে গেলো বিয়ারস্টার্ণ। ৬০ ডলারের স্টক ৬ ডলার। ডাউজোন্স ১ দিনে ঝরে যায় ৫০০ পয়েন্ট। মহাপ্লাবনে অংশ নিয়ে একটার পর একটা ব্যাংক নগ্ন হয়ে গেছে।
একদা রাজকীয় জীবনের আহমেদ এখন রাজ সাক্ষি। তার বিরুদ্ধে ৫০০ মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির অভিযোগ, এখন দায়িত্ব গ্যাং ধরিয়ে দেয়া। তানভীরের মতো সেও প্রশাসনের হাইপ্রফাইল লোকের সাথে চলাফেরা করতো। কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট, পার্টি ডোনার, গায়ানার প্রেসিডেন্ট তার বাড়িতে দাওয়াত খায়। স্টকমার্কেট আর আবাসন ব্যবসা করি বলে এসব ঘটনা খুব পরিচিত। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেড চেয়ারম্যান, ট্রেজারি সেক্রেটারি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, আবাসন আর ইন্টারনেট বাবল…। ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার জালিয়াতি করে ১৫০ বছরের জেল খাটছেন বার্নি ম্যাডফ আর ৭৫ হাজার টাকায় নাস্তা খাওয়া তানভীরের বরাদ্দ এখন ১৫ টাকা। যা বলতে চাই, হলমার্ক আর বিয়ারস্টার্ণ ১০ হাজার মাইল দূরে হলেও জালিয়াতিতে সাদা-কালো-পূর্ব-পশ্চিম, হিন্দু-খ্রীস্টান নেই। মুজিবের অর্পিত আইন গেজেটের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগাররা হামলে পড়েছিলো পরিত্যাক্ত সম্পত্তির উপর। রাষ্ট্রের নির্দেশে দখল হয়েছে লক্ষ লক্ষ বিঘা। তখন বিএনপি ছিলো না। পরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তি দখলে দুইদলই চ্যাম্পিয়ান (দ্র: লিভিং ইউথ ভেস্টেড প্রপার্টি, প্রফেসর আবুল বারাকাত)। ঠিক সেই রকমই মিথ্যা কাগজ দেখিয়ে হাইপ্রফাইল সহায়তায় দুই গোলার্ধের দুইপক্ষই নানান ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ লুটপাট করেছে। তফাৎ একটাই, জবাবদিহিতা এবং বিচার। মার্কিন লুটেরাদেরকে জেলে পাঠানো হলেও অর্থমন্ত্রীর জেদ, মহামানবদের (মহাদানবদের) মান-সম্মানের স্বার্থে “স্টকমার্কেটের তদন্ত রিপোর্টের নাম প্রকাশ করা যাবে না।”
প্রসঙ্গ, দুদক আর রিমান্ডের অন্ধকার গুহা নয় বরং সংসদীয় কমিটির লাইভ টিভি শুনানি জরুরি কেন? কারণ এর মাধ্যমেই জনগণকে জানানো যায়, জালিয়াতি বা অর্থ কেলেংকারির রহস্য। এখন লাইভ বাকযুদ্ধ চলছে লিবিয়ায় মার্কিন দূতাবাসের প্রকৃত ঘটনা নিয়ে ওবামা সরকারের মিথ্যাচার। কংগ্রেসের দাবি, ছবির জন্য নয়, এটি আরেকটি ১/১১। ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত করছে কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থা। সমস্যা, ওয়াশিংটনে কোন জজ মিয়া তৈরি হয় না।
২০০৮ সনের বিশাল কর্পোরেট জালিয়াতির শুনানি সারা বিশ্ব লাইভ দেখেছে। হিয়ারিং কমিটিতে বাঘা-বাঘা কংগ্রেসম্যানদের উল্টোদিকে ফেড চেয়ারম্যান, ব্যাংক আর বীমা কোম্পানি সিইওদেরকে বাক্যবাণে তপ্ত কড়াইয়ে ভেজে ফেলা। একেকজন সিইও’র বেতন বোনাস ২০০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ছেটে দেয়া হয়েছে। জেল-জরিমানা এখন পর্যন্ত অব্যাহত। সিইওদের ব্যক্তিগত জেট আর হীরা-জহরতের জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিচার কাজে এই মাপের শুনানি বিশাল ভূমিকা পালন করে। (চাইলে ডিভিডি কিনে ওয়ালস্ট্রিট, ইনসাইডার জব, আমেরিকান গ্রিড জাতিয় ছবিগুলো নানান পাবলিক প্লেসে দেখানো যেতে পারে। এতে গণসচেতনতা বাড়বে)। ৪৮ হাজার ডলার মাথাপিছু আয়ের মার্কিন অর্থনীতি যা হজম করবে, মাথাপিছু ৮০০ ডলারের বাংলাদেশ কি তা পারবে?
শক্তিশালী গোয়েন্দা আর প্রভাবমুক্ত বিচারের বদলে রক্ষিবাহিনী, ক্লিনহার্ট, দুদক, রিমান্ড এবং র্যাব নামের মানবাধিকার বিরোধীদের কর্মকান্ডে সারা বিশ্বে দুর্নাম ছড়িয়ে গেছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মানবাধিকার ভঙ্গের খবর পশ্চিমের মিডিয়ায়। প্রতিদিনই দুঃসংবাদে আমরা কতো অসহায় হয়ে গেছি। বিশাল আকারের তৃতীয় বিশ্ব আছে বলেই টিকে আছে আজকের প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্ব। ঠিক তেমনই দুর্নীতিবাজরা সফল কারণ ৪২ বছরের এ্যামেচার সরকার যন্ত্রটি যথেষ্ট দুর্বল। খোল-নলচে পাল্টে না ফেললে ১৭০ মিলিয়ান মানুষের দেশটি আর ২০ বছর পরে ভয়াবহ দুর্যোগ সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, পানির জন্য যুদ্ধ হবে, শস্য ক্ষেতে হবে খরা। ওরা রাজনীতি বোঝে না, বোঝে ক্ষমতা। দুই নেত্রীকে একবার ডিবেটের আনতে পারলেই গোমড় ফাঁস হয়ে যাবে। ৪২ বছরের উৎপাদনহীনতায় তৈরি হয়েছে গার্মেন্টস আর ম্যানপাওয়ারের অদ্ভুত অর্থনীতি। সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার গার্মেন্টস মালিক যারা বিলিয়নিয়ার পুঁজিপতি। প্রায় ৩০ লক্ষ শ্রমিকের ৯৫ ভাগই নারী, যারা দুই গোলার্ধের বিলিয়নিয়রদের হাতে মাসে মাত্র ৩৭ ডলার বেতনে জিম্মি (ভিক্ষুকেরাও এর চেয়ে অধিক আয় এবং মানবাধিকার ভোগ করে)। বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধনী-গরিবের বৈষম্য যে হারে বাড়ছে তাতে করে শোষক শ্রেণীর কব্জায় জনশক্তি এবং গার্মেন্টস শিল্পটি আধুনিক দাস প্রথার বেশি নয়। এক সময় এই দাসপ্রথাও বিলুপ্ত হবে।
৩
কারা সৃষ্টি করেছে হলমার্ক? ১৯৯৭ সনে খুলে দিলেও ২০১০ সনে ব্যাংকগুলোকে ফের রাষ্ট্রায়ত্ব করে দলের অনভিজ্ঞ নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই লবিস্ট আর দুর্নীতিবাজ বলে প্রমাণ হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে অতিরিক্ত ব্যাংকিং খাত সৃষ্টি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতাহরণ এবং লুটপাটের শুরুতেই, সরকারী আর বেসরকারী ব্যাংকের জন্য আলাদা নীতিমালা করে হলমার্ক সাজানোর পথ উন্মুক্ত করা হলে এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় প্রশাসনের লোক, অন্যথায় যা সম্ভব না। প্রাইভেট ব্যাংকের পরিচালক হতে পকেট থেকে যদি ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়, তাহলে বিনা খর্চে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ‘জান্নাত আরা হেনরিদের’ লুটপাটের লিমিট কতো? সুদের হারে অসংখ্য কালো-বেড়ালের কারণ, অর্থহীন অর্থনীতি। ১৫ থেকে ২১ ভাগ হারে সুদে কতোভাগ ‘ইনফ্লেশন’ যোগ করলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় কোটিপতি হওয়া যায়? সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনসহ অর্থহীন অর্থনীতির দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে প্রতিদিন ঢুকছে ৪ হাজার মানুষের বেশি। মেয়েরা গার্মেন্টস-এ আর পুরুষরা রিক্সা চালায়। বিশ্বের সবচে’ সস্তা শ্রমের সুযোগ নিত
মিনা ফারাহ, নিউইয়র্ক।
Mina Farah
©somewhere in net ltd.