![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ মেষ আমার অবসর জীবনের অবসান হল। জাপান আসার পর ৬টা মাস অবসর জীবন কাঁটাতে গিয়ে বুঝেছি কাজ করার পর অবসর পেলে কতো ভাল লাগে। প্রাক্তন অফিস কলিগদের যখন দেখি শুক্র শনি বার ছুটি নিয়ে মাতামাতি করছে কিংবা সরকারী কোন ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া নিয়ে মাতামাতি করছে তখন কি যে খারাপ লাগছিলো, পুরনো নিজের সৃতিগূলো মনে পরে যাচ্ছিল খালি, সারা সপ্তাহ কাজ করার পর ছুটির সেই ভয়াবহ আনন্দময় সময়টা ফিরে পেতে ইচ্ছে করছিল প্রবলভাবে। হঠাৎ করেই পুরো ৬মাস প্রবাস জীবন কাটানোর পর আমার ছোট্ট কন্যার জন্য অপ্রত্যশিতভাবে বেবি কেয়ার পেয়ে গেলাম (কারন জাপানে সরকারীভাবে বেবি কেয়ার পাওয়া খুব কঠিন ৩-৪ মাস লেগে যায়, সরকারী সাবসিডিতে চলে তাই সবার জন্য একি ব্যবস্থা) বেবি কেয়ার পাওয়ার পরও খুব চিন্তা হচ্ছিল এতোদিন একহাতে কন্যাকে লালন পালন করেছি, ওরা কি ঠিক মতো দেখবে??? কিন্তু না কাজ পাওয়ার আগেই একদিন রেখে বুঝে গেয়েছিলাম, ওদের সিস্টেমই আলাদা, সুতরাং আমার চেয়ে খারাপ থাকবে না। কোলে ঘুম পাড়াবে, খাওয়া দাওয়া সব কিছু এতো স্বাস্থ্য সম্মত, সব চেয়ে বেশি যেটা ভাল লাগলো তা হচ্ছে, যতক্ষণ ওদের কাছে থাকে ততক্ষণ ও কি করে, কত টুকু খায়, কতক্ষণ ঘুমায়, খেলে কিনা, হাসিখুশি থাকে কিনা সব কিছু একটা ডায়রিতে লিখে দেয়, না খেলেও কোন মিথ্যা লিখবে না, লিখে দেয় যে আজ মেন্যু পছন্দ হয়নি তাই খায়নি বাসায় গিয়ে খাওয়ানোর জন্য। তাই সত্যি অনেক ভাল লেগেছে কারন বাসায় শুধু আমাকে আর ওর বাবাকে দেখে দেখে অন্য মানুষ পছন্দই করতো না। তাছাড়া দেশে থাকলে তো এতদিনে পুরো ৫মাস হয়ে যেত অফিসে যাওয়ার, সেখানেও তো অন্য কারো কাছে রেখেই অফিসে যেতে হত তাও আবার সপ্তাহে ৫দিন সকাল ৮টা থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা, এদিক দিয়ে খুবই ভাল যে এখানে আমি মাত্র ৩দিন পার্টটাইম কাজ করব, বাকি ৪দিন কন্যাকে সময় দেব।
আমার স্বামী অনেক দিন থেকেই অকল্পনীয় কষ্ট করছিলো, যেমন পড়াশুনা, ক্লাস, পার্ট টাইম জব, আবার বাসায় এসে কন্যাকে নিয়ে খেলা, কিন্তু আমি নিজে কাজে নেমে একটা জিনিস মনে হল, যে অকল্পনীয় কষ্ট আমরা এখানে করছি এর ১০ ভাগের ১ ভাগ যদি দেশে বসে করতাম তাহলে তো দেশটাকে আমরা বদলে ফেলতে পারতাম। আমার কাজের টাইম হচ্ছে সকাল ৮টা। আমার বাসার পাশ থেকে একটা বাস যায় ওখানে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওইটা এখানে আসে ৭;৫০ এ, আর পৌঁছে ৮;১০ শুধু মাত্র ১০ মিনিট পরে পৌঁছানোর জন্য আমি ওই বাসে যেতে পারিনা, কিন্তু উপায় তো একটা বের করতে হবে, পরে উপায় বের হল আমার বাসা থেকে টানা ২৫মিনিট হেটে অন্য একটা বাস স্টপ গেলে সেখান থেকে ৭;২৫ মিনিটে একটা বাস যায় আমার কাজের স্থানে, সেটা ৭;৪৫ এ পৌঁছে যায়। এখানে ৭;২৫ মানে ৭;২৫ ই। প্রথম দিন ৭;২৬ এ পৌঁছে দেখি বাস নাই। তারপর থেকে ৬;৫০ এ হাটা শুরু করি ৭;২০ এ গিয়ে বাসে উঠে পরি। দেশে থাকতে ৯টায় অফিস ছিল, স্বামীর সাথে মোটর সাইকেলে যেতাম ৩০ মিনিট লাগতো তাই ঘূম থেকে উঠতাম ৮;২০ এ, ১০ মিনিটে রেডি হয়ে বের হতাম তাই কষ্টে শেষ হয়ে যেতাম, অবাক লাগে। আমার কাজ শুরু হয়েছে একদম রোজার আগের দিন তাই ৬ দিন রোজা রেখে কাজ করে ফেললাম, ৬;৫০ এ বের হয়ে ৬;৩০ এ বাসায় ফিরছি, ফিরেই কন্যা কে একটু খাওয়াই, নামাজ পড়ি তারপর ইফতার বানাই। সাড়ে ৭টায় আযান দেয় বেশীর ভাগ দিন ভাঁজতে ভাঁজতেই আযান দিয়ে দেয় কিন্তু সারাদিন পরে এতো কষ্টের পর বানানো ইফতারি খেতে স্বর্গীয় একটা অনুভূতি হয়। আল্লাহর কাছে অসীম শূকরিয়া যে এতো পরিশ্রম করতে পারছি, বাংলাদেশে থাকতে সমস্যা ছিল এটাই যে রাস্তায় ৩০ মিনিট তো দূরের কথা ১ মিনিট ও হাঁটা সম্ভব ছিল না, হাজারো চোখের ভিড়। তাছাড়া শারীরিক অবস্থাও ছিলোনা। অল্পতেই অসুস্থ হয়ে যেতাম কিন্তু এখন কিন্তু শক্তি পাচ্ছি, এটাই পার্থক্য, এজন্য দেশের চেহারা বদলানো যায় না। আমার সাথে ৬০ বছর ঊর্ধ্ব এক জাপানি মহিলা কাজ করলো, সে আমার চেয়ে কতোগুণ একটিভ সেটা আসলে বুঝিয়ে বলা কঠিন। আর রাস্তায় ৭০-৮০ বছরের পুরুষ মহিলা হরহামেশাই দেখি হেঁটে যেতে। আশা করি যতদিন এখানে থাকবো ততদিন অন্তত একটু ওদের মতো থাকবো, বাকিটা আল্লাহ এর ইচ্ছা। বেবি কেয়ারটা ঠিক এমন একটা দূরতে যে বাসে গেলে ১৪০ ইয়েন ভাড়া, তারপর আবার একটু হাঁটতে হয়, আর বাসা থেকে স্ট্রলারে নিয়ে গেলে ১৫ মিনিট লাগে তাই হেটেই নেয়া আনা করে আমার স্বামী। আমার স্বামী হেঁটে সকাল ৯টায় কন্যাকে বেবি কেয়ারে দিয়ে ক্লাস শেষ করে ৫টায় আবার হেঁটে কন্যা নিয়ে আসে। সুতরাং কতটা ব্যস্ত জীবন একবার চিন্তা করেন, স্বপ্নেও যেটা আগে ভাবিনি। আমার কন্যার জন্য সবাই দোয়া করবেন ও যেন ভালো থাকে।
২| ২৯ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১
ইউমিহানা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:১৮
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: আপনার মেয়ে হবার সময় নিয়েও লিখেছিলেন মনে হয় আগে। শুভকামনা রইলো সবার জন্যই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩২
প্রজ্জ্বলিত আত্মজিজ্ঞাসা বলেছেন: কন্যার জন্য দোয়া রইলো, আর রইলো শুভকামনা।