নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ ইউনুস আলী

আমি একজন সাংবাদিক। সাংবাদিকতা আমার কাছে খুবই সম্মানের আর পছন্দের পেশা। এর মাধ্যমে আ

মোঃ ইউনুস আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চড়াঞ্চলের স্বপ্নহীন বালিকা আর বাল্যবিবাহের গল্প

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:১৬


দেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলার অংশে তিস্তা নদীর বুকে রয়েছে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় সব দ্বীপচর। দ্বীপচরগুলোর নামগুলোও বাহারি এবং বর্ণময়। উল্লেখযোগ্য চরের মধ্যে রয়েছে চর পাটিকাপাড়া, চর হলদিবাড়ি, চর পারুলিয়া, চর আরাজি, চর গোবর্ধন, চর কালিকাপুর, চর খারিয়া, চর ফলিমারি, চর সিন্ধুর্ণা, চর হরিণছড়া, চর তালপট্টি, চর ডাওয়াবাড়ি, চর গুড্ডিবাড়ি। এরকম আরো অসংখ্য চর রয়েছে। এসব চরে এখন ধানের ছড়াছড়ি। বন্যার আগে ছিল গম, ভুট্টো। তবে শীতে চরগুলোতে সবুজের সমারোহ মেলে। তখন একটু বাতাস উঠলেই ফসলের মাঠে দোলা লাগে। ফসলের মাঠ যেনো মাথা নেড়ে হেসে খেলে দোল খায়। সবুজ ফসলের এই দোল খাওয়ার দৃশ্য যে কোনো নাগরিক মানুষের হ্নদয়ে অন্যরকম অনুরণন তোলে।

বিস্তীর্ণ চর ভূমির এটি চিরায়ত এক রূপ। কিন্তু এই দৃশ্য বা অপরূপতা চরের কন্যাশিশুদের ‍হৃদয়ে সেভাবে অনুরণন তোলে না, যতোটা নাগরিক হৃদয় উদ্বেলিত হয়। চরের হতদরিদ্র পরিবারের কন্যাশিশুরা কিশোরী বা তরুণী হিসেবে পূর্ণতা পাওয়ার আগেই তাদের সব স্বপ্নের যেনো সমাপ্তি ঘটে। ফসলের মাঠের সেই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করার আগেই লালশাড়ি পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাদের। তারপর অল্প বয়সেই সংসারের এক দায়িত্বশীল নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হয়। এখানেই গল্প শেষ নয়। বিয়ের স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবার তাদের মাতৃত্বকে বরণ করে নিতে হয়। জীবনের সুন্দর স্বপ্নগুলো এভাবেই তাদের সংকুচিত হয়ে আসে।

চরের বেশিরভাগ কন্যাশিশুর জীবনের এটিই নিয়তি, এটিই অনিবার্য। বছরের পর বছর বা যুগ যুগ ধরে তিস্তার চরগুলোতে এরকমই এক অর্ন্তগত সংস্কৃতি বিরাজমান। দেশভাগ থেকে শুরু করে আজ অব্দি তিস্তার চরে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আগে যা ছিল এখনও সেই অবস্থা। সেই পুরনো প্রহেলিকা। এই অবস্থার জন্য অবশ্য তারা একটুও দায়ী নয়। তাদেরকে অসচেতন বা কু-সংস্কারাচ্ছন্ন বলাও অন্যায়। কারণ রাষ্ট্র এবং আলোকিত মানুষের দাবিদাররাও তাদের পাশে খুব একটা দাঁড়ায়নি। উন্নয়ন সংগঠনগুলোর কিছুটা প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। কিন্তু নানা প্রকল্প নিয়ে চরে কার্যক্রম শুরু করলেও ধারাবাহিকতা রক্ষা হয় না। প্রকল্প শেষ তো, সব শেষ। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তিস্তা বুকের বেশিরভাগ দ্বীপচরে কিশোরী বা তরুণী মেয়েদের দেখা পাওয়া ভার। সেই তুলনায় চরে কিশোরী বধূর সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। তুলনামূলকভাবে দ্বীপচরে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি বলেই এমনটি হয়েছে। সরকার অনুসৃত আইন এখানে কেউ সেভাবে অনুসরণ করে না। মেয়ে একটু বড় হলেই বাবা-মা বিয়ে দেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠে। অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়াটা চর সংস্কৃতিরই অংশ। এর পেছনে অবশ্য নানাবিধ সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ জড়িত। মনস্তাত্ত্বিক কারণও আছে ঢের। মেয়ে বড় হলে ভালো পাত্র পাওয়া যায় না- এরকম একটি সংস্কার চালু আছে চরবাসীর মাঝে। স্বভাবতই মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দেওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেন অভিভাবকরা। যৌতুকেরও ঢের প্রচলন রয়েছে। তাও নগদ টাকার লেনদেনই বেশি। চরে মাধ্যমিক স্কুল না থাকার কারণেই অভিভাবকরা কন্যাশিশুকে আগেভাগেই পাত্রস্থ করেন।

পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী চরে কিশোরী বয়সেই নব্বই ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। গড়পড়তায় দশ থেকে চৌদ্দ-পনেরো বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আঠারো বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া শাস্তিমূলক অপরাধ। কিন্তু চরের বেশিরভাগ অভিভাবকের এ তথ্য জানা নেই। আবার যাদের জানা আছে তারাও বিষয়টি অনুসরণ করেন না, সমাজ ব্যবস্থা এবং অভাব দারিদ্রের কারণেই।

কথা হয় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর ডাওয়াবাড়ির কিশোরী সুখজানের সাথে। সুখজানের বয়স বারো বা তেরো হবে। এই বয়সেই সে একসন্তানের মা হয়েছে। সুখজান অভাবী ঘরের মেয়ে। বছর দুয়েক আগে তার বিয়ে হয়েছে। স্বামী কৃষি শ্রমিক। সুখজানের মতো আরো অনেকেই আছে যাদের অল্প বয়সে বিয়ে করার পর এক বা দু সন্তানের মা হতে হয়েছে। মা হওয়ার পর সংসারে দায়িত্ব বেড়েছে আরো। এখানে উল্লেখ্য, হাতীবান্ধার চরগুলোতে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি। গত বছর এই উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা হলেও সেভাবে বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

অল্প বয়সে মা হতে গিয়ে চরের অনেক কিশোরী বধূর মৃত্যুও হয়েছে। চর এলাকাতে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্বক রকম অপ্রতুল থাকায় গর্ভবতী মেয়েরা সুচিকিৎসা পান না। গর্ভাবস্থায় অবহেলা আর উপেক্ষার শেষ নেই। আর এ কারণে এখানে মাতৃমৃত্যুর হারও অনেক বেশি। চর ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ অভিভাবক মনে করেন দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা বয়সে বেশি বড় হলে তাদের আর চাহিদা থাকে না। ফলে বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়াটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। সামাজিক নিরাপত্তার কারণেও অনেকে দ্রুত মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


কিশোরীদের পড়ানোর দায়িত্ব নেন।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



চরের প্রটিটি মেয়ে যেন পড়তে পারে, সেজন্য কথা বলুন।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৩

সজীব মোহন্ত বলেছেন: দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো শতকরা ৫০% মেয়েদের বিয়ে হয়ে ১৮ বছর হওয়ার আগে! এর মধ্যে ৩০% শতাংশের বিয়ে হয়ে যায় ১৫ বছর হওয়ার আগেই! অবিশ্বাস্য কিন্তু সত্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.