![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অপরাধ প্রবণতা কি একটি রোগ?
আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তিক মহল থেকে বরাবর আওয়াজ উঠছে –পাপ এবং পথভ্রষ্টতাকে অন্তরের রোগের ফল মনে করা উচিত। অনুরূপভাবে অপরাধের ব্যাখ্যায় বলা হয় যে, তা রোগের লক্ষণ। অতএব শক্তির ভয় দেখানো এবং উপদেশ দেওয়ার পরিবর্তে স্নায়বিক দুর্বলতা ও মানসিক রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা হওয়া উচিত –যার পরিণতিতে এই অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে।
‘অপরাধ-প্রবণা’ একটি রোগ। তাকে অপরাধ মেনে নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করার আগে এর চিকিৎসার চিন্তাভাবনা করা উচিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। এ সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ সহকারে চিন্তা-ভাবনা করা এবং ইসলামের শিক্ষার আলোকে তার মূল্যায়ন করা আমাদের কর্তব্য।
হয়ত জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, অপরাধ-প্রবণতা সত্যিই কি একটি রোগ? কুরআন মজীদ বিভিন্ন জায়গায় যে ব্যাখ্যা অবলম্বন করেছে তার আলোকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। হাঁ, অপরাধ-প্রবণতা একটি রোগ বিশেষ। সূরা বাকারায় নিফাকের (কপটতা) জন্য ‘রোগ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
তাদের মনে একটি রোগ রয়েছে। এ রোগকে আল্লাহ আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।–সূরা বাকারাঃ ১০
এখানে ‘মনের রোগ’ বলতে কলবের গতি দ্রুত অথবা ধীর হয়ে যাওয়া বোঝানো হয়নি। আরো অনেক সূরা আছে যাতে এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে।
সূরা আহযাবে এই শব্দটি তিনবার এসেছে এবং কথার ধরণ থেকেই বোঝা যায়, কোন স্থানে তা কি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। উম্মুল মুমিনদের (নবী-পত্নীগণ) উপদে দিতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ
তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তবে বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন করো না। তাতে রোগগ্রস্ত মনে কোন ব্যক্তি লালসা করতে পারে।–সূরা আহযাবঃ ৩২
এখানে রোগ অর্থ মনের সেই অবস্থা যা রচম জৈবিক উত্তেজনার পরিণতিতে সৃষ্টি হয়। এর ফলে মানুষের মন এমন চারণভূমিতে বেড়াতে চায় যা তার চারণভূমি নয় এবং যেখানে তার সভ্য, ভদ্র ও বিনয়ী হওয়া উচিত সেখানেও সে লাগামহীন ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীর স্ত্রীদের এমন স্থানে দেখতে চান, যেখানে মানসিক ওয়াসওয়াসা অনুপ্রবেশ করতে না পারে। তিনি এর সমস্ত ছিদ্রপথ বন্ধ করে দিতে চান। আর এ কথা প্রমাণিত যে, জৈবিক ভারসাম্যহীনতা অসংখ্য চৈন্তিক, নৈতিক ও স্নায়বিক রোগের উৎস। ইসলামের দুশমনরা আহযাব যুদ্ধের সময় যখন মদীনাকে চতুর্দিক থেকে অবরোধ করে রেখেছিল, তখন দুর্বল ঈমানের অধিকারী এবং সংশয়বাদী লোকদের যে ভূমিকা ছিল –সে সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
যখন মুনাফিক এবং রোগগ্রস্ত অন্তরের লোকেরা পরিস্কারভাবে বলছিল যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল আমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন তা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।–সূরা আহযাবঃ ১২
ব্যক্তিত্ব যতই দুর্বল এবং বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে –এই রোগের পংকিলতা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোন ব্যক্তি এই সভায় এক কথা বলে এবং অন্য সভায় আরেক কথা বলে। এখানে তার কথার ধরন হয় একরূপ, আবার অন্যখানে হয় আরেক রূপ। শেষ পর্যন্ত এটাই তার স্বভাবে পরিণত হয় এবং সে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ধরনের অসংখ্য মুনাফিক ছিল যারা ইষলামী সমাজের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা কট্টর কাফিরদের চেয়েও মারাত্মক বিপদ ছিল।
এখানে আয়াতের অর্থ এও হতে পারে যে, “সেই সময়ের কথা স্মরণ কর যখন সেই মুনাফিকরা –যাদের অন্তরে রোগ ছিল –বলেছিল”। এও হতে পারে যে, –্বারা অন্য কোন দলকে বোঝানো হয়েছে, যারা শত্রুদের ভয় করার ব্যাপারে, যুদ্ধে কাপুরুষতা প্রদর্শনে এবং রাসূলের পয়গাম ও তার শুভ পরিণতি সম্পর্কে সংশয় পোষণ করার দিক থেকে মুনাফিকদের সাথে তুলনীয় ছিল। এভাবে তারা মুনাফিকদের সাথেই থেকে থাকবে এবং তাদের মধ্যেই গণ্য হয়ে থাকবে।
যাদের চেহারায় যুদ্ধে না যাওয়ার ভাব ফুটে উঠেছিল তাদেরকেও রুগ্নদের সাথে রেখে দেওয়া হয়েছিল, যেন তাদের মুখোশ উন্মোচিত হতে পারে। সূরা আহযাবের নিম্নোক্ত আয়াতে এই ধরনের সব লোকদের একত্র করা হয়েছেঃ
মুনাফিক লোকেরা এবং যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, আর যারা মদীনায় উত্তেজনাকর গুজব ছড়াচ্ছে –তারা যদি নিজেদের একাজ থেকে বিরত না থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আমরা তোমাকে দায়িত্বশীল করে তুলব। পরে এই শহরে তোমার সাথে তাদের বসবাস কঠিনই হবে।–সূরা আহযাবঃ ৬০
এই তিরস্কার এবং হুমকির পূর্বে মুসলিম নারী সমাজকে হিদায়াত দান করা হয়েছে, পবিত্রতা ও মানসম্ভ্রমের যাবতীয় নীতিমালার অনুসরণ করে। এ থেকে জানা যায় যে, এখানে (আরবী*****************) বলতে সেই যুবকদের বোঝানো হয়েছে, যারা ভবঘুরের মত রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াত এবং লাম্পট্যের সুযোগ খুঁজে বেড়াত। এসব যুবকের সংশোধন ও সংরক্ষণের জন্য আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেছেনঃ
হে নবী! তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং ঈমানদার লোকদের পরিবারের মহিলাদের বলে দাও –তারা যেন নিজেদের উপর চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়। এটা অতি উত্তম নিয়ম –যেন তাদের চেনা যায় ও তাদের উত্যক্ত করা না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।–সূরা আহযাবঃ ৫৯
কিন্তু মনের রোগের মধ্যে লঘুত্ব ও প্রচণ্ডতার মাত্রা অনুযায়ী পার্থক্য হয়ে থাকে। সাথে সাথে এর প্রভাবে শরীআত ও ইসলামী আইনের যে বিরোধিতা হয়ে থাকে এবং মূল্যবোধ ও রীতিনীতির যে লংঘন হয়ে থাকে, তার মধ্যেও মাত্রার পার্থক্য রয়েছে। অনন্তর অপরাধী যদি মনের রোগী হয়ে থাকে তাহলে তাকে অপরাধ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করা ও কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়াই ছেড়ে দেওয়াও ঠিক হবে না। ইসলাম রোগের এই বিভিন্ন অবস্থাকে দুই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকে।
এক. ইসলাম শাস্তির ব্যবস্থাও করে থাকে। যেসব জিনিসের উপর সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থায়িত্ব নির্ভরশীল এবং যেগুলোর সাহায্য ছাড়া সমাজের সৌন্দর্যের পরিবৃদ্ধি ঘটানো, তার উন্নত মূল্যবোধের সংরক্ষণ এবং তার অসম্মানকারীদের পরাভূত করা সম্ভব নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম বেত্রাঘাতও করায়, রজমেরও (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) ব্যবস্থা করায়, হাতও কাটায় এবং মৃত্যুদণ্ডেরও ব্যবস্থা করে।
দুই. ইসলাম এই কঠোর দণ্ডের ব্যবস্থা করার সাথে সাথে অপরাধকারীকে রোগী মনে করে তার প্রতি সহানুভূতি ও দয়ার দৃষ্টিও নিক্ষেপ করে। সে তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতার সাথে অগ্রসর হয্ সে বিচারককে শিক্ষা দেয় যে, ভুলক্রমে অপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলে ঠিক আছে, কিন্তু অন্যায়ভাবে শাস্তি দেয় যে, ভুলক্রমে অপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলে ঠিক আছে, কিন্তু অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া যাবে না। ইসলাম অপরাধীর জন্য কল্যাণের দোয়া করার শিক্ষা দেয়, কিন্তু বদদোয়া করতে নিষেধ করে।
একবারকার ঘটনা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে এই মদখোরকে উপস্থিত করা হল। সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলল, তোমার উপর আল্লাহর অভিশাপ! তোমাকে কতবারই না গ্রেফতার করা হয়েছে। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তাকে অভিশম্পাত করো না। আল্লাহর শপথ! আমি যতদূর জানি যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসে।–বুখারী –কিতাবুল হুদূদ
অপর বর্ণনায় আছেঃ
এরূপ বলো না। বরং তোমরা বল, হে আল্লাহ! তার প্রতি অনুগ্রহ কর, হে আল্লাহ! তার তওবা কবুল কর।
এই অনুগ্রহপূর্ণ দৃষ্টি অপরাধীকে নিজের আঁচলের মধ্যে টেনে নেয়, তাকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেয় এবং ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশও করা যেতে পারে। এর ফলে হয়ত সে গোমরাহী থেকে ফিরে আসতে পারে অথবা মনের রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে পারে।
অন্তরের যেসব রোগ বিবেচনাযোগ্য এবং ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার যোগ্য তা এই যে, মানুষ যখন পূর্ণতা অর্জন ও উন্নত পর্যায়ে পৌঁছার জন্য অবিরত চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু তার সংকল্প রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার কারণে বারবার অকৃতকার্য হয়ে যায় –এই ধরনের রোগের সহানুভূতির সাথে চিকিৎসা করতে হবে।
মানুষ যখন ক্ষতিকর জিনিস থেকে বাঁচতে চায়, নিকৃষ্টতা থেকে বের হয়ে আসতে চায় এবং উন্নত স্তরের দিকে অগ্রসর হতে চায়, তখন মাটিজাত প্রকৃতির অসংখ্য অনুভূতি তাকে সামনে অগ্রসর হতে বাধা দেয়া তা তাকে কল্যাণের পথে পা বাড়াতে দেয় না। শেষ পর্যন্ত তা তাকে নৈরাশ্যের পর্যায়ে নিয়ে যায়। ফলে তার আকাঙ্ক্ষা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং তার সংকল্প দুর্বল হয়ে যায়। এ সময় আল্লাহর দীন তার শিক্ষা নিয়ে এই হাশাগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে হাযির হয় এবং তার আকাঙ্ক্ষাকে রোগমুক্ত করে দেয় ও তার সংকল্পকে শক্তিশালী করে তোলে। অতঃপর সে মৃত্যু পর্যন্ত উন্নতির পথে অগ্রসর হতে থাকে।
মানসিক রোগের এই নাজুক স্থানের চিকিৎসা করার জন্যই উৎসাহমূলক আয়াত এবং হাদীসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো অন্তরকে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের আশায় পরিপূর্ণ করে দেয় এবং তাকে কখনো নিরাশার শিকার হতে দেয় না। যেমন পাপীদের জন্য আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত বাণী প্রণিধানযোগ্যঃ
বল, হে আমার বান্দাগণ –যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ –তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যেও না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি তো ক্ষমাশীল এবং দয়াময়।–সূরা যুমারঃ ৫৩
এ ধরনের আশার বাণী সম্বলিত ও সুসংবাদ প্রদানকারী আয়াতগুলোকে সংকীর্ণমনা ও অপরিণামদর্শী লোকেরা ত্রুটিপূর্ণ কাজ করার এবং পাপে লিপ্ত থাকার হাতিয়ারে পরিণত করে নিয়েছে। এই ধরনের অলীক ধারণা তাদেরকে ভ্রান্ত পথেই নিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের যত আয়াত এসেছে তার উদ্দেশ্য এই যে, যেসব লোক নিজেদের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে অবিরত জিহাদ করছে –তাদের যোগতা ও সাহসকে বাড়িয়ে তোলা। তারা যেন সামনেই অগ্রসর হতে থাকে এবং কোন প্রতিবন্ধকতা যেন তাদের প্রতিরোধ করতে না পারে। কোন গিরিসংকট সামনে পড়লে তাদের গতিপথ যেন ঘুরে না যায়। তাদের দ্বারা কখনো অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত হলেও যেন ভাল কাজ করার আগ্রহ-উদ্দীপনা স্তিমিত হয়ে না যায়। তখন থেকে যদি সে পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করতে চায়, তাহলে এ পর্যন্ত সে যত অপরাধই করে থাকুক –আল্লাহর রহমত থেকে যেন নিরাশ না হয়ে যায়।
অসংখ্য আয়াত এবং হাদীস বলে দিচ্ছে যে, এই দুনিয়ায় আমলই হচ্ছে সবকিছু। যার আমল (সৎকর্ম) নেই তার কিছুই নেই। আবার এমন অনেক আয়াত এবং হাদীস রয়েছে যা সামান্য নেক কাজের বিনিময়ে রহমত ও মাগফিরাত লাভের সুসংবাদ দেয়।
লোকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে যে উত্তম জিনিসটি সাধারণত আমাদের সামনে থাকে তা হযরত ঈসা আলায়হিস সালামের নিম্নোক্ত বাণীঃ
তোমার প্রভু হয়ে মানুষের যাবতীয় কাজ দেখো না। বরং তোমরা আল্লাহর বান্দাহ, অতএব নিজেদের কাজের উপর দৃষ্টি দাও। মানুষ দুই ধরনের হয়ে থাকে। কিছু লোক পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়ে পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এদেরকে অপারগ মনে কর। কিছু লোক নিরাপদে থাকতে পারে। এদের ব্যাপারে আল্লাহর প্রশংসা কর।
ইসলামের মধ্যে এ ধরনের বহু ইতিবাচক শিক্ষা রয়েছে যার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি অন্তরের সুস্বাস্থ্য এবং রূহানী শক্তি অর্জন করতে পারে।
যেসব লোক মনে করে যে, ইসলামের ইবাদতসমূহ এক ধরনের প্রাণহীন রসম-রেওয়াজ ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এগুলো অবচেতনভাবে ও না বুঝে-শুনে আদায় করা হয়ে থাকে –তাদের একথা মোটেই ঠিক নয়। কেননা ইসলামের প্রাথমিক কর্তব্যসমূহের ভিত্তিই হচ্ছে, জ্ঞান ও চেতনাকে জাগ্রত করা। এসব করণীয় কর্তব্য যখন অন্তর ও মন-মগজের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়, তখনই বলা যায় তা গৃহীত হয়েছে। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের উপর ইবাদত-বন্দেগীর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তা তাদের আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি স্থায়ী বুনিয়াদের গুরুত্ব রাখে। এসব ইবাদত বাধ্যতামূলক করার পেছনে যে হিকমত নিহিত রয়েছে তা এই যে, এগুলো ময়লা দূর করে দেয়, গুনাহের কাজ থেকে বাঁচায় এবং মানুষ ভুল করে বসলে তা সংশোধনের উপায় হয়ে থাকে। তা দুষ্কর্মের দাগগুলো ধুয়ে-মুছে আত্মাকে পরিচ্ছন্ন করে তোলে।
এই ইবাদতসমূহ মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে, এর মলিনতাকে পরিস্কার করে এবং এই দুইটি জিনিসই নিরাপত্তার উপায় এবং কলব ও আত্মার রোগ থেকে মুক্তি পাবার পথ। যেমন কুরআন পাঠের উদ্দেশ্য কেবল এই নয় যে, মুখে পুত-পবিত্র বাক্যগুলো সুমধুর স্বরে পাঠ করা হবে। এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর ওহীর সাথে আত্মার সাথে সাধন করা, যাতে পাঠকারী পবিত্র জীবনযাপন করতে সক্ষম হয় এবং সে যখন নিজের প্রতিপালকের কাছে মুনাজাত করবে তখন যেন দুনিয়ার আকর্ষণ ও প্রবৃত্তির গোলামী থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
আমরা কুরআন নাযিলের ধারাবাহিকতায় এমন কিছু জিনিস নাযিল করছি যা ঈমানদারদের জন্য নিরাময় ও রহমত।–সূরা ইসরাঃ ৮২
অনুরূপভাবে নামায গুনাহের কাজ থেকে প্রতিরোধ করে, ওয়াসওয়াসা দূর করে এবং অপরাধের দাগ লেগে গেলে তার চিকিৎসা করে। বড়ই তত্ত্বপূর্ণ কথা বলেছেন কেউঃ “যদি তুমি নিজের আত্মাকে ভাল কাজে ব্যাপৃত না রাখ তাহলে তা তোমাকে খারাপ কাজে নিয়োজিত করবে”।
ইসলামেরও এই মূলনীতি। এই মূলনীতির সাহায্যে সে ব্যক্তি এবং সমাজকে বিপদসংকুল বাতেনী রোগ থেকে নিরাপদ রাখে। যে ব্যক্তি অলস এবং যে জাতির কোন দিকদর্শন নেই তাদের অন্তর ও বুদ্ধিবিবেক সহজেই নিকৃষ্টতম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মুসলিম সমাজের কাছে যে কঠোর শ্রম আশা করা হয় এবং তার উপর ইবাদতের যে দায়িত্ব চাপানো হয়েছে –যদি সে তাতে ব্যস্ত থাকে, তাহলে অলসতা ও বেকারত্বের ফলে যে অপরাধ সংঘটিত হয় –তাতে লিপ্ত হওয়ার সুযোগই তার হবে না এবং ইসলামী সমাজ বাস্তব কর্মক্ষেত্রে যে জটিলতার সম্মুখীন হয় তাও দূর হয়ে যাবে।
আমার ধারণামতে লোকদের থেকে যে অপরাধ প্রকাশ পায় তার জন্য জাতীয় সরকারই অনেকাংশে দায়ী। কেননা সরকার এমন কোন পরিবেশ ও জীবনবিধি সহজলভ্য করেনি যা তাদেরকে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখতে পারে। যে আভ্যন্তরীণ রোগে মানবজীবন বিপথগামী এবং ভারসাম্যহীন হয় তার সংখ্যা অনেক। যদি আমরা মনস্তত্ত্ববিদদের বক্তব্যের উপর গুরুত্ব দেই তাহলে তাদের মনে আভ্যন্তরীণ জটিলতা অন্তসারশূন্যতা এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্ত কোন মানুষ নেই। পার্থক্য কেবল এতটুকু যে, কাউকে পাগলামীর রোগে আক্রান্ত বলা হয় আর কারো সম্পর্কে বলা হয যে, তার থেকে পাগলসুলভ কাজ সংঘটিত হয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি এরূপ কাজ করে বসে তাহলে বলা হয়, তোমার কোন জ্ঞানবুদ্ধি নেই। মহান আল্লাহ তাআলাও ইহুদী আলেমদের সম্পর্কে বলছেনঃ
তোমরা অন্য লোকদের ন্যায়ের পথ অবলম্বন করতে বল, কিন্তু নিজেদের তোমরা ভুলে যাও। অথচ তোমর কিতাব অধ্যয়ন করছ, তোমাদের বুদ্ধি কি কোন কাজেই লাগও না? –সুরা বাকারাঃ ৪৪
অনন্তর বাতেনী রোগের তীব্রতা ও দুর্বলতার দিক থেকেও যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ যে পর্যায়ে থাকে শেষ পর্যায়ে তা সেই অবস্থায় থাকে না। অধিকন্তু কতগুলো রোগ তো মহামারীর আকার ধারণ করে এবং তা গোটা মানবসত্তাকে প্রভাবিত করে ফেলে। আর কতিপয় রোগ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকে।
কুরআন মজীদ বিভিন্ন স্থানে পরিস্কার বলেছে যে, আত্মিক রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক রোগ হচ্ছে –যা জৈবিক শক্তিকে উত্তেজিত করার কারণ হয়ে থাকে। অথবা মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যে ব্যাধি অহংবোধ অথবা হীনমন্যতার কারণ হয়ে থাক। জৈবিক শক্তি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে তা যেনা ব্যভিচার, পায়ুকাম, বিপথগামিতা, উন্মাদনা, অবৈধ প্রেম ইত্যাদির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অহংবোধের রোগ হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, আত্মকেন্দ্রিকতা, আত্মপ্রশংসা এবং একগুঁয়েমির উন্মাদনা, অবৈধ প্রেম ইত্যাদির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অহংবোধের রোগ হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, আত্মকেন্দ্রিকতা, আত্মপ্রশংসা এবং একগুঁয়েমির উন্মাদনা সৃষ্টি করে। হীনমন্যতাবোধ গর্ব-অহংকার ও হিংসা-বিদ্বেষমূলক প্রবণতার প্রতিপালন করে থাকে।
আমরা পূর্বেই বলেছি যে, ইসলাম আত্মাকে ইবাদতে মশগুল রাখে এবং এভাবে তাকে যাবতীয় রোগ থেকে নিরাপদ রাখে, আর যদি এই রোগ আক্রমণ করে থাকে তাহলে এর প্রভাবকে দূর করে দেয়। তা অবিরতভাবে আত্মার চিকিৎসা করতে থাকে এবং একে রোগমুক্ত করে ছাড়ে অথবা এর কাছাকাছি নিয়ে আসে। অর্থাৎ মানুষ যতটা চেষ্টা সাধনা করে এবং নিজেকে প্রশিক্ষণে ব্যস্ত রাখে সে ততই রোগমুক্ত হতে থাকে।
আমরা অপরাধের অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। এর কতগুলো বাহ্যিক রূপই আমাদের সামনে প্রকাশ পেয়ে থাকে। এজন্য আমরা এ সম্পর্কে কোন সাধারণ নির্দেশ দান করতে পারি না। আমরা এ পার্থিব জগতে বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন পন্থা সম্পর্কে বলতে পারি যে এটা ঈমান অথবা ফিসক অথবা কুফর। কিন্তু আখেরাতে কার কি অবস্থা হবে এ সম্পর্কেই কেবল আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। অপরাধীদের চিরকাল দোযখে অবস্থান অথবা তাদের অপরাধের আংশিক মাফ হয়ে যাওয়া, অথবা কারো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করার ব্যাপারটি যে বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট –আমরা ইতিপূর্বে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আমরা এ ব্যাপারে বিতর্ক যুদ্ধ, কূটতর্ক বা পূর্বকালের তর্কশাস্ত্রের কোন গুরুত্ব দেই না। এ বিষয়ের উপর উস্তাদ ইসমাঈল হামদী ব্যাপক আলোচনা করেছেন। আমরা এখানে তার সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরছিঃ
আদল হচ্ছে একটি মৌল জিনিস। শাস্তি হচ্ছে তার একটি অংশ। অতএব এ দুটি জিনিসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কিন্তু কোন অপরাধীর সাথে পূর্ণ আদল ও ইনসাফ ভিত্তিক ব্যবহার করা হবে? কোন অপরাধীর সাথে আদল এবং অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহার করা হবে? কোন অপরাধীকে রুগ্ন বিবেচনা করে একান্ত দয়ার্দ্র ব্যবহার করা হবে? এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কেননা আত্মার অবস্থা বাহ্যিক অবস্থার তুলনায় অসংখ্য ভাগে বিভক্ত। চেতনা ও সংকল্পই এই পার্থক্যের ভিত্তি।
এক ব্যক্তি পূর্ণ চেতনা ও সংকল্পের সাথে অপরাধে লিপ্ত হয়। সে এর ফলাফল সম্পর্কে অবহিত। সে ইচ্ছা করলে তা থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু সে অপরাধে লিপ্ত হওয়ার জন্য উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করে, পরিবেশকে অনুকূল বানায় এবং এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতির জন্য তৈরি থাকে।
আরেক ব্যক্তির উপর ক্রোধ অথবা ভালবাসা অথবা স্বজনপ্রীতির ভুত সওয়ার হয়ে বসে, অথবা অন্য কোন ধরনের আবেগ-উত্তেজনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। অতঃপর সে একটি উন্মাদের মত অথবা বুদ্ধিজ্ঞানশূন্য ব্যক্তির মত অপরাধের গর্তের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়। এই দুই ধরনের অপরাধীর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
তৃতীয় এক ব্যক্তির সামনে রিযিকের সব দরজা বন্ধ। সে দু’মুঠো খাবারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। এক সময় তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং সে চুরিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
অথবা কোন ব্যক্তি উত্তম প্রতিপালন এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের উপায় উপকরণ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। এ কারণে সে বিপথগামী হয়ে পড়ে। এ কথা পরিস্কার যে, এই ধরনের অপরাধী এবং প্রথমোক্ত দুই ধরনের অপরাধীর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আমাদের একথা বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে, এদের প্রত্যেকে কিরূপ ব্যবহার পাবার অধিকারী হবে। কারণ ব্যাপারটি পরিস্কার।
মানবীয় সিদ্ধান্তও কখনো এটা অস্বীকার করতে পারে না যে, যে ব্যক্তি পূর্ণ অনুগ্রহ পাবার অধিকারী, তাকে পূর্ন অনুগ্রহ প্রদর্শন করাই উচিত। আর যে ব্যক্তি কেবল ইনসাফ পাবার অধিকারী তার সাথে ইনসাফপূর্ণ ব্যবাহর করাই উচিত। আর যে ব্যক্তি ইনসাফ এবং অনুগ্রহ উভয়টিই পাবার হকদার তাকে তা-ই দেওয়া উচিত। কেননা আইন প্রণয়নকারীই হোক অথবা বিচারকই হোক –আইন প্রণয়ন অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় তারা মূক-অন্ধ-বধির মেশিন মাত্র নয়। তারাও মানুষ, মানবীয় গুণ-বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে বর্তমান রয়েছে এবং সেই গুণের মাধ্যমে তারা পথ নির্দেশ পেতে পারে। যারা আইন প্রণয়ন করে অথবা যারা রায় প্রদান করে তাদের মধ্যে অবশ্যই সেই গুণাবলী বর্তমান রয়েছে। বরং তারা সাধারণ মানবীয় স্তর থেকৈ অনেক উন্নত হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে আদল, ইনসাফ, পবিত্র মনোবৃত্তি, দয়া-অনুগ্রহ, ব্যক্তির মন-মানসিকতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় অনুধাবন ক্ষমতা ইত্যাকার যেসব গুণ রয়েছে তা অত্যন্ত উন্নতমানের বৈশিষ্ট্য।
কুরআন মজীদ আল্লাহ তাআলার যে গুণাবলী বর্ণনা করে তা সর্বোত্তম গুণ বৈশিষ্ট্য। যেমন তিনি গোটা সৃষ্টিকুল সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, পূর্ণরূপে ইনসাফ করেন, বান্দাকেও অনুরূপ ইনসাফ করার নির্দেশ দেন, তাঁর অনুগ্রহ সীমাহীন, তিনি ক্ষমা ও উদারতার ভাণ্ডার এবং দয়া ও অনুগ্রহের সাগর। এগুলো কোন নিষ্প্রাণ, শীতল অথবা নেতিবাচক গুণ নয়। তা কেবল দুনিয়ার জীবনের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়।
আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে এটাই আমাদের ধারণা। আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে কখনো স্তবিরতা বা শূন্যতা থাকতে পারে না। এর ঝর্ণাধারা কখনো শুকিয়ে যেতে পারে না, তার ধারাবাকিতা কখনো বিচ্ছিন্ন হতে পারে না, তা দুনিয়া এবং আখেরাতকে পরিব্যপ্ত করে রেখেছে। আল্লাহ তাআলা যে আইন-বিধান রচনা করেছেন এবং লোকদের মাঝে ফয়সালা দান করেন তার মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে।
যে অবস্থা ও পরিবেশ নম্রতা প্রদর্শনের মাধ্যমে কাজ আদায়ের দাবি রাখে এবং যেসব কারণ ও অনুপ্রেরণা বিচারকের মধ্যে সহানুভূতিশীল ডাক্তারের মনোবৃত্তি সৃষ্টি করে এবং তা মানবসমাজে যেরূপ বিবেচনাযোগ্য হয়ে থাকে –আল্লাহর দরবারেও তা বিবেচনাযোগ্য হবে। আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন সবচেয়ে বড় দয়ালু। তিনি তো সহানুভূতি ও রহমতের উৎস এবং দয়া ও অনুগ্রহের সাগর। আসমান-যমীনের সমস্ত সৌন্দর্যের উৎস তিনিই।
যাই হোক, ঈমান থেকে আমল বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। যেমন সূর্য থেকে আলো বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। কখনো অর্ধ দিবস অতিবাহিত হয়ে যায়, ঘন মেঘ এসে আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেরে এবং পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু তারপরও দিন দিনই থেকে যায়। তা রাত হয়ে যায় না। কেননা এটা একটা সাময়িক ব্যাপার, স্থায়ী ব্যাপার নয়। ভোরবেলা রাতের অন্ধকার দূর হয়ে যায়, সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়ে এবং আলো ও গরমে সারা দুনিয়া পরিপূর্ণ করে দেয়।
ঈমানের নূরেরও এই একই অবস্থা। কিছু সময়ের জন্য সাময়িক লালসমার মেঘ ছেয়ে যায়, অন্তরে কোণগুলো অন্ধকার হয়ে যায়, একজন মুমিনের সঠিক রাস্তা নজরে পড়ে না, তারপরও ঈমান তার নিজের কাজ করে যায় এবং তার অবস্থান হয় যা কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতের উল্লেখ করা হয়েছেঃ
প্রকৃতপক্ষে যারা মুত্তাকী তাদের অবস্থা এই যে, শয়তানের প্ররোচনায় কোন খারাপ খেয়াল তাদের স্পর্শ করলেও তারা সাথে সাথে সতর্ক ও সজাগ হয়ে যায় এবং তাদের জন্য কল্যাণকর পথ পন্থা কি তা তারা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়।–সূরা আরাফঃ ২০১
অনবরত অপরাধ এবং অপরাধের ঘন অন্ধকার তখনই হয় যখন কুফরের রাত তাঁবু গেড়ে বসে, ঈমানের সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়, অপরাধী দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং এখন তারা সৎপথ পাবার আর কোন সম্ভাবনাই অবশিষ্ট থাকে না। মহান আল্লাহর বাণীঃ
আর যারা এই দুনিয়ায় অন্ধ হয়েছিল তারা আখেরাতেও অন্ধ হয়ে থাকবে। বরং পথ লাভ করার ব্যাপারে এরা অন্ধের চেয়েও অধিক ব্যর্থকাম।–সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৭২
যেসব লোক নাজাত পেতে চায় তাদের ভূমিকা আমাদের আদি পিতা আদম আলায়হিস সালামের মতই হয়ে থাকে –“অপরাধ এবং সাথে সাথে তওবা”।
আর যারা ধ্বংস হতে চায় তাদের ভূমিকা অভিশপ্ত শয়তানের অনুরূপ হয়ে থাকে –“অপরাধ এবং এজন্য অনুতপ্ত হতে অস্বীকৃতি”।
এখন তোমার যে পথ পছন্দ হয় তা বেছে নাও। একথাও মনে রেখ, আখেরাতে মানতিক বা যুক্তিশাস্ত্রের মারপ্যাচে কোন কাজে আসবে না। সেখানে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাতের সাথে আ হাসিঠাট্টা চলবে না। সেখানে কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব নেওয়া হবে এবং হিসাব গ্রহণকারী হবেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।
হিসাব গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।–সূরা নিসাঃ ৬
©somewhere in net ltd.