![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পথিক। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। আবার শূন্যের উপর নির্মাণও করছি। এটাই প্রকৃতপক্ষে জীবন। অথবা- জীবন এমনই। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।
বইটি প্রকাশিত হল (http://www.zakirmahdin.com/archives/18) এই ঠিকানায়। পিডিএফ ফাইলটি পড়ুন, অথবা ডাউনলোড করে রেখে দিন। পরে সময় নিয়ে পড়ুন, সমালোচনা করুন, বন্ধুদের এর কপি দিন। রাজনীতির মুখোশ ও মনুষ্যত্বের বিকাশ বইটি কেন ই-বুক হিসেবে প্রকাশিত হল? কারণ অনেক। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, প্রকাশকগণ কথা ঠিক রাখেন না। দ্বিতীয়, কিছু কাজ হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত একজন প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছি এজন্য যে, এটি দিয়ে ব্যবসা করার ইচ্ছে আমার নেই। তাই আপাতত কাগজে প্রকাশের তেমন প্রয়োজনবোধ করছি না। যখন আল্লাহ তৌফিক দিবেন, নিজের পয়সায় প্রকাশ করে সমালোচক-বন্ধু-পরিচিতজনদের মাঝে বিলি করব। হোক তা অল্প, তবু পাঠকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এতে সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। টাকা আমার উদ্দেশ্য নয়, বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও মন-মানসিকতার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতাই মুখ্য। কেউ যদি এটি দ্রুত কাগজে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতা করতে চান, সেটাও বিবেচ্য। তবে কে কেন সহযোগিতা করতে চান সেটা তাকেই ভালোভাবে ভাবতে হবে। কারণ তিনি হয়তো এর বিনিময়ে আমার নিকট থেকে ধন্যবাদটাও পাবেন না, উল্টো তাকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করব, ধরব।
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রিন্ট আকারে কোনো বই প্রকাশিত না হলে দেশ-বিদেশের সর্বশ্রেণির পাঠকের হাতে সেটি তুলে দেয়া প্রায় অসম্ভব। তা সত্ত্বেও বাণিজ্যিকভাবে এটি প্রকাশ করব না- এ সিদ্ধান্তে আমি অটল। কারণ সেক্ষেত্রে হাজার হাজার কপি বই দেশ-বিদেশে প্রচার করতে পারলেও এবং যশ-সম্মান-খ্যাতি ও আর্থিকভাবে লেখক লাভবান হলেও “সমাজ পরিবর্তন ও মনুষ্যত্বের বিকাশের মূল লক্ষ্য” ব্যহত হয়। অন্যদিকে গুটিকতক মানুষ- যারা সমাজ পরিবর্তনে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, তাদের নিকট বিনামূল্যে পৌঁছে দেয়া লেখকের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য বা জ্ঞানের কোনো বিষয় আর্থিক ও জাগতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হতে পারে না। যদি হয়, তবে সমাজ-রাষ্ট্র ও মানবতার বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। যা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাই এ সামান্য ত্যাগ কিছুই নয়। তবু যদি আমাদের মানসিকতায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসে সেটা বিরাট কিছু অবশ্যই।
অনেকেই বলেন, লেখালেখি করে কী হবে? অথচ তাদের সঙ্গেও পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা এই লেখালেখি দিয়েই। তাছাড়া চিন্তা ও মতের মিল-অমিলগুলো শেয়ার না করে, চিন্তার জগৎ ভালোমতো গঠন না করে কাজ শুরু করা উচিতও নয়। ব্যাপক পড়াশুনা ও চিন্তাভাবনা করে যে লেখাগুলো হবে, এর মাধ্যমে চিন্তা ও ভাব-বিনিময় অনেক সজতর হবে। জানা-বুঝা ও উপলব্ধির জগৎ সমৃদ্ধ হবে, ভাবনা-চিন্তাগুলো সাজানো-গোছানো হবে। এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তবে আমাদের পারস্পরিক বাস্তব সাক্ষাৎগুলো অবশ্যই এড়িয়ে যাবার কারণ নেই। কেননা দুটোর সমন্বয় না ঘটলে সবই ব্যর্থ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সংকট ও ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় এ মুহূর্তেই অপরিহার্য নতুনধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা ও গড়ে তোলা, প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন, মানসিক শক্তির উন্নয়ন, বিকাশ ও দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন। এতে প্রাথমিকভাবে বা দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত কাউকে দেখানোর মতো কিছু হোক বা না হোক; অন্ততপক্ষে নিজের অভিজ্ঞতা, মানসিক প্রশান্তি ও জ্ঞানের বিকাশ হবে নগদ প্রাপ্তি। আত্মসমালোচনাকেন্দ্রিক এ চিন্তা ও কার্যক্রমে আপনাদের পাশে চাই।
“প্রসঙ্গ কথা”য় বইটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বলা হয়েছে। পাঠকগণকে অনুরোধ করব আগে তা পড়ে নেয়ার জন্য।
তাড়াহুড়ো করে বইটি সম্পাদনার কারণে অনেক ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। পরবর্তীতে সময় পেলেও অলসতার কারণে দ্বিতীয়বার সম্পাদনা করা হয়নি। আশা করি দ্বিতীয় সংস্করণে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠব। আপাতত বইটি পাঠকদের নিকট পেশ করছি, চলমান আর্থ-সামাজিক ও মানবিক ভয়াবহ বিপর্যয়, রাজনৈতিক সংকট-সংঘর্ষ, জীবন দর্শন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভ্রান্তিপূর্ণ মতবাদ প্রভৃতি সমস্যার সূত্রে সামগ্রিকভাবে সামন্য কিছু বার্তা দেয়া যায় কি না। কতটুকু দিতে পারলাম কি পারলাম না তা বিচারের ভার পাঠকদের ওপর। যদি কিছু বার্তা এতে থেকে থাকে তাহলে আশা করব এটি আপনারা শেয়ার করবেন,অথবা গঠনমূলক সমালোচনা তো অবশ্যই।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৬
জাকির এ মাহদিন বলেছেন: বইটির "প্রসঙ্গ কথা" :পাঠক১৯৭১ ভাইজান, খালি আপনের জন্য।
কেন লিখব, লিখে কী হবে, বাজারে কি লেখা বা লেখকের অভাব আছে? তাছাড়া অনেক বড় বড় লেখক-চিন্তাশীলগণ যেখানে পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন, কোনো একদিকে ‘ঝুলে’ পড়েন, প্রাতিষ্ঠানিক কথিত শিক্ষা-সার্টিফিকেট-ডিগ্রি-পদক-স্বীকৃতি-অর্থ-সম্মান ইত্যাদি অর্জনটাই বড় কথা, যেখানে লেখার ভাষা ও বিষয় কেবল বই-পুস্তকেই সীমাবদ্ধ রেখে ব্যক্তিগত-পারিবারিক ও সমাজ-রাষ্ট্রিক পরিসরে বিবেচনা করেন না বা করলেও সেটা ফলপ্রসু হয় না, আবার অনেক জ্ঞানীগুণীজন কোনো কোনো দিক থেকে-
সামগ্রিক দিক থেকে নয়- প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত সমাজ-সংস্কৃতি-প্রথা-আইন-শিক্ষা-বিচার-ধর্ম-শান্তি ও পারিবারিক রাষ্ট্রিক শাসন শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পরিবর্তন/বিপ্লবের ডাক দিলেও তা সমাধানের পথে ন্যূনতম ভূমিকা না রেখে বরং আরও একটি নতুন সমস্যা হিসেবেই আবির্ভূত হয়, তাদের লিখনি রাষ্ট্রীয় ও বিশ্বজনীন লাখো লাখো মত-পথের ভিড়ে একটি উজ্জ্বলতম, আদর্শিক, বাস্তবধর্মী ও চ্যালেঞ্জিং থিওরি না হয়ে বরং বর্তমানে লাইব্রেরি হিসেবে গণ্য বইয়ের ডাস্টবিনেই আবর্জনার মতো হারিয়ে যায় অথবা স্তূপিকৃত হয়, সেখানে আমার মতো অজ্ঞ আনাড়ি লেখক লেখার মাধ্যমে ‘কিছু একটা করা’র দুঃসাহস! প্রশ্নই আসে না!
এমনতরো শত আশা-নিরাশার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন বিরত থাকলেও শেষ পর্যন্ত বইটা লিখেই ফেললাম। অবশ্য এত তাড়াতাড়ি প্রকাশের পেছনে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতিগত প্রচণ্ড চাপ ছিল। তাছাড়া আমার সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিটা পরিষ্কার করা দরকার। এটা অন্যের কাছে যতটা না, তার চেয়ে অনেক বেশি নিজের কাছে। জ্ঞানের জগতে বিচরণের চেষ্টা-কোশেশের ক্ষেত্রে দুর্বলদের বেলায় এটা এক রকম অপরিহার্য। নিজের বিশেষ সময়ের টুকরো অনুভূতি, বিক্ষিপ্ত ভাবনা-চিন্তাগুলো সাজানো, পর্যালোচনা, উপস্থাপন ও ভুল চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ হায়াতে বাঁচালে জীবনে দু’চারটা বইয়ের বেশি লেখার ইচ্ছে নেই। লেখাকে পেশা হিসেবে নেয়া, সাহিত্যের নামে গল্প-উপন্যাসের আবর্জনা সৃষ্টি করা, বছরে বছরে দু’চারটা করে বই বের করার দলে আমি নই। আমি মনে করি জ্ঞান ও তাত্ত্বিক আলোচনা, জীবনবোধ, জীবনদর্শন, আত্মসমালোচনা, গঠনমূলক সমালোচনা- এগুলোই সর্বোত্তম সাহিত্য। আমি বুঝি না, এ জীবনে যা বাস্তব ঘটনা দেখেছি, বুঝেছি, শিখেছি, যা নিজের জীবনে ঘটে গেছে এবং প্রতিদিন যে পরিমাণ জ্ঞানগত চিন্তা রহস্য মন-মস্তিষ্কে খেলা করে, তাই তো একজীবনে লিখে শেষ করা সম্ভব না। তাহলে গল্প-গুজবের সময়টা কোথায়? আর যদি কেউ লেখার পাশাপাশি সমাজ-সংস্কারেরও চিন্তা করেন, সারাজীবন শুধুই কি লিখে যেতে পারেন? এবং একটা সর্বাঙ্গ পীড়িত সমাজ সুস্থ করতে যে পরিমাণ বাস্তবধর্মী ও জ্ঞানগত লিখনির প্রয়োজন তা কারও একার পক্ষে সম্ভব?
এ বইটি আরও দু’চার বছর অপেক্ষা করে লিখলে নিশ্চয় চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানগত দিক থেকে অনেক মানসম্পন্ন হতো। ইচ্ছেও ছিল তাই। কিন্তু আগেই বলেছি- বাংলাদেশের দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতিগত চাপ। প্রশ্ন হলো, লিখলে কি এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি মিলবে? কক্ষণও নয়, সত্যিকারের চিন্তাশীল হলে বরং চাপ আরও বাড়বে। তবে এই বাড়াটা একটা ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে পারে যা না লিখলে হয়তো হবে না, অথবা হলেও সময় লাগবে। তাই আমার লেখার আসল উদ্দেশ্য অন্যকে জ্ঞান দেয়া নয়, নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিজের কাছে সুস্পষ্ট করা, জ্ঞানকে ‘ধারণা’ থেকে পৃথক করা, ভুলগুলো চিহ্নিত করা এবং একটা পর্যায়ে পৌঁছে জ্ঞানের উচ্চতম শিখরে আরোহণের প্রয়াস চালানো। জ্ঞানের চেয়ে মূল্যবান কিছু অন্তত মানুষের জন্য নেই। জ্ঞানী হয়ে বিশ্বের বুকে একদিন বাঁচা মূর্খ হয়ে হাজার বছর বাঁচার চেয়ে উত্তম। অতএব নিজে যা বুঝলাম, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলাম তা আসলেই কতটুকু যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য, উপকারী নাকি ধ্বংসাত্মক, সাংঘষিক, স্ববিরোধী- একগুয়েমি না করে যাচাই-বাছাই, সংশোধন ও গঠনমূলক সমালোচনা প্রাপ্তির উদ্দেশে খোলামেলাভাবে নিজের বক্তব্য চিন্তাশীল ও বিচারকদের সামনে উপস্থাপনের বিকল্প নেই।
দুই.
বাংলাদেশের এক ট্রেনযাত্রী স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে স্টেশন মাস্টারকে প্রশ্ন করল : আচ্ছা, প্রতিটা ট্রেন যদি প্রত্যেকবারই এত লেট করে আসবে তাহলে এই সময়সূচিগুলো দেয়ার মানে কি? তিনি উত্তর দিলেন : জনাব, এই সময়সূচি নির্দষ্ট সময়ে ট্রেন আসার জন্যে না বরং কত ঘন্টা লেটে আসল তা বুঝার জন্যে। তেমনি আমিও এগুলো লিখেছি মূলত লেখক হওয়ার জন্য বা আমার লেখা ভালো প্রমাণ করার জন্য নয়, বরং লেখাগুলো কতটুকু খারাপ, চিন্তাশীল ও বিচারকদের নিকট অগ্রহণযোগ্য, সর্বজনীন পর্যায়ে অপ্রয়োগযোগ্য তা নির্ণয় করার জন্য। কারণ যদি সমালোচনা গ্রহণের দৃষ্টিতে লিখি তাহলে এক সময় ভুলগুলো ধরা পড়তে পারে, কিন্তু যদি না-ই লিখি তাহলে ভালো বা খারাপ কোনোটাই তো প্রমাণ হবে না। এ সূত্রে ‘সমালোচনা’ শুধু সাদরে গ্রহণই নয়, রীতিমতো সমালোচনার আহ্বান জানানো প্রত্যেক লেখকের একান্ত কর্তব্য। সম্মানিত বিচারকগণের সিদ্ধান্ত, বিরোধী পক্ষসমূহের লাগাতার প্রশ্নের জবাবে টিকে থাকা এবং মডেল উপস্থাপন ছাড়া সব লেখাই অর্থহীন, তা যত শক্তিশালী, বাস্তবধর্মী ও আদর্শভিত্তিকই হোক না কেন। যদিও সম্ভাবনাময় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সূত্রে একটা মূল্য থাকতে পারে। সুতরাং আমি খোলামনে সমালোচনা আহ্বান করছি।
‘রাজনীতির মুখোশ’ ও ‘মনুষ্যত্বের বিকাশের’ মতো অমন স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে পরিমাণ গবেষণা, চিন্তাশীলতা, গভীরতা ও মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন ছিল তা দিতে পারিনি বলে পাঠকগণের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। এক্ষেত্রে যেকোনো প্রশ্ন করা হলে আমি প্রস্তুত এবং এ পথে যেকেউ গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ হলে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আর পাঠকদের পক্ষ থেকে প্রচুর প্রশ্ন করাও উচিত। পাঠকের হাতে বই পৌঁছে দিয়েই লেখকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, বরং এখান থেকেই একজন প্রকৃত লেখকের দায়িত্বের শুরু। সুতরাং লেখক-পাঠকের মাঝে কোনো বাধা থাকা কাম্য নয়। উপরে ‘সাহিত্য’ সম্পর্কে আমি যে মন্তব্য করেছি তা অনেক লেখক-পাঠককেই আঘাত করতে পারে, করাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত তো বটেই, সংকীর্ণ পরিসরে
প্রচলিত প্রতিটি বিষয়েরও একটি ‘তাত্ত্বিক’ ভিত্তি থাকে; কোনো কোনোটি খুবই মজবুত, যা আমরা সাধারণভাবে জানতে চেষ্টা করি না। না জেনেই বিরোধিতা করি। কথিত সাহিত্যের ক্ষেত্রে আমি সেটি যথাসম্ভব জেনে-বুঝেই লেখক হিসেবে কেবল আমার অভিমতটুকু ব্যক্ত করেছি, অন্যকিছু নয়। তা নিয়ে পরবর্তীতে কথা চলতে পারে, বিপরীত মতকে স্বাগত জানাই। আমরা আজ যে সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত, প্রশ্ন হতে পারে ‘তা যদি কল্প-কথা, গল্প-গুজব, সময় নষ্ট আর অর্থহীনই হতো তাহলে এত ‘বড়’ ‘বড়’ লেখক-সাহিত্যিকগণ এটি নিশ্চয় করতেন না।’ জনাব, এ বিষয়টা নিয়ে আজ আর কথা বলছি না, পরে এক সময় বলার ইচ্ছে রইল। তবে আজ এতটুকু বলি, চিন্তা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ‘অমন বড় বড় ব্যক্তিগণ’ এমনটি বলেছেন বা করেছেন কথাটি চলতে পারে না, বিশেষ করে মানবিক ‘বুদ্ধির সীমানা’র ভেতরের বিষয়গুলো নিয়ে। আজ যেখানে বুদ্ধিবহির্ভূত অনেক বিষয় নিয়ে, ধর্মীয় সর্বসম্মত মনীষী ও মহাপুরুষদের নিয়ে অপসমালোচনা ও কটূক্তি করতে সমাজের একটা শ্রেণি পিছ পা হয় না, সেখানে বাদবাকি ‘বড় বড়’ অমুক-তমুকেরা তো ছাই।
তিন.
প্রতিটি মানুষ বিশ্বজনীন হলেও তার নিজস্ব দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত ও আচ্ছন্ন হয়, এমনকি কখনো কখনো এগুলোকে কেন্দ্র করেই তার সর্বজনীন চিন্তা ও কর্মধারা বিকশিত হয়। তাছাড়া এসব একটার সঙ্গে অন্যটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বহু বছরের অসংখ্য চড়াই-উৎরাই পেরিয়েও বাংলাদেশ আজ যে সমস্যা ও সংকটে নিপতিত, তা নিয়ে মিডিয়ায় বিশিষ্টজনদের আলোচনা, পর্যালোচনা, লেখালেখি ও বিশ্লেষণ কম হচ্ছে না। কিন্তু এ সত্ত্বেও ওসবে এমন একটা অভাব নিশ্চয় আছে, যা বিদ্যমান বৈষম্য ও জুলুম অত্যাচারের মূলোৎপাটন না করে বরং টিকিয়ে রাখছে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, আমাদের প্রাত্যহিক আলোচনা সমালোচনাগুলোতেই সমস্যা লুকিয়ে আছে। এগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী সমাজ-রাষ্ট্রের শুধু ‘উন্নয়নই’ দেখতে পান, অবনতি বা সমস্যার ভয়াবহ স্রোত দেখতে পান না। তাদের টনক নড়ে যখন সমস্যার বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু ভেতর ঠোসা হতে হতে এক সময় যখন রাষ্ট্র চূড়ান্তভাবে ভেঙ্গে পড়বে, তখন টনক নড়লেও কাজ হবে না। উন্নয়নের হিসেব বের করতে হলে আমাদের সম্পদ, মেধা, জনশক্তি, রেমিটেন্স ও জনগণের চাহিদার আপেক্ষিক তুলনা করতে হবে। অবনতিগুলো পাশাপাশি রাখতে হবে।
এ কথাটি আমি বইয়ে দু’এক জায়গায় সামান্য বলতে চেষ্টা করেছি। যে-কোনো ছয়মাসের দৈনিক পত্রিকাগুলো হাতে নিন, তারপর সুসংবাদ ও দুঃসংবাদগুলো পর্যালোচনা করুন। হিসেব পরিষ্কার। তারপরও শাসকগোষ্ঠী কীভাবে বারবার জনগণকে ধোঁকা দেয় আমার বুঝে আসে না। ইতিহাসে ধর্ম ও রাজনীতির এমন কিছু সত্য আছে যা কায়েমি স্বার্থবাদীরা জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করে না, অথচ সেগুলো প্রকাশ করা উচিত। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ধর্ম ও রাজনীতি কখনোই এবং কোনোভাবেই নব্বই শতাংশ জনসাধারণের বিপক্ষে যাবে না, বরং গরীব-দুঃখী, ভূখা-নাঙ্গা জনমানুষের কল্যাণেই ধর্মের অপরিহার্যতা এবং রাজনীতির উদ্ভব। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি এর উল্টো।
প্রবীণ ও বুদ্ধিজীবীগণের একটা শ্রেণি পত্র-পত্রিকায় বিরামহীন লিখেই যাচ্ছেন। বই-পুস্তকও লিখছেন প্রচুর। কিন্তু পাঠকের সঙ্গে সংযোগ নেই। যুবসমাজ এসব খুব কমই পড়ে। এমনকি লেখকের অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ও কষ্টসাধ্য লেখাগুলোও তারা এক কথায় উড়িয়ে দেয়। কারণ তারা দেখে আসছে বছরের পর বছর ধরে এসব লেখার দ্বারা কিছুই হচ্ছে না, কেবল লেখকের নিজের পয়সা রুজি ও যশ-খ্যাতি ছাড়া। শিক্ষিত তরুণরা ইদানিং অবসর সময়টুকু নেটে কাটায়। এখানে লেখক-পাঠক চমৎকার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সরাসরি প্রশ্নোত্তর ও মতবিনিময়ে কোনো বাধা থাকে না।
তাছাড়া তারা কেবল দর্শক-শ্রোতা-পাঠক হয়েই থাকতে চায় না, সংকট উত্তরণ ও পরিস্থিতির উন্নয়ন-পরিবর্তনে কিছু বলতে, লিখতে ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে চায়। তাই আমি মনে করি, অনলাইন-অফলাইনে নবীন-প্রবীণের সংযোগ ঘটানো জরুরি। বহুমুখি মত ও পথের পারস্পরিক উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ ও প্রশ্নোত্তর জরুরি। আর প্রকৃত চ্যালেঞ্জ সেটাই, যেখানে প্রতিপক্ষকে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা এমনকি হাতের তরবারিটি পড়ে গেলে তা তুলে দিয়ে তারপর লড়াই করতে হবে।
চার.
কেবলই রাজনৈতিক সমালোচনা ও চিৎকার-চেঁচামেচির আমার কাছে কোনো মূল্য নেই। তবে সব তত্ত্ব ও জ্ঞান যেহেতু একটা সময় সমাজ-বাস্তবতায়ই প্রয়োগ হয়, এছাড়া তত্ত্ব ও জ্ঞান যত সুন্দরই হোক-কোনো মূল্য নেই, সেহেতু সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলী ও ধর্মীয়-সামাজিক নানা বিতর্কিত বিষয়গুলোকে উপলক্ষ করে ‘মনুষ্যত্ব’ বিষয়ে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া রাজনীতির প্রতি আমার কোনো আক্রোশ নেই বা এখানে ‘রাজনীতির মুখোশ’ বলতে রাজনীতিকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি, বরং রাজনীতির মুখোশের পাশাপাশি ‘মনুষ্যত্বের বিকাশ’ প্রসঙ্গটি এনে বুঝানো হয়েছে, মনুষ্যত্বের বিকাশের মহান লক্ষ্য ছাড়া শুধুই জাগতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির আওয়াজ রাজনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও কলুষিত করে, রাজনীতির মানবকল্যাণকামী প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করে। তাই যদি কোথাও আমার রাজনৈতিক লেখার সঙ্গে তাত্ত্বিক লেখার বিরোধ দেখা দেয় সেখানে তাত্ত্বিক লেখাই প্রাধান্য পাবে।
এমনকি সবগুলো রাজনৈতিক লেখাকে ছুঁড়ে ফেলতে ইনশাআল্লাহ এক মুহূর্ত ভাবব না। কারণ বর্তমান রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম, মানবতা, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, অধিকার, মুক্তি, সত্য, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের মধ্যে এত অজ্ঞতা ও অস্পষ্টতা বিরাজমান যে, যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রচণ্ড সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কখনও সমাজ যে শব্দটা যে ‘ধারণার’ উপর ভিত্তি করে ব্যবহার করে, আমিও তাই করেছি। কারণ আমার স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ সমাজে প্রতিষ্ঠিত বা প্রচলিত নয়। আবার কখনও ওই শব্দকে আমার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রয়োগ করেছি। যেহেতু প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত ধারণার সঙ্গে আমি একমত নই। এসব বিষয় সবসময় ব্যাখ্যার সুযোগ পাইনি। তাই বিভিন্ন বিষয় নিয়েই পাঠকগণ ‘স্ববিরোধীতা’ খুঁজে পেতে পারেন, যদিও প্রকৃতপক্ষে তা নয়। যেমন একটি লেখায় বলেছি, “ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার বা ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি’ নিষিদ্ধের পায়তারা ধর্মের জন্য অবমাননাকর নয়। বরং সর্বদা সংঘাতমুখর ‘কথিত রাজনীতি’ থেকে ধর্মের দূরে থাকাই উত্তম”।
আবার অন্য জায়গায় বলেছি, “আজ ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার কথা বলা হচ্ছে, শিক্ষা ও সাহিত্য থেকে আলাদা করা হচ্ছে, করা হচ্ছে সমাজ ও পরিবার থেকেও আলাদা। শেষে ব্যক্তিজীবন থেকেও অবশ্যই। ঠিক যেমন একজন মানুষের শরীর থেকে হাত-পা, চোখ-কান-নাক, মাথা আলাদা করে ফেলা। তাহলে ধর্মের স্থান কোথায়?” এক জায়গায় বলেছি, “রাষ্ট্র ও ক্ষমতার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই”। অন্য জায়গায় এটা ব্যাখ্যা করেছি এভাবে, “হুজুররা যখন এ জাতীয় (গতানুগতিক) রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন, তখন চোখ বুজেই বলে দেয়া যায়Ñ এ ধরনের রাষ্ট্র ও ক্ষমতার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।” আরও উদাহরণ দেয়া যায়। একটি লেখায় বলেছি, “বস্তুত ধর্মের সঙ্গে কোনো মানুষের বিরোধ নেই।” অন্য জায়গায় লিখেছি, “মানবিক স্বভাব-প্রবৃত্তি, জীবনাচার ও সংস্কৃতিতে আল্লাহ (রাসূল ও ধর্মও) দারুণভাবে আঘাত হানেন।”
(প্রসঙ্গক্রমে এমন আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়- হাদীস শরীফে আছে, “প্রত্যেক শিশু ফিতরতের [ইসলাম/সত্য গ্রহণের যোগ্যতা] উপর জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু পরিবার ও সমাজ তাকে ইহুদি, খৃস্টান, অগ্নিউপাসক ইত্যাদি বানায়।” আবার একথাও আছে, “প্রতিটি মানুষের সঙ্গে একটি করে শয়তানও নির্দিষ্ট হয়ে যায়।” এখানে ‘শয়তান’ বলতে জীন জাতির একটা শ্রেণিও হতে পারে, আবার ‘প্রবৃত্তি’ অথবা দু’টোই হতে পারে। সুতরাং কেউ যদি স্বভাব-প্রবৃত্তি ও মানবিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকেই ‘ধর্ম’ বলেন, তাহলে বিভ্রান্তি দেখা না দিয়ে পারে না। অথচ আহমদ শরীফ ও অপরাপর নাস্তিকগণ এমনই বলে থাকেন। ফরহাদ মজহার তার মোকাবিলা গ্রন্থের ০৯ ও ১০ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন, “মানুষের ধর্ম কি এই প্রশ্ন করলে আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হওয়া বা না হওয়া বুঝি না। ভাব, ভাষা, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি সবকিছুই বুঝি এবং এক পর্যায়ে ধরে ফেলতে পারি ধর্ম ও মানুষ আসলে একাকার ব্যাপার।” অথচ ধর্ম ও মানুষ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ধর্ম মানুষের প্রতি কোনোভাবেই নির্ভরশীল নয়, কিন্তু মানুষ ধর্মের প্রতি নির্ভরশীল। যেমনভাবে মাটি-পানি-আলো-বাতাস, গাছ-পালার প্রতি মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু এগুলো মানুষের প্রতি নির্ভরশীল নয়।
আমি সংক্ষেপে এক জায়গায় এর উত্তর দিয়েছি, “মানুষের ‘স্বভাবধর্মে’ সমস্যা আছে। শুধু সমস্যাই নয়, মারামারি-হানাহানি-কাটাকাটি, হিংসা-বিদ্বেষ ও ধ্বংসাত্মক উপাদানও আছে। মানবজাতির এইসব স্বভাবধর্মের সমস্যার সমাধান মানুষের বুদ্ধিপ্রসূত জ্ঞানের ভেতরে নেই। কেননা মানবিক ‘বুদ্ধিশক্তিও’ তার স্বভাবধর্মের ভেতরে। যে কারণে আজ দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বস্তুগত শক্তির চরম উন্নতি এবং বুদ্ধিপ্রসূত জ্ঞানের বৈপ্লবিক বিকাশ সত্ত্বেও মানবজাতির সমস্যার অন্ত নেই। অতীতের যেকোনো যুগ ও সময়ের চেয়ে বরং বেশিই বলা যায়।” স্বভাবধর্ম ও বুদ্ধিশক্তির সীমাবদ্ধতা তিনি নিজেও এক লেখায় স্বীকার করেছেন এভাবে, “বুদ্ধিকে সামলে রেখেছি, কারণ ‘বুদ্ধির অহমিকা’ বারবার প্রকৃতির সঙ্গে আমার সম্বন্ধ রচনার ক্ষেত্রে আগাম বাগড়া দিতে থাকে।” দৈনিক যুগান্তর, ১৩ জুলাই, ২০১৩। তাহলে দেখা যাচ্ছে তার কথাও স্ববিরোধী। তবে এর ব্যাখ্যা তার অন্যান্য লেখায়ও খুঁজতে হবে। পাওয়া গেলে ভালো কথা, আর পাওয়া না গেলে প্রশ্নের পর তিনি কি বলেন তা না জেনে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা সঙ্গত নয়।)
বইয়ের বিভিন্ন জায়গার এ বিপরীতমুখী কথাগুলো মিলিয়ে দেখতে হবে। কোথাও ব্যাখ্যা এসেছে সঙ্গে সঙ্গেই, আবার কোথাও এসেছে পরে, অন্যখানে। আর যে ব্যাখ্যাগুলো মোটেই আসেনি বা নতুন কোনো প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু উত্তর আসেনি, সেগুলো আল্লাহ চাহে তো ভবিষ্যতে আসবে। যে-কোনো একটি নতুন বা ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তাধারা যতটা না উত্তর দেয়, তারচেয়ে বেশি প্রশ্ন সৃষ্টি করে এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্নই যদি সৃষ্টি না হয়, উত্তর আসবে কি করে? অবশ্য কোনো কোনো জায়গায় স্ববিরোধিতা থাকতেও পারে, এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। বিশেষ করে রাজনৈতিক কথা বলতে গেলেই এমন সমস্যা অনিবার্য। চেষ্টা করেছি বিপরীতমুখী দল ও মতের সমন্বয় ঘটাতে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমার মতো অনভিজ্ঞ লেখক-চিন্তকের কোথাও কোথাও গুলিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক নয়। ‘সমন্বয়’ আর ‘গুলিয়ে ফেলা’ এক জিনিস না। আরেকটি সমস্যা হল, এক্ষেত্রে চেষ্টা করেও আমাদের মতো কারও পক্ষে নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব হয় না। এটা বেশিরভাগই অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে। যদিও প্রকৃতপক্ষে মানসিক ও মানবিক দিক থেকে প্রতিপক্ষের প্রতি আমি অনেক উদার। পূর্বে লিখিত এ রাজনৈতিক লেখাগুলোর সঙ্গে তাত্ত্বিক লেখা এমনভাবে মিশে আছে যে, তা আলাদা করা শ্রম ও সময়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে পাঠক-সমালোচকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে পরবর্তী সংস্করণে নজর দেয়ার ইচ্ছে রইল। অথবা পরবর্তী বইটিও হতে পারে এর মাইলফলক।
পাঁচ.
এ বইটা গত এক বছরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত ঘটনাবলী বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এর সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ, আমার মূল্যায়ন ও দিক-নির্দেশনামূলক লেখা। কিছু অংশ ফেসবুক-ব্লগে এবং দু’চারটি লেখা বিভিন্ন সময় দু’একটি কাগজেও প্রকাশিত হয়েছে। তবে বই হিসেবে বের করতে গিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সাজিয়েছি। দৈনিক পত্রিকার অধিকাংশ কলামের যেমন পরবর্তীতে কোনো উপযোগিতা থাকে না, তেমনটি যেন এখানে না ঘটে সেই চেষ্টা করেছি। তার পরও যেহেতু খুব দ্রুত কাজ সম্পন্ন করেছি, বিভিন্ন টুকরো অনুভূতি জোড়া লাগিয়েছি এবং সাথে কোনো সহযোগী পাইনি, তাই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও অসামঞ্জস্য থাকবেই। আমি শতবার স্বীকার করি, জ্ঞানের উচ্চতর স্তরে এ জাতীয় লেখার কোনোই মূল্য নেই; বরং চরম সমস্যাপূর্ণ ও বিতর্কিত, এটা আমি নিজেও উপলব্ধি করি। কারণ উচ্চতর আলোচনাগুলোতে একমাত্র জীবনমুখি ও আত্মকেন্দ্রিক বা আত্মসমালোচনাধর্মী আলোচনা ছাড়া এসব বিতর্কিত, দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট, ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক, তীর্যক কোনো কথা স্থান পেতে পারে না। সেগুলোতে প্রত্যক্ষ কারও সমালোচনা থাকবে না, কিন্তু পরোক্ষভাবে সবারই সমালোচনা থাকবে। সম্ভবত দেশ-কালের পার্থক্য এবং বিশেষ কোনো দল, গোষ্ঠী, স¤প্রদায়ের উল্লেখ থাকবে না, বরং ‘মানুষ’ হিসেবে সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করবে। এ পর্যায়টা অনেক সূক্ষ্ম, কঠিন ও তাত্ত্বিক।
রাজনীতি- বর্তমান বিশ্বে এমনকি বাংলাদেশেও অন্যতম প্রধান আলোচিত-সমালোচিত বিষয় হলেও এ বইয়ের মূল বিষয় ‘মনুষ্যত্বের বিকাশ’। সুতরাং রাজনৈতিক বক্তব্য কিছুটা এদিক-সেদিক হলেও মানবিক ও তাত্ত্বিক কথাগুলো দৃঢ়। পুরো বইজুড়ে আমি মনুষ্যত্ব প্রসঙ্গে সামান্য কিছু মৌলিক বিষয় বলতে চেষ্টা করেছি এবং ভবিষ্যতে এসবের আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ। রাজনৈতিক লেখা, মন্তব্যধর্মী কলাম ইত্যাদিতে যা বলা হয় তা অধিকাংশই সাধারণ জনগণ ও খেটে-খাওয়া মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অনুভূতি ও অনুধাবনগুলো আমাদের বিশিষ্ট লেখক-চিন্তাশীলদের চেয়েও মূল্যবান, শক্তিশালী। এটা যেকেউ তাদের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবেন। তবে সমাজ পরিবর্তন, গঠন, মনুষ্যত্ব ও এর বিকাশ সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সাধারণ জনগণ ও খেটে-খাওয়া মানুষ তেমন কিছু বলতে পারেন না। সুতরাং আমাদের কাজ হল সেই দিকটি নিয়ে যতবেশি সম্ভব বলা ও কাজ করা। আমি তাই করতে চেষ্টা করেছি। তবে সমস্যা হল, অনেকের কাছেই, বিশেষ করে যে নতুন প্রজন্মটি শীঘ্রই দেশ পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে তাদের কাছে এ জাতীয় তাত্ত্বিক আলোচনা শুধু কঠিনই ঠেকে না, অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বর্জিত হয়।
প্রতি মুহূর্তে দেশ-বিদেশে ঘটছে অগণিত অসংখ্য ঘটনা-দুর্ঘটনা। এসব ঘটনা-দুর্ঘটনার, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণগুলোর প্রকৃত সংবাদ প্রাপ্তি মানবসভ্যতার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এক্ষেত্রে আমরা সরাসরি মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল। আর মিডিয়া অর্থাৎ টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলোও দাবি করে তারা ‘নিরপেক্ষ’ ও ‘বস্তুনিষ্ঠ’ সংবাদ প্রচার করে। অথচ যেকোনো সংবাদ- মালিকের স্বার্থ ও পক্ষপাতিত্ব তো আছেই- সংবাদ সংগ্রহের পর যে সাংবাদিক সেটা তৈরি, সরবরাহ ও পরিবেশন করেন তার চিন্তা-চেতনা-দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারাও প্রভাবিত হয়। কখনো ইচ্ছাকৃত, কখনোবা অনিচ্ছাকৃত। এ থেকে বাঁচার উপায় কি? আসলে সব সমস্যার মূল এক জায়গাতেই। সেটা হচ্ছে- মানবিক সঙ্কীর্ণ স্বার্থ, গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি, সীমিত চাহিদা পূরণের তাড়না ইত্যাদি দ্বারা প্রায় প্রতিটি মানুষ চালিত। এ থেকে বাঁচতে সৃষ্টি দর্শন, মানবিক অসীম চাহিদার বিপরীতে অসীম দুর্বলতা, বিপরীতমুখী অবস্থার চাপ- এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে উপলব্ধি করা।
ছয়.
আমরা যা লিখি বা বলি তা যদি নিজেকে উদ্দেশ্য করি, করতে পারি তাহলে সমস্যার অধিকাংশই সমাধান হয়ে যায়। এখানে যা লিখেছি তা আমার নিজের উপরও পড়ে। নারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক জায়গায় লিখলাম, “বহু আলেম, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় গুরু ও চিন্তাশীল ব্যক্তিও এ সমস্যা থেকে মুক্ত নন। কারণ এক্ষেত্রে কেবল ‘আধ্যাত্মিক’ ক্ষমতায় পার পাওয়া যায় না। শারীরিক সক্ষমতাও থাকতে হয়।” অন্য জায়গায়, “জাতির এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটের জন্য দায়ি কারা? ‘এস্টাব্লিস্ট’ বলতে যাদের বুঝায় অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত সব লেখক-সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও রাজনীতিকরাই দায়ি। এমনকি ‘প্রতিষ্ঠিত’ ধার্মিক এবং প্রতিষ্ঠিত অন্যরাও। কারণ এরা গরীবের আওয়াজ তুলে প্রতিষ্ঠা পায়, তারপর হিসেব পাল্টে ফেলে...।” অর্থাৎ গরীব-দুঃখী ও দুর্বলের আওয়াজ তুলে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর আরামসে জীবন...। এ কথাগুলো সরাসরি আমার প্রতিও প্রযোজ্য।
প্রায় প্রতিটি মানুষ আশ্চর্যরকম শক্তিসম্পন্ন। একজন সব বিষয়ে পারদর্শিতা দেখাতে না পারলেও নির্দিষ্ট বিষয়ে তার দক্ষতা ও নৈপূণ্য অন্যদের নিকট ‘অলৌকিক’। বিশেষ করে যদি কোনো বিষয়ে কারও স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য থাকে, সেক্ষেত্রে তেমন সাধনাও করতে হয় না। তবে সাধারণভাবে যেকেউ যেকোনো বিষয়েই চেষ্টা-সাধনার পর যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। এক্ষেত্রে পারা বা না পারা প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে করা বা না করা। আপনি কোনটা করতে চান বা হতে চান? ক্রিকেটার, সাহিত্যিক, বৈমানিক, রাজনীতিক, নাকি একজন আদর্শ শান্তিকামী মানুষ, আধ্যাত্মিক পুরুষ, সত্যিকার সমাজসেবক, মানবকল্যাণকামী? এই করা বা না করা, হওয়া বা না হওয়ার পেছনে শিক্ষা, জ্ঞান, চিন্তা, রুচি, আদর্শ এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
সাত.
এখানের বিভিন্ন কলামে রাজনৈতিক আলোচনায় নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ঘটনাবলীর উল্লেখ থাকলেও এবং ‘ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট’, ‘চরম অস্থিতিশীলতা’, ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করলেও আমি মূলত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সমস্যা বা সংকটে সীমাবদ্ধ থাকছি না। কেননা এসব সমস্যা যেমন একদিনে সৃষ্টি হয়নি, একদিনে মীমাংসাও হবে না। তাই আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে, কিভাবে ধীরে ধীরে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায়, শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, পারস্পরিক সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে কাজ করে যাওয়া। কাজ অবশ্য হচ্ছে প্রচুর। বলা যায় চারদিকে বইছে ‘কাজের’ জোয়ার। সুতরাং বর্তমানে স্বতন্ত্র কাজের চেয়ে বরং অপরাপর কাজগুলোর সমন্বয়টাই বেশি জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা, গবেষণা, শিক্ষা, সচেতনতা ও জ্ঞানগত বিপ্লবের মাধ্যমে একটি টেকসই সমাজ ও রাষ্ট্র আমাদের গঠন করতে হবে। এতে কাজের চেয়ে ‘চিন্তার’ প্রাধান্য ও মূল্যায়নই বেশি থাকতে হবে। এমনকি চিন্তার চেয়েও বেশি প্রাধান্য ও মূল্যায়ন পেতে হবে আত্মসমালোচনা, বিরোধীদের নিকট সমালোচনা চাওয়া, নিজেদের সংশোধন, প্রশ্নোত্তর ও সমন্বয় সমঝোতা।
ক’দিন আগে সীমিত পরিসরে অনলাইনে একটি জরিপ চালিয়েছিলাম, দেশের তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ দশ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সন্ধানে। চিত্রটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। এমন কাউকে পাওয়া যায়নি যিনি পক্ষপাতিত্ব করেন না এবং বিতর্কিত নন। অবশ্য ‘বিতর্কিত’ নিয়ে আমার কথা আছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে বিতর্কিত করতে চাইলে সময়ের পরীক্ষায় তা উত্তীর্ণ হবে না, এক সময় বিতর্ক মিলিয়ে যাবেই। আর মিলিয়ে না গেলেও ক্ষতি নেই, চাঁদ ও সূর্যের যতই সমালোচনা করা হোক, ওদের কিছু যায় আসে না, অবশ্য ওদের লাভও হয় না। কিন্তু মানুষের লাভ হয়, ইহ ও পরকালে দু’জগতেই। সমালোচনা যত ভিত্তিহীন হবে, লাভ তত বেশি। আর যে করবে তার লস। তাই বিতর্কিত হওয়াকে প্রকৃত বীরের ভয় নেই। আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতি দূষিত হয়ে পড়ায় অনেক চিন্তাশীল ও জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি বিতর্কিত হওয়ার ভয়ে মাঠে নামেন না। অথচ তারা কিন্তু নিজ নিজ ক্ষুদ্র পরিসরেও বিতর্কমুক্ত নন, থাকার পথ নেই। কারণ সর্বব্যাপী দূষণের ভয়াবহ স্রোতে ধার্মিক-অধার্মিক সবাই-ই ভেসে যাবে।
একটা বিতর্ক খুবই পুরনো, কিন্তু ক’বছর পরপর নতুন মাত্রা পায়। বাংলাদেশ কি অদূর ভবিষ্যতে একটা মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবে, নাকি কথিত প্রগতিশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে? কেউ কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে এ বিতর্কটা উস্কে দিচ্ছেন এবং বলছেন এ নির্বাচনেই তা ‘নির্ধারণ’ হবে। কী অদ্ভূত! এমনসব ফাঁকা তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য আমাদের রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের বাহবা দিতেই হয়। যে বিষয়টা গত বিয়াল্লিশ বছরে মীমাংসা হয়নি, তা এ নির্বাচনেই...। এ তত্ত্বে আমরা কতটুকু এগিয়েছি তা বুঝা না গেলেও কতটুকু পিছিয়েছি, পারস্পরিক শত্র“তা কোন মাত্রায় বেড়েছে এবং একপক্ষ অন্যপক্ষকে ‘শেষ’ করে দেয়ার চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে তা স্পষ্ট। মূলত কেউ কাউকে শেষ করতে পারবে না এবং আরও বছরের পর বছর এমনকি যুগের পর যুগ এ যুদ্ধ চলতেই থাকবে। যদি এ শব্দগুলোর বাস্তবতা ও প্রকৃত অর্থ আমরা অনুসন্ধান না করি। এগুলো বস্তির দুই মহিলার ‘বিশ’ ও ‘কুড়ি’র যুদ্ধ। একজন বলছে সে তার নিকট বিশ টাকা পায়, অন্যজন অস্বীকার করে বলছে কুড়ি টাকা। কতবড় মিথ্যুক!
নভেম্বর, ২০১৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৯
টি-ভাইরাস বলেছেন: হুদাই কোন লিংক নাই ... ফাউল পোস্ট
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩১
জাকির এ মাহদিন বলেছেন: ওফ! ভাইজান সরি, একটু সমস্যা হয়েছিল। আশা করি এখন ঠিক হয়েছে।
৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৫
রাজীব বলেছেন: লিংক কই???????????
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৯
জাকির এ মাহদিন বলেছেন: http://www.zakirmahdin.com/archives/18
লিংক দিলেম ভাইজান।
৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৫
জাকির এ মাহদিন বলেছেন:
৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫২
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: @লেখাক,
পরলাম, গুডলাক!
যতটুকু পড়েছি, আমার মনে হয়নি যে, আপনি কোন কিছু সৃস্টি করেছেন! যাক, পাঠকেরা কিছু পেলে ভালো হবে।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
জাকির এ মাহদিন বলেছেন: ধন্যবাদ।
মাইন্ড করবেন না, একটা বিষয় বলি। মানুষের ক্ষেত্রে "সৃষ্টি করা" শব্দটি ব্যবহারে আমার কিঞ্চিৎ আপত্তি আছে। সৃষ্টি করেন যিনি স্রষ্টা, আর মানুষ নিজেই সৃষ্টি। সুতরাং সৃষ্টি কখনো সৃষ্টি করতে পারে না। জানি, এতে অনেকেই আপত্তি করবেন, যুক্তি দেখাবেন।
যাহোক, প্রচলিত ধারায় না থেকে লিখলে কেউ পড়বে বলে মনে হয় না। এর ভেতরে থেকেই যদ্দুর সম্ভব নতুন কিছু ব্যাখ্যা হাজির করেছি আমার মনে হয়। যেমন, ধর্ম ও রাজনীতির পেশাভিত্তিক ব্যবহার, নারীদের বৃহত্তর চেতনা, চিন্তা ও দায়িত্বের পরিসর ধর্ম কর্তৃক স্বীকৃত হতে পারে ইত্যাদি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১২
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: বইটির সারাংশ লিখুন, পছন্দ হলে পড়া যাবে।
রাজনৈতিক বই? কোন তত্ব আছে, অরথনীতি আছে, দেশের সমস্যা সমাধানের কোন তত্ব আছে? মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরণের কোন সমাধান আছে?