![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।
আমি এখনো নাস্তিক হবার স্বপ্ন দেখি। এটাকে আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বলা চলে। এ নিয়ে স্বপ্ন এবং মোহ দুটো ধারা-ই সমান তালে বহমান। অন্য মতকে খাটো করা কিংবা নিজের জন্মগত ধর্মকে কটূক্তি করে বাহবা পাবার বাসনা যেহেতু ছিলনা তাই এ বিষয়ে কারো সাথেই দীর্ঘ তর্কে কখনো আমি যাইনি। কোন কিছুকেই পুরোপুরি অসহ্য মনে হয়নি এই ভেবে যে, আমি যা কিছু খারাপ ভাবি অন্য কেউ হয়তো একে পছন্দ করে। অন্যের পছন্দকে ঠাট্টা করার কোন অধিকার আমার নেই। অন্য মতকে সহ্য করতে করতে-ই তো মানুষ অন্যকে সম্মান করতে শেখে তাইনা? এই পৃথিবীতে কবে কে জীবন দর্শনের সংজ্ঞাকে দাড়ি-কমা দিয়ে স্থিতিশীল করতে পেরেছিল বলতে পারেন? মনে হয়না কোন সিদ্ধান্তে পৌছা যাবে। অন্তত আমার জানা নেই। মানুষের শিক্ষা জীবন ঠিক কবে থেকে শুরু হয় তাও আমি ভাল ভাবে বলতে পারবনা। জন্মের পর যদি শিশু শিখতে শুরু করে তবে সে দুধ খাওয়া শিখে কখন? প্রথম কান্নার প্রয়োজনটা কি? যে শিশু জন্মের বিশ-বাইশ সেকেন্দের ভিতর কাঁদে না সে শিশু বাঁচেনা, বাঁচতে পারেনা। এই চিৎকার করার শিক্ষাটা সে পায় কোথায়? ভাবনার বিষয়।
আমার মনে আছে খুব ছোট বেলায় আমি ভীষণ রেগে আম্মাকে বলেছিলাম, তুমি জাননা আমি বেগুন খাইনা? তবু আব্বা প্রতিদিন প্রতিদিন এইসব বাজে জিনিস কেন কিনে আনে ? গ্রামে বসবাস করা সামান্য শিক্ষিত এই মহিলা ম্লান হেসে বললেন, তুমি পছন্দ করনা বলেই সবাই তা অপছন্দ করবে বলে আশা কর কিভাবে ? আমার স্পষ্ট মনে আছে তখন নিজের বোকামির কারনে মাথা নিচু করে চলে গিয়েছিলাম। নিতান্ত দরিদ্র এই মহিলার চিন্তায় এবং কাজে সামান্যতম স্থলন দেখিনি। অথচ কি বিচিত্র এই জীবন দেখুন, মাত্র তের বছর বয়সে সে সংসারী হয় – বয়স ৩৬ এর মধ্যে পাঁচ পাঁচটি বাচ্চা জন্ম দেয় এবং এদের মানুষ করার যুদ্ধ শুর করে। বিরাট একটা সংসার সাথে গরু বাছুর হাঁস মুরগি জমি জমা তারপর এনজিও তে মহিলাদের লাইগেশন করানোর টার্গেটের চাকরি – মোটামুটি ভয়াবহ একটা অবস্থা বলতে পারেন। বাড়ি ফিরে সেই রান্না বান্না বাজার হাট গোসল খাওয়া এবং রাতে বাচ্চাদের নিয়ে পড়তে বসা। এইসব ছিল তাঁর দিন পঞ্জিকা। নিজের মাকে নিয়ে এতো কথা বললাম কেন? শুনুন, ৩৬ বছর বয়স থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর সে কঙ্কালসার হয়ে বিছানায় পড়েছিল। একটু একটু করে তাঁর গায়ের মাংস গুলো পচে পচে পরত আর সে মরন চিৎকার করত। এই দীর্ঘজীবন তাঁর চিৎকারে চিৎকারে আমরা দরজা বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে তাঁর মৃত্যু কামনা করতাম। আর বাবা অসহ্য হয়ে মোটা বাঁশ দিয়ে তাঁকে পিটাতে থাকত, হিস হিস করে বলত- মর, তুই মর, তুই মর এখুনি।
উপরের আল্লা আর নিচের আব্বা এই দুয়ের অনাচার আমি মেনে নিতে পারিনি। ভাবতাম আল্লা তাঁর প্রিয় সৃষ্টিকে এতো শাস্তি দিতে পারেন না। হয় সে নাই নতুবা সে একচোখা। এমনই কানার কানা যে ডানে বায়ে সামান্য একটু ফিরে তাকানোর প্রয়োজনটাও অনুভব করে না। এর প্রশংসা করে হবেটা কি? আমি দিনে দিনে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। আল্লা- খোদা সংক্রান্ত যে কোন রকম শব্দ শুনলেই মেজাজ খিঁচরে যেতে শুরু করতো। চিন্তা গুলো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হল। আমি নাস্তিকতার প্রথম পর্যায় অতিক্রম করলাম।
লেখাটা শুরু করেছিলাম গুরুগম্ভীর ভাবে । জীবন দর্শনের উপর থিসিস করছি তাই দার্শনিক টাইপ সুচনা । কিন্তু গল্প আজ পেয়ে বসেছে আমাকে। আস্তিক নাস্তিক প্যাঁচাল এখন থাক থাক। আরেকটা ছোট গল্প বলি, কি বলেন? চাপে চাপে পিচ ঢালা রাস্তার মতো হয়ে গেছি। চাপ আর বেশিক্ষন সইতে পারিনা। যাই হোক, এ গল্পটা আমার এক বন্ধুর মুখ থেকে শোনা। হুবুহু তুলে দিচ্ছি –
‘ দোস্ত যামু মতলব । কুমিল্লা থিক্কা নানান প্যাঁচাল কইরা যাইতে হয়। সরাসরি কোন পথ নাই। প্রথমে মুড়ির টিনে ( লক্কর ঝক্কর মার্কা এক জাতীয় বাস ) কইরা চাঁনপুরে গিয়া কোনমতে পৌঁছলাম। এই সামান্য একটু পথ যাইতেই দিনের অর্ধেকটা কাভার। চানপুরে ( চাঁদপুর জেলা ) ঘাটের পাশে খুপরি খুপরি খাবার হোটেল আছে। নিম্ন আয়ের মানুষ, মাঝি-মাল্লা, কুলি লেবার সবাই ওইখানে খাওয়া দাওয়া করে। ভাজা ইলিশ মাছ,ভাত, মাশকলাই’র ডালের প্যাকেজ খাবার হেভি মজা কইরা খাইলাম।
কিছুক্ষন পর ইঞ্জিন লাগানো নৌকায় উঠে গাদাগাদি করে বসলাম- নৌকা ছেড়ে দিল।
দোস্ত, এই দেখ শরীরের পশম খাড়া হইয়া গেছেগা। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। মাঝে মাঝে দুই একটা কচুরি পানা কই থিকা যে ভাইসা আসে, নৌকায় বাড়ি খায় আবার দুরে চইলা যায় দেখতেছিলাম। দুরে আর একটা দেখা যায় এদিকে আসতাছে। হঠাৎ আমার মনে একটা কুচিন্তা ডাকতে শুরু করলো। কিছু কিছু চিন্তা আসে ঝড়ের বেগে কিন্তু যেতে চায়না। মনে হতে থাকলো যে, কচুরিটা আমাগো নৌকায় লাগব আর অমনি নৌকাটা ডুইবা যাইব । আমি সাঁতার জানিনা, বাচার জন্য হয়তো ওই একটা কচুকেই অবলম্বন ধরতে হবে। কি আজগুবি চিন্তা দেখ – একটা কচুরি পানার কারনে এতো বড় নৌকা ডুবব এমন ভাবনার কোন মানে হয়? কিন্তু আমি তপু একটুও অসতর্ক হই নাই। কোন কারন ছাড়াই নৌকা খালি দুইটা পাক খাইল আর আমি দেখতে পাইলাম আমার মুখের খুব কাছে একটা কচুরি গাছ ছন্দে ছন্দে ভাসছে। আমি এই খড়কেই ধরার জন্য হাট বাড়াইলাম।‘
আমি খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিগাইলাম, মরার আগে কলেমা পড়ছিলি? সে রেগেমেগে উত্তর দিল- প্রথমত আমি মরি নাই আত দ্বিতীয়ত কলেমার কথা মনে আসে নাই একবারও। গল্প শেষ।
( চলবে )
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৯
zaku বলেছেন: দেখলেন না কি দিয়া শুরু করি আর কি দিয়া শেষ করি? মাল খাবার আগে মন থাকে একরকম আর পরে হয়ে যায় অন্য রকম। আমার কোন লেখাই কখনো শেষ হয়না। হয়তো অন্য জীবনে অন্য কোনখানে এইসব দিনরাত্রির ধারাবাহিকতা থাকবে.।.।।।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩
জ্যাক রুশো বলেছেন: অনেক ভাল লাগা নিয়ে লেখাটা কিন্তু শেষ করলেন না কেন?