![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।
--হিন্দু বিয়াত যাইবি ?
... যামু যামু। সুবিধা কি ?
--বিয়ার সোমে হিন্দু বেডি গো মাথা ঠিক থাহেনা। সবই সম্ভাব। বুঝলি কিছু ? বলে সপন দে বিশ্রী ভাবে চোখ টিপল।
আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। বয়স আমার বাইশ। কাউকে বলতে পারছিনা কোন মেয়েকে ছুইনি। ইদানিং তো পুরাই মান সম্মানের ম্যাটারে পরিনত হয়েছে ব্যাপারটা। কথাবার্তা ফাইনাল হল। সোমবার সকাল আটটায় আমরা কুমিল্লা থেকে যাত্রা শুরু করবো। যাবো লাকসাম সাহা বাড়ি। সেখান থেকে বরযাত্রী সহ মৌলভীবাজারের শেরপুর। লাকসাম থেকে জাস্ট নয়টায় স্টার্ট। আমরা মিনিট পাচেক আগেই পৌঁছে গেলাম। স্বপন বলল বড় ভাবির বাপের দিকের আত্মীয়, এইজন্য ভাবি খুব গরম গরম ভাব মারতাছে। আমি বললাম, যেহেতু সব ঠিকঠাক, মাতারিরে ফালাইয়া যা। মাগি মনে হয় প্যাচ লাগানের তালে আছে। সমর্থনের আশায় পাশে এসে এইমাত্র দাঁড়ানো মহিলার দিকে তাকালাম। স্বপন ছোঁ মেরে আমাকে তুলে নিয়ে নৌকায় বসিয়ে ডাকাতিয়া নদীর ওপারে চলে গেল। ( ওদের বাড়ি ডাকাতিয়ার পাড়ে )। কিছু বুঝে উঠার আগেই সে জানালো- এটাই তাঁর বড় ভাবি। কিছুক্ষন পর বুলু নামের এক ছেলে এসে খবর দিল- এই বিজাতের বাচ্চায় যদি সাথে যায় তবে বড় ভাবি বিষ খাবে। আমি বললাম- স্বপন, আমারে একটা বাসে উঠইয়া দে। কুমিল্লা ফিরে যাই।
--তোরে বিয়াত যাইতে না দিলে এই বিয়াতে আমি পেছাব করি বলে স্বপন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেছাব শুরু করলো। এই প্রথম আমি হিন্দুদের ই দেখলাম। খানিকটা ভয়ও পেয়ে গেলাম। কি দেখতে এসে কি দেখি।
দুই পক্ষের দীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হল আমরা সবাই যাচ্ছি। যাত্রা শুরু দুপুর দুইটায়। সকাল থেকে চা আর সিগ্রেট খেয়ে বেচে আছি। যারা বিশ বছর আগে ঐ পথে ভ্রমন করেননি তাঁদের কোন ধারনা হবে কিনা আমি জানিনা রাস্তার অবস্থা আগে কেমন ছিল। তেলিয়াপাড়ায় মাগরেবের আজান হল। এক সময় স্বপনরে জিগাইলাম আর কতক্ষন? সে বলল, উই আর ক্লোজার টু দেয়ার গেট। যাক হয়ত আর ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাব। রাত দশটার পর শুরু হল তীব্র ঝড় বৃষ্টি। অবস্থা এমনই যে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। অবশেষে এগারোটার কিছু পরে কুশিয়ারার এক ঘাঁটে নামলাম। নাউ হোয়াট মি স্বপন?
ওই তো আমরা অপর পাড়ে নামব, সপনের সংক্ষিপ্ত উত্তর। আমি ভেবে পেলাম না এই ঝড় বৃষ্টি তে আমরা কুশিয়ারা ক্রস করব কিভাবে? প্রচণ্ড অন্ধকার আর এমন স্রোত নদী পারের কথা চিন্তাই করা যায়না। মিনিট পাচেক পরে দুটি ছোট ছোট নৌকা এলো আমাদের নিতে। আমরা গাদাগাদি করে প্রতিটিতে জনা দশ করে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নৌকা চলতে শুরু করলো। নদী পার হবার বদলে স্রোত ধরে সোজা সামনের দিকে। আমরা মনে হয় কোন একটা বিলের মাঝে ঢুকে পড়লাম। চারিদিকে সাপ ব্যাঙের চিৎকারে কান ঝালাপালা। একসময় সবাইকে নামানোর পর বলা হল আমি আর স্বপন যেন আবার ফেরত গিয়ে বাকিদের নিয়ে আসি। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, বড় যাত্রীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য বিয়ে বাড়ির কেউ এলো না।
বাড়িতে ঢুকে দেখি সব সুনসান। মণ্ডপের সামান্য কিছু চিহ্ন দেখা যায়। ঝড় বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে সব সাফ। রাত এগারোটায় বিয়ের লগ্ন স্থির করা ছিল। সেটা যেহেতু রাখা যায়নি তাই পণ্ডিত বলল একটায় নাকি আরেকটা লগ্ন হবে। সে সময় অতি অবশ্যই বিয়ে হতে হবে। রাত একটায় হল না। এদিকে ঝড় বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে করে সবাই হয়রান। আমাদের কোন খবর তারা পায়নি। ( তখন মোবাইল ছিল না। ) রাত তিনটায় চাইলে আরেকটা লগ্ন হতে পাড়ে এমন ইঙ্গিত দিয়ে পুরুত বিদেয় নিল। আমরা কাক ভেজা হয়ে পৌঁছলাম তিনটারও পরে। ততক্ষনে বিয়ে প্রায় ভেঙ্গে গেছে ভেবে নিয়ে যে যার যার মত চলে যাচ্ছে। মেয়ের বাড়ি চরম অপমানিত। আমরা বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দাঁড়িয়ে আছি। কেউ না আমাদের বসতে বলছে না কোন কিছু হতে চলছে। উঠানের বাইরে দুতিন জন এতক্ষন হাট নেড়ে নেড়ে কথা বলছিল। এখন তাদেরকেও আর দেখা যাচ্ছেনা। হঠাৎই হই হই ধর ধর বলে কিছু লোক দৌড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। স্বপন বলল, দোস্ত কিছু মনে করিসনা। ভেজাল হয়ে গেছে। আমরা এখন পালাতেও পারব না। আটকা পরে গেছি রে... আমাদের সবাইকে এরা মেরে ফেলবে। বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। দু একজনকে দেখলাম মাথা থেকে গলগলিয়ে রক্ত পরছে। যে যেদিকে পারছে পালানোর পথ খুজছে। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
২৫।০৪।১৪ইং
©somewhere in net ltd.