![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।
ডিসি ফরিদের মেজাজ এখন তুঙ্গে। গত দশ বছরে একদিনও হাসি মুখে বের হতে পারেনি ঘর থেকে। এমনিতেই সে দেরী করে ঘুমাতে যায়। এই সংসারে ভোর পাঁচটা থেকেই শুরু হয় চুলাচুলি। শিউলি বিছানা ছাড়ার মিনিট খানেক পরেই বুয়ার বিলাপ শুরু হয়। এই বুড়ির মাথায় এখন আর তেমন চুল নাই। শিউলি সব ছিঁড়া ফেলছে। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে নিজের মাথায়ও হাত বুলাল এক কালের আবাল ফরিদ। এখানেও চুলের চিহ্ন নাই। আফসোস। এই বুয়া আসার পরে তাঁর মাথায় আর কিছু ছিলনা যে ছিঁড়বে। মান সম্মানের মালিক আল্লাহ। যাক ওয় কিছু দেখে নাই। ফরিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্লেডটা লুঙ্গিতে মুছে নিল। দাড়ি কামানোর এত ভাল ভাল কিট থাকতেও সে একটা খালি ব্লেড আর আধা মগ পানি নিয়ে বসে। আজকে হাত আয়নাটাও খুঁজে পায়নি। এই বাসায় আয়না চিরুনি খোজা বৃথা। ফরিদ একবার অতিস্ট হয়ে ভৈরবে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছে শিউলির আম্মাও বুয়ার সাথে মারামারি করত। তাঁর নানী একবার এক বুয়াকে মারতে মারতে নেংটা কইরা ফালাইছিল। শিউলির খুব গর্ব সে তাঁর মায়ের কোন বদ অভ্যাস পায়নি।
ফরিদ মাজারে হাত ছোঁয়াইয়া শপথ করছে আখিরাতে শিউলি হাজার বার আব্বা ডাকলেও নো এক্সকিউজ। এই কয়দিন আগেও মেয়েটা কথায় কথায় নাক মুছত। আর সে-ই কিনা দুই বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়া দিকে -পাশে বাড়ছে। আমি অর্ধেক হইয়া গেছি সাইজে- ভাবে ফরিদ। আফসোস। অফিসের এবারের মেয়েটা বেশ ভালো, চটপটে। এই বিষয়ে শিউলি অন্ধকারে। যতই হালুম হালুম কর না কেন যাইবা চেডের দক্ষিনে- ভাবে ফরিদ। দাড়ি কামানোর শেষ পর্যায়ে এসে সামান্য তাড়া অনুভব করলো । আজ আবার বিষুদবার। যোহরের পরেই সবাই অফিস ছাড়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। সে নিজেই সবচে আগে বেরোয় অবশ্য পরে ফিরে। পলির বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। নানান ঘাটের জল খাইয়া এখন ডিসি ফরিদের পিএস কাম ম্যানেজার। কর্মচারী মোটে চারজন। একেকজন বিভিন্ন পদে আসীন। কম্পানি বড় হলে আরও বড় অফিস নেবে। আপাতত দুই রুমেই কাজ সারতে হয়। ফরিদ নিশ্চিত এই মেয়েটার ভিতরে কিছু একটা আছে। সে সামান্য একটু নারকেল তেল আর ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি একসাথে গুলে একটা সাদা ফেনা তৈরি করে। তারপরে টানা এক ঘণ্টা মাথায় এই ফেনার ম্যাসাজ দেয়। এর ফাঁকে ফাঁকে লম্বা নখ দিয়ে খুটে খুটে তালুর মরা চামড়া বের করে আনে। ফরিদ বহু চেষ্টা করেও কোনদিন চোখ খোলা রাখতে পারে নাই। দুনিয়ার কেউ পারবে বলেও সে বিশ্বাস করেনা। অথচ শিউলি ? গত শীতে তাঁর মায়ের সামনে কাচের বড় জগ দিয়া তাঁর মাথায় বাড়ি মারল। প্রথমে ফরিদ মনে করছিল কাগজের ভারী কার্টন। পরে দেখে ব্রিটিশ আমলের ভারী জগটা ভেঙ্গে চৌচির। আহ কি সাধের দিন ছিল। তিন ইঞ্চি ছয় ইঞ্চি পোলা দুইটাও হইছে মার মত। সারাক্ষন রাগে ঘোঁত ঘোঁত করে। বড়টা সারাদিন জিনিসপত্র ভাঙ্গে আর ছোটটায় সে গুলো জানালা দিয়া নিচে ফালায়। বিরাট বজ্জাত।
দ্রুত গোসল সেরে কাপড় বদলে টেবিলে বসল ফরিদ। শিউলি আজকেও রুটির সাথে হালুয়া করছে। এই হাউয়া খাইয়া খাইয়া সে বুড়া হইয়া গেল কিন্তু কোন পরিবর্তন হইল না। চায়ে চিনি মেশানোর সময়ও শিউলি পিতলের মাথা ভাঙ্গা বড় চামচটা যে কেন হাঁতে রাখে এই বিষয়টাও তাঁর কাছে পরিস্কার না।
শিউলিঃ ইবলিশটা আসছিল। তোমার আদরের ছোট ভাই। ( দিলাম খোঁচা। হালুয়া দেখলেই তোর বিষ উঠে না?)
ফরিদঃ কিছু বলছে? ( ও বুঝছি। হালুয়া খাবনা বুঝতে পেরে মাগি পাঙ্গা লাগানোর তালে আছে। হাঁতে বড় চামচটা এইজন্যে।)
শিউলিঃ না। ( তোর তো দেহি বিষ নামতাছে না। দাড়া বীণা বাজাইয়া বিষ নামাইতেছি। তুই যতবড় সাপ আমি তত বড় ওঝা)
ফরিদঃ শিউলি, দুইটা রুটি আর বেশি করে হালুয়া বক্সে দিয়ে দিও। অনেক লেইট হইয়া গেছে। ( রেল গেইটেই ফালাইয়া দিমু। ভালই হইছে পলির সাথে খাওয়া যাইব।)
শিউলিঃ ওকে ওকে। ( এইগুলা রেল গেইটে ফালাইয়া তুই তোর নতুন মাতারির তেল মাখবি, না? তোর লেজে কত বিষ আর গায়ে কত তেল আইজ টের পাবি। )
কোন ঝুট ঝামেলা বা সন্দেহের উদ্রেক না করেই ঘর থেকে বের হওয়া গেছে, খোদার দরবারে ফরিদের লাখো শুকরিয়া। ‘আবালটা কল্পনাও করতে পারে নাই আমি তাঁর ভাইয়ের সাথে কি করছি। সারা দিনের রিপোর্টের উপর রাতের ভবিষ্যৎ- ভাবল ফরিদা। আজ এই হিজড়ার একদিন কি আমার একদিন। যা ঐ মাতারির মধু খাইয়া আয়। এইডা তোর আখিরি খাওয়া’। ফরিদা দুপুরের কুটা বাছা দেখানোর জন্য বুয়াকে ডাকতে লাগলো।
০১.০৫.২০১৪ইং
©somewhere in net ltd.