নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সতীত্ব খোয়ানো নারীর গর্ভে সোনা জন্মালো নাকি তামা জন্মালো তাতে কি আসে যায় ? আমি কলংকের সোনা।

zaku

আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।

zaku › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিডনিক

১১ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১

দাম লেখ,- আলোচনা সাপেক্ষে। বুলু জোর দিয়ে বলল।

আমি দুনিয়াদারির টেকনিক্যাল ব্যাপার স্যাপার গুলো থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করেছি নিরন্তর। এখানে একটা প্রাইস রেঞ্জ দিয়ে দিলেই বিষয়টা সহজ হবার কথা। অথচ দাম লেখতে বলছে আলোচনা সাপেক্ষে। এই আলোচনা শব্দটাই একটা মূর্তিমান জঞ্জাল। মিনিটে মিনিটে তাঁর মত বুদ্ধি করে চলার বিষয়ে আমার সামান্য বিরক্তি আছে। আমি নিজে সহজ সরল। খুজি সহজ সরল পথ।–

-আরে আলোচনার এত দরকার কি? যাদের দামে পোষাবে তাঁদের কেউ না কেউ তো কিনতে চাইবে।

; দরকার আছে। বহুত দরকার বলেই টান দিয়ে নাকের একটা লোম ছিঁড়ে পরপর চারটা হাঁচি দিয়ে উঠে পড়ল । বুঝলাম আমার সাথে অনেকক্ষণ থেকেই তাঁর কথাবার্তায় মিলছে না। হঠাত হঠাত তাঁর কিছু কিছু ব্যাবহার আমি বুঝতে পারিনা। এই যেমন সামান্য কারনেই এখন শার্ট পড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। হয়ত বের হবার বিষয়টা তাঁর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল হয়তো। এখন একটা উসিলা দেখাইয়া কেটে পড়ার তালে আছে। এই এক অদ্ভুত ছেলে। যেদিন বুলু কোন কিছু গোপন করতে চায় সেদিন সকাল থেকেই একটা গুরু গম্ভীর ভাব সে ধরে রাখে। তারপর সামান্য উসিলা দেখিয়েই বের হয়ে পড়ে। তাকে পাত্তা না দিয়া বিজ্ঞপ্তি লিখতে বসলাম । আমার হাতের লেখা খারাপ তবু লিখতে হচ্ছে। বুলু যদি সামান্য একটু হেল্প করত তবে এতদিনে কোন না কোন একটা রফা দফা হয়ে যেত।

গত সপ্তাহেও কুমিল্লা যাবার সময় সে এমন এক কান্ড করে বসল। রংধনু ফিলিং পাম্পে গাড়ি দাঁড়িয়েছে তেল নিতে। এক লোক ঝুড়ি ভর্তি সুন্দর সুন্দর আম নিয়ে বাসে উঠে বিক্রির চেষ্টা করতে লাগল। আমি নেমে গিয়েছিলাম। দুর থেকেই দেখলাম সে আম হাঁতে নিয়ে দরদাম শুরু করে দিয়েছে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। আমি জানি তাঁর কাছে একটা অচল কয়েন ছাড়া কিছুই নাই। আর আমার কাছে টিকেট কেনার পর বাকি আছে মাত্র দশ টাকা। সে এখন আম নিয়ে যদি বলে বিল দে তখন কেমনটা লাগবে? কেউ কিছু বুঝতে চায় না। এতো এতো যাত্রীর সামনে সে আমার হাড়ি ভাঙ্গার তাল করছে। আমি ঝড়ের বেগে তাঁর সামনে হাজির হলাম । গিয়ে দেখি সে আম ওয়ালার সাথে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কথা বলছে। যাক বুলুর ঝিমাইন্না ব্যারাম শুরু হওয়া ভাগ্যের বিষয়। সে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক আম টিপে টুপে পানি বের করে ফেলল। আম ওয়ালা বিশ মিনিটের চেষ্টায় একটা আমও বেচতে পারল না। না সে কিনল না কাউকে কিনার সুযোগ দিল।

গাড়ি পাম্প ছেড়ে চলতে শুরু করে দিয়েছে। আমি বুলু কে শাসনের ভঙ্গিতে বলার চেষ্টা করলাম যে, ‘তুই তো আগে থেকেই জানতি আম কিনবি না । শুধু শুধু এইসব ঘেনা ঘেনা করার মানে কি? লোকটাকে আটকে রেখে কি এমন লাভ হল?’

-আমি জানতাম ? আমি সব কিছু জানতাম ? আমি কি সব জান্তা শমশের? ওয় দেখি একেবারে ঘেউ ঘেউ করে উঠল।

; এতো খেপার কি আছে? আমি কিছুটা বেক ফুটে গিয়ে উত্তর দিলাম। ‘যা করবি না তানিয়ে হাতাহাতি করার কি আছে- আরও মিনমিনিয়ে বলে কথার ইতি টানতে চাইলাম। কিন্তু তাঁর ভাব ভঙ্গি বিশেষ সুবিধার ঠেকল না আমার কাছে। সে চোখ মুখ কচলে সোজা হয়ে বসল।

-দুপুরে ভাত খাইছস ? খাস নাই। তুই আর আমি ফকির। এখন তুই বাসের টিকিট কিনছস। আমারও তো কিছু না কিছু দায়িত্ব আছে, নাকি ?

ভেজাল এড়ানোর জন্য আমি সম্মতি সুচক মাথা নাড়লাম। সে আর কিছু না বলে গাড়ির সিটের নিচে ঝুকে পড়ল। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাচলাম। এই অভাবের দিনে খুনসুটিও ভালো লাগেনা। ওমা, সে দেখি গাড়ির সিটের নিচ থেকে দুনিয়ার আম বের করতে লাগল।

-নে আম খা । আমার সামনে ইমানদার সাজবি না। দুনিয়ায় ইমামতি কইরা কারো পেট ভরে নাই। সে চান্স পেয়েই আমাকে সবক দিয়ে দিল।

কোন রকম ভান ভনিতা ছাড়া সহজ ভাষায় লিখলাম, একজন সুস্থ মানুষের একটা কিডনি বিক্রি হবে।

মুল্য - আলোচনা সাপেক্ষে।

যোগাযোগ............

রাত তিনটা । আমি আর বুলু দাঁড়িয়ে আছি কেবিন ব্লকের গেইটে। যে আগ্রহ আর উত্তেজনা নিয়ে এখানে এসেছিলাম তাঁর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। শত শত বিজ্ঞপ্তি । সবার জরুরি টাকার দরকার । সবাই কিডনি বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে রেখেছে। দাম কমতে কমতে নেমে এসেছে পনের থেকে বিশ হাজারে। আমরা ঠায় দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা শহরের প্রথম অলিখিত কিডনি মার্কেটে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.