![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।
রতন চোরা ধরা পড়িয়াছে । সারা গ্রামে সরব আলোচনার ঝড় যেন কাল বৈশাখীকেও হার মানায়। সবাই যে যার মতন করে পেয়ারা বাগানের দিকে ছুটিতেছে। কাহারো বিরাম নাই। বিরাম বিশ্রামকে আজকের মত যেন ছুটি দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু লোক সকল বুঝিতে পারিতেছেনা এর ফল কি হইবে? তাহাদের মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাইতেছে। তাহারা ইহাও বুঝিতে অক্ষম এই চোরা ধরা পরিবার ঘটনা আনন্দের নাকি বিষাদের। তাহার কি শাস্তি হইতে পারে ? এমন নানান প্রশ্ন জনে জনে মনে মনে। এই কমলপুরে এমন কেউ নেই যে বুকে হাত দিয়া শপথ করিয়া বলিবে, রতনে তাহার ঘরে সিদ কাটিয়াছে কিংবা কাহারো বাড়িতে সিদ কাটিতে কেউ রতনকে দেখিয়াছে। ব্যাতিক্রম শুধু পেয়ারা বাগানের তারানাথ। তারানাথের বয়স আশি। রাতে চোখে দেখেন না। রাত কানা হইলে কি হইবে এই বয়সেও তাহার শরীর সাস্থ্যের যে জোস তাহা দেখিয়া যে কারো হিংসা হইতে বাধ্য। ভোর হইতে আধার মিলানো পর্যন্ত কাজ করে তারানাথ। এক সেকেন্ডের বিশ্রাম নিতে চাইলেও ঘড়ির দিকে তাঁহার চোখ থাকে। যেন সময়ের সাথে চিরস্থায়ী কোন বন্দোবস্ত করে এখনো বহাল তবিয়তে বসে আছে বৃহত্তর কমলপুরের পেয়ারা বাগানের তারানাথ।
রাতে তারানাথ একটুও নড়া চড়া করতে চায়না। তাহার সেসবের দরকারও হয়না । সে একা মানুষ। সন্ধ্যা থেকেই কুপি জালিয়ে মহাভারত নিয়ে বসে থাকে। ভগবান তাহাকে যে নাক আর কান দিয়াছে তাহা দিয়া অনায়াসেই সে আরও পঞ্চাশ বছর চালাইয়া নিবার স্বপ্ন দেখতে পারে। সেই তারানাথ রতন চোরাকে আজ সকালে একেবারে হাতেনাতে ধরিয়াছে। এ যাত্রায় কোন ঝুট ঝামেলা ছাড়াই রতন বাহির হইতে পারিবে এমন আশা করা যায়না বোধ করি। রতনের কপালে দুঃখ আছে আজ। রতন আর তারানাথ উঠানের এপার ওপারের ব্যাবধান রেখে বসে আছে পাশাপাশি। রতনের মুখে বিদ্রুপের হাসি। একটা ঘাস দুই দাঁতের ফাঁকে লইয়া সে এমনই ব্যাস্ত হইয়া পড়িল যে, যে কিউ বিশ্বাস করিবে এই ঘাস খুব সুখাদ্য।
গলা খাকারি দিয়া রতনই আগ বাড়াইয়া কথা বলার উদ্যোগ নিল। উপস্থিত সকলকে শোনাইয়া সে তারানাথের উদ্দেশ্যে বলিল, বাবু চুরি করিতে আসিয়া ধরা পরিয়াছি সঠিক, আমি এই অত্র অঞ্চলের ( কমলপুর ব্যাতিত ) বড় চোর তাহাও সঠিক। আমার হয়তো জেল ফাস হইবে। পরে কথা বলিবার সুযোগ নাও পাইতে পারি। বাবু, খেয়াল করিয়া শুনিয়া রাখেন পাছে বলা না হয়ে উঠে। আমি কিন্তু আপনাকে ক্ষমা করিব না বাবু। এই ভগবানের কিরে কেটে বলছি গো মশাই। আমি আপনাকে কোনদিনই ক্ষমা করিব না। যদি আবেগে মায়া জন্মায়ও সেইটাও এই কথায় খারিজ করিয়া দিলাম। সকলের সামনেই। সকলে মন্ত্রমুগ্ধের মত রতনের দিকে তাকাইয়া ছিল। কয়জনা তাহার কথার অর্থ ধরিতে পারিয়াছিল্বলা মুশকিল। তেমনি বলা মুশকিল সত্যি সত্য কয়জনে তাহার বক্তব্য শুনিয়াছিল। সবাই শুধু ভুত গ্রস্থের মত রতনের দিকে নিবিস্টমনে তাকাইয়াছিল।
রতন আরও কিছু বলিতে চাহিয়াছিল বোধ করি। সে মাথা তুলিয়া কিছু বলিবার প্রস্তুতি নিতেছিল । মুহূর্তেই তারানাথের জ্ঞাতি ভাই আর সাংগপাঙ্গরা তাহার মাথা ছেচিয়া ফেলিল। রতনের দ্বিতীয় নিঃশ্বাসটা রক্তের ফেনার সাথে ভুরভুরি দিয়া বাহির হইল। আচমকা পাথরদিয়া এমন ভাবে আঘাত করা হইল, মুখের কথা মুখে লইয়াই রতন মরিল।
©somewhere in net ltd.