নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সতীত্ব খোয়ানো নারীর গর্ভে সোনা জন্মালো নাকি তামা জন্মালো তাতে কি আসে যায় ? আমি কলংকের সোনা।

zaku

আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।

zaku › বিস্তারিত পোস্টঃ

বগাই আর বগাই

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

সারাদিন এই অফিস ওই অফিস ধর্না দিয়া অবশেষে ইফতারের মিনিট তিরিশ আগে আম্মা বাসায় ফিরছে। তার বা হাতে বিরাট আকারের একটা ছোলা খিরা। লবন ছিটানোর কারনে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। আম্মাকে দেখলেই আমার দুনিয়া রঙ্গিন হয়ে যায়। আমি যেখানে যেই অবস্থাতেই থাকি না কেন তাঁর গন্ধ নাকে আসলেই দৌড়...... কিন্তু আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। সারাদিনের তাপে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। টিন শেড ঘর মোটামুটি গ্যাস চেম্বারের মত। এক হাজার টাকায় টিন, বেড়া, মাটি আর টিউব অয়েল ছাড়া আর কি জাতীয় ঘর -ই বা পাওয়া যায়। কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করতে লাগলাম। আতঙ্কের আরও একশ একটা কারন আছে। এর মধ্যে এক নাম্বার কারন হল, ঘরে আজ ইফতার নাই। ইফতার যে বানাবে এমন কিছুও নাই। লবন দিয়া একটু পানি খাওয়ার লবনও নাই। রোজার সময় এইসব আমাদের নিত্য ঘটনা। এই নিয়া আমাদের মনে তেমন কোন দুঃখ বোধ ছিল না। কিন্তু আম্মার এই রোদে পোড়া মমি হয়ে যাওয়া চেহারা দেখে আমি ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়লাম।

খুঁজে খুঁজে পোকায় খাওয়া শাহাদাত কে বের করলাম। তাঁর সাথে কথা হল মিনিট খানেক।

; শাহাদাত, তোমাদের বাসা থেকে একটু বরফ দিবা? আম্মার গরমে মইরা যাওয়ার যোগাড়। ( যাদের বাসায় ফ্রিজ ছিল তখন তাঁদের সাথে আদব কায়দা মেনে কথা বলতে হত। )

-তুমি কি সকালে টিফিন বাটিতে পানি রাইখা গেছিলা? শাহাদাত উল্টা জিজ্ঞেস করল।

কিভাবে বলি, সকালে একটা টিফিন বাটি নিয়া প্রায় দিনই আমি আসি। শাহাদাত না থাকলে তাঁদের কাজের মেয়ে দরজা খুলেনা। রান্না ঘরের জানালা দিয়া মূর্তির মত তাকিয়ে থাকে। চোখাচোখি হলে সেন্ডেল দেখায়। ওদের কাজের মেয়েটা শুধু আমার সাথে কেন যে এমন করে... বড় লোকের কাজের মেয়েদের বিরুদ্ধে নালিশ করতে হয় না। এ বিদ্যে ততদিনে আমার রপ্ত হয়ে গেছে। ঠাণ্ডা পানি এক ফোটাও পাওয়া যাবেনা বুঝতে পেরে আমি দ্রুত বাসায় ফিরলাম। আম্মায় টিউব অয়েল থেকে পানি তোলার চেষ্টা করছে। আমি ভয়ে বলতে পারছিনা যে, আজ দুপুর থেকে পানি ঢাললেও এই কলে আর পানি উঠছে না। শাহিন মামাদের কলে প্রচুর পানি কিন্তু ওদের সাথে আমাদের পরিবারের ব্যাপক গোলমাল। আমার মেঝো ভাই ওই বাসার এক খালামনিকে দুইদিন পর পর বেনামে লাভ লেটার পাঠায়। প্রথমে খালামনিকে নানা আর নানি মিলে আচ্ছামত ছেছা দেয়। তারপরে ওদের পুরো পরিবার আমাদের উপর চড়াও হয়। আমরা যে যার মত আত্মসমর্পণ করি। বড় আপায় কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু ওরা বাসার মালিক। আমরা মোরব্বা হয়ে যাই।

আমি খুব চাইতাম, আমার এই ভাইটার কঠিন বিচার হোক। আমরা কোথাও ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতে পারিনা। সে কোন না কোন হাঙ্গামা বাধিয়ে দিবেই। আমরা জান প্রান দিয়ে পরিবারকে যখন রক্ষা করতে ব্যাস্ত থাকি তখন সে ঘরে বসে বসে মিটমিট করে হাসত। আমার পিতামাতা জীবনে কখনো এই দুর্বৃত্তের বিচার করার ব্যাপারে কোন আগ্রহ পোষণ করেনি। পচিশ বছর আগে যেমন করেনি পচিশ বছর পরেও তেমনি করেনি। আমি এমন বহু পরিবার দেখেছি যেখানে সবচে নষ্টটার পৃষ্ঠপোষক হন স্বয়ং পিতামাতা। এদের আশকারায় এরা এক সময় খুন করেও বেঁচে যায়। সুবিচার সর্বপ্রথম নির্বাসনে যায় নিজ সংসারেই।

; তোর আব্বায় কই ? আমাকে দেখেই টিউব অয়েল চাপ দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল মা । ‘যা যেখান থেকে পারস খুঁজে বের করে টাকা নিয়ে ইফতার কিনে আন- এই শেষের কথা গুলো বলতে বলতে যেন আম্মা প্রায় নিভে গেল। যেন তাঁর জীবনের সর্বশেষ সঞ্চিত শক্তিও নিঃশেষ হয়ে গেল। সে যেন ব্যাকুল আর অসহায় আত্মসমর্পণ করে বসল।

আমরা দুজনেই জানি এসব প্রচেষ্টার পরিনতি। আমরা শুধু জানিনা আমাদের বাবা কোথায়। আমরা তাঁর বহু পুরনো অভ্যাসের সাথে পরিচিত। ইফতারের অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকেই আব্বাকে চোখে চোখে রাখতাম যেন অন্তত একটা দিন আমাদের সাথে এই ইফতার নামক বিষ খেতে বসে। অথবা ঘরে যাই থাকুক একদিন যেন অন্তত আমাদের সাথে খায়। কিন্তু কোন বানচিরিকের সাথে যে সে হাওয়া হয়ে যেত – টের পেতাম না। দোকানে, টঙ্গে, মসজিদে কিংবা কোন পরিচিতের বাসায় সে ঠিক ঠিক ইফতার করতে বসে যেত। তারপরে মাগরিবের নামাজ পরে আস্তে ধীরে বাসায় ফিরে এসে হায়েনার মত চেহারার রুপ ধরে বসে থাকত। কেন এমন চেহারা করে বসে থাকত তাও জানতাম। যেন ঈদের বাজার থেকে শুরু করে কোন কিছুতেই তাকে জড়ানো না হয়। যেন এই আট বাচ্চা জন্মের দায়ভার, এদের ভরন পোষণের সকল কিছু একা আম্মাকেই বহন করতে হবে এমন চুক্তি করেই সে এই সংসার নামক নরকে প্রথম পা রেখেছিল। যেন বরাক বাঁশের গুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে এই সংসারে পা রাখার ঋণ শোধ করে গেছে। যেন মৃত্যু পর্যন্ত সক্ষম যৌন দাসী হিসেবে পারফর্ম করতে না পারার মুল্য সে দিয়ে গেছে।

১১.১০.১৪ ( শোনা কথা )।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: অন্যরকম, তাই ভালো লাগল।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫

zaku বলেছেন: ধন্যবাদ ঢাকাই ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.