নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সতীত্ব খোয়ানো নারীর গর্ভে সোনা জন্মালো নাকি তামা জন্মালো তাতে কি আসে যায় ? আমি কলংকের সোনা।

zaku

আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।

zaku › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথে পথে ১

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯

পাখির ভাই হুসেন। হুসেনের শখ ঘু ঘু পোষা। সে বারো মাস ঘু ঘু পোষার কাজটি করে দক্ষতার সাথে। তাঁর পাখি বড় হয়, পোষ মানে, তাঁর ঘাড়ে বসে থেকেই এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে। আমরা দুর থেকে এই দৃশ্য দেখি আর আহা উহু করি। আহা, নিজেদের মালিকানায় যদি এমন একটা পাখি থাকত ! এই কথা ভাবতে ভাবতেই মনে মনে চিন্তার ঝড় বয়। ভাবি, পাখি থাকলে বরং সমস্যা আরও বাড়ত। মেঝো ভাই নির্ঘাত সেই পাখি তাঁর দখলে নিয়ে নিত। এই নিয়া ওজর আপত্তি করতে গেলে তাঁর দুই হাতের সেইরাম চড় হজম করতে হত। এই ঘরে কোন বিচার নাই, বিচারের বালাইও নাই। তা না হইলে আমি হইলাম ঘরের সবচে ছোট, আর আমাকেই কিনা সকাল বিকাল এই রকম অমানবিক জীবন যাপন করতে হয় ? আহ, আফসোস। এই সংসারে জন্মানোই বৃথা। অথচ জেঠাতো ভাই মুকুল, আমার চেয়ে মাত্র ছয় মাসের ছোট। তাঁর চার বোন এক ভাই সব সময় তারে কোলে কোলে রাখে। আমার মা’য় ঘুম থিকা উইঠাই কি মরার অফিস না কই জানি চইলা যায়। শ্মশান হইয়া যাওয়া বাড়িতে আমি একাই থাকি, হাসি, কাঁদি, ঘুমাই...... দেখার কেউ নাই।



যতদুর, বুঝতে পারি গ্রামে বেড়ে উঠা পাঁচ বছরের একটা শিশুর প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে বেড়ে উঠার যে শক্তি তা সম্ভবত শহরের পনের বছর বয়েসীদেরও নেই। আর সেইজন্যেই ঘুঘুর মালিক হবার আগেই এর মেরিট’স ডিমেরিট’স নিয়া আমার এত চিন্তা। হুসেনের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করি নিরন্তর পাছে তাঁর ঘুঘু’র বাচ্চাটাকে হাত দিয়ে সামান্য ছুঁয়ে দেখা যায়। হুসেন ফ্লোর দেয়... প্রশ্রয়ের হাসি দেয়, আমি সামনে বাড়ি। এক সময় নিজের অজান্তেই ঘুঘুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেই আর ঠিক তখনই হুসেনের চিকন বেতের বাড়ি অথবা কানমলা কপালের অবধারিত লিখনে পরিনত হয়। কান ডলতে ডলতে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করি। নিরাপদ দুরত্ব পার হবার পর হুসেনের চৌদ্দ গোষ্ঠীর মুন্ডুপাত করি। দুর থেকে জোরে জোরে বলি, হুসেনের পরিবার এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা না। চাইলেই এক ইশারায় পথে নামিয়ে দিতে পারি। অথচ এদের পরিবার কিন্তু এখানে স্থায়ী; তারপরেও এরা অস্থায়ী এমন একটা রটনা কিভাবে সমাজে প্রচলিত হয়েছিল তা আজ আর মনে নেই। বড়দের মুখের কথা লুফে নিতে গ্রামের অকালে পেকে যাওয়া ছেলেরা ভীষণ ওস্তাদ।



হুসেনের পোষা ঘুঘু খাঁচা ভাইঙ্গা পালাইছে- এমন একটা খবর এক ভোঁরে ছোটদের মাঝে তুমুল আলোড়ন তুলল। যেসিন ঘটনা ঘটল সেইদিন কেউ আর মক্তবের দিকে পা বাড়ানোর মত কাজ করার চিন্তাও করলাম না। সবাই মুখ ভার করে হুসেনদের বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।এত দিনের পোষ মানা পাখি, সেও কিনা পালাইল ? আমরা তাঁর দুঃখে সমব্যাথি হয়ে আহা উহু করছি। ওই পোষা ঘুঘুটার সাথে কবে কি করেছি না করেছি সেইসব আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। সবাই মিথ্যে কথা বলছি। আসলে কেউ কোনদিন ওটার ধারে কাছেও যেতে পারিনি। সবাই সবার বানানো মিছে গল্প জেনে শুনেই সহ্য করছি। আমাদের নিজেদের মনে যেসব অব্যক্ত কথা থাকে সেসব সমাজে চালিয়ে দেয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিল হল,- তুমি আমার গল্প শুনবে এবং একে সত্য বলে স্বীকৃতি দিবে। তাহলে তুমি পরে যা কিছুই বলনা কেন ,আমি স্বাক্ষী দেব যে আমি তোমার সাথে ছিলাম’ ।এভাবে সবাই সারাদিন মিথ্যে কথাই বলি। গ্রামে মিথ্যের মর্যাদা এবং প্রচলন দুটোই বেশি। বেসামাল গপ মারতে মারতে সবাই এগিয়ে যাচ্ছি। তলে তলে সবাই দারুন খুশি !! আসলে আমরা যাচ্ছি হুসেনের করুন চেহারাটা দেখতে। কেমন উচিত একটা শিক্ষা হল সেটা ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়ে আসতে।



হুসেনের ঘু ঘু ফিরত আসছে’- বলে হুসেনের বোন পাখি চিৎকার করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দিল। আমাদের বুকে যেন কেউ পাথর দিয়ে আঘাত করল, এইটা কিভাবে সম্ভব ? তবু খুশি খুশি ভাব ধরে ঝড়ের বেগে তাঁদের ঘরের সামনে উপস্থিত হলাম। পাখির নিউজ সত্য। তাঁদের পোষা পাখি দেখা যাচ্ছে কাঁঠাল গাছে বসে আছে। আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না যখন মনে হল পাখিটা’ র আচার আচরনে যেন কিছুটা অনিশ্চিত ভাব দেখা যাচ্ছে। কি করবে না করবে যেন সে জানে না। আমার খুব ইচ্ছে করল পাখিকে কানে কানে বলি, -চলে যা। খাঁচা থেকে যত দুরে পারিস চলে যা। এই অবাস্তব চিন্তাটার বাস্তবায়ন তখন কিংবা এখন কোন কালেও সম্ভব ছিল না। তবু আকাশ পাতাল ভেবে কোন কুল কিনারা করতে পারছিলাম না, সে কেনই দুরে চলে যাচ্ছে না ? কেন কাছাকাছি থাকতে চাইছে ? আজ পথে বেড়িয়ে ঘুঘুর দুরে চলে না যাওয়ার কারন ধরতে পেরেছি। কেউই সম্ভবত তাঁর নিজের রুটের খুব বেশি দুরে চাইলেও যেতে পারেনা। সে আসলে খাচার বাইরের জীবন খুব বেশি কিছু চিনেও না। যাবেই বা কোথায় ? যত বড় বদ্ধ খাঁচাতেই থাকুক না কেন এখানেই সে কাটিয়েছে তাঁর শৈশব, কৈশোর আর যৌবন। চাইলেও সব অস্বীকার করে ফেলা যায় না। সে হয়ত কাছাকাছি কোথাও থেকেই কিছুটা হলেও স্বাধীন থাকতে চায়।


০৫.১২.১৫ইং

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.