![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সহ আমার বাকি চার ভাইবোনের জন্ম হয়েছিল একটা গোয়াল ঘরে। সে ঘরে প্রতিদিন সাপ এসে গাভির দুধ খেয়ে যেত। আমরা আতংকে জড়সড় হয়ে সাপের দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখতাম। সাপ সম্ভবত কুকুরের সাথে খুব একটা বিবাদে যায় না। আমাদের সাথে সে সাপের বিবাদের কথা কেউ কখনো বলেনি।
যে শিশুটি কিছুক্ষন আগে জন্ম নিয়েছিল, সে অন্যজগতে চলে গেল কুকুরের পাহারায় থেকেই। ছোট চাচা তার ক্ষুদ্র দেহটা নিয়ে রাখলেন ছাই ফেলার একটা ভাংগা কুলায়। এ সংসারে জন্ম নিয়েও আমাদের একজন হবার স্বীকৃতি পেলনা সদ্য জন্ম নিয়ে মরে যাওয়া অবুঝ এই শিশুটি।দা-কুড়াল আর কোদাল নিয়ে দল বেধে চললাম চম্পার দিঘীর পাড়। এটাই গ্রামের একমাত্র কবরস্থান।সন্ধ্যার আগেভাগেই দাফনের যাবতীয় কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে হবে। দিঘীর পাড় সন্ধ্যার পরে অন্য জগতের বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। এটাতো সবাই জানে। বাশ কাটতে হবে, কবর খুঁড়তে হবে। এসব ক্ষনজন্মা শিশুদের জানাজা হয় কিনা কে জানে, আমার মনে নেই চাটাইয়ে পেচানো ক্ষুদ্র বাবুটির জানাজা হয়েছিল কিনা। মৃত্যুর স্মৃতি লিখতে গিয়ে স্মৃতির আবিস্কার নিশ্চয়ই সততার কোনও পর্যায়েই পড়ে না।
যে নারীর মৃত্যুর প্রহর গুনেছি এতটা দিন, তিনি অচেতন হয়ে পরে রয়েছেন তার রান্নাঘরে গরম উনুনের পাশে বিছানো পাটিতে। যাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারনাও ছিলনা আমার, কবর খোড়া হচ্ছে তার জন্যেই। কি বিচিত্র দুনিয়া, কত কিছুই না হচ্ছে এখানে প্রতিনিয়ত!! প্রতারণাপূর্ণ জীবন লাভ করা শিশুটির জন্যে কাঁদতে পারে এমন একজনকেও দেখা গেলনা হলুদ আলোয় ধাঁধানো রক্তরাংগা গোধুলী বিকেলে। সবাই এমনভাবে যারযার কাজে ঘুরে বেড়াতে লাগল যেন কিছুই হয়নি। ঘড়ির কাটা ধরেই যেন এগিয়ে যাচ্ছে সময়।
আমাদের মধ্যে যারা কবর খুঁড়ছিল ; তারা সেটাকে একটা ত্রিভুজের আকৃতি দিল। এই ত্রিভুজের যে কোন'টা মাটির সবচে গভীরে প্রোথিত ছিল সেখানেই সাদা কাপড়ে জড়ানো ক্ষুদ্র শিশুটির ঠাই হলো। তারপর বড় বড় বাশ গেঁথে সেই কোনের বিপরীত বাহুর মত করে কবরের মুখ বন্ধ করা হলো। তার উপরে চাটাই দিয়ে মাটি ভরাট করা হল। শুনেছি, শিশুদেহ খাটাশের খুব প্রিয় খাদ্য। সেজন্যই এত মজবুত করে বন্দী করা হল মৃতদেহটি যার জন্যে সমাজের একজনও কাঁদতে আসেনি একবারের জন্যেও। আন্দাজমত নাভির উপরে একটা চাকা মাটির চিহ্ন আর চারদিকে চারটে খেজুরের ডালা গুজে দিয়ে এক কলস পানি ছিটিয়ে দেয়া হল কবরের উপর।
সন্ধ্যের আগে আগেই একে অন্যের হাত ধরাধরি করে সবাই বাড়িতে ফিরলাম। আমাদের আনন্দ উতসাহ আর হুইহল্লাকে অপরিচিত যে কারো কাছেই পিকনিক বলে ভ্রম হবে।রাতে আম্মা কাঁদলেন সদ্য সন্তান হারানো মৃতপ্রায় মা'টির জন্যে। আমি ক্লান্ত ছিলাম। সেনাবাহিনীর ভাইদের অংশগ্রহনমুলক আমার প্রিয় অনুষ্ঠান দুর্বার শুনতে শুনতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
©somewhere in net ltd.