![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গেম ম্যানিয়াঃ
গেম খেলতে খেলতে গেমের ক্যারেক্টার আর তাদের ডায়ালগগুলো মাথায় কিলবিল করতো সবসময়। যখন নাইটস-এন্ড-মার্চেন্টস খেলতাম তখন আম্মা যদি কোন কাজে ডাকতো তাহলে সাড়া দিতাম এই বলে, “ইউর ম্যাজেস্টি”। আবার যখন কমান্ডোস খেলতাম তখন রেসপন্স করতাম অন্যভাবে।
- বাবু শুনে যা।
- কামিং স্যার।
- বাজারে যা।
- দ্যাট ইজ ইম্পোসিপল স্যার।
- বাজারে গিয়ে মুরগী নিয়ে আয়। তাহলে দুপুরে মুরগী রান্না করবো নে।
- কনসিডার ইট ডান আম্মা। বাজারে খালি যাবো না, ডাবল ক্লিক করে করে যাবো।
বাইরে গেলেও আরেক সমস্যা। নিজেকে গ্রীন-বেরে গ্রীন-বেরে মনে হতো। আর লোকজনকে ড্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে মূত্র বিসর্জন করতে দেখলে মনে হত, আস্তে করে ওদের পিছনে গিয়ে কমান্ডো নাইফ দিয়ে ওদের গলা কেটে ফেলি।
নাইট কোচে করে লং জার্নি করলে চেষ্টা করতাম সবসময় একদম সামনের সারির সিটের টিকেট কাটতে। সারা রাত ধরে ড্রাইভিং দেখে দেখেই গন্তব্যে চলে আসতাম, আর মনে মনে আফসোস করতাম, “ইসসিরে, বাসে নাইট্রো মারার অপশন থাকলে আরেকটু তাড়াতাড়ি চলে আসা যেতো।”
গেমার বন্ধুরাঃ
আমার একমাত্র হার্ডকোর গেমার বন্ধু ছিল রুপেল। যদিও এখন সে গেমিং থেকে অবসর নিয়েছে এবং ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। রুপেলের বদৌলতে রাম্বল-প্যাড, গেমিং কিবোর্ড থেকে শুরু করে ৬০০০০ টাকা দামী গ্রাফিক্সকার্ড সবই চেখে দেখার সুযোগ হয়েছিলো। ওর বেশি ইন্টারেস্ট ছিলো সিএনসি নিয়ে। ওয়ার্ল্ড র্যাংককিং এ ও এক সময় সিএনসি এর তিন নম্বর প্লেয়ার ছিলো। আমি এই গেমটা তেমন একটা পারিনা বিধায় ওর সাথে তেমন একটা গেম খেলা হয়ে ওঠেনি।
ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পরে দুইজন গেমার বন্ধু পেলাম। দিপু আর সেতু। দিপু বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী আর সেতু হুয়াউইয়ের ইঞ্জিনিয়ার ও বিবাহিত। নিজেকে দুনিয়ার সেরা এনএফএস আর ফিফা প্লেয়ার মনেহত এক সময়। ধারণাটা পাল্টে গিয়েছিলো দিপুর খেলা দেখে। এনএফএসে কোন মানুষ যে এতটাই এবনর্মালী ভালো ড্রাইভ করতে পারে, সেটা ওকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। বাস্তবেও ভালো ফুটবল প্লেয়ার দিপুর কাছে ফিফার নীতি ছিলো, “খালি জিতলেই হবে না। সুন্দর খেলে, সুন্দর গোল দিয়ে জিততে হবে।” ও আমার খেলার ধরনটাই পাল্টে দিয়েছিলো। একবার ভুল করে এনএফএস কার্বনে ওর ড্রিফটিং এর রেকর্ড ভেংগে ফেলেছিলাম। সেদিনই ভোর ৫টার সময় দিপুর কল।
- আমি তোর রেকর্ড আবার ভাংছি। পারলে এইটা ভাং। আমি বিকালে তোর বাসায় আসবো। যদি তুই এর মধ্যে ভাংতে না পারিস তাহলে আমি “ড্রিফট কিং” এই কথাটা আমার গেম ডিভিডির উপর লিখে দিবি।
মাথা খারাপ করে ভোর পাচটা থেকে খেলা শুরু করলাম। অবিশ্বাস্যভাবে সকাল সাতটার দিকে ওর রেকর্ড আবার ব্রেক করে ফেললাম। সেদিন বিকেলে দিপু আমার বাসায় এসেছিলো এবং ভগ্ন হৃদয়ে আমার গেম-ডিভিডির উপরে ড্রিফট-কিং লিখে দিয়ে চলে গিয়েছিলো।
দর্শক হিসেবে প্রথম ডাব্লিউ.সি.জি অভিজ্ঞতাঃ
সেতু একদিন ফোন দিয়ে খুব এক্সাইটেড হয়ে খবর দিলো যে, ও তিনশো টাকা দিয়ে ডাব্লিউ.সি.জি তে ফিফা০৬ এর জন্যে রেজিস্ট্রেশন করেছে। আমি এই খবর ফুটবল মায়েস্ত্রো দিপুকে রিলে করলাম। দিপু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
- রিয়েলী?
- হমম।
- ও যে জঘন্য ধরনের “এক প্লেয়ার দিয়ে বল টানা” টাইপ খেলা খেলে...... ও হুদাই রেজিস্ট্রেশন করছে কেন?
- শখ হইছে। করছে।
- ওর প্রিপারেশন কেমন?
- ভালোই মনেহয়। আমার সাথে গতদিন প্র্যাকটিস ম্যাচে খেলা শুরুর ১২ মিনিটের মধ্যে ৩ গোল খাইছে। তারপর আর খেলে নাই। খ্যাক খ্যাক।
- না না। ব্যাপারটা সিরিয়াস। হি নিডস হেল্প। এখনও দুই দিন টাইম আছে। ওকে প্র্যাকটিস করাতে হবে।
সেদিনই আমি আর দিপু ক্যান্টনমেন্টে সেতুর বাসায় গেলাম ওকে প্র্যাকটিস করাতে। কিন্তু ও কিছুই শিখলো বলে মনে হলো না। বরং প্র্যাকটিসের পরে বাইরে বের হয়ে বিড়ি খেতে খেতে অত্যন্ত কনফিডেন্সের সাথে আমাদের বললো,
- ফাইনালেতো উঠবোই। উঠলে অপোনেন্টকে বলবো, “এক কাজ করো তুমি আমাকে প্রাইজমানিটা দিয়ে দিয়ো। আমি তোমাকে জিতিয়ে দিবো।” পাসপোর্টতো নাই। খামাখা জার্মানী যাওয়া হবে না। তার চেয়ে এটাই লাভজনক। কি বলিস?
আমরা এই কথা শুনে ওকে আর কিছু বললাম না। খামাখা ডিমোরালাইজড করে কি লাভ?
পরেরদিন বিকেলে গেলাম চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সেতুর সাপোর্টার হিসেবে। গিয়ে দেখি রুপেলও খেলতে এসেছে। সেতুর খেলা শুরু হলো। অপোনেন্ট আইইউটির একটা ছেলে। আমাদের এক ব্যাচ জুনিয়র। এর আগের বারের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট। খেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম দশ মিনিট সেতু জঘন্য ধরনের উইং-প্লে করলো। আমরাও পিছন থেকে “সাবাস সেতু, সাবাস” বলে গলা ফাটাতে লাগলাম। কিন্তু এর পরে যখন ঐ ছেলের পজেশনে বল গেলো তারপর আর সেতু বল পেলো না। বল পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ছেলেটা সেতুর জালে প্রথম গোলটা ঢুকালো। সাথে সাথে দেখি আমাদের আশেপাশের সব ছেলেগুলো গর্জন তুললো, “সাবাস সাবাস। দে ভোংচোং রে দে।” বুঝতে পারলাম আশেপাশের যত পোলাপান আছে সব আইইউটি থেকে আসা পোলাপান। আমরা মাত্র তিনজনই সেতুর সাপোর্টার। সেতু একের পর এক গোল হজম করতে লাগলো। আইইউটির পোলাপানের গর্জনও বাড়তে থাকলো। আমরা তিন সাপোর্টার আস্তে আস্তে কেটে পড়লাম সেতুর পিছন থেকে। খেলে শেষে সেতু আমাদের খুজে বের করলো আর হাসিমুখে বললো,
- আই অলমোস্ট হ্যাড হিম। কি বলিস?
আমরা আর কি বলবো? বললাম,
- হ্যা, অনেক ভালো খেলেছিস। প্রথমবারের হিসেবে ৬-০ গোলের মার্জিনটা বেশি বড় না। সাবাস।
হারার পরে বন্ধুকেতো আর হতাশাজনক কথা বলা যায় না। এতটুকু যদি করতে না পারি, তাহলে হোয়াট আর ফ্রেন্ডস ফর?
(চলবে)
০৪ ঠা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৬
মিয়া মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান বলেছেন: হ। চমৎকার দিন ছিলো সেগুলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ২:৩৫
জীনের বাদশা বলেছেন: আহা কি সব দিন ছিল।