নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাই নাই

মিয়া মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান

অতি সামান্য একজন মানুষ। যা আছে তা নিয়েই সুখী।

মিয়া মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি রোমান্টিক গল্পের জন্যে, পর্ব-২

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪

পরের দিকের পাঠকদের জন্যে ঃ একটি রোমান্টিক গল্পের জন্যে, পর্ব-১

সিড়ির ঘরে এসে লিফট কল করলাম। যদিও কিছুদিন হলো আমার বিল্ডিং এ তাড়াতাড়ি নামার জন্যে নরমাল লিফটের পাশাপাশি,। এক্সপ্রেস এলিভেটর নামক এক ফাইজলামী চালু করেছে। এটাতে ভার্টিকালী কিছু টিউব ইন্সটল করা থাকে যেটাতে এয়ারপ্রেসারের তারতম্য ঘটিয়ে একজন মানুষকে তার নির্দিষ্ট ফ্লোরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতি টিউবে একজন ঢুকতে পারে। কোন কারণে পাওয়ার ফেইলার হলে, ঐ সময় টিউবের আরোহী যে অবস্থানে আছে, সেই অবস্থানে পায়ের নিচে ইমার্জেন্সী ফ্লোর স্লটের মত বের হয়ে আসে। ফলে নিচে পড়ার কোন রিস্ক থাকে না। তাড়াতাড়ি উঠানামা করার জন্যে বেশ ভালো জিনিস। হাওয়ার মধ্যে গা ছেড়ে দিয়ে নিজেকে বেশ সুপারম্যান সুপারম্যান লাগে। আমার বিল্ডিং এর বাচ্চাগুলোরও মনেহয় সেই একই অনুভুতি হয়। তা না হলে পিচ্চিগুলো সবসময় এক্সপ্রেস টিউবগুলো ব্লক করে রাখবে কেন? সবসময় হুদাই হি-হি, গি-গি করতে করতে একবার উপরে উঠবে, আরেকবার নিচে নামবে। বজ্জাতের হাড়ি সবগুলো। এই মুহূর্তে একটা হৃষ্টপুষ্ট পিচ্চি, ছোটখাটো হাতি বলা যায়, টিউবের ভিতর আটকা পড়েছে। ওর সাইজের তুলনায় টিউবের ডায়ামিটার মনেহয় একটু কম হয়ে গিয়েছিলো। বেচারা না পারছে উপরে উঠতে, না পারছে নিচে নামতে। সাইজ হাতির বাচ্চার মত হলেও, আটকা পড়ে সে এখন গাধার মত চেচাচ্ছে। উফ, অসহ্য লাগছে। উঠতে বলেছিলো কে তোকে? বজ্জাত। ছোটখাটো ভীড় জমে যাচ্ছে টিউবের সামনে। এর মধ্যে আমার লিফট চলে এসেছে। আমি নিচে নামার জন্য লিফটে উঠে দাড়ালাম।

বেলা এগারোটা বাজে। রাস্তার ব্যস্ততা কিছুটা কম। আমার তাড়াতাড়ি পৌছানো দরকার রবির ডিপার্টমেন্টে। এজন্যে একটা ভাড়ার বাইভার্বালে চেপে বসলাম। ঢাকার রাস্তায় নতুন নেমেছে এই অটো বাইভার্বালগুলো। কোন চালক নেই। গন্তব্যের নাম বলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলেই হলো। সেন্ট্রাল ডেটাবেজে ফিঙ্গারপ্রিন্টের বিপরীতে থাকা আমার প্রোফাইল থেকে গন্তব্যে পৌছানোর জন্য সমপরিমাণ টাকা কেটে রাখা হয়।

আমি যেটাতে চেপে বসেছি, সেটার ইন্টেরিওর বেশ সুন্দর। সিটগুলো বেশ আরামদায়ক। মোল্লা এন্টারপ্রাইজের বাহন। একটা কারণেই একটু মনটা খুতখুত করছে। বাইভার্বালটি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ হতে আমদানীকৃত। ঢাকার পাচশো বছরের ইতিহাস বইতে পড়েছিলাম যে, এর আগে ঐ একই দেশ থেকে প্রচুর ট্যাক্সিক্যাব আনা হয়েছিলো, যেগুলো যে কোন মুহূর্তে , যে কোন জায়গায় নষ্ট হয়ে যেত। আমি এটা ভেবে মনেমনে কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করছি।

আমার আতঙ্কিত হওয়া যে অযৌক্তিক নয়, সেটা প্রমাণ করতেই যেন দশমিনিট চলার পরে হঠাত করেই মোল্লা এন্টারপ্রাইজ থেমে গেলো। আমি অটোড্রাইভারকে সুধালাম,
- কি সমস্যা?
- স্যার, যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমাদের কোম্পানীর এ বাহনটির পক্ষে আর সামনে যাওয়া সম্ভব নয়।
- ফাইজলামী করো? বিজয়সরনী আর সেকেন্ড-গেটের মাঝামাঝি এসে বলতেসো যে যান্ত্রিক গোলযোগ। এখানে কিছু পাওয়া যায়?
- দুঃখিত স্যার। আমার কিছু করার নেই।
- করার নেই মানে? তোমাদের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ কর।
একটু পরেই কাস্টমার কেয়ার থেকে একটা রিনরিনে নারী কন্ঠ ভেসে আসে।
- সুপ্রভাত। মোল্লা এন্টারপ্রাইজ কাস্টমার কেয়ার থেকে রিনি বলছি। বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
- হোয়াটস সো সু অ্যাবাউট দিস প্রভাত? আপনাদের যান মাঝপথে নষ্ট হয়ে বলে তার আর কিছু করার নেই।
- সরি স্যার। আমাদের অটোসার্ভিসে মাঝে মাঝে এমন সমস্যা ঘটতেই পারে। আপনি যদি কষ্ট করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করেন তবে আমাদের কোম্পানীর আরেকটি যান এসে আপনাকে নিয়ে আপনার গন্তব্যে পৌছে দিবে।
- কি?!! বিশ মিনিট!! আমি এতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবো না। আমাকে এই পর্যন্ত দূরত্বের টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত দেবার ব্যবস্থা করেন।
এ কাজটি করার জন্যে আমি দ্বিতীয়বারের মত আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে উদ্যত হই, যাতে এই পর্যন্ত দুরত্বের টাকাটা কেটে বাকি টাকা আমার অ্যাকাউন্টে চলে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তেই আবার রিনরিনে কন্ঠ বলে ওঠে
- দুঃখিত স্যার। টাকা ফেরত দেয়ার সার্ভিসটি এখনো চালু হয়নি।
- তাহলে আমি কি করবো এখন? মাঝপথে নেমে যাবো পুরো পথের টাকা দিয়ে? কি সব বাটপারী সার্ভিস শুরু করেছেন আপনারা, অ্যা??
- রাগ করবেন না স্যার। এ ধরনের সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে আপাতত আমাদের ইমার্জেন্সী সার্ভিস চালু আছে। এটা ব্যবহার করতে পারেন।
- সেটা আবার কি?
- আপনার আসনের নিচে মোল্লা-ইমার্জেন্সী জেটপ্যাক আছে। সেটা ব্যবহার করতে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সেটাকে অ্যাক্টিভেট করুন, আর তারপর গন্তব্য বলে অটো বাটন প্রেস করুন। এখানে উল্লেখ্য যে, ইমার্জেন্সী সার্ভিসের জন্যে আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হবে।
- ফাইজলামী করেন? রাস্তার মাঝে নামিয়ে দিয়ে টাকা ফেরত দেন না। তার উপর ইমার্জেন্সী সার্ভিসের নাম করে এক্সট্রা টাকা কাটার ধান্ধাবাজি করেন? আপনারাতো মহা বাটপারি......
আমি কথা শেষ হবার আগেই দেখি , “আপনার যাত্রা শুভ হোক” এ জাতীয় কি একটা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো। মহাবিপদে পড়লাম। যেতেও হবে তাড়াতাড়ি, তারউপর খরচের উপর খরচ। ইদানীং হাতটানও পড়েছে। কিন্তু রোমান্টিক গপ্পোটা মাথা থেকে বের করাও প্রয়োজন। সব আগপিছ বিবেচনা করে, জেটপ্যাকটা গায়ে চাপিয়ে নিলাম। হুশ করে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে চললো মোল্লা-ইমার্জেন্সী জেটপ্যাক। হাইটফোবিয়া না থাকায়, উপর থেকে নিচের ছোটছোট মানুষজন, গাছপালা দেখতে ভালোই লাগছিলো। এইসব দৃশ্যবলী উপভোগ করতে করতেই বায়ো-মেডিকেল ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে এসে পৌছালাম। এখানে উল্লেখ্য যে, এই যাত্রাপথে, উপরের দমকা হাওয়াতেও আমার চুল ডিফারেন্সিয়াল পরিমাণও নড়েনি। বুঝুন তাহলে আমার চুল কি পরিমাণ সিল্কি!!
[চলবে]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.