![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এইবার ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স নামক একটা বেসিক কোর্স নিচ্ছি। তো এটা নিতে নিতেই ইচ্ছা হলো যে, ল্যাবে যা আছে তা দিয়ে একটা এলইডি ডিসপ্লে বানাই। এখন এই ধরনের ডিসপ্লে মাইক্রোকন্ট্রোলার দিয়ে বানানো যায় ইচ্ছেমতন। তারপরে লেখাগুলোকে ইচ্ছেমতন নাচানোকুদানো যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, বেশিরভাগ জায়গাতেই ফিক্সড কোন কিছু একটা লেখা থাকে যেটা বানাতেও মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়। যেমন আমার ভার্সিটির লাইব্রেরি হলেই একটা ডিসপ্লে আছে যেটা দেখায়, "NO FOOD OR DRINKS ALLOWED"। এটা বানিয়ে নিয়ে আসতে প্রায় হাজার দুয়েক টাকা লেগেছে। এবং এই লেখাটা কখনোই পরিবর্তন হয় না। এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের জন্যে মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যবহার করা আমার কাছে মশা মারতে কামান দাগানোর মতন মনে হয়।
ল্যাব অ্যাসিস্টেন্টকে নিয়ে তাই বসে গেলাম মাইক্রোকন্ট্রোলার বিহীন একটা ডিজিটাল সিস্টেম বানাতে যেটা দেখাবে ECL এবং এই লেখাটিই বিয়া বাড়ির বাত্তির মতন নাচাকুদা করবে। এখন এই সিস্টেম বানানো কাহিনী না। ফ্লিপফ্লপ আইসি দিয়ে সহজেই বানায় ফেললাম। কিন্তু এটাকে কম পাওয়ার খরচ করে চালানোটা মেইন চ্যালেঞ্জ। সেজন্যে সহজ হিসেব হচ্ছে বাত্তির সংখ্যা কমাতে হবে। এজন্যে একটা বুদ্ধি বের করেছি। এলইডি গুলার সাথে ফাইবার অপ্টিক লাগায় দিবো। ফলে কম সংখ্যাক বাত্তির লাইট ফাইবার ক্যারি করে তা জ্বলজ্বল করার কথা। তবে ফাইবার এখনও হাতে পাই নাই। মানে আমাদের ল্যাবে নাই আরকি। সেটা হাতে পেলে করে দেখা যাবে কেমন কাজ করে। তবে ফাইবার হাতে আসতে আসতে যে সময় লাগবে, তার মধ্যে আজকে আরেকটা কাজ করে ফেললাম। ল্যাবের এক চিপায় অনেকদিন ধরে একটা সোলার প্যানেল পড়ে ছিলো। সেটাকে বের করে দেখি এফিশিয়েন্সির অবস্থা খারাপ। তবে কাজ চলে যাবে। আজ সেটাকে ডিভাইসের সাথে জুড়ে দিলাম। চমৎকার কাজ করলো। এটা এখন পুরোপুরি সেলফ-পাওয়ারড একটা সিস্টেম। এখন ফাইবার আসার অপেক্ষায় আছি।
এই ধরনের ডিজিটাল সিস্টেম ইচ্ছে করলে ছাত্রছাত্রীরা যে কোন রেগুলার ইলেকট্রনিক্স ল্যাবে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়ে সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারে এবং ভবিষ্যতে নিজেদের বিবাহের বাত্তির নর্তনকুর্দনের দায়িত্ব নিজ ঘাড়ে তুলে নিতে পারে।
বাই দ্যা ওয়ে, এইটা খুব সহজ সার্কিট হলেও বেশ কিছু কেরামতি এখানে করা লেগেছে। যেমন, সাধারণত D-FF এ একটা করে ইনভার্টেড আউটপুট থাকার কথা থাকলেও কোন এক অজানা কারণে ল্যাবে থাকা আইসিটাতে সেটা নেই! মডেল ভিন্ন। আর এই কাউন্টারে ইনভার্টেড আউটপুট থাকাটা জরুরী। কি আর করা? আরেকটা NOT আইসি দিলেই ল্যাঠা চুকে যাইতো। আমার ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট তাই করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু ওকে মনে করায় দিলাম যে, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খরচ এবং পাওয়ার কন্সাম্পশন দুটোই সর্বনিম্ন রাখতে হবে। তাই একটা ট্রান্সিসটর আর রেজিস্টর দিয়ে একটা NOT গেট বানিয়ে ফেললাম। আইসি ব্যবহার করলে খরচ হতো ৮টাকা। এভাবে খরচ হলো ৩ টাকার মতন।
একটা আউটপুটে একটা এলইডি জ্বললে আপনি একই আউটপুটে আরও একাধিক এলইডি বাত্তি প্যারালাল কানেকশনে জ্বালাইতে পারবেন। কিন্তু কাহিনী হইলো যে, এতে প্রতি বাত্তির ঔজ্বল্য অনেক কমে যাবে। কমার্শিয়ালি বিয়া বাড়ির যেসব বাত্তি জ্বলে সেগুলোতে তাই এরকম প্রত্যেক আউটপুটে একাধিক বাত্তি একইরকম ঔজ্বল্যে জ্বালানোর জন্যে প্রত্যেক আউটপুটে একটা করে ট্রান্সিস্টর ব্যবহার করে কারেন্ট অ্যামপ্লিফাই করে নেয়া হয়। এছাড়াও বাত্তির লুমিনেন্স ঠিক রাখার জন্যে বাত্তির অ্যারেগুলাকে প্যারালাল-সিরিজ কম্বিনেশনের মাধ্যমে কানেকশন দেয়া হয়। কি কারণে এটা করতে হবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা না জানলেও, এটা ছাড়া যে কাজ হবেনা তা তারা ভালোই জানে। ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কাজ শিখেছে এমন লোকজনের জন্যে এগুলো খুব কমন নিয়ম। এরকম কেউ সাথে থাকলে অনেক বিষয় বোঝা সহজ হয়ে যায় এবং কাজের গতিও অনেক স্মুথ হয়।
আমরা শিক্ষকরা থিওরি পড়ায় আর ল্যাব করায় কোর্স খালাস করে দেই। এই সকল টেকনিক শিখাই না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সকল টেকনিক আমরা নিজেরাই জানিনা। শিখাবো কিভাবে? এই কারণে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা এই সকল ডিভাইস ল্যাবে ফটাফট বানিয়ে ফেললেও এগুলোর কমার্শিয়াল ইমপ্লিমেন্টেশন করতে পারেনা।
ল্যাব করানো নিয়েও আমার নিজের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। আগে নিজেরা যে গৎবাঁধা ল্যাব করে এসে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম, সেই একই স্টাইলে ল্যাব করাতাম। ল্যাবের শিরোনাম হয়, "To Construct an Astable Multivibrator using 741 Opamp". গলদ। বিশাল গলদ নিয়ম। আপনি সার্কিট বানানোর জন্যে ইলেকট্রনিক্স শিখতে আসেন নাই। সামনে ডায়াগ্রাম থাকলে যে কেউ একটা সার্কিট বানাতে পারবে। আপনি ইলেকট্রনিক্স শিখতে এসেছেন সার্কিট ডিজাইনিং করা শিখতে। কন্সট্রাকশন আর ডিজাইনিং এই শব্দ দুইটার মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। এখন ল্যাবের শিরোনাম দেই "To Design an Astable Multivibrator to generate a frequency of 1KHz using 741 Opamp". এখন আপনাকে নির্দিষ্ট একটা আউটপুট দিতে পারে এমন একটা সার্কিট ডিজাইন করতে হবে। উড়াধুরা কানেকশন দিয়ে অসিলোস্কোপে একটা কিছু আনাটা ল্যাব করানোর উদ্দেশ্য না।
বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা নিলে মানুষের জ্ঞানের পরিধি আসলেই বাড়ে। আমার নিজের সেই সৌভাগ্য এখনও হয় নাই। তবে আমেরিকায় পিএচডি করছে এমন এক বন্ধুর সাথে কথাবার্তার সময় তাদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে ল্যাব কিভাবে করানো হয় সেটা আমাকে বুঝিয়েছিলো। বন্ধুর সেই কথা শোনার পরে ল্যাব করানোর ব্যাপারে আমার নিজের মানসিকতার এ পরিবর্তন এসেছে। আশা করি, আমার ছাত্রছাত্রীরা এ ধরনের পদ্ধতিতে উপকৃত হবে এবং আমি যা পারি তার চাইতেও ভালো কিছু শিখতে পারবে।
২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৪
মিয়া মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান বলেছেন: মাইক্রোকন্ট্রোলার একটা ২৮ পিনের আইসি। এটা দিয়ে চমৎকারভাবে বিভিন ধরনের কন্ট্রোল সিগনাল জেনারেট করা যায়। কম্পিউটারের সাথে ইন্ট্রাফেসিং করে এটাতে প্রোগ্রাম লোডও করা যায় এবং সেই প্রোগ্রাম অনুযায়ী সে আউটপুট জেনারেট করতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০২
হোসেন মালিক বলেছেন: মাইক্রোকন্ট্রোলারের ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?