নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাই নাই

মিয়া মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান

অতি সামান্য একজন মানুষ। যা আছে তা নিয়েই সুখী।

মিয়া মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনার্সে বিজনেস কমিউনিকেশনের প্রয়োজনীয়তা

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩৮

যতদিন যাচ্ছে ততো আমার উপলব্ধি হচ্ছে যে, অনার্সে ছেলেমেয়েদের জন্যে সবচেয়ে জরুরী কোর্স হচ্ছে "বিজনেস কমিউনিকেশন"। ছেলেমেয়েরা নানাধরণের দরখাস্ত নিয়ে যখন আমার কাছে আসে, তখন সেটা মনেহয়। কারণ দরখাস্তে রেজিস্ট্রার হয়ে যায় রেজিস্টার। প্রেয়ার হয়ে যায় পেয়ার। এসব দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। মনেহয় যে, বিভিন্ন কাজের জন্যে ব্যাংকগুলোতে যেমন অ্যাপ্লিকেশন ফরম আছে, সেরকম কিছু ফরম বানিয়ে ফেলি। তাহলে পোলাপানের এসব কান্ড দেখতে হবেনা। মনও খারাপ হবেনা। কিন্তু পরে চিন্তা করি, আমি যদি ওদেরকে দিয়ে দরখাস্ত না লেখাই, তাহলেতো অবস্থা আরও খারাপ হবে। ছাত্রজীবনের পরে যখন চাকুরী জীবনে পা দিবে, তখন পদে পদে অপদস্ত হতে হবে। পদে পদে লজ্জ্বার সম্মুখীন হতে হবে। কাজেই যতই মনে কষ্ট পাই না কেন, ফরম সিস্টেম চালু করা যাবেনা।

আবার যখন ছেলেমেয়েরা কোন কাজে দেখা করতে আসে, তখনও মনেহয় বিজনেস কমিউনিকেশন কোর্সটা ঠিকমতন শেখা কতটা জরুরী। কথা বলতে এসে, কথা শুরুই করে,
- স্যার আমার কোর্স রিটেক করা লাগবে।
আরে ভাই, অদ্ভুত ব্যাপারতো! তুমি/আপনি কে? কোন জায়গায় বা অফিসে গেলে আগেতো নিজের পরিচয় দিতে হবে। তারপরে না প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য এগুলো বলতে হবে। আজকেই তো এমন ঘটনা ঘটলো। তাও আধা ঘন্টার ব্যবধানে দুইবার। দুবারই আগন্তক এসে হড়বড় হড়বড় করে তাদের গান গাওয়া শুরু করলেন।
- স্যার রিঅ্যাডমিশনোর লাগি মাততাম।
- দাঁড়ান দাঁড়ান। আপনাকে আমি চিনি? আগে আপনার পরিচয় দেন।
- আমি মেট্রোর স্টুডেন্ট।
- হ্যাঁ, ভেরি গুড। এবং এখানে ছয়টা ডিপার্টমেন্ট আছে। আপনি কোন ডিপার্টমেন্টের?
- আমি অমুক ডিপার্টমেন্টের।
শুনে আরও মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। সে কে তার ডিপার্টমেন্টের আর কে অন্য ডিপার্টমেন্টের তাই জানেনা! এই লোককে বিদায় করার পরে আরেক লোক আসলো। আর এই লোকতো আরও কনফিডেন্ট। সেটা এতোটাই যে সে আমার চেয়ারের কাছাকাছি এসে প্রায় গায়ের উপরেই উঠে যাচ্ছে। সবকিছুতে মেজাজ কন্ট্রোলে রাখতে সফল হলেও, যখন কেউ গায়ের উপর এসে পড়ে তখন আর আমার কন্ট্রোল সার্কিটের থার্মাল ব্রেকডাউন হয়। এবারও হলো। খেঁকিয়ে উঠলাম লোকটার উপর,
- এ্যাই যে, গায়ের উপর উঠে যাচ্ছেন কেন! সরেন!
- স্যরি স্যার।
- হ্যাঁ, আরও দূরে সরেন। ঐ যে, কালো রঙয়ের টাইলসের লাইনের ঐপাশে দাঁড়ান। লোক জায়গামতন পজিশন নিলো।
- হ্যাঁ, এইবার বলেন।
- স্যার, রিঅ্যাডমিশনোর লাগি...
তার কথা শেষ হবার আগেই থামিয়ে দিলাম।
- হ। বুঝছিতো! ডিপার্টমেন্টের নাম কন।
- আমি অমুক ডিপার্টমেন্ট!
দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
- আমি অমুক ডিপার্টমেন্টের না। ইইই এর।

একইরকম ঘটনা মোবাইলেও ঘটে। অহরহ। এই সেমিস্টারের শুরুতেই এরকম ফোন এসেছিলো। অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা ফোন ধরে হ্যালো বলাও শেষ করতে পারিনি, ওপাশ থেকে রেলগাড়ি চলা শুরু করলো।
- হ্যাঁ, আমারতো অফিস। তাই আপনাদের এখানে চারদিন ক্লাস করতে পারবোনা। তিনদিন হয়তো করতে পারবো। ----- এবং আরও অনেক ব্লা ব্লা...
- আরে ভাই থামেন। আপনি কে ভাই? আপনাকে আমি চিনি?
- ওহ। স্যরি। আমি আসলে আপনাদের ইইই তে ইভিনিং এ ভর্তি হতে ইচ্ছুক!
মোবাইলে অবশ্য এরকম ঘটনা শিক্ষক হবার আগেও ঘটতো। সে সময় আমার ফোন ছিলো না। মেজো ভাইয়ের ছিলো। আহাম্মক লোকজন ফোন করে কনফিডেন্টলি বলতো,
- হ বাই, সবুজরে দ্যান। মেজো ভাই খুব আলবেলা সেজে ফোনটা আমাকে দিয়ে বলতো,
- এই নে তোর ফ্রেন্ড ফোন দিসে।
আমিও আরেক বেকুব। ফোন ধরে বলতাম,
- হ্যাঁ বল। কে?
- হ তরে যে কইসিলাম মাল কাইলকার মধ্যে পাঠাইতে, হেই মালতো আহে নাই!
- মানে? আপনি কে বলছেন?
- ফাইজলামি করস? আমার মাল পাঠাস নাই কেন এহোনো ক?
আমি মেজাজ খারাপ করে ফোন রেখে দিতাম, আর দেখতাম মেজো ভাই ভিলেনের মতন খিকখিক করে হেসে চলেছে। পাবলিকের আরেকটা বদস্বভাব হচ্ছে যে, মোবাইলে ফোন দিয়ে কথা নাই বার্তা নাই প্রথমেই জিজ্ঞেস করে, "বাই, এইটা কোন জায়গা?" প্রথম দিকে সঠিক উত্তর দিতাম। কিন্তু পরের দিকে এরকম স্টুপিড কলারদের একটা উত্তর দিতাম, "এইটা মোবাইল। এইটা নিয়ে আমি যেইখানে যাবো এইটা সেই জায়গা। আপনের কোনটা দরকার? " এই উত্তর শুনে কলাররা মন খারাপ করে তৎক্ষণাৎ ফোন কেটে দিতো।

আমি নিজে অনার্স বা মাস্টার্সে বিজনেস কমিউনিকেশন কোর্স করিনি। যতটুকু জানি, অফিস-আদালতে কিভাবে স্মার্টলি কর্মসম্পাদনের জন্যে সেখানকার কর্মী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়, সে সম্পর্কে এই কোর্সে আলোকপাত করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় হচ্ছে এই কোর্সটি ঠিকমতন করা। নতুবা আমাদের যে কমনসেন্সের লেভেল, তাতে কারও সাথে দেখা করতে গেলে ভোদাইয়ের মতন নিজের পরিচয় না দিয়ে কথা বলা শুরু করবো অথবা ভদ্র দূরত্বের মাথা খেয়ে কথা বলার জন্যে কারও গায়ের উপর উঠে যাবো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.