নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শত মানুষের ভীড়ে অতি সাধারন একজন মানুষ,যে লেখালেখি তে মাত্র হাতেখড়ি নিচ্ছে।

জিয়ানা

জিয়ানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের মানসিক রোগী এবং আমরা

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫৯

শুরুটা না হয় করি আমাদের আশে-পাশের মানুষ দিয়ে। আমার এক চেনা মানুষ, যিনি একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ বছর ধরে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতেন। আমি তাকে মামা বলে সম্বোধন করতাম। তিনি প্রায় বলতেন, আমার বয়সী তার ও একটি মেয়ে আছে। কিন্তূু সে পড়তে চায় না!... তিনি আমাদের বাসায় আসতেন লাইট-ফ্যান অন্যান্য ইলেকট্রিক জিনিস মেরামত করতে। তিনি তার কাজে ছিলেন দক্ষ। এমনকি তার কিছু কথা তে তার জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে আন্দাজ করা যেত, বেশ কিছু জানতেন তিনি তার কাজের বাইরেও। একদিন হঠাৎ করেই শুনলাম, তিনি 'পাগল' হয়ে গেছেন। বিশ্বাস তখন করলাম যেদিন প্রথম দেখলাম, উনি রাস্তায় দৌড়াচ্ছেন অস্বাভাবিক ভাবে এবং অকারণে সবাই কে গালি-গালাজ করছেন। আমি খুব কষ্ট পেলেও কিছু করতে পারি নি, ছোট ছিলাম আমি। তবে আব্বু কে বলেছিলাম, আব্বু কেন তার চিকিৎসা করা হচ্ছে না? উনি বললেন, তার পরিবার চিকিৎসা করাতে আগ্রহী না। আমি বললাম, কেন? আব্বু বললেন তার পরিবার এর ধারনা, চিকিৎসা করাতে গেলে তার মৃত্যু ঘটবে! তখন কিছু বলতে পারি নি আমি। এর মধ্যে বেশ কয়েক বছর সেসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে পারি নি,কারণ তার মধ্যে আমাদের পরিবারে অনেক কিছু ঘটে যায়। অন্যকিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ পাই নি। এসময় এর মধ্যে তার দেখা পাই নি। কিন্তু দীর্ঘদিন পর রাস্তায় তার সাথে দেখা। আমি ছিলাম রিক্সায়। তিনি রাস্তায় দিশেহারার মত ঘুরছিলেন। তার মুখভর্তি দাড়ি, নোংরা শরীর এবং অদ্ভুত বেশভূষা। হঠাৎ তিনি আমায় দেখলেন। তিনি যেন আমাকে চিনতে পারলেন। আমার নাম ধরে ডেকে বললেন, "মামণি, ভাল আছ? বাসার সবাই ভাল?" আমি মাথা হেলে উত্তর দিলাম। তারপর আবার তিনি হারিয়ে গেলেন এলোমেলো ভাবে হাঁটতে হাঁটতে। আমি এরপর ও কিছু করতে পারি নি। কি করতে পারতাম, তাও বুঝতে পারি নি। বাসা্য় এসে রাগতভাবে আব্বুকে বললাম, উনার পরিবার এখনও কেন চিকিৎসা করান না উনার? আর চিকিৎসা করাতে গেলে উনার মৃত্যু হতে পারে এটা ভুল ধারণা,তুমিও জানো। তোমাদের প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিভাবান চাকরিজীবি,তোমাদের কি কোন দায়ীত্ব নেই? উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে এটুকুই বললেন, যেখানে পরিবার রাজী হয় না, সেখানে আমরা কি করতে পারি! তাঁকে নিয়ে অনেক গুজব আছে, যে তিনি স্ত্রীকে ফেলে নাকি অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সেজন্য তার পরিবার তাকে নিয়ে আর মাথা ঘাটায় না। তাও যদি হয়ে থাকে, তবে একজন মানুষ হিসেবে অন্ততঃ তার পরিবার-আত্মী্য়-স্বজন কি পারত না তাঁকে কোন হাসপাতালে ফেলে আসতে? অথবা কোন প্রতিবেশী? না। কেউ করে নি। আর আমি একজন স্কুলছাত্রী হিসেবে, যে নিজেই পরনির্ভরশীল..তার পরিবার কেও চিনি না মাত্র; কিছুই করতে পারি নি...আমরা রাস্তায় এরকম 'পাগল' মানুষ দেখলে সাধারণত এড়িয়ে চলি। অনেকে ভীড় করে দাড়ায়। অনেকে ক্ষেপায়। হাসে। এবার আসি বাংলাদেশের মানসিক রোগী দের হাসপাতাল প্রসঙ্গে। আমরা অনেকেই অনেক কে রসিকতা করে বলি, তোমার পাবনা হাসপাতালে যাওয়া উচিত! যদি তারা পাবনা মানসিক হাসপাতালের চিত্র একবার দেখতো! আর অন্যান্য হাসপাতাল এর অবস্থাও যদি একবার দেখতো! এবার আসি মানসিক রোগীদের চিকিৎসক প্রসঙ্গে। বেশিরভাগ চিকিৎসক সরকারি হাসপাতাল এর চে তাদের খোলা প্রাইভেট চেম্বারে বেশী মনোযোগ দেন। তাও, তারা রোগী দের পুরো সমস্যা না শুনেই প্রেসক্রিপশন লিখে, পরের রোগী কে ডেকে নেন। এরকম ভুক্তভোগী রোগী কম নেই। বলুন, দেশের এই হাল হলে আমাদের,এসব মানসিক রোগীদের কি হবে? মানসিক রোগী, তারা অসহায়। যাদের অনেকে 'পাগল' বলেন। কিন্তূু কখন কার কি হ্য়, তা বলা যায় না। তবে এসব মানসিক রোগী আমাদের আশে-পাশের মানুষ,আত্মীয়,বন্ধু,প্রতিবেশী এমনকি আমি বা আপনি ও হতে পারি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:২১

মহা সমন্বয় বলেছেন: আমাদের দেশে মানসিক রোগের ভাল চিকিৎসকেরও অভাব।
আর আমাদের দেশের মানুষও মানসিক রোগকে সাধারণ রোগ মনে না করে- তাবিজ,কবজ, ঝাড়, ফুঁক,পীর ফকিরের কাছে দৌঁড়ায় তাতে রাগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:২৫

বন্যলোচন বলেছেন: মানসিক চিকিৎসার অবকাঠামো নেই। কে বা পাগলের দাক্তার নামে পরিচিত হতে চায়?

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৫২

বটপাকুড় বলেছেন: মানসিক রোগের ব্যাপার টা আমাদের দেশে প্রকাশ হলে কি রকম আচরণ করা হয়, তার কোন সীমা নেই। দেখা যাবে ঐ পরিবারের সাথে কেউ আত্মীয়তা করতে চাইবে না। ঐ দিকে অল্প থাকতে চিকিৎসা নিলে এটা ভালো হয়ে যায় ।

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লেখা।
+++++

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০

জিয়ানা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩০

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: আমাদের দেশে মানসিক রোগকে জ্বীনের আছড় বলা হয়

৬| ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:০০

কাবিল বলেছেন: ভাল বলেছেন।++

০৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২২

জিয়ানা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৪

চন্দ্ররথা রাজশ্রী বলেছেন: মানসিক রোগীর প্রতি আপনার দৃষ্টিভংগি খুবই প্রশংসাযোগ্য।

মূল সমস্যাটা এখানেই, দৃষিভংগি।আমাদের সমাজে মানসিক সমস্যাকে কোন সমস্যা বলেই মনে করা হয় না।তার সাথে যোগ হয়েছে "জানাজানি হলে লোকে কি বলবে" ভয়। তাই মানসিক রোগীরা চিরকাল অবহেলায় থেকে যাচ্ছেন। দরকার একটু সচেতনতার।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এরকম একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য।

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৩

জিয়ানা বলেছেন: হ্যাঁ, আমাদের সমাজের উচিত মানসিক সমস্যা,অথবা রোগ এবং মানসিক রোগীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর। যাদের এ সমস্যা,তাদের "জানাজানি হলে লোকে কি বলবে" এসব কথা না ভেবে সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে,সমাধানের দিকে খেয়াল দিতে হবে। লোকের জানাজানি হবার ভয়ে নিজের ক্ষতি করার কোনো মানে হয় না। এসব ক্ষেত্রে পরিবারের,সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের উচিত নিজেদের এসব দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সচেতন হওয়া। ... আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে এভাবে ভাবার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.