নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র || পর্ব - ০১

২১ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭




বিদ্যুত চলে গেছে একটু আগে। কখন আসবে তার ঠিক নেই তবে এক ঘন্টার আগে যে আসবে না- এটা নিশ্চিত। গরমের সময় লোডশেডিং অসহনিয় মাত্রায় বেড়ে যায়। এ সময় চাতক পাখির মতো বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সে অপেক্ষা হয় দুর্বিসহ। বিদ্যুত চলে যাওয়ায় চতুর্দিকে গাঢ় অন্ধকার জমাট বেধে গেছে। ব্যতিক্রম শুধু লক্ষিপুর বয়েজ স্কুলের দুর্বা ঘাসে ঢাকা বিশাল সবুজ মাঠ। অন্ধকারের বুক চিরে মাঠে জোনাকির আলোর মতো অসংখ্য হ্যারিকেন মিটমিট করে জলছে। গরমের সময় বিদ্যুত চলে গেলে পড়ার জন্য হোস্টেলের সবাই হ্যারিকেন জালিয়ে মাঠে চলে আসে। সেটা একটা দেখার মতো দৃশ্য বটে! প্রায় একশো ছাত্র হ্যারিকেন জালিয়ে পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে, গভির অন্ধকারে দুর থেকে মনে হয় জোনাকিদের যেন হাট বসেছে! কেউ জোর গলায় আর কেউ বা আপন মনে পড়া মুখস্ত করে চলছে। তাদের শব্দ ছাড়া পুরো এলাকা নিশ্চুপ। এই স্কুলে একশরও বেশি ছাত্র হোস্টেলে থেকে পড়ে। ক্লাশ সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত পড়ানো হয় এখানে। স্কুলের পরিবেশ মনোরম এবং শাসন ব্যবস্থা অত্যান্ত কড়া হওয়ার কারনে মেধাবি ছাত্ররা যেমন হোস্টেলে আছে তেমনি বেয়াড়া ছাত্রদেরও অভাব নেই এখানে। স্কুলের সুনামের কারনে অভিভাবকরা তাদের মেধাবি সন্তানদের যেমন এখানে পাঠান তেমনি সন্তানের জালায় অতিষ্ঠ হওয়া পিতামাতারাও স্কুলের কড়া শাসনে রেখে মানুষ বানানোর আশায় তাদের সন্তানদেরকেও এখানে পাঠান। তাই এই হোস্টেলের ছাত্রদের ভিতরে কোন কিসিমের বৈশিষ্ট্যেরই অভাব নেই।

আজ পড়ায় মন বসানোর চেষ্ঠা করেও সফল হচ্ছে না রুদ্র। মনের ভিতরে কি যেন একটা খুতখুত করে চলছে। বার বার মনে হচ্ছে কোথাও কিছু একটা অঘটন নিশ্চয়ই ঘটেছে। কিছু একটা না ঘটলে ওর মন এভাবে খুতখুত করার কথা নয়। রুদ্র ছোট বেলায় যখন বুঝতে শিখেছে তখনই ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে, বড় রকমের কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগে ওর মন এমন অস্থির হয়ে ওঠে। যখন ওর মন এমন অস্থির হয়ে ওঠে তখনই ও অপেক্ষা করে বড় রকমের কিছু একটা অঘটনের সংবাদ শোনার জন্য। বড় জোর দুই দিনের মধ্যেই খবরটা পেয়ে যায় ও।

ওর স্বপ্নগুলোও কেন যেন উল্টোভাবে বাস্তবে পরিনত হয়। ও স্বপ্ন খুব কমই দেখে। হয়তো মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু ও স্বপ্নই দেখছে না। তবে যদি দেখে তাহলে সে বুঝতেও পারে সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে। যদি স্বপ্নে অন্যকারো কিছু হতে দেখে তবে কয়েক দিনের মধ্যে সেটা নিজের পরিবারের মধ্যে ঘটে আর যদি নিজের পরিবারের কিছু দেখে তবে সেটা আত্মিয়দের মাঝে ঘটে। হুবহু যে একই ঘটনা ঘটে তা নয়, তবে কিছুটা মিল তো থাকেই আর ও সেটা অদ্ভুদভাবে বুঝতেও পারে। এটা নিয়ে ও অবশ্য কারো সাথে কখনো আলাপ করে নি, নিজের মধ্যেই রেখে দিয়েছে। হোস্টেলের একশ ছাত্রসহ স্কুুলের সবাই ওকে কেন যেন সমিহ করেও চলে, ছোটরা তো করেই এমনকি বড়রাও করে। ও এবার ক্লাশ নাইনে, সায়েন্স গ্রুপে। এই স্কুলে এসেছে এক বছর হলো- ক্লাশ এইটে। এই বয়সেই ওর চেহারায় ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে। সবার সাথে ও সাধারন ভাবেই মেশে তারপরেও ওকে কিছুটা সমিহ না করে পারা যায় না। ভালো, তিক্ষ্ণ বুদ্ধি আর ডানপিটের সংমিশ্রন ও। তবে কোনটাই প্রকট ভাবে বোঝা যায় না, যে সংমিশ্রনটুকু প্রকাশ পায় তাতে ওকে অবজ্ঞা করা চলে না।

ওর ষষ্ঠইন্দ্রিয় অনেকটাই প্রখর। বিশেষ কোন কিছু ঘটার আগেই ষষ্ঠইন্দ্রিয় ওকে সতর্ক করে দেয়। ষষ্ঠইন্দ্রিয় এখন যা বলছে এবং মনের ভিতরে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তাতে ও বুঝতে পারছে খুব শিঘ্রই ওকে একটি খারাপ খবর শুনতে হবে। কিন্তু সেটা কি হতে পারে অনুমান করতে পারছে না। নাহ্ আজ আর পড়ায় মন বসবে না। এমনিতেই ও বেশি পড়তে পারে না, পরিক্ষার আগের রাতে পড়েই পরিক্ষা দেয়ার অভ্যাস ওর। তবে ক্লাসের পড়া দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে একটু তো পড়তেই হয়। আজ সেটাই চেষ্ঠা করছিলো কিন্তু মন যেভাবে খুতখুত করছে তাতে বিষয়টা ঘটনা বা দুর্ঘটনা যাই হোক না কেন- সেটা না জানা পর্যন্ত আর স্বস্তি নেই। শেষ পর্যন্ত বই বন্ধ করে রুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো ও। ওর একটু দুরে রুমমেট আবুল বিড়বিড় করে পড়ছে, রুদ্রর সাথে একই ক্লাসে পড়ে। এক হাতে বই আরেক হাতে হাড়িকেন নিয়ে দাড়িয়ে পড়তেই আবুল বললো- কি রে, কই যাচ্ছিস?

-রুমে যাবো।

-কারেন্ট তো নেই, এই গরমে রুমে যেয়ে কি করবি?

বৈশাখ মাস এক দিন পরেই শেষ হবে। বাতাস একটু থাকলেও গরমের মাত্রা আজ কম নয়। শরির দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। মাঠে তবু একটু বাতাস আছে, রুমের অবস্থা আরো খারাপ। তারপরেও রুমের দিকেই পা বাড়ালো রুদ্র। আবুলকে বললো- ভালো লাগছে না, রুমে গিয়ে একটু শুয়ে থাকবো।

-শরির খারাপ?

-না। এমনিতেই ভালো লাগছে না।

-সমস্যা হলে জানাস, চলে আসবো।

-সমস্যা নেই, তুই পড়।

হ্যারিকেনের আলো কমিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো রুদ্র। মনের অস্থিরতা বোঝার চেষ্ঠা করতে লাগলো কিন্তু অত্যাধিক গরমের সাথে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হলো। গরমের সময় মশার উপদ্রুপ অত্যাধিক বেড়ে যায়। মশার কামড়ে এক সময় শরিরে জালা ধরে গেলো। কয়েল জালিয়ে দিয়েও কাজ হলো না। শেষ পর্যন্ত মশারি লটকিয়ে মশারির ভিতরে শুয়ে পড়লো ও। মনে মনে মশাদের উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্গ করে একবার বললো- এবার বোঝ ঠ্যালা, কামড়া দেখি এবার, কেমন পারিস! মশাদের হাত থেকে রেহাই পেয়ে আবার ভাবনার জগতে ডুব দিলো রুদ্র। কি হতে পারে, কি সংবাদ অপেক্ষা করছে ওর জন্য? ফ্যামিলির কোন অঘটন ঘটতে যাচ্ছে না তো! মনটা যেন ধক্ করে উঠলো। ওর ষষ্ঠইন্দ্রিয় কেন যেন বলার চেষ্ঠা করছে নিজের আপন জনদের কারো কিছু একটা ঘটেছে বা ঘটবে। কিন্তু কি সেটা আর কার ঘটেছে? কপালের দুই পাশ চিনচিন করে উঠছে, মনটা ব্যাথায় যেন মুচরে উঠছে। নাহ্! এটা ঘনিষ্ঠ জন ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না। কিন্তু কে সে? আগামি কাল ছাড়া বাড়ির খোজ নেয়া সম্ভব নয়, সে খোজও নিতে হবে নিজেকে বাড়ি গিয়ে। এই রাতে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়, বাড়ি যাওয়ার সব গাড়ি ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনা তখনকার যখন মোবাইলের যুগ শুরু হয় নি, তাই আরেক উপায় আছে- চিঠি। কিন্তু চিঠি দিয়ে খোজ নিতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে। চিঠির চিন্তা বাদ। কাল বাড়ি যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলো রুদ্র। রুদ্রর চিন্তার জাল ছিন্ন করে বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে কেউ ডেকে উঠলো- রুদ্র!

-কে?

-আমি মিজু। দরজা খোলো, কথা আছে।

মিজু ক্লাস টেনে পড়ে, রুদ্রর সিনিয়র ভাই। যে সন্তানেরা পিতামাতাকে জালানোর অপরাধে এই হোস্টেলে আসতে বাধ্য হয়েছে তাদের মধ্যে মিজু অন্যতম। এই স্কুলের হোস্টেল দুই ভাগে বিভক্ত- একটা মাঠের দক্ষিন দিকে, এটাতে থাকে রুদ্র আরেকটা মাঠের পশ্চিম দিকে, ওটাতে থাকে মিজু। দুই হোস্টেলের মাঝে বেশ কিছুটা দুরত্ব। দক্ষিন হোস্টেলের সাথে মসজিদ আর হোস্টেল সুপারের থাকার রুম। রুদ্র দরজা খুলে দিয়ে বললো- কি ব্যাপার মিজু ভাই! কিছু বলবেন?

-হ্যা, বলার জন্যই তো আসলাম।

-আসুন।

মিজুকে চেয়ারে বসতে দিয়ে মশারিটা তুলে ফেললো রুদ্র। বিছানায় বসে হ্যারিকেনের আলোটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো- বলুন।

-এই সময়ে মশারি লটকে শুয়ে পড়েছো কেন! মাঠে যাও নি?

-গিয়েছিলাম কিন্তু ভালো না লাগায় চলে এসেছি। এটা বলার জন্য নিশ্চয়ই আসেন নি মিজু ভাই!

-না তা নয়। একটা জরুরি বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলতে আসলাম।

-কি বিষয়ে?

-হোসেন স্যার প্রতি রাতে হঠাত করেই আমাদের হোস্টেলে যান। তুমি তো জানো আমরা রাতে মাঝে মাঝে তাস খেলি। কয়েক বার স্যারের কাছে ধরাও পড়েছি। তবে তখন সাবধান করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত রাতে ধরা পড়ায় আমাদের চার জনকে প্রচন্ড মার দিয়েছেন। এই দেখো কি হাল করেছেন!

মিজু তার শার্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি শরির থেকে খুলে ফেলে পিঠ দেখালো। হ্যারিকেনের আলোতেও পিঠে বেতের দাগ স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে। কয়েক জায়গায় চামড়া ছিড়ে গেছে। এমন দাগ যে কোমর থেকে পা পর্যন্তও আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারন হোস্টেল সুপার হোসেন স্যার যখন বেত দিয়ে মারেন তখন পায়ের নিচ থেকে শুরু করে মারতে মারতে পিঠে এসে থামেন, আবার পিঠ থেকে মারতে মারতে পায়ের নিচে গিয়ে থামেন। যতক্ষন তিনি তার মারে সন্তুষ্ঠ না হয়েছেন ততক্ষন এভাবে চলতেই থাকে। তার কাছে মার একটা আর্ট। মিজুর অবস্থা দেখে রুদ্রর খারাপ লাগলো। বললো- এতো বার সাবধান করার পরেও আপনারা তাস খেলেন কেন?

-সব সময় কি পড়া নিয়ে থাকা যায়! মাঝে মাঝে কিছুটা রিফ্রেসের প্রয়োজন হয় না!

-তা সেটা তাস খেলে করতে হবে?

মিজু কাপড় গায়ে দিয়ে বললো- কি করবো বলো? এখানে এসে তো বন্দি হয়ে গেছি। স্কুলের এরিয়ার বাইরে বেড় হওয়া যায় না। শুধু নিয়ম আর নিয়ম। এতো নিয়ম কিভাবে মানা যায়! সব দোষ কি আর চট্ করে বাদ দেয়া যায়! একটু তাস খেলারও উপায় নেই!

-আপনি নাকি নেশাও করেন?

-এখন অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি। নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্ঠা করছি কিন্তু সময় তো দিতে হবে।

-ঠিক আছে। বাকি তিন জন কে কে?

-সফিক, হাসেম আর জব্বার।

সফিক আর জব্বার টেনে পড়ে, মিজুর সাথে।হাসেম পড়ে নাইনে, কমার্সে। অন্য গ্রুপের হলেও হাসেমের সাথে রুদ্রর সম্পর্ক খারাপ নয়। রুদ্র এবার বললো- আমি কি করতে পারি?

-তুমি এমন কিছু একটা বেড় করো, স্যার আমাদের হোস্টেলে যাওয়ার আগে আমরা যেন বুঝতে পারি। তাহলে আমরা সাবধান হয়ে যেতে পারবো।

দুই হোস্টেলে ছাত্রদের ভিতরে যা কিছুই হোক না কেন সেটা রুদ্রকে না জানিয়ে হয় না। কারন যাদের জানার দরকার তারা সবাই জানে কোন কিছুতে যদি রুদ্র জড়িত থাকে তাহলে কারো ভয় নেই। কারন ও এমন ভাবে সব কিছু করে যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও ভাঙ্গে না। ওর কাজের ধরনই আলাদা। তাই বিশেষ কোন বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন হলে সিনিয়ররাও ওর কাছেই আসে। মিজুর কথায় রুদ্র চিন্তিত হয়ে বললো- এটা কি করে সম্ভব?

-তুমি একটা উপায় বেড় করো ভাই।

এমন সময় হাতে হারিকেন আর বই নিয়ে আবুল রুমে ঢুকলো। মিজুকে দেখে বললো- মিজু ভাই আপনি? কি খবর?

-খবর ভালো নয় আবুল।

-কেন, কি হয়েছে?

রুদ্র বললো- পরে আমার কাছে শুনিস। কারেন্ট না আসতেই তুই চলে আসলি যে!

আবুল টেবিলে বই আর হ্যারিকেন রেখে ওর বিছানায় বসে বললো- ভাবলাম তোর আবার কি হলো, তাই দেখতে আসলাম।

এমন সময় বিদ্যুত চলে আসলো। মাঠের দিক থেকে শোরগোল শোনা গেলো। বিদ্যুত চলে আসায় সবাই হোস্টেলে ফেরার জন্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে গেছে। মাথার উপরে ফ্যান ঘোরা শুরু হলো। ফ্যানের বাতাস শরিরে লাগতেই রুমের তিন জনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মিজুর দিকে তাকিয়ে রুদ্র বললো- একটু সময় দিন মিজু ভাই, আমি ভেবে দেখি।

-ঠিক আছে ভাবো। আমার বিশ্বাস তুমি নিশ্চয়ই একটা পথ বেড় করতে পারবে। চলো এবার চা খেয়ে আসি।

-চলুন।

দক্ষিন হোস্টেলের পাশ দিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা চলে গেছে সুন্দরগঞ্জের দিকে। অপর দিকে গাইবান্ধা শহর। সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা জেলার একটি উপজেলা। রাস্তার ও পাশে রহিম চাচার চায়ের দোকান। তিন জন চায়ের দোকানের দিকে এগিয়ে গেলো। রুদ্র মিজুকে লক্ষ্য করে দেখলো, জোর করে সাভাবিক ভাবে হাটার চেষ্ঠা করছে বেচারা। বেতের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন স্যার ওর উপরে! চা খেয়ে মিজু এক সময় বিদায় নিলো। রুদ্র আর আবুল সিগারেট নিয়ে আবার রুমে ঢুকলো। রুদ্র একটা সিগারেট ধরিয়ে মিজু যে জন্য এসেছিলো সব খুলে বললো আবুলকে। আবুল সিগারেটে টান দিয়ে বললো- ওদের সাজা পাওয়া উচিত ছিলো। যা হয়েছে ঠিকই হয়েছে।

-তাই বলে এভাবে মারে! দোষ আমরা সবাই করি। আমাদের বয়সটাই তো দোষ করার। আর এ জন্য আমরা সাজা পাবো- এটাও ঠিক আছে। তাই বলে মারতে মারতে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবে!

-তা তুই কি করতে চাচ্ছিস?

-এটা নিয়ে পরে ভাববো। কাল আমি বাড়ি যাচ্ছি। তুই যাবি? তুই তো বেশ কয়েক বারই যেতে চেয়েছিস কিন্তু গেলি না।

আবুল আশ্চার্য হয়ে বললো- হঠাত করে বাড়ি যাবি কেন?

-ভালো লাগছে না, বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে। তুই যাবি কি না বল।

-যাওয়ার তো ইচ্ছে আছে কিন্তু দুজনকে এক সাথে স্যার যেতে দিবেন?

-সেটা স্যারের সাথে কথা বললেই বোঝা যাবে। স্যারকে তো আগেই বলে রেখেছি এবার বাড়ি গেলে তোকে সাথে নিয়ে যাবো। আর তোর বাবাও সেটা জানেন।

-সবই ঠিক আছে। এখন স্যার যেতে দিলেই হয়। কখন যাবি।

-যত সকালে যাওয়া সম্ভব হয়।

-কিন্তু সেটা হচ্ছে না! মনে নেই- হোসেন স্যার আজ হোস্টেলে নেই, বাড়ি গেছেন! উনি কাল আসবেন। আর আসতে বরাবরের মতো কালও ওনার নিশ্চয়ই দেরি হবে।

-এটা তো ভুলেই গেছিলাম। তাহলে অপেক্ষা করতে হবে, ওনাকে না বলে তো যাওয়া যাবে না।

রাতে যখন লাইট অফ করে রুদ্র শুয়ে পড়লো তখন আবার মনের অস্থিরতা বেড়ে গেলো। রাত যতো গভির হতে লাগলো ততোই ওর অস্থিরতা সমান তালে বাড়তে লাগলো, সমান তালে বাড়তে লাগলো হৃদপিন্ডের শব্দও। হৃদপিন্ডের শব্দ এক সময় নিজের কানে হাতুড়ি পেটার মতো বাড়ি দিতে শুরু করলো। ও এখন নিশ্চিত বড় ধরনের কিছু একটা ওর জন্য অপেক্ষা করছে! ঘনিষ্ঠ কারো কিছু একটা ইতিমধ্যেই কি হয়ে গেছে! কাল সকালেই কি সেটা জানতে পারবে ও? অশুভ কোন কিছু ওর দিকে যেন তিব্র বেগে ছুটে আসছে এবং ইতিমধ্যেই খুব কাছাকাছি হয়তো এসেই গেছে সেটা!

চলবে.........
পর্ব - ০২
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১০

লাবণ্য ২ বলেছেন: ভালো লাগল।শুভকামনা রইলো।

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:২৬

জিয়াউল শিমুল বলেছেন: ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: মিজুকে হোসের স্যরের মার, তাস খেলা সিগারেট খাওয়া এসবের সঙ্গে হোস্টেলের কঠোর জীবন, রুদ্র কীভাবে নেয় সেটাই আপাতত দেখার।

শুভেচ্চা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.