![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন
স্কুলের ক্লাস শুরু হলেও হোসেন স্যারের দেখা নেই। ওনার ক্লাস শুরু হয় সেকেন্ড ক্লাস থেকে। ছাত্রদের কেউ ক্লাস ফাকি দিয়ে হোস্টেলে থেকে যায় কি না- এটা উনি প্রতিটা রুম চেক করে দেখেন। আর এ জন্য ওনার পড়ানো শুরু হয় সেকেন্ড ক্লাস থেকে। তাই বাড়ি যাওয়ার পর যেদিন উনি স্কুলে আসেন সেদিন দেরি করে আসেন। রুম মেট আবুল ক্লাসে গেলেও রুদ্র আজ যায় নি। হোসেন স্যারের জন্য অপেক্ষা করছে। কয়েক বার স্যারের রুমে গিয়ে ঘুরেও এসেছে ও। দরজায় তালা দেয়া, এখনো আসেন নি। স্যার যেতে দিলে আবুলও রুদ্রর সাথে যাবে। রাতে একটুও ঘুমাতে পারে নি রুদ্র। চোখ লাল হয়ে আছে। অস্থিরতা আজ আরো বেড়ে গেছে। ওর বার বার মনে হচ্ছে আজ যে কোন সময় একটা খারাপ খবর শুনতে হবে ওকে। এমন সময় অসংখ্য কন্ঠে শ্লোগান শুনতে পেলো ও। কান খাড়া করেও ঠিক বুঝতে পারলো না, অনেকটা দুর থেকে শব্দ ভেসে আসছে। শব্দটা ক্রমাগত কাছে আসতেই চমকে উঠলো ও। একি! এটা তো মেয়েদের গলা! বহু মেয়ে সমস্বরে চিতকার করছে- বিচার চাই, বিচার চাই। লম্পটের সাজা চাই, সাজা চাই। জানোয়ারের চামড়া, তুলে নেবো আমরা।
অবাক হয়ে গেলো রুদ্র। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে রাস্তার কাছে গেলো। হতভম্ভ হয়ে দেখতে পেলো- গার্লস স্কুলের মেয়েরা ঝাড়ু হাতে শ্লোগান দিতে দিতে এই স্কুলের দিকে এগিয়ে আসছে। আশ্চার্য! কি এমন হলো! আর ঝাড়ু হাতে এ স্কুলের দিকে আসছে কেন! একটু পরেই গেট দিয়ে সমস্ত মিছিলটা স্কুলে প্রবেশ করলো। মিছিলটা পুরো মাঠে এক বার চক্কর দিয়ে হেড স্যারের অফিসের সামনে এসে দাড়ালো। শ্লোগান চলছেই, থামার লক্ষন নেই। ক্লাস থেকে স্যার এবং ছাত্ররা বেড়িয়ে এসেছে। রুদ্রও কিছুটা এগিয়ে গেলো। দেখা গেল হেড স্যার তার রুম থেকে বেড় হয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলছেন। কি বলছেন- এতোটা দুর থেকে বোঝা গেলো না। ইতিমধ্যে স্যাররাও হেড স্যারের সাথে মিলিত হয়েছেন। হোসেন স্যারকেও ওখানে এবার দেখা গেলো। স্যারদের সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা হলো মেয়েদের। সম্ভবত কোন বিষয়ে স্যারদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে মেয়েরা ঝাড়ু উচিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে কিছুক্ষনের মধ্যে স্কুল থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আশ্চার্য জনক বিষয় বটে! এই স্কুলে গার্লস স্কুলের মেয়েদের ঝাড়ু মিছিল! গার্লস স্কুল এখান থেকে বেশ কিছুটা দুরে। লক্ষিপুর হাটের অপর পার্শ্বে। নিশ্চয়ই বড় রকমের অঘটন ঘটেছে। তাছাড়া ঝাড়ু হাতে মেয়েরা বয়েজ স্কুল আক্রমন করতে যাবে কেন? কিন্তু কি সেই অঘটন? ওর মনের অস্থিরতার সাথে এই মিছিলের কোন সংযোগ নেই তো! নাহ্! মন বলছে ওর জন্য অন্য খবর অপেক্ষা করছে। কিন্তু এ বিষয়টা কার কাছে শোনা যায়? স্যারদের কাছে হঠাত করে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা যায় না। তারা এমনিতেই হয়তো পেরেশানিতে আছেন। এ সময় তাদের কাছে জানতে চাইলে নিশ্চয়ই ধমক দিবেন। ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো ও। কিন্তু ছাত্রদের কেউই কিছু বলতে পারলো না। এমন সময় স্কুলের পিয়ন মানিক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো রুদ্রদের ক্লাস রুমের দিকে। কিছু ছাত্র ওকে ঘিরে ধরলো বিষয়টা জানার জন্য। কিন্তু ওর বলার সময় নেই। চারদিকে তাকিয়ে মোবারকের উপর চোখ পড়তেই বলল- তোকে হেড স্যার ডেকেছেন, চল।
মোবারক রুদ্রর সাথে পড়ে। ও আতংকিত গলায় বললো- আমাকে কেন! আমি কি করেছি?
-সেটা গেলেই বুঝবি।
অন্য ছাত্ররা এবার মোবারককে ঘিরে ধরলো। সবার এক কথা- কি করেছিস তুই?
কিন্তু মোবারক সবাইকে হতাশ করলো। কোন কিছু না বলে মাথা নিচু করে ও মানিকের সাথে হেড স্যারের রুমের দিকে যাওয়া শুরু করলো। ওর পিছু পিছু বাকি ছাত্ররাও চললো। কারো বুঝতে আর বাকি নেই, মোবারকের জন্যই আজ গার্লস স্কুলের মেয়েদের ঝাড়ু মিছিল। ওর খবর আছে! মোবারককে সাথে নিয়ে মানিক হেড স্যারের রুমে ঢুকে গেলো। বাকি ছাত্ররা বাহিরে উতসুক হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলো না, একটু পরেই মোবারকের চিতকার ভেসে এলো- আর এমন করবো না স্যার, ভুল হয়েছে স্যার, এবারের জন্য মাফ করে দিন স্যার, ও মাগো! ওর চিতকারের সাথে সাথে বেতের শব্দও সমান তালে চলতে লাগলো। বেতের শব্দও কম হচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষন পর বেতের শব্দ থামলেও কান্নার শব্দ থামলো না। মোবারক হাউমাউ করে কেদেই চলছে। কিছুক্ষন পর মোবারককে ধরে মানিক বেড়িয়ে আসলো। ছাত্ররা আবার ওদেরকে ঘিরে ধরলো। মোবারক কি করেছে- এটা জানার জন্য কেউ আর অপেক্ষা করতে পারছে না। মানিক মোবারককে ক্লাসে এনে বসিয়ে দিলো। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল- হাদারামটা জোর করে গার্লস স্কুলের এক মেয়ের হাত টেনে ধরেছিলো। আর বাকি মেয়েরা সেটা দেখে ফেলে। হাত ধরবি ধর, সবার সামনে ধরতে গেছিস কেন? কত জনই তো কত কিছু করছে, কারো বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে নাকি!
তাহলে ব্যাপারটা এই। এক জন বললো- মেয়েটাতো মোবারককে ভালোবাসে! কি রে সেই মেয়েটারই হাত টেনে ধরেছিলি তো?
মোবারকের কান্না এখনো থামে নি। তারপরও মাথা ঝাকিয়ে বুঝিয়ে দিল- সে মেয়েটাই।
এবার রুদ্র অবাক হয়ে বললো- তাহলে জোরের কথা আসলো কি করে? বাকি মেয়েদের কাছে নিশ্চয়ই তোর প্রেমিকা ভালোবাসার কথা স্বিকার করে নি।
মোবারকের কাধে হাত রেখে রুদ্র আবার বললো- যা হবার হয়ে গেছে, এবার কান্না থামা। মেয়েটার সাথে এক বার দেখা করে জানার চেষ্ঠা কর, এর ভিতরে অন্য কোন কারন আছে কি না? তারপর যা ভালো বুঝিস করিস। সব চেয়ে ভালো হয়, এ সব প্রেম প্রিতির ভিতরে যদি নিজেকে আর না জড়াস।
মোবারক কোন কথা বললো না, কথা বলার অবস্থায় নেই ও। কেদেই চলেছে। কাদুক, কাদলে মন হালকা হয়। ভিরের ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো রুদ্র। ভির থেকে বেড় হতেই দেখলো আবুল ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ওকে দেখেই আবুল গলা চড়িয়ে বললো- কই ছিলি? তোকে আমি খুজে মরছি!
-কেন? কি হয়েছে?
-তোর ভাই এসেছে।
-ভাইজান এসেছে! কোথায়?
বড় ভাই আসার কথা শুনে চমকে উঠলো রুদ্র। এতো দিন খুশি হয়েছে, আজ প্রথম চমকে উঠলো। হার্টবিট দ্রুত বেড়ে গেলো। সেই অঘটন, যার জন্য ওর মন গত রাত থেকেই চরম অস্থির হয়ে আছে তার খবরটা কি তাহলে ওর বড় ভাইই দিবেন! ভাইয়ের কাছে প্রায় দৌড়ে ছুটে এলো রুদ্র। ভাইকে দেখেই আতংকিত গলায় বললো- ভাইজান কি হয়েছে?
-তুই রেডি হয়ে নে, বাড়ি যেতে হবে।
-বাড়ি কেন? কি হয়েছে?
-পরে বলছি। তোদের হোসেন স্যার কই?
এবার আবুল বলে উঠলো- স্যার মনে হয় টিচার্স রুমে।
রুদ্ররা দুই ভাই। বড় ভাইয়ের নাম রুমন, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ওরা পরস্পরকে তুই বলে সম্বোধন করে। রুমন রুদ্রকে বলল- আমি হোসেন স্যারের সাথে কথা বলে আসছি। তুই ততোক্ষনে রেডি হয়ে নে।
-আমি রেডি হয়েই আছি। তুই না আসলেও আমি আজ বাড়ি যেতাম। আমার সাথে আবুলও যাবে। কিন্তু বাড়িতে কার কি হয়েছে, সেটা বলছিস না কেন?
রুদ্রর প্রশ্ন এড়িয়ে আবুলকে লক্ষ্য করে রুমন বললো- তাহলে তুমিও রেডি হয়ে নাও। তোমার কথাও স্যারকে বলছি।
রুমন টিচার্স রুমের দিকে চলে গেলো। আবুল কিছুটা আশ্চার্য হয়ে রুদ্রকে বললো- তুই কি করে বুঝলি তোর বাড়িতে কিছু হয়েছে! রুমন ভাই তো কিছুই বলেন নি!
রুদ্র আতংকিত গলায় বললো- নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে এবং সেটা বড় কিছু। কিন্তু ভাইজান বলছে না কেন!
-তুই বুঝলি কি করে?
-আমার মনে হচ্ছে।
-ঠিক আছে, রুমন ভাই আসুক। আসলে জানা যাবে। উনি তো বললেন, পরে জানাবেন।
রুদ্র অস্থির হয়ে পায়চারি করতে লাগলো। সামান্য কিছু হলে ওকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাই আসতো না। বড় ধরনের কিছু একটা হয়েছে। কতোক্ষনে ও সেটা জানবে? কিছুক্ষন পর রুমন এলো। রুমন আসতেই আবার জানতে চাইলো রুদ্র- কি হয়েছে?
-তেমন কিছু হয় নি। বাড়ি গিয়ে শুনিস।
-না, এখনই বল।
-বললাম তো তেমন কিছু হয় নি।
রুদ্র অস্থির হয়ে আবার বললো- যা হয়েছে তাই বল। বাবা মার কিছু হয়েছে?
রুদ্রর অতিরিক্ত জেদটা ভালো করেই জানে রুমন। কারনটা না জানা পর্যন্ত কিছুতেই ছাড়বে না ও। রুমন একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে বললো- চন্দ্র হারিয়ে গেছে! ওকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!
রুদ্রর সামনে পুরো দুনিয়াটা মুহুর্তেই যেন দুলে উঠলো। চরম আতংকিত গলায় কোন মতে বলে উঠলো- চন্দ্র হারিয়ে গেছে মানে!
চন্দ্র রুদ্রর স্ত্রি।
.
চলবে....
পর্ব - ০১
পর্ব - ০৩
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
২২ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৯
জিয়াউল শিমুল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বানানগুলো ইচ্ছাকৃত ভুল। উচ্চারন মোটামুটি ঠিক রেখে বানান করার চেষ্টা করি আমি। বাংলা বানানের জটিলতা আমার পছন্দ নয়।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: দীর্ঘশ্বাস ও স্ত্রী বানানটা পারলে ঠিক করে নিন। চন্দ্র রুদ্রের স্ত্রী!! তাতে আবার হারিয়ে গেছে? যাইহোক বাল্যবিবাহটা ভালো লাগলো না। ঠিক আছে পরে দেখি।