![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন
ভৌতিক আলো কিছুটা এগিয়ে আসতেই রুদ্রর চোখে হঠাত করে আবছা ভাবে একটি মানুষের অবয়ব ধরা পড়লো। মানুষের অবয়বটি একটি মশাল হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে। আর মশালের আগুনটাকেই দুর থেকে ভৌতিক আলোর মতো মনে হচ্ছিলো। লোকটার চলার সাথে সাথে আলোটা দুলছে। তাহলে এটা ভৌতিক আলো নয়! এর পিছনে কি তাহলে মানুষের হাত আছে! কিন্তু মানুষটি ওর দিকে এগিয়ে আসছে কেন?
.
লোকটা যখন ওর কাছাকাছি চলে এলো তখন মশালের আলোতে লোকটার মুখ এবার স্পষ্ট দেখতে পেলো রুদ্র। এতো গোপাল ঠাকুর! ওদের পাশের গ্রামের ঠাকুরপাড়া মন্দিরের পুরোহিত। উনি এই পোড়ো মন্দিরে কি করছেন? রুদ্রর ইচ্ছে হচ্ছে পুরোহিতের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে ওর ঘাড়টা মটকে দিতে। কি ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিলেন উনি! গোপাল পুরোহিত রুদ্রর গাছের পাশ দিয়ে গ্রামের দিকে চলে গেলেন। এ পথেই পুরোহিত আসা যাওয়া করেন। গোপাল পুরোহিত ওকে দেখতে পায় নি। রুদ্রর ভয় কেটে গেছে। রুদ্র ঠিক করলো সকালে মন্দিরে ঢুকে দেখতে হবে পুরোহিত কি করেন? রাত শেষ হওয়ার আর বেশি বাকি নেই। ভয় কেটে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষুধায় আবার পেট মোচড় দিয়ে উঠলো। সেই সাথে চোখ জুরে রাজ্যের ঘুম চলে এলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই ক্ষুধার্ত পেটেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো ও।
.
খুব ভোরে পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল রুদ্রর। ঘুম ভেঙ্গে যেতেই ক্ষুধায় অস্থির হয়ে পড়লো। ভোর হলেও সুর্য এখনো ঠিক মতো ওঠেনি। পুরোপুরি সকাল হওয়ার জন্য আরো কিছুক্ষন গাছেই বসে রইলো ও। এরপর সুর্য পুরো বনকে আলোকিত করে ফেললো। গাছ থেকে নেমে খাবারের সন্ধান শুরু করলো ও। এটা বৈশাখ মাস। একটু খুজতেই একটা গাছে পাকা আম দেখতে পেলো। মাটির ঢেলা ছুড়ে কয়েকটা আম সংগ্রহ করে খেলো। ক্ষুধা একটু কমলেও পুরোপুরি গেলো না। অন্য কিছু খুজে বেড় করতে হবে। তবে তার আগে মন্দিরে ঢোকার সিদ্ধান্ত নিলো রুদ্র।
.
মন্দিরে ঢোকার পথটা বেশ পরিষ্কার। একটা দরজাও আছে, তাতে ছিটকিনি দেয়া। ছিটকিনি খুলে মন্দিরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলো ও। বাহির থেকে মন্দিরটাকে যতোটা জরাজির্ন মনে হয় ভিতরটা মোটেও ততোটা নয়। দেয়াল এবং মেঝের কোথাও কোথাও গর্ত হয়ে গেলেও পরিষ্কারের অভাব কোথাও নেই। বোঝাই যাচ্ছে গোপাল পুরোহিত ভালোই যত্ন নিচ্ছেন মন্দিরের। বাহির থেকে মন্দিরের দেয়াল ভাঙ্গা মনে হলেও ভিতরে ঢোকার জন্য দরজা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। ধুপের গন্ধ পেলো ও। পুজোর সময় গোপাল পুরোহিত নিশ্চয়ই ধুপ জালিয়েছিলেন। মন্দিরের ভিতরটা বেশ বড়, হল ঘরের মত। ঘরের একদম শেষের দিকে বিশাল বেদি। আর বেদির উপরে পাথরের বিশাল এক কালি মুর্তি লাল জিহ্বা বেড় করে আছে। বেদির উপরে বেশ কিছু ফলমুল দেখতে পেলো ও। খাবার দেখে ওর পেট আবার ক্ষুধায় মোচড় দিয়ে উঠলো। কোন কিছু ভাবার সময় পেলো না, দেবির প্রসাদ গোগ্রাসে খেয়ে ফেললো। সবগুলো খেতে পারলো না, অর্ধেক থেকে গেলো। সারা রাত না খেয়ে এখন হঠাত পেট পুরে খাওয়ায় শরিরে ঝিমুনি ভাব চলে এলো। রাতে ঠিক মতো ঘুমাতেও পারে নি ও, তাই চোখের পাতা ঘুমে ভারি হয়ে এলো। নিজেকে আর সামলাতে পারলো না রুদ্র। বেদির উপরে এক সময় গভির ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লো।
.
ঘুম ভাঙ্গলো দুপুরে। মন্দির থেকে বেড়িয়ে এলো রুদ্র। বৈশাখের গরম হাওয়া বইছে। ভিষন গরম লাগছে। শরির ঘামছে। জঙ্গলের অপর পাশে নদি আছে। এদিক ওদিক হাটতে হাটতে এক সময় নদির পাড়ে এসে দাড়ালো ও। নদিতে কোন নৌকা নেই। এদিকে ভয়ে কেউ মাছ ধরতেও আসে না। রুদ্র কাপড় চোপড় খুলে নদির পানিতে গোসল করে নিলো। শরির শুকিয়ে গেলে আবার কাপড় পরলো। তারপর ভাবতে বসলো ও। এখন কি করা যায়? চন্দ্রকে মারার ভয় এখনো ওর যায় নি। সবাই হয়তো খুজছে ওকে। বাবা মা হয়তো কাদছে। কিন্ত এখন বাড়ি গেলে ওকে যে মারবে না- সে ভরসাও পাচ্ছে না। নাহ্! এখনই বাড়ি যাওয়া চলবে না। খুজুক ওকে। খুজতে খুজতে সবাই যখন হয়রান হয়ে যাবে তখন যাবে। তখন হয়তো কেউ আর ওকে মারবে না। কিন্তু এই জঙ্গলে এখন একা একা ও কি করবে? কিভাবে সময় কাটাবে? ঘুরি থাকলে এখন ঘুরি উড়ানো যেতো। ছিপ থাকলে মাছ ধরে সময় কাটানো যেতো। সে সবের কিছুই তো ওর কাছে নেই! আর ভাত না খেয়ে শুধু ফলমুল খেয়ে কিভাবে থাকবে? ভাতের ক্ষুধা কি অন্য কিছু দিয়ে মেটে? ভাতের কথা মনে হতেই ক্ষুধায় পেট মোচড় দিয়ে উঠলো। বিকাল হয়ে গেছে। ক্ষুধা তো লাগবেই। মন্দিরে এখনো কিছু ফলমুল আছে। মন্দিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো এবার। কিন্তু হঠাত একটা গাছের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো গাছের মগ ডালে ওর ঘুড়িটা আটকে আছে। ঘুরি দেখে ভিষন খুশি হয়ে গেলো। অনেক কষ্ট করে গাছে উঠে ঘুড়িটা পাড়লো। তারপর আবার মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
মন্দিরটা জঙ্গলের মাঝে। নদি থেকে হাটা পথ আধা ঘন্টারও বেশি। এ জঙ্গলে লোক ঢোকে না। তাই মন্দিরে যাওয়ার পথটাও সহজ নয়। ঝোপ ঝার ভেদ করে হাটতে লাগলো রুদ্র। জঙ্গলে ভয়ানক কোন জন্তু নেই। পাখিদের উতপাতই বেশি। আর আছে শেয়াল, বেজি ইত্যাদি। রুদ্র মন্দির থেকে বের হওয়ার সময়ই একটা সরু লাঠি নিয়েছিলো। কোন সমস্যা হলে লাঠিটা কাজে লাগবে। লাঠিটা এখনো ওর হাতেই আছে- এক হাতে লাঠি, আরেক হাতে ঘুরি। মন্দিরে ঢুকে বাকি ফলমুলগুলো খেয়ে আবার ভাবতে বসলো রুদ্র। কি করা যায়? সময় কাটানোর জন্য কিছু তো করা দরকার। কিন্তু কি করবে? ঘুরি থাকলেও ঘুড়ি উড়ানোর সুতো নেই। বাড়ি গিয়ে তো আর ছিপ বা ঘুড়ির সুতো নিয়ে আসা যায় না। হঠাত করে বিদ্যুত চমকের মতো গোপাল ঠাকুরের কথা মনে হলো ওর। আচ্ছা গোপাল ঠাকুরকে কি কাজে লাগানো যায় না! গোপাল ঠাকুর হয়তো প্রতি রাতেই মন্দিরে আসেন। ঠাকুরকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় এবার সেটারই ছক কষতে শুরু করলো রুদ্র।
ধিরে ধিরে সুর্য ডুবে সন্ধ্যা হয়ে এলো। তারপর ঝুপ করে রাতের অন্ধকার নেমে এলো পুরো জঙ্গলে। রুদ্র মন্দিরের দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে আবার গাছের ডালে বসে গেলো। লতা দিয়ে নিজেকে গাছের সাথে ভালো করে বেধে অপেক্ষা করতে লাগলো গোপাল ঠাকুরের। ওর ছক কষা হয়ে গেছে। আবার এক বার ভালো করে ভেবে দেখলো। এবার ওর ছকে একটা গলদ ধরা পড়লো। একটা শক্ত দেখে লাঠি নিতে হবে। মন্দিরের পাশেই সেটা পেয়ে যাবে ও। গোপাল ঠাকুরের পরে মন্দিরে ঢোকার সময় লাঠি নিয়ে ঢুকতে হবে। যদি গোপাল ঠাকুর ওকে ধরে ফেলে কিছু করার চেষ্ঠা করে তবে লাঠির আঘাতে তাকে ধরাশায়ি করতে হবে। তারপর এক ছুটে বাড়ি গিয়ে উঠতে হবে।
ও ওর ছকে এবার সন্তুষ্ঠ। একটু পরে আকাশে চাদ উঠলো। জঙ্গলের অন্ধকার একটু হলেও কমে গেলো এবার। গাছের গায়ে হেলান দিয়ে গোপাল ঠাকুরের প্রতিক্ষায় বসে রইলো রুদ্র।
চলবে....
পর্ব - ০৪
পর্ব - ০৬
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
©somewhere in net ltd.