![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন
মাঝ রাতে এলো গোপাল ঠাকুর। হাতে মশাল নিয়ে রুদ্রর গাছের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলো মন্দিরের দিকে। একটু পরে মন্দিরের ভিতরে হারিয়ে গেলো মশালের আলো। বেদির উপরে প্রসাদ না দেখে কি ভাববে ঠাকুর? অন্য কেউ ঢুকে খেয়ে নিয়েছে নাকি দেবি খেয়ে ফেলেছে? দেখা যাক কি ভাবে। গোপাল ঠাকুরের মন্ত্র পড়া শুরু হতেই রুদ্র গাছ থেকে নেমে চলে এলো মন্দিরের পাশে। আবছা আলোয় একটু খুজতেই মন মতো একটা লাঠি পেয়ে গেলো। লাঠি হাতে মন্দিরের দরজা একটু ফাক করে ভিতরটা দেখে নিলো একবার। ভিতরে ধুপের ধোয়ায় প্রথমে মশালের আলো আর মন্ত্র পরার শব্দ ছাড়া কিছু বোঝা গেলো না। একটু ভালো করে তাকাতেই এবার গোপাল ঠাকুরের পিঠ দেখা গেলো। ওর ছকে ধুপের ধোয়ার গুরুত্ব ছিলো সব চেয়ে বেশি। ধুপের ধোয়ায় নিজেকে লুকিয়ে সন্তপর্নে ও কালি মুর্তির পিছনে গিয়ে দাড়ালো। গোপাল ঠাকুর চোখ বন্ধ করে মন্ত্র পড়ায় এতোটাই মগ্ন ছিলো যে কিছুই বুঝতে পারলো না। ঠাকুর মন্ত্র পড়ার এক পর্যায়ে শরির বাকিয়ে মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে ফেললো। ঠিক এমন সময় রুদ্র নাকি সুরে বলে উঠলো- বৎস! তোর পুজোয় আমি সন্তুষ্ঠ হয়েছি। বল কি চাস?
গোপাল ঠাকুর ভিষন চমকে উঠলো। কে কথা বললো? মাথা তুলে এদিক ওদিক একবার তাকিয়ে দেখলো। কেউ তো নেই! তাহলে? কালি দেবি কি ওর পুজোয় সন্তুষ্ট হয়ে এখানে আগমন করেছে! দেবিই কি তাহলে ওর প্রসাদ খেয়েছে? নিশ্চয়ই তাই হবে। দেবিই তো ওকে স্বপ্নে বলেছিলো, এই মন্দিরে পূজো করার জন্য। রুদ্র আবার নাকি সুরে বলে উঠলো- কি ভাবছিস গোপাল! আমি তোর কালি মা! তোর পূজোয় সন্তুষ্ঠ হয়ে আমিই তোর প্রসাদ খেয়েছি।
গোপাল আবার মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে ফেললো। আবেগে হাউমাউ করে কেদে উঠে বললো- মা! মা! আমার ডাকে তুমি সাড়া দিয়েছো মা! এই অধমের পূজো তুমি গ্রহন করেছো মা!
- হ্যা বৎস! তোর পূজোয় আমি সন্তুষ্ঠ হয়েছি। আর সে জন্যই মর্তের বুকে নেমে এসেছি।
রুদ্র আলাপচারিতা দির্ঘ করতে চাইলো না। কথা বেশি বললে ধরা পরার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই এবার ও কাজের কথায় আসলো- গোপাল! কাল তোর পূজোয় চিকন নাইলনের বেশ কিছু সূতো রাখবি।
- গোপাল অবাক হয়ে বললো- নাইলনের সূতা দিয়ে কি হবে মা!
রুদ্র ধমক দিয়ে বললো- দেবদেবিদের বিষয় তুই বুঝবিনে মূর্খ! তোকে যা বলছি তুই শুধু তাই করবি। তবেই তোর মনবাঞ্ছা পূরন হবে।
অন্তরাত্মা কেপে উঠলো গোপাল ঠাকুরের। দেবি ওর কথায় রুষ্ট হয়েছেন। তাড়াতাড়ি মেঝেতে মাথা ঠুকে বলতে লাগলো ভুল হয়ে গেছে মা। আমাকে মাফ করে দাও মা। মাফ করে দাও।
- এবারের জন্য তোকে মাফ করলাম। এবার চলে যা। আমি চলে যাচ্ছি।
রুদ্র গোপাল ঠাকুরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাঠি দিয়ে মেঝেতে প্রচন্ড একটা শব্দ করলো। যাতে গোপাল ঠাকুর ধরে নেয় তার কালি মার প্রস্থানের শব্দ এটা। শব্দ করার পরপরই এবং গোপাল ঠাকুর মেঝে থেকে মাথা তোলার আগেই ধুপের ধোয়ায় গা ঢাকা দিয়ে মন্দির থেকে বেড়িয়ে এলো রুদ্র। লাঠিটা ফেলে দিয়ে আবার গাছে উঠলো। ঘুড়িটা গাছের ডালে বেধে লুকিয়ে রেখেছিলো ও। কাল গোপাল ঠাকুর সূতো নিয়ে এলে ও মনের সুখে ঘুড়ি ওড়াতে পারবে। একটু পরেই মশাল হাতে গোপাল ঠাকুর বেড়িয়ে এলো। ঠাকুর বিরবির করে মন্ত্র পড়তে পড়তে জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে গেলো। রুদ্র গাছ থেকে নেমে আবার মন্দিরে প্রবেশ করলো। অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেলো না ও। অনুমান করে প্রসাদ খুজে কিছু খেয়ে বেদির উপরেই ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন জঙ্গলে টইটই করে ঘুড়ে বেড়ালো ও। গাছ থেকে আম জাম পেড়ে খেলো। একবার নদিতে গিয়ে গোছলও করে নিলো। এক সময় ধিরে ধিরে আবার রাত নেমে এলো জঙ্গলে। রুদ্র গাছে চড়ে অপেক্ষা করতে লাগলো গোপাল ঠাকুরের জন্য। গভির রাতে মশাল হাতে গোপাল ঠাকুর মন্দিরে ঢুকলো। গত রাতের মতই ঠাকুর যখন ধুপ জালিয়ে চোখ বন্ধ করে মন্ত্র পড়ায় মগ্ন হলো তখন চুপিচুপি লাঠি হাতে মন্দিরে ঢুকে কালি মুর্তির পিছনে গিয়ে দাড়ালো রুদ্র। আজ ঠাকুরের কাছে মশাল আর ম্যাচ চাইবে ও। সাথে একটা বালিশ আর কাথাও চাইতে হবে। এক বার মুর্তির পিছন থেকে মাথা সামান্য বেড় করে দেখে নিলো ঠাকুর সুতো এনেছে কি না? হ্যা এনেছে। রুদ্র যা আশা করেছিলো তার চেয়েও অনেক বেশি এনেছে। ঠাকুর যখন মন্ত্র পড়তে পড়তে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে ফেললো তখন নাকি সুরে বলে উঠলো রুদ্র- বৎস! মর্তে এনে আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন?
গোপাল ঠাকুর রুদ্রর কথা শুনে কেদে ফেললো। মেঝেতে মাথা ঠুকিয়ে বললো- মা, মাগো! আমাকে মাফ করে দাও মা। তোমাকে কষ্ট দেয়ার মতো কি করেছি মা!
- ওরে মুর্খ! এখানে পাথরের বেদিতে শুয়ে থাকতে ভিষন কষ্ট রে! এরপর যখন আসবি বালিশ আর কাথা নিয়ে আসবি। মশাল আর ম্যাচও আনবি। আমাকে সন্তুষ্ঠ করতে পারলে যা চাইবি তাই পাবি।
- আমাকে ক্ষমা করো মা। আমি এক্ষুনি কাথা বালিশ মশাল আর ম্যাচ নিয়ে আসছি।
গোপাল ঠাকুর মশাল নিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। রুদ্র এতোটা আশা করে নি। কাথা বালিশ কাল হলেও ওর চলতো। কিন্তু এ সব আজকেই ও পেয়ে যাচ্ছে। যাক্, আজকের রাতটা তাহলে ভালোই কাটবে। গোপাল ঠাকুরের আসতে দেরি হবে। বাড়ি গিয়ে কাথা বালিশ আনতে অন্তত দুই ঘন্টা তো লাগবেই। গোপাল ঠাকুর এবার বাহির থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে যায় নি। রুদ্র কিছু প্রসাদ খেয়ে মন্দির থেকে বেড় হলো। আবার গাছে উঠে অপেক্ষা করতে লাগলো ঠাকুরের জন্য। দির্ঘ সময় পরে ঠাকুর আবার এলো। এবার আর মন্দিরে ঢুকলো না রুদ্র। ওর কাজ হয়ে গেছে। ঠাকুর ভাববে তার দেবি মা আজকের মতো চলে গেছে। ঠাকুরের মন্ত্র পড়ার চাপা আওয়াজ শুনতে পেলো ও। তারপর শুনতে পেলো কি যেন বলছে ঠাকুর। তবে এতো দুর থেকে সেটা বোঝা গেলো না। আরো অনেক পরে গোপাল ঠাকুর মশাল হাতে বেড়িয়ে এলো। তারপর দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে ওর গাছের পাশ দিয়ে বিরবির করে কিছু বলতে বলতে চলে গেলো। ঠাকুর চলে যেতেই গাছ থেকে নেমে পড়লো রুদ্র। তারপর মন্দিরে ঢুকে পড়লো। ভিতরে এবার মশাল জলছে। বেদির উপরে কাথা বালিশ সাজানো। পাশে একটা ম্যাচের বাক্স। রুদ্র বালিশে মাথা দিয়ে মশাল নিভিয়ে পরম সুখে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন সকালে উঠে কিছু প্রসাদ খেয়ে ঘুড়ি আর সূতো নিয়ে নদির ধারে চলে এলো রুদ্র। এরপর ঘুড়ি উড়িয়ে দিলো আকাশে। বাতাসের টানে ঘুড়ি এগিয়ে চললো রুদ্রদের বাড়ির দিকে। সূতোর অভাব নেই। গোপাল ঠাকুর অনেক সুতো এনেছেন। তাই রুদ্রও মনের সুখে সূতো ছাড়তে লাগলো। রুদ্র যতোই সুতো ছাড়ছে ওদের বাড়ির সাথে ঘুরির দুরত্ব ততোই কমছে।
এক সময় ঘুড়িটা দেখে ফেললো চন্দ্র। দাদা বোরহান উদ্দিন ওর পাশেই ছিলেন। ঘুড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে দাদাকে চিতকার করে বললো চন্দ্র- দাদা ভাই! দাদা ভাই! ওই যে ছোট ভাইয়া।
রুদ্র ছিলো ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। তাই চন্দ্র রুদ্রকে ছোট ভাইয়া বলেই ডাকতো।
চলবে.......
পর্ব - ০৫
পর্ব - ০৭
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
©somewhere in net ltd.