নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ২২

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪

পরদিন সকালে দুইটি মোটর সাইকেলে চড়ে দারিয়াপুর বাজারের পাশে কুস্তি প্রশিক্ষক রুস্তম সর্দারের বাসায় চলে এলো রুদ্ররা। ওদের পারিবারিক কুস্তি প্রশিক্ষক বাহাদুর ওস্তাদও সাথে এসেছে, সাথে আছে রুমন এবং আবুলও। বাহাদুর ওস্তাদ এক সময় রুস্তম সর্দারের কাছে কুস্তি শিখেছে। রুস্তম সর্দার বিশালদেহি মানুষ। বাড়ির উঠোনে পাচ জনকে কুস্তির প্রশিক্ষন দিতে ব্যস্ত তিনি। পাচ জনের এক জনকে বাকি চারজন ঘিরে রেখেছে। একজন একজন করে মাঝের জনকে আক্রমন করছে। কেউ ভুল করলে সেটা ধরিয়ে দিচ্ছেন সর্দার। সম্ভবত মাঝের ছেলেটাকেই কুস্তি প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করছেন তিনি। বাহাদুর ওস্তাদ রুস্তম সর্দারকে সালাম দিয়ে ভক্তি মিশ্রিত গলায় বললেন- কেমন আছেন সর্দার?

শিস্যকে দেখে খুশি হলেন সর্দার। বললেন- কি হে, পেটুক বাবু! কি মনে করে?

বাহাদুর ওস্তাদ প্রচুর খেতেন। কুস্তির সময় তার সব চেয়ে বেশি ক্ষুধা পেতো। বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে কুস্তি শেখার সময় মাঝে মাঝে বিরতি নিতেন তিনি আর খেতেন। রুস্তম সর্দার এ জন্য ওনার নাম রেখেছিলেন পেটুক বাবু। রুদ্রদের সামনে এই নাম শুনে কিছুটা লজ্জিত হলেন বাহাদুর ওস্তাদ। কাচুমাচু করে বললেন- এখন আর অতো খাই না সর্দার।

- সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। অতো খাও না কিন্তু দেহটাকে তো আরো গোল আলু বানিয়ে ফেলেছো। তো কি মনে করে এতো দিন পরে আসা হলো? রুমনকে দেখে বললেন- এই ছেলেটা তো কাল এসেছিলো। আমি নিষেধ করে দিয়েছি। শোন নি তুমি সেটা?

- জ্বি সর্দার, শুনেছি। আমি ওদের পারিবারের ছেলেদের কুস্তি শেখাই সর্দার। আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছি আপনার কাছে, আপনাকে একটু সময় দিতে হবে।

- আমার এখন সময় নেই হে! তুমি তো জানো, সামনের মাসে এখানে কুস্তি প্রতিযোগিতা আছে। তাই আমার ছেলেকে সেই প্রতিযোগিতার জন্য এখন প্রস্তুত করছি। তুমি সময় চাইলেও আমি দিতে পারবো না।

- বেশি সময় দিতে হবে না সর্দার। রুদ্রকে দেখিয়ে বললেন, ও খুব ভালো কুস্তি জানে। ওর ভুল ত্রুটিগুলো একটু শুধু ধরিয়ে দিবেন।

রুস্তম সর্দার রুদ্রের দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে বাহাদুর ওস্তাদকে বললেন- যে ছেলের এখনো দাড়ি মোচই ভালো করে গজায় নি সে কুস্তির কি বোঝে? হবে না বাহাদুর, আমি সময় দিতে পারবো না।

এবার রুদ্র বললো- সর্দার আমাকে একটু সুযোগ দিন। আপনার বেশি সময় নষ্ট করবো না। আমরা জেনেছি আপনি এই জেলার শ্রেষ্ঠ কুস্তি প্রশিক্ষক। জেলার বাহিরেও অনেকে আপনার শ্রেষ্ঠত্ব স্বিকার করে। তাই আপনার কাছে প্রশিক্ষন নেয়াটা আমার জন্য জরুরি। এর জন্য যে কোন ত্যাগ সিকার করতে আমি রাজি আছি।

- কেন কুস্তি শেখা তোমার জন্য এতো জরুরি?

- আমাদের পরিবারের সব ছেলেরাই আত্মরক্ষার জন্য কুস্তি শেখে। আমি একটু ভালো করে শিখতে চাই।

- কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে সময় দেয়া এখন সম্ভব নয়। তোমরা আসতে পারো।

- কি করলে আপনি সময় দিবেন?

রুস্তম সর্দার রুদ্রের দিকে তিক্ষ দৃষ্টি হেনে বললেন- তোমাদেরকে চলে যেতে বলেছি।

যারা কুস্তির প্রাকটিস করছিলো রুদ্র তাদের মাঝের জনকে দেখিয়ে বললো- মনে হচ্ছে উনি আপনার ছেলে, যাকে কুস্তি প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করছেন। যাওয়ার আগে একটু পরিক্ষা করে দেখি আপনি ছেলেকে কেমন প্রস্তুত করেছেন?

সার্ট, গেঞ্জি খুলে ফেললো রুদ্র। ভিতরে হাফ প্যান্ট পড়েই এসেছিলো ও, তাই নির্দিধায় ফুলপ্যান্টও খুলে সর্দারের ছেলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। যে চার জন সর্দারের ছেলেকে ঘিরে রেখেছিলো তারা সরে গেলো। রুদ্র সর্দারকে লক্ষ্য করে বললো- সর্দার, কুস্তি না শেখালেও আপনার ছেলের সাথে যেটুকু সময় লড়বো তাতে যে ভুলগুলো হবে দয়াকরে শুধু সেগুলো শুধরিয়ে দিবেন।

রুদ্রের এমন কাজ দেখে আশ্চার্য হয়ে গেলো সবাই। রুদ্র কতটা কুস্তি জানে সেটা আবুলের জানা নেই। ও একবার সর্দারের ছেলের দেহের দিকে, আরেকবার রুদ্রের দেহের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। রুদ্রের শরির পেটানো হলেও সর্দারের ছেলের কাছে সেটা কিছুই না। সর্দারের ছেলে সর্দারের মতই বিশাল দেহের অধিকারি, কোথাও একটু মেদ নেই, শরিরের সমস্ত জায়গায় মাংস পেশি ফুলে আছে। পেটানো শরির দেখেই অনুমান করা যায় সে অসম শক্তির অধিকারি। সর্দারের ছেলের কাছে রুদ্রকে একটা বাচ্চা ছেলে মনে হচ্ছে। হয়তো একটা টোকা দিলেই রুদ্র পড়ে যাবে।

সর্দারের ছেলের সাথে পরিচিত হলো রুদ্র। তার নাম জব্বার সর্দার। শরিরে প্রচন্ড শক্তি থাকলেও চেহারাটা শিশুর মতো নিষ্পাপ। লড়াই শুরু হওয়ার আগে দুই জন দুই হাতের আঙ্গুল পরস্পরের আঙ্গুলের ভিতরে ঢুকিয়ে নিলো। পরস্পরের মাথাও এক সাথে লাগালো। রুদ্র হাতের আঙ্গুল নরম করে থাকলেও সতর্ক থাকলো জব্বারের আঙ্গুলের চাপের। জব্বার রুদ্রকে গুরত্বই দিলো না, আঙ্গুলের চাপ একটু করে বাড়ালো। কিন্তু চাপ বাড়াতে গিয়েই বুঝলো শক্ত প্রতিদ্বন্দির সামনে পড়েছে ও, প্রতিপক্ষের আঙ্গুল একটুও বাকা করা গেলো না। দেহের সমস্ত শক্তি হাতের আঙ্গুলে এনে রুদ্রের আঙ্গুল মোচড়ে দেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু সফল হলো না। ওর কাছে মনে হলো প্রতিপক্ষের আঙ্গুল লোহার মত শক্ত। অবাক হয়ে গেলো জব্বার। এইটুকু ছেলের আঙ্গুলে এতো শক্তি হয় কি করে! দেখে তো তেমনটা মনে হয় না। আঙ্গুল থেকে এক সময় দুজন দুজনের হাত চেপে ধরলো, কখনো বাহু। জব্বার পা দিয়ে রুদ্রের পায়ে আঘাত করলো। কিন্তু রুদ্র সেটা সামলিয়ে নিলো। জব্বার রুদ্রকে পিছনে ঠেলে নিয়ে যেতে চাইলো, রুদ্র একটু পিছনে সরে গেলো। তারপর জব্বারের ধাক্কা সামলানোর জন্য পা দুটো ফাক করে আরো একটু পিছনে নিয়ে গেলো। ধিরে ধিরে লড়াই চরম আকার ধারন করলো। জব্বার দুই হাত দিয়ে এক সময় রুদ্রের গলা চেপে ধরে ওকে মাটিতে ফেলার চেষ্টা করলো। অন্যদিকে রুদ্র দুই পা ফাক করে সমস্ত শক্তি দিয়ে খাড়া হয়ে থাকার আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো, সেই সাথে দুই হাত দিয়ে জব্বারের শরির চেপে ধরে ওকে পিছনে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করলো। এক বার রুদ্র পিছনে সরলে পরবর্তিতে জব্বারকে পিছনে সরতে হচ্ছে। রুস্তম সর্দার রুদ্রের শক্তি এবং কৌশল দেখে এক সময় চরম বিস্ময় প্রকাশ করলেন। বাহাদুর ওস্তাদকে বললেন- আমি তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না বাহাদুর! এইটুকু ছেলে কিভাবে জব্বারের সাথে এখনো টিকে আছে!

- শুধু টিকে আছে তা নয়, রুদ্র চাইলে এখনই জব্বারকে ধরাশায়ি করতে পারে ওস্তাদ। ও শুধু কুস্তির ভিতরেই সিমাবদ্ধ আছে। কুস্তির বাইরে ও যদি কিছু করতো তবে জব্বার এতোক্ষন টিকতো না।

রুস্তম সর্দার শক্ খেয়ে বাহাদুর ওস্তাদের দিকে তাকালেন। বাহাদুর ওস্তাদ বললেন- রুদ্রের কিছু বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য আছে সর্দার। যেমন, ওর শুধু সামনে নয় পিছনেও চোখ আছে। আপনি যদি ওকে পিছন থেকে আক্রমন করেন তবে ও আপনাকে না দেখেও আপনার আক্রমন প্রতিহত করবে।

- কি বলছো!

- হ্যা ওস্তাদ। ওর ষষ্ঠইন্দ্রিয় প্রচন্ড প্রখর। পিছন থেকে আপনি যদি ওকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন তাহলে ওর ষষ্ঠইন্দ্রিয় ওকে জানিয়ে দেয় পিছন থেকে কেউ আক্রমন করছে। ও পিছনে না তাকিয়েই আপনার লাঠি ধরে ফেলবে। এটা ওর উপরে আমি অসংখ্য বার ট্রাই করেছি। আমি ওর এমন আশ্চার্য বৈশিষ্ট্য যখন বুঝতে পারি তখন প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছিলাম। কিন্তু এটাই সত্যি।

- আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।

- আপনি নিজেই পরিক্ষা করে দেখতে পারেন। ওকে বাহির থেকে দেখে কারো বোঝার সাধ্য নেই ওর ভিতরে এমন প্রচন্ড শক্তি আছে।

এদিকে লড়াই করতে করতে রুদ্র আর জব্বার বসে পড়েছে। দুজনই চেষ্ঠা করছে দুজনকে মাটিতে ফেলে দেয়ার জন্য। কিন্তু সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও কেউ সফল হতে পারছে না। হঠাত এমন সময় একটা মেয়েলি কন্ঠের জোরে কান্নার আওয়াজ পেলো ওরা দুজন। তারপর শুনতে পেলো রুস্তম সর্দারের কন্ঠ- কি হয়েছে মা তোর? কাদছিস কেন? কে কি করেছে?

রুদ্র এবং জব্বার বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। চট্ করে দুজন দুজনকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো। রুদ্র দেখতে পেলো, একটা মেয়ে বাড়ির ভিতরে দৌড়ে ঢুকে গেলো। মেয়েটার পিছু পিছু হন্তোদন্তো হয়ে রুস্তম সর্দারও বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেন। জব্বারও বাড়ির দিকে দৌড় দিলো।

রুদ্র শার্ট প্যান্ট পড়তে পড়তে বাহাদুর ওস্তাদকে জিজ্ঞেস করলো- কি হয়েছে ওস্তাদ?

- বুঝতে পারছি না। পুষ্প সর্দারের মেয়ে। কাদতে কাদতে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো। কেউ হয়তো ওকে কিছু একটা করেছে।

একটু পরেই জব্বার উদ্ভ্রান্তের মতো বাজারের দিকে ছুটে গেলো। হাতে একটা লাঠি। বাহাদুর ওস্তাদ কি হয়েছে জানার জন্য বাড়ির ভিতরে ঢুকলেন। কিছুক্ষন পরে ফিরে এসে জানালেন- পুষ্প স্কুলে গিয়েছিলো। কলমের কালি শেষ হওয়ায় বাজারের একটা দোকানে কলম কিনতে গিয়েছিলো। কলম কিনে ফেরার সময় এখানকার চেয়ারম্যানের ছেলে ওর ওড়না কেড়ে নেয়। চেয়ারম্যানের ছেলেকে মারতে বাজারে গেছে জব্বার। চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে আরো অনেক ছেলে আছে। বাজারে চলো, জব্বার একা ওদের সাথে পারবে না। এই এলাকার ত্রাস ওরা।

রুদ্ররা রুদ্ধশ্বাসে বাজারের দিকে ছুটলো।

চলবে.......

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.