নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ২৪

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫১

এরপর কেটে গেলো এক সপ্তাহ। কিন্তু চন্দ্রের কোন খোজ পাওয়া গেলো না। বোরহান উদ্দিন দিশেহারা হয়ে পড়লেন। তার প্রচন্ড শক্তি যেমন অসহায় হয়ে পড়েছে তেমনি পুলিশও কোন কূল কিনারা পেলো না। অপহরনকারির পক্ষ থেকেও কোন যোগাযোগ করা হলো না। তারা যে কখনো যোগাযোগ করবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই তাদের যোগাযোগের আশায় বসে থাকাও যায় না। সারা দেশে অপরাধিদের বিরুদ্ধে সাড়াসি অভিযান চলছে। চোর, পকেটমার, গুন্ডা, বদমাশ, নেশাখোর, পাচারকারি যাকে পাওয়া যাচ্ছে তাকেই ধরে বেদম পিটানো হচ্ছে। কিন্তু চন্দ্রের অপহরনকারির বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

রুদ্রের টিমও শত চেষ্টা করে নিশ্চিত কোন কিছু খুজে পেলো না। সার্কাসের প্রতি চন্দ্রের দুর্বলতা যারা জানে আরশাদ তাদের লিস্ট তৈরি করেছে। আরমান প্রতিটি গ্রামে তিন জন করে বিশ্বস্ত লোক সেট করে ফেলেছে। আজমলের টিম সমস্ত চরের তথ্য এবং যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পুরো গতিপথের চিত্র সংগ্রহ করেছে। অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পকে মেলায় স্থানিয় যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ দিকে চেয়ারম্যান মনিরুল পাটোয়ারি, রুস্তম সর্দার এবং তার ছেলে জব্বারকে কিছু করার সাহস পান নি বরং তিনি পদত্যাগ করেছেন। আবুল ওর বাবাকে একদিন চিঠি লিখেছিলো। সে চিঠির জবাব এসেছে। ওর বাবা ওকে রুদ্রের সাথে থাকার এবং রুদ্রকে সহযোগিতা করার অনুমতি দিয়েছেন তবে লেখাপড়ার যেনো ক্ষতি না হয় সে দিকটাও দেখতে বলেছেন।

রুদ্র এ কয়েক দিন পুরোপুরি রুটিন অনুযায়ি চলেছে। খুব ভোরে উঠে ব্যায়াম করে ফজরের নামায় পড়েছে। তারপর দুই ঘন্টা বজ্রাসনে বসে নিজের মন এবং শক্তিকে প্রথম এক ঘন্টা ধিরে ধিরে বুকের ভিতরে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় কেন্দ্রিভুত করেছে এবং পরের এক ঘন্টা কেন্দ্রিভুত মন এবং শক্তিকে একটু একটু করে পুরো শরিরের প্রতিটি কোষে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্ঠা করেছে। এতে করে খুব দ্রুত নিজের মন এবং শক্তির উপরে ওর নিয়ন্ত্রন যেমন আরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তেমনি ষষ্ঠইন্দ্রিও পুর্বের চেয়ে আরো প্রখরভাবে জেগে উঠেছে। বজ্রাসনের পরে সকালের খাবার খেয়ে ও চলে গেছে দারিয়া পুরে, কুস্তি শিখতে। তারপর এক এক করে অভিনয় প্রশিক্ষকের কাছে, মেকআপ ম্যানের কাছে, বিভিন্ন কন্ঠে কথা বলতে পারে এমন এক জনের কাছে। বিকেলে ক্যারাটে মাষ্টারের কাছে। রাতে সপ্তাহের প্রথম তিন দিন প্রশিক্ষন নিয়েছে চোরের কাছে, পরের তিন রাত পকেটমারের কাছে। এর মধ্যে পারিবারিক ডাক্তার করিম শেখের কাছে জেনে নিয়েছে এক জন মানুষকে কতোক্ষন অজ্ঞান রাখতে চাইলে কি মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়। আবুল সব সময়ই রুদ্রের সাথে ছিলো। রুদ্রকে এই কয়েক দিন দেখে ওর বিস্ময়ের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রুদ্রের ধৈর্য্য আর শেখার স্পিড দেখে ও সত্যিই হতভম্ভ হয়ে গেছে। একটা মানুষ কিভাবে এতোটা দ্রুত সব কিছু এমন নিখুত ভাবে শিখে ফেলতে পারে, সেটা ওর মাথায় ঢোকে না। আবুল সব চেয়ে বিস্মিত হয়েছে ওর ক্যারাটে শেখা দেখে। ক্যারাটে মাষ্টার যতো বারই ওকে পিছন থেকে আঘাত করেছে ততোবারই ও সেই আঘাত আটকিয়েছে। ক্যারাটে মাষ্টারও চরম বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। একটা মানুষের ষষ্ঠইন্দ্রিয় কতোটা প্রখর হলে সেটা পিছনে চোখের মতো কাজ করতে পারে, রুদ্রকে না দেখলে সেটা বোঝার উপায় নেই।

রুদ্রের মা ফারহানা বেগম ধিরে ধিরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রুদ্র তাকে সুস্থ করার জন্য যে কৌশল ব্যবহার করেছিলো সে কৌশলই তিনি চন্দ্রের মা ফারিয়া খাতুনের উপরে প্রয়োগ করলেন। ফলে চন্দ্রের মাও এখন কিছুটা সুস্থ। এই এক সপ্তাহের মধ্যে অনেকেই রুদ্রের নানা বোরহান উদ্দিনের সাথে দেখা করলেন। একদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রি এসে চন্দ্রকে উদ্ধারের জন্য তার গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানালেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। চন্দ্রকে উদ্ধারের জন্য পুরো দেশে জাল বিছিয়ে সবাই ওৎ পেতে আছে কিন্তু সে জালে কেউ ধরা পড়ছে না। অপহরনকারিদের বিষয়ে তথ্য না পেলে আসলেই কিছু করা সম্ভব নয়। কালো বাদুরকে ধরার জন্য পুলিশ তাদের সমস্ত শক্তি লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেদিকেও অগ্রগতি হচ্ছে না।

প্রতিদিনের মতো আজও রাতে কয়েক জনকে নিয়ে পুকুরের সাকোর উপরে হ্যাচাক জালিয়ে বসলো রুদ্র। এক এক করে সবার কাছে কাজের অগ্রগতি জেনে রুদ্র বললো- এখানে তোমরা যারা আছো তাদের সবারই একটা করে টিম আছে। এই টিমগুলোকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এক জনের প্রয়োজন। নেতৃত্ব ছাড়া বেশি লোক এক সাথে সুশৃংখলভাবে কোন কাজই করতে পারে না।

চাচাতো ভাই আজমল বললো- সে জন্য তো তুই আছিস। তুই আমাদের সবার ছোট হলেও তোর মতো সাহস আর তিক্ষ বুদ্ধি আমাদের নেই। আর তুই চন্দ্রের স্বামি। তাই তোর নেতৃত্বেই সব হবে। যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক।

আজমলের কথায় বাকিরাও সায় দিলো। রুদ্র আবার বললো- আমি এরপরে সব দিকে দৃষ্টি দিতে পারবো না। কারন আমি তোমাদের তথ্যের উপরে ভিত্তি করে একটা একটা করে সন্দেহের পিছনে ছুটবো। আর কোন একটা সন্দেহকে পুরোপুরি মিটিয়ে ফেলার জন্য নিজেকে শুধু সেদিকেই মনোনিবেশ করবো। তাই এরপর থেকে সবার সাথে সব বিষয়ে কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য আরেক জনকে প্রয়োজন, যে সবার তথ্য সমন্বয় করবে। আমি তার কাছে আপডেডেড হবো। যদি কাউকে সরাসরি কিছু বলতে না পারি তাহলে তার মাধ্যমে জানাবো। আরো একটা কারন আছে। এতোদিন আমরা তথ্য সংগ্রহের জন্য ছুটেছি। কিন্তু স্পষ্ট কিছুই পাই নি। তাই এবার ছুটবো সন্দেহজনক লোকদের পিছনে। আর আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যাদের সাথে আমরা লড়তে যাচ্ছি তারা শুধু হিংস্রই নয়, বুদ্ধি এবং কৌশলেও সেরা। তাই নানুর শক্তি, পুলিশের শক্তি এখনো কিছু করে উঠতে পারে নি। করা তো দুরের কথা তাদের বিষয়ে একটুও তথ্য পায় নি। পুরো দেশ অপহরনকারির তথ্য পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কিন্তু কেউ কিছু করতে পারছে না। এদিকে নানু সরকারকে ভয় দেখিয়েছে, চন্দ্রকে তারা উদ্ধার করতে না পারলে আগামি নির্বাচনে তাদেরকে জয়ি হতে দিবে না। যে নানু সব সময় রাজনিতির বাহিরে থেকেছে, যার সমর্থন পাওয়ার জন্য প্রতিটি দলই মরিয়া হয়ে আছে কিন্তু নানু কাউকে সাপোর্ট করে নি, নির্বাচনেও যে সব সময় নিরপেক্ষ থেকেছে সেই নানু সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে চন্দ্রকে উদ্ধার করতে না পারলে তিনি এবারের নির্বাচনে সরকারকে জয়ি হতে দিবেন না! তারমানে তিনি তখন নিরপেক্ষ না থেকে কাউকে সাপোর্ট করবেন। আর এর পরিনাম কি হবে সরকার সেটা ভালো করেই জানে। তাই চন্দ্রকে উদ্ধারের জন্য সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকার তো দুরের কথা নানুর যে শক্তিকে সরকার ভয় করে সে শক্তিও সফল হতে পারছে না। তাই বোঝাই যায় অপহরনকারির বুদ্ধি এবং কৌশল নানু ও সরকারের সম্মিলিত বুদ্ধি এবং কৌশলের চেয়েও হয়তো বড়। সে যদি কৌশলের ক্ষেত্রে পৃথিবির সেরা হয় তবে তাতেও আমি বিস্মিত হবো না। বরং সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তার সাথে লড়াটা সহজ নয়। যেই তার কাছে পৌছানোর চেষ্টা করবে তাকেই সে নির্দিষ্ট একটা সময়ে হত্যা করবে। আমরা যদি তার কাছাকাছি চলে যাই তবে সে আমাদেরকেও হত্যা করার চেষ্টা করবে। আমি এখন থেকে সন্দেহজনকদের পিছনে ছুটবো। এই সন্দেহজনকদের পিছনে ছুটতে যেয়ে যখন আমি সত্যিই তার পিছনে লাগবো তখন সে আমার প্রতিটি পদক্ষেপকে ধরার চেষ্টা করবে এবং যখন বুঝবে আমি তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছি তখন হত্যা করার চেষ্টা করবে। আমি চাই আমার যা কিছুই হোক না কেন চন্দ্রকে উদ্ধারের কাজ থামানো চলবে না। আমার কিছু হলে তোমরা এগিয়ে যাবে। এজন্য দরকার এক জনের নেতৃত্ব। আমি চলে গেলে সে আসবে, সে চলে গেলে আরেক জন। চন্দ্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতেই থাকবে।

সবাই চুপচাপ রুদ্রের কথা শুনলো। রুদ্র সবার দিকে তাকিয়ে মামাতো ভাই আরশাদের উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো- আরশাদ ভাই, তুমি আমাদের সবার বড়। তাই এই দায়িত্বটা তোমার নেয়া উচিত।

- ঠিক আছে নিলাম। এবার বলো আমাকে কি করতে হবে?

- আমার বিশ্বাস স্থানিয় কেউ না কেউ কিডন্যাপিংয়ে সহযোগিতা করেছে। সে হতে পারে মেলার দোকানদার, হতে পারে মেলা কমিটির সদস্য, হতে পারে সার্কাসের জন্য চাদা প্রদানকারি মনিষ মুখার্জি, হতে পারে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের নার্স, ল্যাবটেকনিশিয়ান এবং অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার, হতে পারে রিদয় ক্লিনিকের মালিক জব্বার শেখ। কিংবা হতে পারে সার্কাসের প্রতি চন্দ্রের দুর্বলতা যারা জানে তাদের কেউ। যে কিডন্যাপিংয়ে সহযোগিতা করেছে সে এখন চুপ করে আছে। কিন্তু কতো দিন সে চুপ করে থাকবে? কিছু না কিছু ভুল তো এক সময় করবেই। সে যখনই ভুল করবে তখনই আমাদের সেটা জানা দরকার। তাই তুমি এদেরকে নিয়মিত মনিটরিংয়ে রাখার ব্যবস্থা করো। শুধু আমাদের জেলার প্রতিটি গ্রামে লোক সেট করে বসে থাকা যাবে না, ধিরে ধিরে অন্য জেলাগুলোতেও লোক সেট করো। সার্কাস পার্টিতে নিজেদের লোক সেট করো। তাদের কোন সদস্যকে কিনে নিয়ে এটা করতে পারো। চন্দ্রকে অপহরনের বিষয়ে সার্কাস পার্টির অন্য কারো কাছে সে যদি কিছু জানে তাহলে আমাদেরকে সে সেটা জানাবে। পুলিশের সাথে সমন্বয় করতে হবে। নানুর সাথেও মাঝে মাঝে কথা বলতে হবে। দেশের কোথাও কোন খুন বা গুম হলে তোমাদেরকে দেখতে হবে সেটা চন্দ্রকে অপহরনের সাথে কোন ভাবে যুক্ত থাকতে পারে কিনা। এমনকি নির্ভেজাল অ্যাকসিডেন্ট হলেও সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। আর এ সবের জন্য তুমি সবার মাঝে দায়িত্ব ভাগ করে দাও। যাকে যে দায়িত্ব দিবে সে শুধু মনোযোগ দিয়ে সেটাই করবে। সবার সাথে তোমার পরামর্শ করার দরকার নেই, তাতে সব কিছু গুলিয়ে যাবে। আমাদের ছেলেদের ভিতরে সব চেয়ে চৌকষ দুই জনকে বেছে নাও। তুমি এবং এই দুই জনকে নিয়ে তিন জনের একটা টিম তৈরি করে নাও। তোমরা হবে প্রধান টিম। অন্যগুলো হবে সাব টিম। সাবটিমেরও এক জন লিডার থাকবে। তোমরা সাব টিমের লিডারকে নির্দেশ দিবে। সে তার টিমের সদস্যদেরকে নিয়ে সেই নির্দেশ পালন করবে। তোমরা সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করবে না, কিন্তু সাব টিমের সংগৃহিত তথ্য বিশ্লেষন করে করনিয় ঠিক করবে। আর সাব টিমকে তোমার টিমের বাকি দুই সদস্য নির্দেশ দিতে পারবে না। তারা শুধু তোমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোহিতা করবে, নির্দেশ একমাত্র তুমি দিবে। সে নির্দেশ শুদ্ধ হোক বা ভুল হোক সেটা সবাইকে মানতে হবে। তিন জনের আরেকটা বিশেষ টিম তৈরি করবে। যারা প্রয়োজনে সরাসরি লড়াই করবে। এদেরকে তৈরি করার জন্য আমি যে সব প্রশিক্ষন নিয়েছি সে সব প্রশিক্ষন দেয়ার ব্যবস্থা করবে। আমি যাদের কাছে প্রশিক্ষন নিয়েছি তাদেরকে বলে রেখেছি আমরা যাদেরকে পাঠাবো তারা তাদেরকে প্রশিক্ষন দিবে। এই তিন জনের প্রশিক্ষন যখন শেষ হবে তখন আবার তিনজনকে নির্বাচন করে প্রশিক্ষন দিবে। আরেকটা বিষয় মনে রাখবে যাদেরকে তোমরা সন্দেহ জনক মনে করবে তাদেরকে আপাততো সরাসরি কিছু করতে যাবে না। তাদেরকে বুঝতেও দেয়া যাবে না। কারন অপহরনকারি যদি এক বার বুঝতে পারে আমরা সঠিক লোককে ধরেছি তাহলে তারা সে সুত্র শেষ করে দিবে। এদেরকে এখন শুধু অনুসরন করে এগিয়ে যেতে হবে, এদের ব্যবস্থা করা হবে পরে। যদি মনে হয় সন্দেহ জনক সেই ব্যক্তিকে নির্যাতন না করে সত্যিই কোন উপায় নেই কেবল তখনই সেটা করবে। আর যারা লড়াই করার জন্য নামবে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে কাজটা করার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে ছদ্মবেশ নিবে। কারন অপহরনকারি যদি একবার ধরে ফেলে তাহলে তোমাদেরকে খুন করার চেষ্ঠা করবে। তাই কোন কাজ তাড়াহুড়ো করে করবে না। যথেষ্ট সময় নিয়ে নিখুত পরিকল্পনা করে করবে। যখন পুরোপুরি নিজের আইডেন্টিটি গোপন করতে পারবে কেবল তখনই তাদের পিছু ধাওয়া শুরু করবে। যারা পিছু ধাওয়া করবে তারা তোমাদের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। শুধু তোমার সাথে যোগাযোগ করবে। সে যোগাযোগও হবে বিশেষ কৌশলে যাতে অন্য কেউ ধরতে না পারে। এই কৌশলটা তোমরা ডেভেলপ করবে। আমি এতো সব বলে তোমাকে শুধু কিছুটা আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করলাম। তোমরা তিন জন বসে খুটিনাটি সব বিশ্লেষন করে করনিয় ঠিক করবে। আরেকটা বিষয়, তোমরা যাই করো না কেন সেটা তথ্য সংগ্রহ হোক বা সিদ্ধান্ত, সবটাই লিখে রাখবে। কারন আমি প্রয়োজনে সময় মতো সেগুলো রিভিউ করবো। না লিখে রাখলে আমি যখন রিভিউ করবো তখন গুরুত্বপুর্ন কিছু বাদ যেতে পারে। তাই সব লিখে রাখবে। আরেকটা কথা, সার্কাসের প্রতি চন্দ্রের দুর্বলতা যারা জানে তাদের লিস্টকে ছোট করতে হবে। যাদেরকে ধুর্ত মনে হবে তাদেরকেই শুধু লিস্টে রাখবে এবং তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরন করার চেষ্টা করবে। সেই সাথে যারা লিস্ট থেকে বাদ গেছে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বুঝতে পারছো আরশাদ ভাই?

- হ্যা।

- সুশংখল পরিকল্পনা ছাড়া চন্দ্রকে খুজে বেড় করা সম্ভব নয়। একটা সংঘবদ্ধ শক্তির সাথে লড়তে হলে আমাদেরকেও সংঘবদ্ধ হতে হবে। আর লিডারশিপ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমি কাল স্কুলে যাবো। আমাদের হোষ্টেলে এমন কিছু ছাত্র আছে যাদের বাড়ি আমাদের টার্গেটকৃত চরের আশপাশে। আমি তাদের সাথে কথা বলবো। প্রয়োজনে তাদের কারো সাথে চরগুলো দেখার জন্য যাবো। আমি এবার কালো বাদুরের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়বো। আমাকে হয়তো কিছু দিন তোমরা পাবে না। কিন্তু তোমরা তোমাদের কাজ চালিয়ে যাবে। তোমাদের কাছে প্রয়োজনমতো আমি সাহায্য চাইবো। তবে তোমরা প্রস্তুত থাকো খুব শিঘ্রই এক জনকে অপহরন করতে হবে?

রুমন বলে উঠলো- কাকে?

- সেটা আমি পরে জানাবো। কালো বাদুরের তথ্য সংগ্রহের জন্য আপাতত একটা টিমকে চরে রাখো। আমি এমন লোকদের লিস্ট চাই যারা অবাধে নিয়মিত সব চরে যাতায়াত করে।

আরো বেশ কিছুক্ষন আলোচনা চললো। এক সময় আলোচনা শেষ করে রুদ্র বলল- রাত অনেক হয়েছে, তোমরা এবার ঘুমাতে যাও।

এক এক করে সবাই চলে গেলো। রুদ্রের সাথে শুধু বসে রইলো আবুল। পুকুর পাড়ের চারদিক থেকে ঝিঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে। মিটমিট করে জোনাকি জলছে। আজ গরম প্রচন্ড বেশি, ভ্যাপসা গরম। মাঝে মাঝে অন্ধকার আকাশে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। অনেকক্ষন চুপ করে থাকার পরে আবুল বললো- তুই কি অপহরনকারিকে চিনতে পেরেছিস?

- না।

- তাহলে কাকে কিডন্যাপ করবি?

- নিরিহ কাউকে?

আবুল চরম আশ্চার্য হয়ে বললো- নিরিহ কাউকে কেন!

- কারন সেই হয়তো আমাকে কালো বাদুরের পথ দেখাবে?

- কে সে?

- এখনো জানি না। হয়তো বৃষ্টি নামবে, চল রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

সাকোর উপর দিয়ে বাড়ির পথে হাটা ধরলো ওরা। বাতাস উঠেছে, শো শো শব্দ হচ্ছে। গাছের মাথাগুলো মাতালের মতো দুলছে। মাতালের মতো দুলছে রুদ্রও। ওর বুক প্রচন্ড জালা করছে। মনে হচ্ছে বুকের ভিতরে কেউ যেনো আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বুকের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে একবার বললো- আরেকটু ধৈর্য্য ধর্ বউ! আমি আসছি। আমাকে আটকানোর সাধ্য কারো নেই। যারা তোকে কষ্ট দিচ্ছে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। চরম শাস্তি দিয়ে মারবো। কষ্ট করে আরেকটু অপেক্ষা কর লক্ষিটি...... আরেকটু। আমি আসছি।

চলবে.....

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.