নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ২৮

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০৯

আবুলের কাছে পুরো ঘটনা শুনে হতবাক হয়ে গেলো মিজু। এবার বুঝতে পারলো চন্দ্রকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ কেন এতোটা ক্ষেপে উঠেছে? মিজুর ভাবি নার্স তাহমিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টা এড়িয়ে গেলো আবুল। এ বিষয়টা মিজুকে বলা অসস্তিকর।

পরদিন সকাল নয়টায় তাহের ব্যাপারির আড়তে আবুল এবং মিজুকে নিয়ে হাজির হলো রুদ্র। তাহের ব্যাপারি রুদ্রকে দেখে বলে উঠলেন- কেমন আছো বাবা।

- ভালো আছি মামা। আপনি কেমন আছেন?

- আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। একটু আগে আজমল এসেছে। ও ওই দিকে গেছে। তোমাকে দেখা করতে বলে গেছে।

মিজুকে লক্ষ করে রুদ্র বললো- আপনারা আড়তে বসে চা খান। আমি আজমল ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসছি।

তাহের ব্যাপারি চা নাস্তার অর্ডার দিলেন। রুদ্র আড়ত থেকে বেড়িয়ে এলো। প্রতিদিনের মতো ঘাট আজো লোকে লোকারন্য। একটা জাহাজের মাল আনলোড করা হচ্ছে। রেল ফেরি একটু আগে বাহাদুরাবাদ ঘাটের উদ্দেশ্যে চলে গেছে। কিছুক্ষন খোজার পরে আজমলকে দেখতে পেলো রুদ্র। ওর সাথে আরো কয়েক জন আছে। একটা ইঞ্জিল চালিত শ্যালো নৌকা ঠিক করছে ও। নৌকা ঠিক হলে দুই জনকে উঠিয়ে দিলো। নৌকাটা ছেড়ে দিলে আবার আরেকটা নৌকা ঠিক করলো। সেটাতেও দুই জনকে উঠিয়ে দিলো। এভাবে পরপর কয়েকটি নৌকা ঠিক করে প্রত্যেকটিতেই দুজন করে উঠিয়ে দিলো। আজমলের কাজ শেষ হওয়ার জন্য রুদ্র যমুনার তিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। আধা ঘন্টারও বেশি সময় পরে আজমলের কাজ শেষ হলো। এরপর আজমলের সাথে দেখা করলো ও। রুদ্রকে দেখেই আজমল বললো- কেমন আছো?

- ভালো। তোমরা কেমন আছো?

আজমল দির্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললো- কি করে ভালো থাকি? কারো মুখে হাসি নেই। সবাই চাপা ব্যাথা বুকে চেপে ধরে আছে। যে কোন সময় এই ব্যাথার বিষ্ফোরন ঘটতে পারে। চন্দ্রকে তাড়াতাড়ি উদ্ধার করা দরকার রুদ্র। ওকে ছাড়া আমরা কখনোই ভালো থাকতে পারবো না।

- সে চেষ্টাই তো করছি আজমল ভাই। তোমরা কি সন্দেহজনক কিছু পেয়েছো?

- নাহ্! এখন পর্যন্ত সন্দেহজনক শুধু কালো বাদুরই।

- আমরা ভুল কিছুর পিছনে সময় ব্যায় করছি কিনা জানি না। তবে ভুলটাকে পুরোপুরি ভুল হিসেবে না জানা পর্যন্ত ছেড়েও দেয়া যায় না।

- তোমার কি মনে হচ্ছে কালো বাদুরের পিছনে সময় ব্যায় করাটা নিরর্থক হচ্ছে।

- মাঝে মাঝে সেটাই মনে হচ্ছে।

- তাহলে কি করবে?

- শিওর না হওয়া পর্যন্ত কোন উপায় নেই। সম্ভাবনা তো আছেই।

- পাগলটাকে সন্দেহ করছো?

- পাগলের পরিচয়টা সত্যিই ঠিক কিনা সেটা জানা জরুরি।

- তুমি আমাকে বিকালে আসতে বলেছিলে। কিন্তু পাগলের পরিচয়টা আমি নিজে চেক করার জন্য সকালেই চলে এসেছি। চিন্তা করো না বিকেলের মধ্যেই এ বিষয়ে তথ্য পেয়ে যাবে। কালাসোনা, কামারজানি, চিলমারি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দিসহ কয়েকটা ঘাটে ছেলেদের পাঠিয়েছি। দুই জনের টিম করে পাঠিয়েছি। যে টিম পাগলটার সন্ধান পাবে সে টিমের এক জন পাগলটার সাথে থাকবে, আরেক জন আমাকে এসে খবর দিবে। আমি আজ এখানেই থাকবো। পাগলটার বাড়ি যাবো। ঘাটের লোকদের সাথে কথা বলবো। ও সত্যিই বোবা এবং বধির কিনা এটার সত্যতা যাচাই করবো।

- পাগলটাকে দিয়ে কালো বাদুর কোন তথ্য আদান প্রদান করে কিনা সেটা জানতে হবে আজমল ভাই। পাগলটা সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। যেখানে খুশি সেখানে যায়। কেউ ওকে বাধা দেয় না। ও আসলেই পাগল, নাকি পাগলের ছদ্মবেশে অন্য কিছু করে বেড়াচ্ছে? তুমি ওর বিষয়ে কৌশলে জানার চেষ্টা করবে, যাতে অন্য কেউ সন্দেহ না করে।

- এটা আমি আগেই ভেবেছি। সবাইকে এভাবে নির্দেশও দিয়েছি।

- ভালো করেছো।

- তুমি এখানকার কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে বাড়িতে আসো। বেশি দেরি হলে নানু তোমার খোজ করবে। তখন হয়তো সত্যিটা না বলে উপায় থাকবে না।

- যতো দিন সম্ভব হয় নানুর কাছ থেকে এটা গোপন রাখার চেষ্টা করো। আমি কালো বাদুরকে ধরার চেষ্টা করছি এটা জানলে নানু আমার পিছনে লোক লাগাবে যাতে আমি কোন বিপদে না পড়ি। আর এমনটা হলে আমার কাজে যেমন সমস্যা হবে তেমনি কালো বাদুরও আমাকে ধরে ফেলতে পারে।

- তুমি সাবধানে থেকো। কালো বাদুর হয়তো ইতিমধ্যেই জেনে গেছে আমরা তাকে খুজছি।

- কালো বাদুর যদি সত্যিই থেকে থাকে তবে এটা তাদের না জানার কথা নয়। তারা ছদ্মবেশে আছে। হয়তো আমাদের আশপাশেই আছে।

- ছদ্মবেশে আছে!

- আসলে কালো বাদুরের ছদ্মবেশে তারা নেই। মুল পরিচয়েই এই সমাজের মানুষের সাথে তারা মিশে আছে। শুধু যখন প্রয়োজন হয় কেবল তখনই তারা কালো বাদুরের ছদ্মবেশ ধারন করে। প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলেই তারা কালো বাদুরের ছদ্মবেশ ছেড়ে মুল পরিচয়ে চলে আসে। কালো বাদুরের ছদ্মবেশ তারা ক্ষনিকের জন্য নেয়। আর সম্ভবত এ জন্যই পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। আমি অনেক ভেবেছি। যুগের পর যুগ তারা কিভাবে অদৃশ্য হয়ে থাকে? যতোই তারা গুহা পর্বত কিংবা দুর্গম চরে থাকুক না কেন, পুলিশ যখন সমস্ত শক্তি দিয়ে পিছু লাগে তখন তাদের ধরা পড়ারই কথা। পাচ বছর, দশ বছর, বিশ বছর, কত দিন তারা পালিয়ে থাকবে? যারা পালিয়ে থাকে তাদেরকে ধরা যায়, সে যতোই বুদ্ধিমান হোক না কেন? কিন্তু যারা পালিয়ে থাকে না তাদেরকে ধরা কঠিন। আর তিক্ষ বুদ্ধির অধিকারি হলে তো সম্ভবই নয়। এরা নির্দিষ্ট কোন প্যাটার্ন মেনে চলে না। হয়তো কোন একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য বছরের পর বছর ওৎ পেতে অপেক্ষা করে। যখন তাদের সময় হয় কেবল তখনই সেটা ঘটায়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এরা হয়তো নিজেদের ভিতরেও যোগাযোগ করে না। যোগাযোগটাও হয়তো বিশেষ কৌশলে হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ ধরনেরই কোন ব্যাপার স্যাপার আছে এই কালো বাদুরদের মধ্যে। তাই এদেরকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এরা হয়তো শৌখিন ডাকাত। প্রয়োজন মেটানোর জন্য এরা ডাকাতি করে না। বিশেষ একটা লক্ষকে সামনে রেখে ডাকাতি করে।

- কি সেই লক্ষ?

- সেটা খুব শিঘ্রই হয়তো জানতে পারবো। আর চন্দ্রকে কিডন্যাপ যদি এরা নিজেরা না করে তাহলে যে কোন সময়ই খুনোখুনি শুরু হবে। খুনোখুনিটা এখনো হচ্ছে না কেন আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না!

- তোর কথা আমি বুঝতে পারছি না।

- যদি চন্দ্রকে কালো বাদুরেরা কিডন্যাপ করে তাহলে নিশ্চয়ই এই কিডন্যাপের সাথে এদের সদস্য ছাড়া অন্য কেউ যুক্ত থাকবে না। কারন যারা যুগ যুগ ধরে নিজেদেরকে আড়াল করে রেখেছে তারা কখনোই অন্যকে দিয়ে কাজ করাবে না। আর যদি অন্য কোন গ্রুপ কিডন্যাপটা করে থাকে তাহলে এর সাথে অনেকেই যুক্ত থাকবে। স্থানিয় কেউ যুক্ত থাকবে, সার্কাস পার্টিও যুক্ত থাকবে, আরো অনেকে। সেক্ষেত্রে গ্রুপের মুল পরিকল্পনাকারি এমন কাউকে ব্যবহার করবে যে বাকিদের সাথে যোগাযোগ করবে। এবং কাজ শেষ হলে বাকিদের সাথে যোগাযোগকারি সেই ব্যাক্তিকে খুন করা হবে যাতে মুল পরিকল্পনাকারির কাছে পৌছানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়। আরশাদ ভাইকে বলো, কোথাও কোন খুন বা গুম হচ্ছে কিনা সেদিকে যেন তিক্ষ দৃস্টি রাখে।

- ঠিক আছে, বলবো।

- চলো এবার আড়তে যাই। এক জন চাষি নাকি কালো বাদুরকে দেখেছে। দশটায় তার আড়তে আসার কথা।

রুদ্র আড়তের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আজমল রুদ্রের পাশে চলতে চলতে বললো- আবিরকে বিশেষ কিছু কাজে লাগিয়ে দাও। ও কারো সাথে এখন কথা বলে না। একা একা থাকে আর চোখের পানি ফেলে। চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ও কেমন যেনো পাগলের মতো হয়ে গেছে। ওকে কাজে লাগানো দরকার। তা না হলে এক দিন হয়তো পাগলই হয়ে যাবে।

আবির চন্দ্রের বড় ভাই। রুদ্রের চেয়ে দুই বছরের বড়। ইন্টারে পড়ে। আবিরকে রুদ্র কোন দায়িত্ব দেয় নি। কারন ওরা দুই ভাই বোন। চন্দ্রকে তো পাওয়া যাচ্ছে না। চন্দ্রকে খুজতে গিয়ে আবার যদি আবিরের কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে ওর মাবাবা কাকে নিয়ে বাচবে? রুদ্র একটু চিন্তা করে বললো- যে টিমটার প্রশিক্ষন নেয়ার কথা তারা কি প্রশিক্ষন নেয়া শুরু করেছে?

- কাল থেকে শুরু করবে।

- আরশাদ ভাইকে বলো ওই টিমে যেনো আবির ভাইকে ঢুকিয়ে দেয়। আর আবির ভাইকে বলবে, চন্দ্রকে খোজার জন্য তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হবে। এ জন্য উনি যেনো মন দিয়ে ভালো করে প্রশিক্ষন শেষ করে।

- ঠিক আছে।

- তুমি আজ এখান থেকে যাওয়ার পরে হারেছ ভাইয়ের সাথে দেখা করবে।

- হারেছ ভাই কে?

- উনি মেকআপ ম্যান। নাটকের অভিনেতা অভিনেত্রিদের মেকআপ করেন। ওনার কাছে মেকআপের উপরে আমি প্রশিক্ষন নিয়েছি।

- ও, চিনেছি।

- ওনাকে বলবে আমি পাঠিয়েছি। উনি তোমাকে কিছু জিনিস দিবেন। সেগুলো কাল কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ো। আর আমার এক সেট ছেড়া কাপড় দরকার। যেমন কাপড় ভিক্ষুকেরা পড়ে। সেই সাথে ছোট ধারালো একটা ছোরাও দরকার। ভাজ করে রাখা যায় এমন হলে ভালো হয়।

আজমল অবাক হয়ে বললো- তুমি কি ভিক্ষুকের ছদ্মবেশ নিবে?

- হয়তো প্রয়োজন পড়তে পারে।

- এ সব নিয়ে আমি নিজেই কাল আসবো।

- ঠিক আছে আসো। আজ আমি তাহের মামার বাসায় থাকবো। কাল আমাকে এখানেই পাবে।

তাহের ব্যাপারির আড়তের দিকে এগিয়ে চললো ওরা। কালো বাদুরকে ধরার ছক একে ফেলেছে রুদ্র। এখন শুধু মোক্ষম একটা সুযোগের অপেক্ষা।

চলবে.......

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.