নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ২৯

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪

চাষির কাছে জানা গেলো বালাসি থেকে কিছুটা দুরে কয়েক বছর আগে একটা নতুন চর জেগে উঠেছে। সেই চরে তিনি এক বার বাদাম চাষ করেছিলেন। বাদামের ফলন সেবার ভালই হয়েছিলো। এক দিন বাদামের জমির ঘাস তুলতে তুলতে তার সন্ধ্যা হয়ে যায়। ফেরার সময় পথ ভুল করে চরের উল্টো দিকে চলে যান। তারপর বেশ কয়েক বার পথ ভুল করেন তিনি। এদিকে রাত নেমে আসে। যখন তিনি সঠিক পথ চিনতে পারেন তখন অনেক রাত হয়ে যায়। চর থেকে ফেরার জন্য কোন নৌকাও তখন ছিলো না। বাধ্য হয়ে কিছু খড় জোগার করে কোন মতে একটা বিছানা তৈরি করে শুয়ে পড়েন। নির্জন চরে একা থাকতে ভিষন ভয়ও পেয়েছিলেন। ক্ষুধাও লেগেছিলো অনেক। কিন্তু উপায় ছিলো না। এক সময় ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙ্গে শেষ রাতে। নদির দিকে তাকাতেই তার শরির ভয়ে হিম হয়ে আসে। দেখতে পান একটা কালো ছায়ামুর্তি অনেকটা দুর দিয়ে নদির দিকে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পরে ছায়ামুর্তিটি হারিয়ে যায়। বাকি রাত তিনি আর ঘুমাতে পারেন নি। সকালে একটা নৌকা চরে ভিড়লে তিনি সেটাতে চড়ে ঘাটে চলে আসেন। সব শুনে রুদ্র বললো- ছায়ামুর্তিটা যে কালো বাদুরই সেটা বুঝলেন কি করে? অন্য কেউও তো হতে পারে।

- অতো রাতে চরে কে থাকবে? যেদিন আমি ছায়ামুর্তিটাকে দেখি তার আগের দিন একটা ডাকাত দল একটা মেয়েকে ধর্ষন করে। কালো বাদুর সেই ডাকাত দলকে নিশ্চয় চরে খুজছিলো। কয়েক দিন পরে সেই ডাকাত দলকে তারা পেয়ে যায়। সবার গলা কেটে নদিতে ভাসিয়ে দেয়।

- এটা আপনার ধারনা। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না।

- ওই ছায়ামুর্তি কালো বাদুর ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না।

- এতো শিওর হচ্ছেন কি করে?

- ওটা কালো বাদুরই।

রুদ্র চাষিকে এ বিষয়ে আর কিছু বললো না। তিনি তার বিশ্বাসে গো ধরে বসে আছেন। তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই এক সময় চাষিকে বিদায় করে দিয়ে আজমলকেও ওর কাজে পাঠিয়ে দিলো। তাহের ব্যাপারি বললেন- কি না কি দেখেছে আর সেটাকেই কালো বাদুর বানিয়ে ছাড়ছে!

- কিন্তু চাষি যা বলছে সেটা তো সত্যিও হতে পারে। এখন উঠছি মামা। পরে আসবো।

- দুপুরে তোমরা আমার এখানে খাবে। তোমার মামি ভাত পাঠিয়ে দিবেন। কালকের মতো তোমরা আবার হোটেলে খেয়ো না যেনো।

- ঠিক আছে মামা। তবে কখন ফিরবো বলতে পারছি না।

- কোথায় যাবে এখন?

- কয়েকটা চর ঘুরবো।

আড়ত থেকে বেড়িয়ে আজ আবারও কয়েকটা চর ঘুরলো ওরা। অনেক লোকের সাথে কথাও বললো। কিন্তু কালো বাদুর সম্পর্কে নতুন কিছু জানা গেলো না। কিছু চর সত্যিই দুর্গম। নৌকা থেকে নেমে অনেকটা পথ একেবেকে হেটে যেতে হয়। পথের কোথাও শুধু বালু আর বালু, কোথাও হাটু সমান জল। অনেক জায়াগায় পথের চিহ্নও নেই। চোরাবালির ভয়ও আছে। যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা ছাড়া কিছু কিছু চরে পথ চেনাই সম্ভব নয়। চরের ক্ষেতে মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝুপরি জাতিয় শনের ঘর দেখা যায়, চাষিদের বিশ্রামের জন্য। কয়েকটা চরে ঘন জঙ্গলও দেখা গেলো। নতুন জেগে ওঠা চরগুলোর অনেকটা জায়গা জুরেই কাশবন। কিছু চরে লোক জন স্থায়িভাবে বসবাস করছে। সেখানে দোকানপাট, মসজিদ, মাদ্রাসাও আছে। পুরো গ্রামের মতো। বেশির ভাগ বাড়ি ছন বা টিনের হলেও ইটের তৈরি বাড়িও কিছু আছে।

বিকেলে তাহের ব্যাপারির আড়তে ফিরে এলো ওরা। তাহের ব্যাপারি তখনো খান নি, রুদ্রদের ফেরার অপেক্ষা করছিলেন। অপেক্ষা করছিলো আজমলও। খেতে বসে রুদ্র আশ্চার্য হয়ে দেখলো সব ওর প্রিয় তরকারি। পাট শাক, আলু ভর্তা, বাদাম ভর্তা, ডাল আর ইলিশ। সাথে ক্ষিরার সালাত। ইলিশ মাছ দেখলেই ওর হোস্টেলের সেই ইলিশ মাছের লেজের কথা মনে পড়ে যায়। কি আহাম্মকটাই না হয়েছিলো সেদিন! তাহের ব্যাপারিকে রুদ্র বললো- এতো কিছুর আয়োজন কেন করতে গেলেন মামা?

- আমি তো বাবা কিছুই করি নি। যা করার তোমার মামিই করেছে।

- আমার খাবারের পছন্দের কথা মামি জানলো কি করে?

- তা তো জানি নে।

খাওয়া শেষে আজমলের সাথে বাহিরে এলো রুদ্র। আজমল জানালো, সজল পাগলের পরিচয়ে কোন সন্দেহ নেই। আজমল অনেক ভাবেই খোজ নিয়ে দেখেছে। সজল যেমন মুক ও বধির তেমনি ওর মাথাতেও গন্ডগোল আছে। এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না, যেখানে ইচ্ছে চলে যায়। আবার ফিরেও আসে। ক্ষুধা লাগলে লোক জনের কাছ থেকে চেয়ে খায়। যেখানে রাত হয় সেখানেই ঘুমায়।

সন্ধার আগে আজমলের পুরো টিম বালাসি ঘাটে ফিরে এলো। সজল পাগলের সন্ধান কেউ দিতে পারলো না। এরপর পাগলের খোজে কয়েক দিন কেটে গেলো। এর মধ্যে মিজু ওর বাড়িতে চলে গেছে, বাড়ি থেকে কয়েক দিন পরে ও হোস্টেলে চলে যাবে। আবুলকে নিয়ে তাহের ব্যাপারির বাড়িতেই থাকলো রুদ্র। জানা গেলো তাহের ব্যাপারির স্ত্রি গত বছর এক দিন রুদ্রদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেদিন রুদ্রদের বাড়িতে আলু ভর্তা, পাট শাক আর ইলিশ মাছ রান্না করা হয়েছিলো। চন্দ্র পাট শাক খেতে পারতো না, তিতে লাগতো। চন্দ্রের মা ফারিয়া খাতুন চন্দ্রকে বলেছিলেন- রুদ্র পাট শাক খুব পছন্দ করে, তুই না করলে চলবে কি করে?

চন্দ্র উত্তরে বলেছিলো- ওর পছন্দ হলে আমার হতে হবে কেন?

ফারিয়া খাতুন চন্দ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন- সামির পছন্দ অপছন্দগুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় মা। সামির পছন্দ মতো কাজ করার মাঝে অন্য রকমের একটা ভালো লাগা থাকে। এটা পরে বুঝবি।

চন্দ্র মুখ গোমরা করে বলেছিলো- যে পাট শাক খায় তার মতো সামির আমার দরকার নেই।

চন্দ্রের কথায় সবাই হেসে ফেলেছিলো। রুদ্রের মা ফারহানা বেগম বলেছিলেন- শুধু চন্দ্রকেই কেন রুদ্রের পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে? রুদ্রকেও চন্দ্রের পছন্দ অপছন্দের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সামিস্ত্রি যখন পরস্পরের পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দেয় তবেই না সংসার সর্গ হয়ে উঠে।

চন্দ্র বলেছিলো- সংসার কি জিনিস ফুফু মা?

- স্বামিস্ত্রি আর সন্তানদেরকে নিয়ে এক সাথে যে সর্গ রচনা করা হয় সেটাকেই সংসার বলে। তুই যখন বড় হয়ে রুদ্রের সাথে থাকবি, তোদের সন্তান সন্ততি হবে তখন তোরা সবাই মিলে এক সাথে যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর স্নেহের বন্ধন তৈরি করবি সেটাই সংসার।

চন্দ্র কি বুঝেছিলো সেটা বোঝার সাধ্য কারো ছিলো না। কারন ও তখন খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছিলো। কথায় কথায় সেদিন রুদ্র আর চন্দ্রের পছন্দ অপছন্দ গুলো জেনেছিলেন তাহের ব্যাপারির স্ত্রি। চন্দ্রের হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে উনিও অনেক চোখের জল ফেলেছেন। চন্দ্রকে বড্ড পছন্দ করতেন উনি। ওনার কাছে চন্দ্রের কথা শুনে চোখের পাতা ভারি হয়ে উঠেছিলো রুদ্রের। ছলছল করে ভিজে উঠেছিলো চোখ। বুকের ভিতরে দাউ দাউ করে আগুন জলে উঠেছিলো। সে আগুন বুক পুড়িয়ে দগ্ধ করে দিচ্ছিলো। পুরো বুকটা চন্দ্রকে হারানোর শোকে হাহা করছিলো।

এক দিন জোৎস্না রাতে রুদ্রকে একা পুকুর পাড়ে ডেকে নিলেন তাহের ব্যাপারি। তাহের ব্যাপারির বাড়ির পাশে মাঝারি একটা পুকুর আছে। সেটাতে উনি মাছ চাষ করেন। বিক্ষিপ্ত কিছু কথা বলার পরে এক সময় বললেন- কয়েক বছর আগে এই এলাকার চাষিদেরকে ব্যবসায়িরা অনেক ঠকাতো। চাষিদের কাছ থেকে অনেক কম দামে তাদের পন্য কিনে ঢাকায় বেশ চড়া দামে বিক্রি করা হতো। চাষিরা অর্ধেকেরও কম দাম পেতো। চাষিরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফসল উৎপাদন করতো তা বেচে কোন রকমে তারা এক বেলা দুই বেলা খেয়ে বেচে থাকতো। কিন্তু ব্যবসায়িরা তাদের পন্য কিনে বসে থেকেই বিপুল পরিমান লাভ করতো। তবে হঠাত এক দিন ব্যবসায়িরা চাষিদেরকে তাদের ন্যায্য মুল্য দেয়া শুরু করলো। ইচ্ছায় নয়, বাধ্য হয়ে?

রুদ্র জিজ্ঞেস করলো- কেন?

- কারন কালো বাদুর।

রুদ্র অবাক হয়ে বললো- কালো বাদুর!

- হ্যা, কালো বাদুর। কালো বাদুরের কাছ থেকে আমি এক দিন একটা চিরকুট পাই। চিরকুটে লেখা ছিলো- চাষিদেরকে যদি ন্যায্য মুল্য না দাও তবে সব হারাবে। আমার বিশ্বাস এমন চিরকুট আরো অনেক ব্যবসায়িই পেয়েছে। আর তাই সবাই চাষিদেরকে ন্যায্য মুল্য দেয়া শুরু করে।

- চিরকুটটা আছে আপনার কাছে?

- না, নেই। ওটা আমি ছিড়ে ফেলেছি।

- ওটা কি কালো কাগজের ছিলো? আর লেখাটা কি সাদা রংগের।

- হ্যা।

- ওদের হুমকির কথা পুলিশকে জানান নি?

- না। এ সাহস আমার নেই। শুধু আমি নই, কেউই হয়তো পুলিশকে জানায় নি। পুলিশকে জানিয়ে কালো বাদুরের কাছে সব কিছু হারাতে চাইবে কে?

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তাহের ব্যাপারি আবার বললেন- কালো বাদুর হয়তো আশপাশেই কোথাও আছে। তোমরা সাবধানে থেকো বাবা। তোমরা যদি কালো বাদুরকে চিনে ফেলো আর তারা যদি সেটা বুঝতে পারে তাহলে তোমাদেরকে তারা মেরে ফেলার চেষ্টা করবে। তারা চাইবে না যারা তাদেরকে চিনে ফেলেছে তারা বেচে থাকুক।

- এটা আপনি ঠিকই বলেছেন?

- তবে আমি বুঝতে পারছি না কালো বাদুর চন্দ্রকে কেন অপহরন করলো? তোমরা তো কারো ক্ষতি করো নি, বরং অন্যের উপকার করার জন্য তোমরা যে কোন ঝুকি নিতে পারো। তোমার নানাকে কালো বাদুরদের তো না চেনার কথা নয়। চন্দ্রকে তারা কেন অপহরন করতে যাবে?

- সেটাই তো বুঝতে পারছি না মামা। চন্দ্রকে যে কারনে অপহরন করা হয়েছে সেটা জানতে পারলে ওকে অনেক আগেই উদ্ধার করা যেতো।

- যাই হোক বাবা। তোমরা কিন্তু সাবধানে থেকো।

রুদ্র শুয়ে শুয়ে তাহের ব্যাপারির কথা ভাবতে লাগলো। তাহের ব্যাপারির কথার মাঝে কেমন যেনো রহস্য রহস্য ভাব ছিলো। তাহের ব্যাপারি ওকে সত্যি বললো নাকি কালো বাদুরদের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দিলো? তাহের ব্যাপারি কি কালো বাদুরকে চেনে? কিংবা কালো বাদুরের কেউ? কোন কিছুই অসম্ভব নয়। তাহের ব্যাপারির উপরে লক্ষ রাখার সিদ্ধান্ত নিলো ও। সেই সাথে ঠিক করলো কালো বাদুরদের খোজার কৌশল ওকে চেঞ্জ করতে হবে, দ্রুত।

চলবে......

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.