নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ৩১

২৫ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

প্রধান টিমের টিম লিডার রুদ্রের মামাতো ভাই আরশাদ রুদ্রের কথা মতো তিন সদস্যের স্পেশাল টিম এবং ঢাকায় দির্ঘ দিন থাকার জন্য দুই সদস্যের আরেকটি টিম তৈরি করে ফেললো। স্পেশাল টিমে স্থান পেলো ফাহিম, আবির এবং আতিক। ফাহিম রুদ্রের মামাতো ভাই। মেলায় চন্দ্র যখন কিডন্যাপ হয় তার আগে সর্বোশেষ ফাহিমই চন্দ্রের হাত ধরেছিলো। আবির চন্দ্রের বড় ভাই। আতিক রুদ্রের চাচাতো ভাই, প্রচন্ড সাহসি এবং শক্তিশালি। ঢাকায় থাকার জন্য দুই সদস্যের টিমে স্থান পেলো রুদ্রের মামাতো ভাই আহমদ এবং চাচাতো ভাই আরিফ। টিম তৈরির পরে আরশাদ একদিন রুদ্রের সাথে দেখা করলো। চন্দ্রের বড় ভাই আবিরকে স্পেশাল টিমে রাখায় রুদ্র আপত্তি করে বললো- আবির ভাইকে স্পেশাল টিমে রাখলে কেন আরশাদ ভাই? উনি চন্দ্রের ভাই। আর আমরা চন্দ্রকেই খুজছি। আবেগের বশে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসলে সর্বোনাশ হবে।

- সে চিন্তা করিস না। ওকে সব কিছু বুঝিয়ে বলেছি। তোর নির্দেশ ছাড়া ও কিছুই করবে না। তুই যেহেতু স্পেশাল টিম চাচ্ছিস সেহেতু বুঝতেই পারছি এটার গুরুত্ব অনেক। তাই বেছে বেছে এদেরকেই নির্বাচন করতে হয়েছে। আর প্রশিক্ষনের জন্য এই তিন জনেই প্রথম ব্যাচে ছিলো। আমার মনে হয়েছে এরাই আমাদের মধ্যে সেরা। এরা যেমন সাহসি, তেমনি বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালিও।

- এতো অল্প সময়ে ওদের প্রশিক্ষনও তো শেষ হয় নি!

- পুরোপুরি শেষ হয় নি কিন্তু সব কিছুই একটু করে তো শিখেছে। বাকিরা তো শুরুই করে নি।

রুদ্র একটু চিন্তা করে বললো- ঠিক আছে। কাল সকাল নয় টার মধ্যে ঢাকার টিমের দুই জনকে আমার সাথে দেখা করতে বলো। স্পেশাল টিমের তিন জনকে দেখা করতে বলবে বিকাল পাচটার পরে। তার আগে ওরা প্রশিক্ষন নিক। ওদেরকে কি বলেছো? কি করতে হবে ওদেরকে?

- তুই যাকে যে দায়িত্ব দিবি তারা শুধু সেটুকুই করবে, তার বাইরে কেউ কিছুই করবে না। কাউকে খুন করতে হলে নির্দিধায় খুন করবে ওরা। কালো বাদুরের কাছে ধরা পড়লে শত অত্যাচারেও মুখ খুলবে না। আর ওদেরকে কঠোর জিবন যাপন করতে হবে। আমাকে তুই এটুকু বলেছিস তাই ওদেরকেও এটুকুই বলেছি। আর কি করতে হবে সেটা তুই বলিস।

- ঠিক আছে আরশাদ ভাই। তুমি এবার যাও। কাল ওদেরকে সময় মতো আসতে বলো।

- তুই আসলে কি করতে যাচ্ছিস? কালো বাদুরের বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছিস?

- এখনো তেমন কিছু জানি না। তবে কৌশল ঠিক করার চেষ্টা করছি। এটুকু জেনে রেখো কালো বাদুরকে আমার হাতে ধরা পড়তেই হবে।

- তোকে নিয়েও আমরা অনেক টেনশনে আছি। কালো বাদুরের পিছনে ছুটতে গিয়ে অঘটন ঘটলে কি হবে বুঝতে পারছি না। এদিকে তোর কালো বাদুরের পিছনে লাগার বিষয়টাও দাদুকে বলতে নিষেধ করেছিস।

- চন্দ্রকে ছাড়া আমাদের বংশের কারো মুখে হাসি ফুটবে না আরশাদ ভাই। আমিও ওকে ছাড়া চলতে পারবো না। তাই আমার যাই হোক না কেন চন্দ্রের উদ্ধার হওয়া জরুরি। কেউ যখন কিছুই করতে পারছে না তখন আমার কথাটাই না হয় একটু শোনো।

- কেউ কিছু করতে পারছে না জন্যই তোর কথা বাধ্য হয়ে শুনতে হচ্ছে। তা না হলে কে তোকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়! আমি অবাক হচ্ছি, এতো দিনেও চন্দ্রের বিষয়ে কিছু জানা যাচ্ছে না কেন?

- এটাই তো সাভাবিক। বিশাল ক্ষমতাধর বোরহান উদ্দিনের এক মাত্র নাতনিকে যারা কিডন্যাপ করেছে তারা কাচা কাজ করার লোক নয়। তাদের অনেক বড় উদ্দেশ্য আছে। তাদেরকে ধরা সহজ নয়।

- তুই কি করতে যাচ্ছিস সেটা আমাকে জানাস। আমি তোর প্রটেকশনের ব্যবস্থা করবো। আমি নিজে তোকে পাহারা দিবো। একটা চুল পরিমান আঘাতও তোকে লাগতে দিবো না।

- এরপর তোমাদের কি করতে হবে সেটা স্পেশাল টিমের মাধ্যমে জানতে পারবে।

পর দিন সকালে ঢাকার টিমের দুই সদস্য আহমদ এবং আরিফ রুদ্রের সাথে দেখা করার জন্য বালাসি ঘাটে চলে এলো। আবুলকে তাহের ব্যাপারির আড়তে রেখে ঘাট থেকে নির্জন একটা জায়গায় ওদের সাথে দেখা করলো রুদ্র। কালো বাদুরকে ধরার জন্য রুদ্র ওর পরিকল্পনাকে চারটি ভাগে ভাগ করেছে। প্রথম ভাগের নাম দিয়েছে প্লান-এ, দ্বিতিয় ভাগের নাম প্লান-বি, তৃতিয় ভাগের নাম প্লান-সি এবং সর্বোশেষ ভাগের নাম প্লান-ডি। আর ও যদি মারা যায় তবে অতিরিক্ত আরেকটি পরিকল্পনা করেছে রুদ্র, সেটা হচ্ছে প্লান-ই। ঢাকার টিমের দুই সদস্য স্পেশাল টিমের সাথে প্লান-এ বাস্তবায়ন করবে। প্লান-বি এর প্রথম অংশেও স্পেশাল টিম সাথে থাকবে, পরবর্তি অংশ তাদেরকে একা সম্পন্ন করতে হবে। প্লান-সি এবং প্লান-ডি স্পেশাল টিম একা করবে। আর রুদ্র দুই টিমের সাহায্য নিয়ে কালো বাদুরের উপরে আঘাত হানবে। প্লান-এ এবং প্লান-বি হচ্ছে কালো বাদুরকে চিহ্নিত করার পুর্বপ্রস্তুতি। প্লান-সি হচ্ছে কালো বাদুরকে সনাক্ত করার পরিকল্পনা এবং প্লান ডি হচ্ছে কালো বাদুরকে ধরার পরিকল্পনা।

ঢাকার টিমের দুই সদস্যকে প্লান-এ এবং প্লান-বি বুঝিয়ে দিলো রুদ্র। রুদ্রের প্লান শুনে আহমদ এবং আরিফ চরম ধাক্কা খেলো। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো তারা। সেই সাথে চরম উত্তেজনায় ফুটতে লাগলো। রুদ্র তাদের বার বার সাবধান করে দিলো, এই প্লান কাউকে জানানো যাবে না।

স্পেশাল টিমের তিন সদস্য ফাহিম, আতিক এবং আবির আসলো মাগরিবের নামাযের পরে। মেকআপ ম্যান হারেছ আলির কাছে প্রশিক্ষন নিতে ওদের দেরি হয়ে যায়। এবারও আবুলকে আড়তে রেখে ওদের সাথে দেখা করলো রুদ্র। ওদেরকে নিয়ে অনতিদুরে বাধে গিয়ে বসলো ও। গাইবান্ধা জেলাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৬২ সালে রংপুরের কাউনিয়া থেকে বালাসি হয়ে পাবনা পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নামে এই বাধটি নির্মাণ করা হয়। বিকেলে এই বাধের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করার জন্য অনেক দর্শনার্থি বেড়াতে আসেন। অনেকে যমুনার বুকে নৌকা ভ্রমনও করেন। এখন সন্ধা পেরিয়ে গেছে। বাধে কোন দর্শনার্থি নেই। তবে ঘাটের কোলাহল শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হুইসেলের শব্দও ভেসে আসছে। তিন জনের এই স্পেশাল টিমটা রুদ্রের কাছে খুবই গুরুত্বপুর্ন। কালো বাদুরকে ধরার জন্য এই টিমটাই ওকে সব চেয়ে বেশি সাহায্য করবে। প্লান জানানোর আগে রুদ্র বললো- তোমাদেরকে স্পেশাল কিছু কাজ করতে হবে। এ জন্য তোমাদেরকে প্রচন্ড ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্লানের বাহিরে কিছুই করা যাবে না। গোপনিয়তা চরমভাবে রক্ষা করতে হবে। খুন করার প্রয়োজন হলে বুদ্ধি খাটিয়ে খুন করতে হবে, প্রমান রাখা যাবে না। ছদ্মবেশে চলতে হবে। যার যে ছদ্মবেশ পছন্দ হয় সেটাই নিতে পারো। তবে হকার, ভিক্ষুক বা পাগলের মধ্যে যে কোন একটা বেছে নিতে হবে। যে যেটা ছদ্মবেশ নিবে সেভাবেই রোজগার করে খাবে। যে ছদ্মবেশে যা খাওয়া সাভাবিক সেটাই খাবে। শুধু খাওয়া নয় ছদ্মবেশের সাথে পুরোপুরি তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আগামি পরশু শহর থেকে ছদ্মবেশ নিয়ে ঘাটে এসে হাজির হবে। আমার পরবর্তি দিকনির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা তিন জন এই ঘাটেই থাকবে। ছদ্মবেশ নিখুত করার চেষ্টা করবে। যে ভিক্ষুক হবে সে আমার কাছে দশ পয়সা চাইবে। যে হকার হবে সে চুরিফিতা বিক্রি করবে। যে পাগল হবে সে গলায় তিনটা তাবিজ বাধবে। ঠিক আছে?

ফাহিম বললো- ঠিক আছে। তারপর কি করতে হবে?

- সেটা বলছি। তার আগে জেনে রেখো তোমাদের পরিচয় কোন ভাবেই প্রকাশ হওয়া চলবে না। আমরা ছাড়া অন্য কেউ যেনো এ পরিচয় না জানে, সেটা আমাদের ভাইয়েরা হলেও নয়। মনে রাখতে হবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছি যারা যুগের পর যুগ ধরে লোক জনের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে আছে। পরিচয় গোপন রাখার জন্য তারা খুন করতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা করবে না। তোমাদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে গেলে শুধু তোমরা বিপদে পড়বে না, আমাদের অন্য ভাইয়েরাও বিপদে পড়বে। তাই সবার ভালোর জন্যই তোমাদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। নিজেদের কারো কাছেই তোমাদের ছদ্মবেশ বা কর্মকান্ড প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি প্রধান টিমের টিম লিডার আরশাদ ভাইয়ের কাছেও না। আর ছদ্মবেশ এমন জায়গায় নিবে যাতে কেউ তোমাদের ছদ্মবেশ চিনে না ফেলে। ধরো লোকচক্ষুর আড়ালে জঙ্গলের ভিতরে আসল পরিচয়ে ঢুকলে কিন্তু অন্য পাশ দিয়ে ছদ্মবেশে বেড় হলে। এটা জঙ্গল হতে পারে, পাট ক্ষেত হতে পারে, নির্জন জায়গায় গাছের আড়ালে হতে পারে, সিনেমা হলের পিছনে অন্ধকারে হতে পারে, নির্জন বাথরুমে হতে পারে। যেখানে ইচ্ছা সেখানে হতে পারে, তবে লক্ষ রাখতে হবে কেউ যেন তোমাদের ছদ্মবেশ ধরে ফেলতে না পারে। মনে রাখবে কালো বাদুর সব সময়ই তোমাদেরকে লক্ষ করছে। নির্জন জায়গায় ছদ্মবেশ চেঞ্জ করলেও ভাববে কালো বাদুর তোমাদেরকে দেখছে। তাই নির্জন জায়গাতেও কৌশলে কাজটা করবে। আর মাঝে মাঝে চেষ্টা করবে ছদ্মবেশ চেঞ্জ করে বাড়ি থেকে ঘুরে আসার। যাতে তোমাদেরকে নিয়ে কেউ নতুন করে টেনশন না করে। ঠিক আছে?

আতিক দ্বিমত পোষন করে বললো- মাঝে মাঝে ছদ্মবেশ চেঞ্জ করতে হলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আমরা বাড়ি থেকে একবারেই বেড়িয়ে আসবো। চন্দ্রকে উদ্ধার করার পরে ফিরবো।

- না। সেটা করা যাবে না। তোমাদেরকে টানা কয়েক দিন বাড়িতে দেখতে না পেলে বড়রা টেনশন করবে। কারন বড়রা আমাদের এই মিশন সম্পর্কে কিছু জানে না। চন্দ্র কিডন্যাপ হওয়ার পর পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, বিভিন্ন জায়গায় তথ্য সংগ্রহের জন্য দুই তিন দিন কেউ না কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না। তাই সর্বোচ্চ তিন দিন বাড়িতে না থাকাটা এখন সাভাবিক। তিন দিন পর্যন্ত কেউ তেমন গুরুত্ব দিবে না। তোমরাও বড় জোর একটানা দুই বা তিন দিন বাড়িতে না গিয়ে থাকতে পারো। আরশাদ ভাই সেটা সামলিয়ে নিবেন। কিন্তু তিন দিনের বেশি বাড়িতে না গিয়ে কেউ থাকবে না। রাতে বাড়িতে থাকার দরকার নেই। সবার সাথে দেখা করেই চলে আসবে।

আবির জানতে চাইলো- কেউ যদি বলে আমরা তিন দিন কোথায় ছিলাম তবে কি বলবো?

- সেটা তোমরা আরশাদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিবে।

আবির মাথা হেলিয়ে বললো- ঠিক আছে।

- তোমরা প্রতি ঘন্টায় নিজেদের পকেট চেক করবে। আমার কোন দিকনির্দেশনা থাকলে সেটা চিরকুটে লিখে লোকচক্ষুর আড়ালে তোমাদের পকেটে ঢুকিয়ে দিবো। তোমরাও তাই করবে। সরাসরি কারো সাথে ইশারা পর্যন্ত করবে না। এবার আবিরকে লক্ষ করে রুদ্র বললো- আবির ভাই, তোমার জন্য আলাদা কিছু কথা। তুমি আবেগের বশে ভুল কিছু করবে না। যদি চন্দ্রকেও তুমি দেখতে পাও তবুও পরিকল্পনার বাইরে কিছু করতে যাবে না। তুমি হয়তো ভাবতে পারো, এটা করলে বা ওটা করলে তাড়াতাড়ি চন্দ্রকে উদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু তাতে দেখা যাবে প্রতিপক্ষ সতর্ক হয়ে আমাদেরকেই শেষ করে ফেলবে। তোমার কোন পরামর্শ থাকলে আমাকে জানাবে। অবশ্যই চিরকুটের মাধ্যমে। নিজে থেকে কখনোই পরিকল্পনার অতিরিক্ত কিছু করতে যাবে না। তা না হলে আমরা সবাই বিপদে পড়বো, আর চন্দ্রকেও হয়তো চির দিনের জন্য আমরা হারাবো।

- আমার দারা সে রকম কিছু হবে না, তুই নিশ্চিত থাকতে পারিস।

সবাইকে উদ্দেশ্য করে রুদ্র আবার বললো- তোমাদের মুল কাজ হচ্ছে সজল পাগলকে অনুসরন করা।

তিন জন এক সাথেই বিস্ময়ে বলে উঠলো- সজল পাগল!

- হ্যা। তোমাদের টার্গেটই হচ্ছে সজল পাগল। তবে এই টার্গেট আক্রমনের জন্য নয়, বাচানোর জন্য। পাগলকে শুধু কৌশলে অনুসরন করবে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। তবে সজল পাগল যদি কখনো আক্রমনের সিকার হয় এবং যদি বুঝতে পারো তোমরা এগিয়ে না গেলে তাকে খুন করা হবে শুধু মাত্র তখনই তাকে বাচানোর জন্য যা করা দরকার তাই করবে। মনে রাখবে এটা তখনই করবে যখন বুঝতে পারবে তোমরা সাহায্য না করলে সে খুন হবে। আমি আবারও বলছি, যখন তার খুন হওয়ার সম্ভাবনা দেখবে কেবল মাত্র তখনই তোমরা এগিয়ে যাবে, তার আগে নয়। ছোটখাটো বিপদে অর্থাত জিবনের ঝুকি না থাকলে তোমরা কোন রকম সাহায্য করবে না। আশাকরি ছোটখাটো বিপদ থেকে বাচার কৌশল সজল পাগলের জানা আছে।

এবার আতিক বললো- কে এই সজল পাগল?

- বলছি। তবে সজল পাগলকে এখনো খুজে পাওয়া যায় নি। আজমল ভাই তার টিম নিয়ে ওকে খুজে বেড় করার চেষ্টা করছে। হয়তো খুব শিঘ্রই পেয়ে যাবে। সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে সজল পাগল চিলমারি বন্দরের কোথাও আছে। এবার শোনো প্লান। পুরো প্লানকে আমি মোট চারটে ভাগে ভাগ করেছি। আর একটা আছে অতিরিক্ত প্লান, সেটা আমি মারা গেলে কাজে লাগবে।

ফাহিম বললো- মারা যাওয়ার কথা বলছিস কেন?

- বাস্তবতা যখন আসবে তখন সেটা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় হয়তো থাকবে না ফাহিম ভাই। তাই আগে থেকেই প্লান করে রাখাই ভালো। তবে অতিরিক্ত প্লানটার হয়তো প্রয়োজন পড়বে না। ইনশাল্লাহ চারটা প্লানেই আমরা কালো বাদুরকে ধরে ফেলবো।

এরপর পরবর্তি আধা ঘন্টা রুদ্র প্লান-এ থেকে প্লান-ডি পর্যন্ত ব্যাখ্যা করলো। ওরা সবাই রুদ্ধশ্বাসে পুরো প্লান শুনলো। সব শেষে ব্যাখ্যা করলো প্লান-ই, যেটা রুদ্র মারা গেলে ওদেরকে করতে হবে। পুরো প্লান শুনে ঢাকার টিমের চেয়ে ওরা আরো বেশি উত্তেজিত হলো। সবার দেহের রক্ত যেনো ফুটন্ত পানির মতো টগবগ করে ফুটতে লাগলো।

রাত বাড়ছে। ওদের সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে আড়তে ফিরে এলো রুদ্র। ওরা বাড়ি চলে গেলো। রুদ্রকে আড়তে ঢুকতে দেখে আবুল বললো- কই ছিলি এতোক্ষন? আমি চিন্তায় অস্তির হয়ে গেছি।

- ফাহিম ভাইদের সাথে কথা বললাম।

- কোথায় ওনারা? চলে গেছেন নাকি?

- হ্যা।

- চল, চা খেয়ে আসি।

তাহের ব্যাপারি রেল ফেরিতে মাল তোলার কাজ তদারকিতে ব্যস্ত। ওরা ঘাটের পাশে একটা চায়ের দোকানে বসলো। ঘাটের এক দিকে রেল ফেরিতে রেলের বগি উঠানো হচ্ছে। কিছু বগিতে মাল লোড করা হচ্ছে। অন্য দিকে একটা নৌট্যাঙ্কার থেকে তেল আনলোড করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন তেলবাহী নৌযান ও নৌট্যাঙ্কার বালাসী ঘাটে নোঙর করে। এই ঘাটের মাধ্যমে সমগ্র উত্তরবঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। কুলি আর মজুরদের চিতকার চেচামেচিতে মুখরিত হয়ে আছে পুরো ঘাট এলাকা। চায়ের দোকানেও ভিষন ভিড়। কোন মতে চা খেয়ে ঘাট থেকে একটু দুরে সরে এলো ওরা। যমুনার তিরে সবুজ ঘাসের উপরে বসলো। আবুল বললো- চর তো অনেক ঘোরা হলো। অনেকের তালিকাও করলি। এদের ভিতরে কি কালো বাদুরকে পাওয়া যাবে?

- সম্ভাবনা আছে। আরো অনেক চর বাকি আছে। তালিকাটা বাড়বে।

আনমনা হয়ে গেলো রুদ্র। নদি থেকে ভেসে আসা তাজা বাতাস বইছে। সে বাতাস শরির হিম করে দিচ্ছে। কিন্তু রুদ্রের মনকে সে বাতাস স্পর্শই করতে পারছে না। ওর মনের হাহাকার দিন দিন শুধু বেড়েই চলছে। চন্দ্রের চিতকার বেজে চলছে সেখানে। চন্দ্র চিতকার করে বলছে, আমাকে বাচাও রুদ্র, বাচাও! মাঝে মাঝে মন থেকে সেই চিতকার কানেও বেজে ওঠে, যেন বাস্তব!

চলবে........

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
ফেসবুকে চন্দ্র উপন্যাসের পেজ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.