নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সরল পথের পথিক

আমি সরল পথের পথিক

জোবায়ের হোসেন

I have no comment .

জোবায়ের হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোযার ফাযায়েল ও মাসায়েল

৩০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪

রোযার ফাযায়েল

রমযান মাস রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। রমযান মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজ করুণায় এই মাসে রহমতকে অবারিত করে দেন। দয়াসুলভ বিষয়গুলো সহজ করে দেন, আর ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করে দেন তাঁর ফরমাবরদার ও অনুগত বান্দাদের জন্য। তাই তো রহমাতুললিল আলামীন, নাসেহুল আমীন-বিশ্বস্ত হিতাকাংখী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর উম্মতকে এই মাসে আল্লাহ তা’আলার সেই সব অনুগ্রহ অর্জন করতে রাহনুমায়ী করেছেন। তিনি আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করতে উৎসাহিত করেছেন রোযা রাখার মাধ্যমে, রাতে নফল নামায পড়ার মাধ্যমে, দান-সদকা, যিকির-আযকার, কুরআন তিলাওয়াতসহ আরো আ’মালে সালেহ, অর্থাৎ নেক আমালের মাধ্যমে।

রোযার প্রতি প্রেরণা দিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

عن أبي هريرة رضي الله عنه: عن النبي صلى الله عليه و سلم قال من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه ومن قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه

সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা:) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পরকালীন প্রতিদান কামনায় রমযানের রোযা রাখবে তার অতীত জীবনের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ: ১ম খন্ড ২৫৫ পৃ, মুসলি শরীফ)

দিনের বেলা রোযা রাখাকে ফরজ করে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:

হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর । যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। ( সূরা বাকারা, আয়াত:১৮৩)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: আল্লাহ তা’আলা বলেন রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব ।

( হাদীসে কুদসী , বুখারী শরীফ,১ম খন্ড, ২৫৪ পৃ) ।

আরও বর্ণিত হয়েছে:

للصائم فرحتان يفرحهما إذا أفطر فرح وإذا لقي ربه فرح بصومه রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের বিষয় রয়েছে।(একটি হল): যখন ইফতার করবে। (অপরটি হচ্ছে) রোযার প্রতিদান হিসেবে যখন তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ২৫৫ পৃ)

রমযানের রাতে ইবাদতের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে

من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের নিয়তে রমযানের রাতগুলোতে কিয়াম করবে (অর্থাৎ তারাবী পড়বে) তার অতীত গুনাহগুলো

মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাত শরীফ:১ম খন্ড, ১৭৩ পৃ: )।

রমযান মাসে দান সদকা করার ফযীলতও অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। রাসূলে কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: এই মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে ইহা তার গোনাহ মাফ হওয়ার ও (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্তি লাভের উপায় হবে। আর ঐ রোযাদারের সাওয়াব মোটেও কম হবে না। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের প্রত্যেকে তো এই সামর্থ রাখে না, যা দ্বারা সে রোযাদারকে ইফতার করাবে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: (এই সাওয়াব পেট ভরে খাওয়ানের উপর নির্ভর করে না বরং) এই সাওয়াব আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তিকে ও দান করবেন যে (নিজের সাধ্যানুসারে) রোযাদারকে এক চুমুক দুধ দিয়ে কিংবা একটি মাত্র খেজুর দিয়ে কিংবা এক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করাবে। যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে তৃপ্ত করাবে আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) থেকে এভাবে পান করাবেন যে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে আর পিপাসা লাগবে না। (মেশকাত শরীফ: ১৭৪)

এই মাসের যে কোন ইবাদতের ফযীলত অন্য যে কোন মাস অপেক্ষা অনেক বেশি। তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: এই মাসে যে ব্যক্তি নফল নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় হবে যে রমযান ছাড়া অন্য সময় একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করল। (মিশকাত শরীফ: ১৭৩পৃ)

সুতরাং প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানদের উচিত এই মাসে দান, সদকা, কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাযসহ বেশি বেশি ইবাদত করা। বিশেষত এই চারটি কাজ বেশি করা।

১. বেশি বেশি কালিমা পড়া। ২. এস্তেগফার বেশি বেশি করে পাঠ করা। ৩. জাহান্নাম থেকে মুক্তির ও ৪. জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশি বেশি দুআ করা।

রোযার বিধান ও মাসাঈল

মু’মিন মুসলমান প্রত্যেকের উপর রমযানের রোযা ফরয।

কুরআন হাদীসের সাথে সাথে ইজমা তথা উম্মতের সর্বসম্মত মত এবং কিয়াস তথা যুক্তির দ্বারাও রোযা ফরয হওয়াটা প্রমাণিত। অতএব যদি কোন ব্যক্তি রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ২য় খন্ড, ২০৯-২০১পৃ.)

রোযার পরিচয়

রোযার আরবী শব্দ হল সাওম ,যার আভিধানিক অর্থ হল -বিরত থাকা। আর রোযার নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে শরীয়তের ভাষায় রোযা বলা হয়।

( আদ্দুররুল মুখতার: ৩য় খন্ড, ৩৩০ পৃ:, আল আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৫২ পৃ:, আলমগীরী :১ম খন্ড, ১৯৪ পৃ:)

রোজা কোন ব্যক্তির উপর ফরজ

কোন ব্যক্তির উপর রোযা ‘ফরজ’ হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।

১. মুসলমান হওয়া, সুতরাং কাফেরের উপর রোযা ফরজ নয়।

২. বিবেকবান হওয়া, সুতরাং পাগলের উপর রোযা ফরজ নয়।

৩. সাবালেগ হওয়া, সুতরাং নাবালেগের উপর রোযা ফরজ নয়।

(আলমগীরী: ১ম খন্ড,১৯৫ পৃ:, ফাতওয়া শামী:৩ য় খন্ড, ৩৩১ পৃ:, আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৪৮ পৃ:)

রমজান মাসেই রোযা আদায় আবশ্যক হওয়ার শর্ত

যদি কোন ব্যক্তির মাঝে নিম্নোল্লিখিত দু’টি শর্ত পাওয়া যায় তাহলে রমজান মাসে রোযা রাখতে হবে, স্বেচ্ছায় তা বিলম্বিত করা যাবে না। ১. সুস্থ হওয়া। ২. মুকীম হওয়া।

( আলমগীরী : ১ম খন্ড,১৯৫ পৃ:, আলআলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৪৯ পৃ:)

হ্যাঁ কোন ব্যক্তি যদি অসুস্থ বা মুসাফির (শরয়ী ৪৮ মাইল দূরের সফরে যায়) হয় তাহলে সে রমজান মাসে রোযা না রেখে পরবর্তীতে সুস্থ বা বাড়িতে ফিরে কাযা করতে পারে।

রোযা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত

সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্থ পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বর্জন করার সাথে সাথে যদি নিন্মোক্ত শর্তগুলোও পালন করা হয় তাহলে রোযা বিশুদ্ধ হবে-অন্যথায় ঐ রোযা বিশুদ্ধ হবে না। পরবর্তীতে আবার কাযা করতে হবে।

১. রোযার নিয়্যাত করা।

২. মহিলাদের জন্য হায়েয-নেফাছ ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া ।

(আলমগীরী:১ম খন্ড,১৯৫পৃ:,ফাতওয়া শামী :৩য় খন্ড, ৩৩১ পৃ:,আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৪৯ পৃ:)

রোযার নিয়্যত

রোযা সহীহ হওয়ার জন্য নিয়্যত করা শর্ত, নিয়্যাত ব্যতিত রোযা বিশুদ্ধ হবে না। তবে নিয়্যত মুখে উচ্চারণ করা কিংবা আরবীতে বলা ফরজ বা জরুরি নয় । শুধু মনে মনে এতটুকু কথা থাকলেই যথেষ্ঠ হবে যে আমি রোযা রাখতেছি।

আলবাহরুর রায়েক:২য় খন্ড,৪৫২পৃ:, আলমগীরী : ১ম খন্ড,১৯৫পৃ:)

নিয়্যত করার পর পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম

শরীয়ত অনুযায়ী সুবহে সাদিক থেকে রোযা শুরু হয়। নিয়্যত করা থেকে নয়। সুতরাং নিয়্যত করার পরও সুবহে সাদিকের পূর্বে পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম করতে পারবে। (মুসলিম-৩৪৯)

তবে সুবহে সাদিক হওয়ার আশংকা থাকলে এসব না করাই উচিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.