![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
***************************************
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «عَجِبَ اللَّهُ مِنْ قَوْمٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ فِي السَّلاَسِلِ»
অনুবাদঃ হযরত আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিছু লোকের ব্যপারে আল্লাহ তা'আলা (সন্তুষ্টিসূলভ) বিষ্ময় প্রকাশ করেন যারা শেকলে বাঁধা অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী শরীফ, ৫ম অধ্যায়, হাদীস নং ২৮০৩)
হাদীসটির ব্যখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বরচিত বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ 'ফাতহুল ক্বাদীর'-এ লিখেনঃ উক্ত জান্নাতীরা দুনিয়ার ফাঁদে শিকলবদ্ধ ছিলো। অতপর তাদেরকে জোর করে টেনে হেদায়াত দেওয়া হয়েছিলো। ফলে তারা জান্নাতী হয়েছে। 'কিতাবুত তাফসীর'-এ সূরা আলু ইমরানের ১১০ নং আয়াতের ব্যখ্যায় আরো বিস্তারিত আসছে। যার সারসংক্ষেপ হলোঃ সূরা আলু ইমরানের ১১০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছেঃ "তোমরাই শ্রেষ্ট উম্মত। তোমাদেরকে বাহির করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের স্বার্থে।" এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে "শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতো তারাই, যারা মানুষকে দ্বীনের পথে আনতে প্রয়োজনবোধে গলায় শেকল লাগিয়ে টানে। অবশেষে সত্যতা অনুভব করে তারা ইসলামে প্রবেশ করে।"
ইবনে জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যা হলো, কিছু লোককে (দ্বীন শেখানোর জন্য) বন্দী করে ও আটক করে রাখা হয়। অবশেষে তারা ইসলামের সত্যতা অনুধাবন করে তা গ্রহণ করে নেয়। যার ফলশ্রতিতে তারা জান্নাতী হবে।
উক্ত হাদীসটির সমর্থনে আরো একটি মজাদার হাদীস আছে। হযরত আবু উমামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনন্দে মুখ চেপে হাসছিলেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন আনন্দদায়ক খবর আপনাকে হাসাচ্ছে? জবাবে তিনি বললেন, এমন কিছু ব্যক্তি আছে যাদেরকে শৃঙ্খলাবন্ধ করে টেনে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৪২৯, হাদীস নং ৯৭০৯, মুসনাদে ইবনে বাযযার ৭/২০৮, হাদীস নং- ২৭৮০)
আরো বহু রেওয়াতে সামান্য শাব্দিক তারতম্যের সাথে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আরো বিস্তারিতঃ http://goo.gl/rq5pHv
**************************************************
হাদীসটি দেখে সত্যই ভড়কে গেলাম। মনে পড়ে গেলো একটি কুৎসিত স্মৃতি। নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলাম এমন অজ্ঞতাসুলভ আচরণের জন্য। আসলে সত্যের বিরোধিতাকারীরা কত অজ্ঞই না হতে পারে তা আমার সাবেক সত্ত্বার সাথে না মিলালে কখনো বুঝতে পারতাম না!!! আর অজ্ঞ না হলে কি কেউ কখনো সত্যের সাথে আত্মঘাতী পাঞ্জা লড়ার বাতুলতা দেখাতে পারে?
যাহোক, সেদিনটি ছিলো ২০১০ সনের ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধের কোন একদিন। জীবনের প্রথম একটু লম্বা সময় নিয়ে তাবলীগে গিয়েছি। তখনও একজন তুখোর শিবিরকর্মী। সবেমাত্র শিবিরের ব্যপারে কিছুটা খটকা লাগতে শুরু করলো। ফাটল ধরতে লাগলো অসত্যের নোংরামী দিয়ে ধোলাইকৃত আমার পর্বতসম হুকুমাতী চেতনায়। তবুও শিবিরের খোঁজ-খবর ছাড়া মন ভরতো না। তখনও 'সার্বভৌমত্ব' শব্দটি শুনলে দেহজুড়ে ঝাকনী দিয়ে উঠতো। বহুকষ্টে মোবাইলটা অফ করে বের হয়েছি। মাথাভরা শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। হাজারো প্রশ্নবানে জর্জরিত ক্ষুদ্র মুণ্ডুটি বিন্দুমাত্র বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছে না। একের পর এক প্রশ্ন তৈরীই করে যাচ্ছে। তবুও আমি নিশ্চুপ, নির্বিকার। যেন কিছুই বুঝি না। কেননা, আমার নিয়ত ছিলো, আমি কিছু শিখতে বের হচ্ছি। যদি দ্বীনের কিছু পাই তাহলেতো আলহামদু লিল্লাহ। আর যদি গিয়ে দেখি, শুধু জাল হাদীস আর শির্ক-বিদাত ছাড়া কিছুই নাই তবুও তো প্রতিকুল পরিবেশে থাকার অভ্যাসটা গড়ে ওঠবে। যা একজন সৈনিকের জন্য অত্যন্ত জরূরী। আগামীর অনিবার্য যুদ্ধে আমাদেরকেই তো নেতৃত্ব দিতে হবে সত্যের পক্ষে অসত্যের মোকাবেলায়। সব কিছু ভেবে চিন্তে অবশেষে বেরিয়ে পড়লাম। চলছি আর আল্লাহকে ডাকছি। আবার আল্লাহর দিকে আল্লাহভোলা বান্দাকেও ডাকছি। এভাবে দিন পার হতে লাগলো।
একদিন বা'দ মাগরীব বয়ানের শেষে রুহুল আমীন স্যার তাশকীল শুরু করলেন। খুব জমজমাট তাশকীল হচ্ছিলো। একপর্যায়ে তিনি বলে ফেললেন, "ভাইরা! আপনারা হয়তো রাগ হইতাছেন যে, তাবলীগের ভাইয়েরা আপনাদেরকে জোর কইরা আল্লাহর রাস্তায় নিয়া যাইতাছে। কিন্তু কেয়ামতের দিন যখন ফেরেশতারা আপনাগোরে শেগল দিয়া টাইনা জান্নাতে নিয়া যাইবো সেদিন টের পাইবেন, তাবলীগীরা কতই না উপকার করছিলো আপনাদের। এমন পরোপকারী এবং হীতাকাঙ্খী আপনার জীবনে কার কেউ নেই। যারা আপনাদেকে জাহান্নামের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে টাইনা জোর কইরা জান্নাতের রাস্তায় তুইল্যা দিতাছে। কী বলেন ভাই? আল্লাহর রাস্তায় যাওন লাগবো নি?"
রুহুল আমীন যশোরী স্যারের এমন সাদামাঠা কথাগুলোর নূরই আলাদা। দেখা গেলো প্রায় শতভাগ শ্রোতা আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে নিজেদেরকে শোধরানোর জন্য নাম লিখিয়েছে। পুরো বয়ান শুনে আমারো অন্তর বিগলিত। কিন্তু শিকল দিয়ে টেনে জান্নাতে নেওয়ার বিষয়ে মনে মনে আপত্তি উঠলো। পরদিন মুযাকারার সময় কুমিল্লা কিংবা চাঁদপুরের এক ভাই ঘোর আপত্তি জানালো। তিনি বুকের উপর হাত বেঁধে নামাজ পড়েন। কুরআন-হাদীসের বাহিরে কোন কথা মানেন না, শুনতেও চান না। নিজে নিজেই তাশকীল হয়ে আল্লাহর রাস্তায় এসেছেন। তার চালচলন আমার খুব ভালো লাগতো। ধীরে ধীরে খুব 'ভাব' গড়ে উঠেছিলো বেচারার সাথে। তাই একই সূরে আমিও কিছু 'ছাড়লাম' এবং শান্ত মুখে কিছু 'ঝাড়লাম'। (ইশশ! যদি এমনটি না করতাম!!!) আমীর সাহেবসহ সবাই খুব গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিলেন। শ্রদ্ধেয় রুহুল আমীন স্যারও সতর্ক হয়ে গেলেন। এরপর অনেক ভাইকে এই হাদীসটি বলতে শুনেছি এবং সাথে সাথে থামিয়ে দিয়েছি।
কিন্তু
আজ অনলাইনে একটু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো। নজর ফিরাতে পারছিলাম না। এ কী দেখছি আমি? রুহুল আমীন স্যার কি তাহলে সেদিন হাদীসের আলোকেই কথাগুলো বলছিলেন? আর আমি সালাফী ভাইদের মত 'সহীহ হাদীস'র অজুহাতে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলাম? ছি, ছি, ছি............ হাদীসটি বুখারী শরীফেই আছে। সালাফীদের মত একি করলাম আমি?
হায় আল্লাহ! সকল সত্যবিরোধীকে তুমি সত্যের সন্ধান দাও এবং সত্যের পথে নিষ্ঠার সাথে চলার তাউফীক্ব দান করো। আমীন
©somewhere in net ltd.