নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সহজ বাংলাভাষী মানুষ। একজন গর্বিত বাঙ্গালী।

জাহিদুজ্জামান রাব্বি

জীবন কাষ্ঠমঞ্চের এক আনাড়ি অভিনেতা

জাহিদুজ্জামান রাব্বি › বিস্তারিত পোস্টঃ

\' আমাদের ফেরীওয়ালা\'রা \'

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:৩৪

ছোট বেলায় এক ফেরীওয়ালা আসতো,
কাঁধে থাকতো একটা বাঁশের ফালি।
আর বাঁশের দুই মাথায় দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকতো চারকোণা বড় দুইটা কাঁচের বোয়েম। বোয়েম ভর্তি থাকতো গোলাপী রঙের হাওয়ায় মিঠার বল।
১ টাকা দিয়ে ছোট্ট সাদা একটা লটারীর কাগজ কেনা যেতো। সেই কাগজ জিহবার ওপর রাখলেই ভেসে উঠতো সংখ্যা।
যেই সংখ্যা উঠতো সেই কয়টা বল পাওয়া যেতো। খুব অবাক হতাম ঐ কাগজ দেখে।
বেশিরভাগ সময়ই ২ ভেসে উঠতো। তবে যেদিন ৩ বা ৫ ভেসে উঠতো, সেদিন খুশির অন্ত থাকতো না।

আরেকজন ফেরীওয়ালা আসতো,
সে আসতো মাথায় একটা বড় এক ঝুড়ি নিয়ে।
ভাঙ্গা কাঁচ, পুরোনো টিন এগুলো দিলে সে তাঁর ঝুড়ির ভেতরে থাকা বিশাল থালা বের করতো। থালার ওপর থাকা লাল কাপড় সরিয়ে, একটা লোহার পাত আর হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মেরে মেরে ভেঙ্গে দিত সেই জিনিস।
জিনিসটা ছিলো, “দেলবাহার”।(এতোদিন বাদেও নামটা মনে আছে!! ভাবতেই খুশি লাগছে)
অনেকে আবার এটাকে ‘কটকটি’ও বলতো। তবে এর আসল নাম ছিলো “দেলবাহার”।
মনে আছে, এই জিনিস খাওয়ার জন্যে আমাদের শোকেসের সামনের কাঁচ ভেঙ্গেছিলাম।

আরেক ফেরীওয়ালা আসতো ভ্যান নিয়ে,
সে নিতো সব ধরনের পুরোনো জিনিস।
সব ধরনের ভাঙ্গারী, পুরনো জামা-কাপড় সবই নিতো সে।
তাঁর ভ্যানের একপাশে থাকতো তাঁর ভাঙ্গারী, পুরোনো কাপড়-চোপড়।
আরেকপাশে থাকতো পেঁয়াজের বস্তা, সাথে আরেকটা বড় কাগজের ঠোঙা।
কাগজের ঠোঙায় থাকতো ছোট ছোট সাইজের সন্দেশ।
মা-চাচিরা নিতো পেঁয়াজ আর আমরা নিলে নিতাম সন্দেশ।
দুই টাকায় যে পরিমাণ সন্দেশ পেতাম, তা এখন ১০/১৫ টাকায়ও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। আর স্বাদ? তা ছিলো অমৃত।

অনেকদিন পর পর একজন ফেরীওয়ালা আসতো এলাকায়,
তাঁর হাতে থাকতো শুধু একটা মাঝারি সাইজের বাঁশ।
বাঁশের উপরের মাথাটা থাকতো একটা কাপড় আর পলিথিন দিয়ে মোড়া।
বাঁশের মাথায় আসলে থাকতো দুই তিন রঙের মিঠাই স্তূপ।
১ টাকা দিলে যেকোনো এক রঙের মিঠাই টেনে টেনে লম্বা করে তা পেঁচিয়ে চেন বানিয়ে দিতো। চাইলে আংটিও বানিয়ে দিতো।
২ টাকা দিলে দুই রঙের মিঠাই দিয়ে চেন বানিয়ে দিতো, সাথে একটা লকেটও বানিয়ে দিতো। আর ৫ টাকা দিলে বানিয়ে দিতো মোটরসাইকেল।
তাঁর ঐ কারুকার্য দেখার মধ্যেও ছিলো শান্তি। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতাম তাঁর ঐ হাতের কারসাজি।
আর যখন বানিয়ে হাতে দিতো, আহ!! খুশিতে গদগদ অবস্থা হতো।
.
আফসোস!!
এখন আর এনাদের কাউকেই দেখি না।
আমার শহরের বাচ্চারা এখন আর এগুলো খায় না।
আমার শহরের বাচ্চারা এনাদের চেনেও না।
তাই, তারাও হয়তো অন্য কোথাও চলে গেছে, হয়তো তাঁরা তাঁদের পেশা-ই বদলে ফেলেছে।

এখনো কোনো গ্রামে গেলে বা মেলায় গেলে আমি তাঁদের খুঁজি।
আমি আমার শৈশবকে খুঁজে ফিরি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.