![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রূপার আত্মহত্যার খবর শুনে ফেসবুক বন্ধু নীলা একেবারে নীল হয়ে গেছে। নীলার কষ্ট দেখেই আমার এ লেখা। আত্মহত্যাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, আমি আত্মহত্যার একেবারে কাছ দিয়ে ঘুরে এসেছি। আত্মহত্যা স্বাদটুকু চেটে দেখা শুধু বাকি বয়েছে। আত্মহত্যা নিজের কষ্ট লাগবের সহজ রাস্তা বটে কিন্তু স্থায়ী কষ্টকে আপন করে নেয়ার রাস্তাও বটে।
আমার মনে হয় গ্রামের এ দৃশ্য সবারই চোখে পড়েছে, শিয়াল বা বেজি মারার দৃশ্য, সবার হাতে লাঠি থাকে, সবাই চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, যার যত ইচ্ছা মারো, প্রথমে সে প্রতিহত করতে চেষ্টা করে সব শেষে আঘাতে আঘাতে তার মৃত্যু হয়। শিয়াল বা বেজি কথা কেউ ভেবেও দেখে না, দেখে নিজের সবার্থ। আমরাও কোন কারনে এমন সামাজিক পরিস্থিতির স্বীকার হই, সব আপনজন এক হয়ে যায় আপনার বিরুদ্ধে। আপনার কোন আপনজন বলতে কেউ থাকে না, এ পৃথিবী হয় আপনার কাছে একেবারে নিঃসঙ্গ। এই যৌথ প্রত্যাখ্যান আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, আপনার চিন্তা করা উচিত আপনি মরলে কার লাভ?? ভেবে দেখবেন আপনার মৃত্যুর পর আপনার মা হয়তো কান্না করবে বাকিরা করবে না কারন তখন তারা ব্যস্ত হয়ে পড়বে মামলা যেন না হয়, নিজেরা যেন মামলার হাত থেকে মুক্তি পায়। হাসপাতালে natural death হিসাবে মৃত্যু সনদ নিতে চেষ্টা করবে আর যদি সেটা না পারে তাইলে দৌড় দিবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে, যেন ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দিয়ে দেয়া হয়, এটাকে অপমৃত্যু হিসাবে নথিভুক্ত করাবে। আপনার মৃত্যুতে তাদের শোক করার সময় কোথায়!!!! আর ততক্ষনে মায়ের কান্নাও থেমে যাবে কারন মা তার বেঁচে থাকা ছেলেদের স্বার্থের চিন্তা করবে। তাইলে আপনার মৃত্যু্তে আপনার কি লাভ??? আপনার মৃত্যুতে সব চেয়ে বেশি লাভ হয়, আপনার আপনজনদের। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে সকল আপনজন সামাজিক অবস্থান/মর্যাদা রক্ষার কারনে আপনার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিল তারা কখনই আপনার আপন ছিল না, আপন না। আপনার মৃত্যুতে যেহেতু তাদের কিছু আসে যায় না বরং ঝামেলা মুক্ত হয় তখন ভাবতে হবে আপনার জীবন দিয়ে তাদের এ উপকারটুকু আপনি করবেন কিনা?? রুপার হয়তো সেটুকু চিন্তা করার সময় ছিল না, কারন তার মাঝে ছিল অন্য কার হৃদস্পন্দন। তবে প্রান দিয়ে দেয়ার পুর্বে কিছুটা চিন্তা করা উচিত ছিল রুপার, মৃত্যু ছাড়াও যে আজ পথ তৈরি হয়েছে, তাকে আপনজন আর প্রিয়জন দু গ্রুপের বিরুদ্ধেই লড়া উচিত ছিল। রুপার মৃত্যু তার আপনজনদের কে কোন মুক্তি দিতে পারেনি কারন কলঙ্ক তিলক তাদের কপালে লেগে গেছে, যা চাইলেই আর মুছা যাবে না। আর তার প্রিয়জন সে হয়তো আজ মুক্তি পেয়ে গেছে, কিন্তু সে যে মানসিকভাবে ভাল নেই সে আমি বলতে পারি, নিজের আদালত পৃথিবীর শ্রেষ্ট আদালত। কলঙ্ক তিলক যখন তার আপনজনদের কপালে লাগলই সুতরাং তার বেঁচে থাকাটাই ছিল সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত, বেঁচে থেকে সে প্রতিবাদ করত, আমি হলফ করে বলতে পারি প্রিয়জন আর আপনজন ছাড়াও এ পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যেত যারা তখন রূপার পাশে দাড়াতেন। তারা রুপার সাথে লড়তেন। হয়ত রূপা ঠিকে যেতেন। একটা উদাহরণ দেই রূপার মত নিজের মাঝে প্রিয় জনের সন্তান ধারণ করেন এক নারী, যার বয়স রূপার মতই, কিন্তু সে ভাগ্যবতী যে সে তার পাশে লড়ার মত সাহস দেয়া মানুষ পেয়েছিলেন, তিনি প্রিয়জনকে তার সন্তানের পরিচয় বহন করতে বললেন যথারীতি প্রিয়জন প্রত্যাখ্যান করলেন, তারপর তিনি আদালতে গেলেন মামলা চলল ইতিমধ্যে তার সন্তানের আগমন ঘটল, দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ওই নারী মামলায় হারলেন (টাকা ওয়ালাদের সাথে সাধারণতই মামলা জেতা কঠিন), কিন্তু বেঁচে গেল দুটি প্রাণ, সবচেয়ে মজার বিষয় তিনি তার প্রতিবাদ বন্ধ করেন নি, যেহেতু প্রিয়জনের বিরুদ্ধে তার আর করবার কিছু রইলই না এখন তিনি তার সে সন্তান কে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান যাতে করে তার পিতৃপরিচয় প্রতিষ্টিত হয়। অর্থাৎ প্রতিবাদ বহমান। আমার খুব মনে পড়ে রুদ্রের সে কথা “ভুল মানুষের কাছে নত জানো নই”। তিনি নত জানো হন নি।
আপনজনদের কে খুব করে বলব হুট করে আপনারা যে জোট হয়ে যান তার আগে একটিবার ভাবুন, যে সদস্যের বিরুদ্ধে জোট হলেন তার কি হবে, আপনারা তাকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করছেন।
প্রিয়জনদের কে বলব আপনার আদালতে আপনি অপরাধী, সে অপরাধবোধ আপনাকে গিলে খাবে, তার চেয়ে আপনার প্রিয়জনকে বাঁচিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন আপনি কতটা মহান। নজরুল বলেছেন, যুগের ধর্ম এই, অন্যেরে করিলে পীড়্ সে পীড়া, পীড়া দেবে তোমাকেই।
আর রূপাদের বলব জীবন বিসর্জনের মত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভাবুন, তা আপনার পরকালকে শেষ করে দিবে, তার চেয়ে বরং প্রতিবাদ করুন, লড়াই করুন হোক সেটা প্রিয়জন কিংবা আপনজনদের বিরুদ্ধে।
প্রতিবাদ আর লড়াই করার মত দৃড় মানসিকতাই পারে আত্মহত্যার মত পরিস্থিতি থেকে কাউকে রক্ষা করতে। তাই প্রতিবাদী হতেই হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২৯
প্রামানিক বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ