নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিরপেক্ষ নই, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে।

রাফা

ভালবাসি জন্মভুমি বাংলাদেশ ।অসহ্য মনে হয় যে কোন অন্যায়-কে।অসততার সাথে আপোষ নয় কখনই।গালি সহ্য করার মানসিকতা শুণ্যের কোঠায়।রাজাকার,আলবদর ,আল সামস মোট কথা বাংলাদেশের বিরোধী যে কোন শক্তিকে প্রচন্ড রকম ঘৃণা করি। তার চাইতে বেশি ঘৃণা করি নব্য ছাগিয়তাবাদিদের। যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় যুদ্ধাপরাধীদের ।

রাফা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি থাকতে পারেনা।শুনুন বীর শহীদদের সন্তানদের মুখেই।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০১

১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বর্তমান বেশভুষা ও চেহারা দেখে বর্তমান

প্রজন্ম বিভ্রান্ত হোতেই পারে।এতে আমি অবাক হই না।সফেদ দাড়ি,গোল টুপি আর আলখেল্লা চরিয়ে তারা ধর্মের আড়াল নিতে চাইছে।ভুলে গেলে চলবেনা বিচারটা হোচ্ছে ৪২ বছর পুর্বে করা অপরাধের।তখন আজকের এই সৌম্য নুরানি চাহারার তুর্কিরা ছিলো টগবগে তরুন,যুবক আবার কেউবা একেবারেই কিশোর।প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ছিলো কুখ্যাত এই খুনি চক্র।কাজেই তাদের অপরাধের পরিমাপ করতে গেলে ফিরে যেতে হবে্ ৭১-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বরে।



আজ আমি চেস্টা করবো শহীদ পরিবারের সদস্য , তাদের কিছু কস্টের সৃতিকথা দিয়ে উপলব্দি করার জন্য ৭১-এর ভয়াবহতা।তাদের জবানিতেই শুনুন তাদের কিছু কথা।



শহীদ প্রকৌশলী ফজলুর রহমানের সন্তান ।চ্যানেল আই-এর সিনিয়ার নিউজ প্রেজেন্টার সাইদুর রহমান।আমার পিতা ৭১সালে সৈয়দপুর রেলওয়ের ম্যাকানিকেল ইন্জিনিয়ার ছিলেন।৪২ বছর পুর্বে ১৫ই এপ্রিল,বাংলা ১লা বৈশাখ যা ঘটেছিলো।বাবার অপরাধ, তিনি ছিলেন প্রচন্ড রকম স্বাধীনতাকামি একজন মানুষ।তিনি চুড়ান্ত দোষের যে কাজটি করেছিলেন।এপ্রিলের ১ম সপ্তাহে রেলওয়ের কলোনিতে মানচিত্র খচিত প্রথম পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন।ইলেকট্রিক লাইনে যে আর্থিং এর জন্য তারটি ব্যাবহার করা হয়, সেটাতেই বেধে দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা।এপ্রিলের ১৫ তারিখে পাকিস্তানি খানসেনা ও বিহারীরা আমাদের বাড়িতে অপারেশন চালায়।বাবা তখন দোতালায় চাসতের নামাজ পড়ছিলেন, সময়:; আনুমানিক ১০টা/সাড়ে ১০টা।তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবাইকে নিচের তলায় গিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকতে বলেন।আমাদের ৪ ভাই এবং বোনকে নিয়ে মা খাটের নিচে চলে আসার পর বাবা একাই দরজায় পিঠ দিয়ে ওদের ঠেকানোর চেস্টা করেন।পুরোনো দিনের ভারি মজবুত দরজা ওরা সাবল দিয়ে ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে।বাবা হতচকিত হোয়ে দৌড়ে পালাতে গেলে একজন বিহারী ছুড়ি দিয়ে পেটের কাছে বাবাকে স্টেপ করে এবং তিনি সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন।মা এই দৃশ্য দেখে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসলে পাকিস্তানি খানসেনা মাকে বেয়নেট দিয়ে চার্জ করে এবং টেনে হিচরে বারান্দায় নিয়ে যায় ;যা আমি খাটের নিচ থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম।আমার খুব অবাক লাগে যে আমি তখন কোন চিৎকার করিনি।আমার মা মৃত্যুর পুর্বে তার জিবনের বিনিময়ে আমাদের জিবন ভিক্ষা চাইছিলেন খুব অনুনয় বিনয় করে।যখন এই নারকিয় হত্যাকান্ড চালানো হয় তখন বঙ্গবন্ধু এবং জয়বাংলা শ্লোগাণকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিলো ঘাতকরা। টেনে হিচরে বাগানে নিয়ে গর্ত করে জিবন্ত পুতে ফেলে মাকে ।যা আমি পরে ,পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে শুনেছিলাম।মাকে যখন মাটি চাপা দেওয়া হয় তখণও নাকি মায়ের প্রানস্পন্দন ছিলো।আমার বড় ভাই আড়াই বছরের ছোট বোনকে জড়িয়ে রেখেছিলো নিজের দেহের সাথে ।মার আক্রান্ত হওয়া দেখে বড় ভাই ছোট বোনকে খাটের নিচে রেখে বেরিয়ে আসলে, আক্রান্ত হয় এবং আহত অবস্থায় পড়ে থাকে।তাকে আঘাত করা হয় তরোয়াল দিয়ে।এরপর তারা আমার বাকি দু'ভাইকে টেনে হিচরে বের করে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে চলে যায়।আমি ধারনা করেছিলাম সবাইকে মনে হয় মেরে ফেলেছে।এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও ছোট বোন এবং আমি কোন চিৎকার করিনি।



সেদিন সৈয়দপুরে অসংখ্য বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়েছিলো।হত্যার ভয়াবহতা চাপা দিতে স্থানিয় প্রশাসন কারফিউ জারি করে সেদিন।নরপিশাচরা চলে যাওয়ার সময় আমার বুকে লাথি মেরে বলে "সব মর গিয়া"।ঘাতকরা চলে যাওয়ার পর সবাইকে ডাকতে থাকি।তখন আহত ৩ ভাই আওয়াজ দেয় তারা বেচে আছে।আমি তখন একজন ক্লাস সিক্সের ছাত্র মাত্র।এটুকু বয়সেই বাসার কাছের সৈয়দপুর রেলওয়ের হাসপাতালে ভাইদেরকে ভর্তি করি।তারপর ছোট বোনকে কোলে নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরতে থাকি ।সন্ধা পর্যন্ত কেউ আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি, সেদিন প্রাণের ভয়ে।অবশেষে ১জন ডাক্তার আমাদের ভাই-বোনকে তার বাসায় আশ্রয় দেয় ।আমরা ৩দিন পর্যন্ত জানতাম আমার ৩ ভাই হাসপাতালে জীবিত আছে।১৮ই এপ্রিল জানতে পারি আমাদের ভাইদেরকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।তখন মনে করেছিলাম আমার ভাইয়েরা মনে হয় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে।পরে জানতে পারি আমাদের দু'ভাই-বোন তাদের সাথে দেখা করতে এসেছি, এই মিথ্যা কথা বলে ওদেরকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে এসে হাসপাতালের পিছনে গর্তের মধ্যে জবাই করে।হত্যা করার পর ওখানেই নাকি মাটি চাপা দিয়ে দেয় ওদেরকে।এই হোচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধের আমাদের পারিবারিক ইতিহাস।১৯৭৫-এর পর এই ইতিহাসকে পাল্টে দিতে চেয়েছিলো ঘাতকের দল ।যা আজো অব্যাহত আছে।আমি মুক্তিযুদ্ধের জ্বলন্ত সাক্ষি, স্বজনহারা ব্যাথা বুকে নিয়ে বেচে আছি বাংলার মাটিতে।

আজ আমি শুধু ১টা কথা বলতে চাই যখন বিচার চলছে যুদ্ধাপরাধীদের।৯ মাসে তারা যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো তার বিচার করতে কি ৯ মাসের বেশি সময় নেওয়া উচিত?৫৬ হাজার বর্গ মাইলের বাংলার কিছুই জানতোনা- ১২ হাজার মাইল দুর থেকে আসা নর-ঘাতকরা।রাস্তাঘাট ছিলো আরো দুর্গম, এই মাটির কোন কিছুই ছিলোনা তাদের জানা শোনা।হায়েনা নরপিশাচদের যারা সহায়তা করেছিলো তারা কি মেনেছিলো কোন আন্তর্জাতিক আইন!৯ দিনে তাদের বিচার করে মাটি চাপা দে ওয়া হোক বাংলার কুলাঙ্গারদের।



শহীদ শ্রদ্ধেয় সলিমুল্লার সন্তান।রবিন্দ্র সংগীত শিল্পী জনাব সাদী মোহাম্মদ।

আমার বাবার কথা বলতে গেলে আমার গলা বুজে আসে আমি বাকরুদ্ধ হোয়ে যাই।২৬শে মার্চ দুপুর বেলা বাবা বাসায় আসলেন ।আমরা ৬ ভাই ৪ বোন দশজন।আমাদের বাড়িতে যখন আগুন দেওয়া হয় তখন আমরা অবরুদ্ধ হোয়ে পরি বাড়ির ভেতরে।চারিদিকে শুধু আগুনের লেলিহান শিখা।আমরা সবাই দৌড়ে গিয়ে ৪ তলায় আশ্রয় নেই।আগুন যখন একটু স্তিমিত হোয়ে আসছিলো তখন জিবন বাচাতে আমরা আশে পাশের বাড়িতে এবং উঠানে লাফিয়ে পরি।আমার মায়ের পা ভেঙ্গে যায় লাফিয়ে পরাতে।আমার বড় বোনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম আমি, এক পর্যায়ে দেখলাম আমার বোন কখন যেনো বিচ্ছিন্ন হোয়ে গেছে আমার কাছ থেকে।আমি আর বাবা পাশের বাড়ির ১টি বাথরুমে গিয়ে লুকালাম।আমাদের বাসার উল্টোদিকে এক পাকিস্তানি এয়ারফোর্সের অফিসার থাকতো তার নাম জানিনা।সেই লোকটি একটি বিশাল ছুড়ি নিয়ে বাথরুমে ঢুকেই বাবাকে ছুড়ি মারলো।ছুড়িটা এত গভিরে প্রবেশ করেছিলো যে টেনে বের করতে পারছিলোনা।এক পর্যায়ে ছুড়িটা টেনে বের করে যখন আমার দিকে তাকালো তখন মনে করলাম এবার আমার পালা।কিন্তু লোকটি আমাকে কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।আমি বাবাকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসতেই দেখলাম চারিদিকে অসংখ্য মানুষ আর আর্মির গাড়ি।বিহারীরা যখন আমার আর বাবার দিকে ছুটে আসছিলো তখন বাবা আমাকে বললেন আমিতো শেষই তুই নিজের জিবন বাচা।তখন খুব স্বার্থপরের মত নিজের জিবন বাচাতে যখন ছুটছিলাম, তখন দেখলাম আমার এক চাচা আমার ছোট দুই জমজ বোনকে নিয়ে ছুটছেন।কেউ তাকে বল্লম দিয়ে পেছন থেকে আঘাত করলে সে আমার বোনদেরকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়।আরেক দিকে দেখলাম আমার এক খালত ভাইকে রাস্তায় ফেলে পশুর মত জবাই করছে।আমাদের বাসায় সেদিন ২৫ জনকে হত্যা করা হোয়েছিলো।

এরপর কান্নায় আর কিছু বলতে পারেননা সাদী মোহাম্মদ।তারা যা হারিয়েছে সে কথা বলতে ভুলে যেতে উপদেশ দেওয়া হয় আজ।ছোট ভাই শিবলি মোহাম্মদ মনে করতে পারেন না কোন স্বৃতি।আমরা কি তাদের আর্তনাদ শুনতে পাই?যদি শুনতে পাই তাহোলেতো বিচার নিয়ে কোন সংসয় থাকার কথা নয় আমাদের।



শহীদ আলতাফ মাহমুদের কণ্যা ,শাওন মাহমুদ।আমার বাবা ১৯৭১ সালের ৩০শে আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হয়।ঢাকায় যে ক্র‌্যাক-প্ল্যাটুন অপারেশন চালায় তাদের সাথে জড়িত ছিলো আমার পিতা।তখনকার হোটেল ইন্টারকন আর বর্তমান শেরাটনে একটি অপারেশন শেষ হওয়ার পর দুটি ট্রান্ক ভর্তি গোলা-বারুদ আমার বাবার কাছে রেখে যায় ক্র‌্যাক প্ল্যাটুনের সদস্যরা।এই ক্র‌্যাক প্ল্যটুনের ১জন সদস্য ধরা পড়ে।এবং নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার কাছে রাখা গোলা-বারুদের কথা বলে দেয়।

৩০শে আগস্ট ভোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমার বাবা ,৪ মামা ও আশে পাশের আরো লোকজন সহ মোট ১৭ জনকে ধরে নিয়ে যায়।বাবাকে বেয়নেট চার্জ করে, দড়ি দিয়ে গোলা-বারুদ ভর্তি ট্রান্ক দু'টি একা বহন করে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাবা বেচে ছিলো।বাবার সাথে আরো যারা বন্দী ছিলো।শহীদ রুমি,বদি,হাফিজ ও আজাদ সহ আরো অনেকেই।এক পর্যায়ে মামাদের এবং আশে পাশের অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হয়।কিন্তু বাবাকে আর খুজে পাইনি এরপর।আমি জানিনা আমার বাবার মৃত্যু দিবস।শুধু জানি বাবা বাংলাদেশকে ১টি গান দিয়ে গেছেন।নিজের জিবন দিয়ে আমাকে দিয়ে গেছেন পুরো বাংলাদেশটা।আমি ৬৮ হাজার গ্রামের বাংলাদেশে বাবাকে খুজে ফিরি।যতদিন বেচে থাকবো বাবাকে খুজবো এই বাংলায়।আজকের প্রজন্ম অনেক কিছুই জানেনা ।তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ১৯৮২ সালে সরকার প্রদত্ত বাড়ি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করে সাত্তারের সরকার।সেদিন কৃষ্ঞচুড়া গাছের নিচে দাড়িয়ে ভাবছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশে কোথায় কাটবে আমার আজকের রা্ত?তখনি ভেবে নিয়েছিলাম কারো কাছে কিছু চাইবোনা।আপনাদের ভালোবাসায় আমি আজকের শাওন মাহমুদ আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।



এখন আমার প্রশ্ন কোন অধিকারে আন্তর্জাতিক আইনে বিচার চায় যুদ্ধাপরাধীরা? ৯ মাসে যারা হত্যা করেছে ৩০ লক্ষ ,তাদের বিচারের জন্য কেনো ৯ মাসই যথেস্ট নয়!একটি সরকারের পুরো ৫ বছরেও কেনো শেষ হয়না এই বিচার?



আমি রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ দেখে যেতে চাই।



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৫

চলতি নিয়ম বলেছেন: দিন বদলাইছে না? ভাই।
দিন বদলাই গেছে, সেই দিন আর নাই।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭

চলতি নিয়ম বলেছেন: কি রাফা ভাই কৈছিলাম না দিন বদলাইছে =p~ =p~

ভালো থাকবেন........

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২০

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: মাসে যারা হত্যা করেছে ৩০ লক্ষ ,তাদের বিচারের জন্য কেনো ৯ মাসই যথেস্ট নয়!একটি সরকারের পুরো ৫ বছরেও কেনো শেষ হয়না এই বিচার?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.