নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি কেমন করে গান করো হে গুনী, আমি অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি ।।

ঠাকুরমাহমুদ

sometimes blue sometimes white sometimes black even red, even golden ! yes dear - its me - i am sky ! color your life, than your life will be colorful

ঠাকুরমাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দীর্ঘশ্বাস

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৩৮



কনকনে হাড় কাঁপানো জার আর ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন রাত। ঘরের টিনের চালে টুপটুপ করে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে সারা রাত। আয়েশা কুণ্ডলী পাকিয়ে তাঁর বাবার বুকের সাথে লেগে ছোট্ট ছোট্ট দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকে। আয়েশা মনে করে পৃথিবীতে সে একমাত্র একজন আর তাঁর বাবাও পৃথিবীতে একজনই। ছোট্ট আয়েশার ছোট্ট পৃথিবীতে একমাত্র বাবার একমাত্র মেয়ে! বাবার কাছে তাঁর শত সহস্র বায়না আর বায়না। বাজান আমার জন্য লজেস আনিও। বাজান আমার জন্য চুড়ি আনিও। বাজান আমার জন্য আলতা আনিও।

আয়েশার বাবা মোস্তফা সকালে গঞ্জের বাজারের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পুকুর পাড় ধরে ফসলি জমির আইল দিয়ে যখন হেটে যান, আয়েশা পুকুর পাড়ে ততোক্ষণ দাড়িয়ে থাকে যতোক্ষণ তাঁর বাবাকে দেখা যায়! পুকুর পাড়ে আয়েশা তাঁর ছোট্ট ছোট্ট হাত উড়িয়ে বাবাকে ডাক দেয় “বা - জা - ন”। সন্ধ্যায় যখন মোস্তফা বাড়ি ফেরেন পুকুরে গোসলের সময় কেরোসিনের কুপি হাতে আয়েশা দাড়িয়ে থাকে, ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে বাবার পিঠে ৫৭০ সাবান ঘষে দেয়। সারা দিনের গল্প করে। বাজান, আজকে ভুলু ঘেউ করে ফকির বিডিরে দৌড়ানি দিছে। মুখে হাত চাপা দিয়ে আয়েশা হাসে। পুকুর ঘাটে কেউ নেই তারপরও বাপে ঝিয়ে কানে কানে ফিস ফিস করে কথা কয়, গোপন কথা! - পাছে কেউ আবার শোনে! বাজান, দাদীজান আম্মারে নিয়া এত্তোগুলান মোয়া বানাইছে, সব চাঙ্গে উঠায়ে রাখছে। দাদাজান সকালে চা খাইছে, আমারেও চা দিছে। বাজান, আমিতো মুড়ি দিয়া চা খাই। আয়েশার বয়স পাঁচ। সময় ডিসেম্বর, ১৯৭০।

ভৈরব বাজারে মোস্তফার কেরোসিন তৈলের দোকান। ১৯৭১ মার্চ মাস থেকেই নদী পথে গানবোট নিয়ে বাজারে বাজারে পাক হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে সহস্র সহস্র নিরপরাধ নিরহ মানুষ হত্যা করে দুঃখিনী মেঘনা তিতাস নদীতে কতো কতো লাশ ফেলে দিয়েছে, তার হিসাব নেই। কেউ কাউকে চেনার অবস্থা ছিলো না। জানার অবস্থা ছিলো না। কবর দেওয়ার অবস্থাও ছিলো না। দুঃখিনী মেঘনা আর তিতাস সহ সমগ্র দেশের শত শত নদীর বুকে ঠাই হয়েছে এমন কতো লাশের, জানা নেই। আশ্চর্য বিষয়, মেঘনা নদীর পানিতে ভাসমান একটি মস্তক বিহীন লাশের হাতে গামছায় বাঁধা ছিলো লাল ফ্রক জামা আর ছোট্ট ছোট্ট হাতের লাল সবুজ কাঁচের চুড়ি। সেই অভাগা লাশটি আর কেউ নন, তিনি ছোট্ট আয়েশার ছোট্ট পৃথিবীর একমাত্র বাজান মোস্তফা।

সময় থেমে থাকে না। টানা নয় মাস যুদ্ধের পর একদিন দেশ স্বাধীন হয়। অনেকে যার যার বাড়ি ফিরে আসেন, অনেকে আর কোনো দিনও বাড়ি ফিরে আসেন না। জীবন হয়তো চলতে থাকে কিন্তু আয়েশার জীবন থেমে থাকে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে আয়েশা অক্লান্ত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে দূর পথে ও পথের প্রান্তে “তাঁর বাজান ফিরে আসবেন - এই পথ ধরে”। আজ আয়েশা বৃদ্ধ হয়েছেন, চুল সাদা হয়েছে, দৃষ্টি মলিন হয়েছে। - আজও তিনি ঘোলা চোখে এক বুক ব্যথা নিয়ে পথের প্রান্তে তাকিয়ে থাকেন, তাঁর বাজান ফিরে আসবেন। দীর্ঘশ্বাস ।।










মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:২৫

কামাল১৮ বলেছেন: হাজারো আয়েশার দীর্ঘশ্বাস ধ্বনীত হয়েছে এই গল্পে।জীবনের গল্প।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



দুঃখজনক! আয়েশাদের ত্যাগ কেউ মনে রাখেনি, মনে থাকলে দেশ বারংবার পরাধীন হতো না।


২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রেরনা।

আপনি কেমন আছেন?

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০১

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



প্রেরণা থেকে কি পেয়েছি? দেশ যেমন আছে আমিও তেমনই আছি। আপনি কেমন আছেন, দেশের মতো নাকি পরদেশীর মতো? আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


৩| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: ঠাকুরমাহমুদ,




দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার মতোই লিখেছেন।
এভাবে কতো আয়েশাদের দীর্ঘশ্বাস যে মিশে আছে ৭১এর বাতাসে!!!!!!!!!
আছে আজও..........

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



আহা - অভাগা দেশ আর হতভাগা জাতি। জাতির কষ্ট নিয়ে ভাবনার কোনো মানুষ নেই, ছিলো না, আজও নেই।


৪| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এত ত্যাগ স্বীকার করা আয়েশাদের উচিত হয় নি। কিছু হারামীর বাচ্চা সব ত্যাগ জলে গেল।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



যে যেমন সে পছন্দ করে ঠিক তেমন মানুষ। যে যেমন ঠিক তেমন মানুষের সাথেই তার চলাফেরা থাকে। তাই ভালো মন্দ চেনার সবচেয় সঠিক পথ হচ্ছে সঙ্গী কেমন তা চিনতে পারা। ত্যাগ অধিকাংশ সময়েই ভুল ও অপচয় হয়ে থাকে, কিছু করার নেই।

আপনাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।

৫| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:১৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:




আপনার কি অন্য কোন নাম আছে?

সেই আমলে যায় যায় দিনে আপনার লেখা পড়েছি।

আলী একরাম ফিদা তোজো নামে একজনের লেখা পড়তাম। সেটা কি আপনি ছিলেন?

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৪

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



আমি যায়যায়দিন ছাপাখানার সাথে কাজ করেছি তবে কিছু লেখালেখিও করেছি। আমি ঠাকুরমাহমুদ নামেই লিখেছি। আমি কিছু লেখা পোস্ট করবো যা যায়যায়দিনে প্রকাশিত হয়েছে, তাহলে আমাকে মনে পড়বে।

তোজো সাহেব ভালো লিখতেন। আফরিন সুলতানা বিথী ভালো লিখতেন। তসলিমা নাসরিন ফরমায়েশি লেখক ছিলেন।

৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৯

সামিয়া বলেছেন: গল্পটা পড়ে মন খারাপ হলেও এটাই একাত্তরের বাস্তবতা, অসাধারণ লিখেছেন।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



আসলে ১৯৭১ হচ্ছেে একটি চাপা দীর্ঘশ্বাস। যেই দীর্ঘশ্বাসের দুঃখ আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

৭| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:১১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:




আফরিন সুলতানা বিথী লিখতেন ঝালকাঠি থেকে সম্ভবত।
আমি ও লিখতাম শিশু পত্রিকাতে। সেটা ১৯৮৯ সালের কথা।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



আমি লিখবো। আপনার লেখা পোস্ট পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
আপনাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।

৮| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৬

মোগল সম্রাট বলেছেন:

আহারে, কি বেদনার গল্প!
এরকম কতো অজানা দির্ঘশ্বাস ঝড়ে প্রতিদিন প্রতিরাতে আমাদেরই আশপাশে, কেইবা রাখে তার খোঁজ।

এখন আবারো ৭১ এর গল্পগুলো আবার মুমূর্ষু হয়ে হাসপালে ভর্তি হচ্ছে। সে বিষয়ে একটা লেখা দিয়েন প্রিয় ঠাকুর ভাই।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:২৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



দুঃখ হচ্ছে দেশ মাত্র ৫০ বছরও তাঁর স্বাধীনতা ধরে রাখেতে পারেনি। রাজাকারের গাড়ীতে দেশের পতাকা - - - এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কি হতে পারে।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.