![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আওয়ামী লীগের রাজনীতিটা বিএনপির রাজনীতির চেয়ে ঈষৎ ভালো হওয়া সত্ত্বেও আমার বন্ধুদের মধ্যে বিএনপিমনার সংখ্যাই কেন বেশি, এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা। কারণটা হলো, ব্যক্তিজীবনে সাধারণভাবে বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগারদের চেয়ে মার্জিত। আওয়ামী লীগারদের স্বভাব ও কথাবার্তায় যে সামন্ত সংস্কৃতি ফুটে থাকে, বিএনপির লোকজনের বেলায় তেমনটা দেখা যায় না।
উদাহরণ দিয়েই বলি। কুড়ি বছর আগে আমি যখন সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে কাজ করতাম, সহকর্মী মুনীরুজ্জামানের (বর্তমানে দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক) একটি কাভার স্টোরি পড়ে ছাত্রলীগের এক কর্মী টেলিফোন করে তাকে বলেছিলেন- বাংলাদেশে থাকতে হলে নেত্রীর বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। একই সময়ের বিপরীত চিত্রটা দেখুন। গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী তখন ছাত্রদল করতো। তার বিরুদ্ধে কী যেন একটা লেখা হলো। তিনি ছুটে এলেন যায়যায়দিন কার্যালয়ে। অতি বিনয়ের সঙ্গে ব্যাখ্যা করলেন তার অবস্থান। আমি সামান্য অবাকই হয়েছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায়, অথচ ছাত্রদল নেতার এত বিনয়! থাকগে, আসল কথায় আসি।
বিএনপিমনা বন্ধুদের ডিল করতে গিয়ে দেখেছি, তারা আচরণে ভদ্র হলেও আওয়ামী লীগারদের মতোই নিজ মতের প্রতি গোঁড়াই বটে। অবস্থান থেকে সরতে চান না। তাদের যখন বলি, আচ্ছা আপনারা গণআন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টা না করে পেট্রলবোমা আর ককটেলের ওপর ব্যাংক করছেন কেন- তারা জবাব দেন, সরকার তো রাস্তায় নামতেই দিচ্ছে না। আপনি কি দেখেননি, সরকার কীভাবে ৫ জানুয়ারির সভা করতে দিল না, ম্যাডামকে কীভাবে অবরুদ্ধ করে রাখলো?
এদের একজনকে বললাম, আয়ুব খানও তো রাস্তায় লোক নামতে দিতে চায়নি, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান তাহলে কীভাবে ঘটলো? আর খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে, তাতে কী? বঙ্গবন্ধুকে কি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অন্তরীণ রাখা হয়নি? তাকে তো আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করা হয়েছিল।
বন্ধুর এবারের জবাব হলো- সেই সময় আর এই সময় তো এক নয়। মানুষ এখন সহজে রাস্তায় নামতে চায় না। সুতরাং আমাদের উপায় কী?
মানুষের যে কোনো কথার পেছনে থাকে কোনো না কোনো যুক্তি, হয় সেটা সত্যি সত্যি যুক্তি, না হয় অপযুক্তি। যেসব কথা বিরক্তি উৎপাদন করে, সেগুলোও ব্যতিক্রম নয়। আমি খুব ভালো করেই জানি, দুই ধরনের মানুষকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। এক. যে বোঝে না যে, সে কম বোঝে। দুই. একরোখা কিসিমের লোক। তারপরও আমার এই বন্ধুটির অপযুক্তির বিপরীতে কিছু কথা বলেছিলাম, সেগুলোরই সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি।
বিএনপির বর্তমান দাবিটি (অংশগ্রহণমূলক ফ্রেশ নির্বাচন) ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও দলটি গণআন্দোলন সৃষ্টিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে, এর চেয়ে সোজা প্রশ্ন আর হতে পারে না। প্রথমে এক বাক্যেই উত্তরটি দিয়ে নিই, এরপর ভাবসম্প্রসারণ করা যাবে। উত্তরটি হচ্ছে- মানুষ আসলে উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়তে চাইছে না (খুব পুরনো উপমা)।
আমি যে কড়াইটিকে উত্তপ্ত বলছি, তার নিচের চুলোয় শুধু বিএনপি-জামায়াতই জ্বাল দিচ্ছে না, সরকারের লাকড়িও আছে সেই জ্বালে। আমি আসলে বর্তমান অবস্থাটাকেই উত্তপ্ত কড়াই বলছি। এই কড়াইয়ে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হচ্ছে দেশবাসী- কেউ পেট্রলবোমা-ককটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে, কেউ বা ক্রসফায়ারে (ফায়ারের অনেক অর্থের একটি হলো আগুন)। চুলোয় অবশ্য প্রথমে লাকড়ি ঠেলেছে সরকারই। ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে জনসভা করতে না দিয়ে ও খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে। এই যে উত্তপ্ত কড়াইয়ে পুড়ছে মানুষ, তবু কেন তারা কৈ মাছের মতো শুধু ছটফটই করছে, লাফিয়ে পড়ছে না। কারণ ওই তো, লাফালেই নিচে জ্বলন্ত উনুন।
হ্যাঁ, একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে বিরোধী পক্ষের প্রতি নব্য ফ্যাসিবাদী আচরণের পরও মানুষ কেন তাদের আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে না, এর একটাই কারণ- মানুষ মনে করছে না যে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশে শান্তি বিরাজ করবে। বরং তাদের ধারণা, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটবে। সাধারণ মানুষের এ ধারণা অমূলক নয়। প্রতিশোধপরায়ণতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বিএনপি মুখিয়ে আছে, শুধু ক্ষমতাটা পেলেই হয়। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শাসনে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের প্রতি তেমন কোনো রূঢ় আচরণ করেনি, তাতেই যদি ২০০১-এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি অমন প্রতিশোধস্পৃহায় জ্বলে উঠতে পারে, এবার বিজয়ী হলে দলটি আওয়ামী লীগের প্রতি কেমন আচরণ করবে, তা হাতের আঙুলে হিসাব করা যাবে না, ক্যালকুলেটর লাগবে।
ক্ষমতা পেলে তারা হয়তো রাষ্ট্রপতির ক্ষমার জন্য তাদের মনোনীত প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না, জেলগেট খুলে দিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যে কীভাবে বিকৃত হবে, তা তারেক রহমানের জবানি থেকেই উপলব্ধি করা যায়। বর্তমান সরকার খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে, এর প্রতিশোধ বিএনপি কীভাবে নেবে বলা মুশকিল। তবে গরুকে ভালোভাবে খাইয়ে রাখলে গরুই পরিচর্যাকারীকে খাইয়ে রাখতে সাহায্য করে। আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি যেহেতু, বিএনপি আওয়ামী লীগকে দুধ দেবে না, বরং চাইটাবে (রংপুরের ভাষায় চাইটানো মানে লাথি মারা)। মানুষকে অতীতের অপমান ভুলে যেতে হয়, মনে রাখতে হয় মর্যাদার সুখস্মৃতি। এ দেশে যারা রাজনীতি করেন, তারা প্রথমত রাজনীতিক, দ্বিতীয়ত মানুষ। আর তাই তারা অপমানটাই মনে রাখে, মর্যাদার স্মৃতি নয়। বিএনপিও তাই অপমানটাই মনে রাখবে, অন্যকিছু নয়।
এমন এক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাতে দই জমিয়ে বসে থাকবে না নিশ্চয়ই। তারাও তখন পেট্রলবোমার চেয়েও হয়তো শক্তিশালী মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে ফেলবে। অর্থাৎ এককথায়, বিএনপি-জামায়াত জোট যদি ক্ষমতা পায়, তাহলে নৈরাজ্য-অরাজকতা-হত্যা এমন রূপ পরিগ্রহ করবে যে, সমাজটা হয়তো হয়ে উঠবে জাহান্নামের আগের স্টেশন অর্থাৎ লাস্ট বাট জাহান্নাম। দুটি বড় কারণে ব্যক্তিগতভাবে আমি বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা দখল নিয়ে আতংকে থাকি। এক. পৃথিবীর কেউই এতটা জ্ঞানী বা ভালো নয়, যতটা জ্ঞান থাকলে তাকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিয়ে বিশ্বাস করা যায়। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নির্বিশেষে এ দেশের রাজনীতিকদের নেতৃত্বের জ্ঞান কিংবা ভালোত্ব পরীক্ষা করে দেখেছি আমরা। তারা দারিদ্র্যসীমার নিচেই অবস্থান করছেন। সুতরাং বিপদটা এখানে আরও বেশি। দুই. প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি প্রজ্ঞার অভাব থাকে যার, খোঁচা মারার ক্ষমতাটা তার তীক্ষè হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী; কিন্তু কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রজ্ঞা বলে কোনো পদার্থ নেই।
হ্যাঁ, বিএনপি নেতৃত্ব তখনই কেবল মানুষের মন জয় করে দাবি আদায়ের আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ত করতে পারবে, যদি তারা পোপের সেই অমূল্য বাক্যটিকে আত্মস্থ করতে পারেন- ভুল করা মানবিক, ক্ষমা স্বর্গীয়। বিশ্বাসযোগ্যভাবে মানুষের মনে তাদের ঠাঁই নিতে হবে যে, ক্ষমতায় গেলে তারা প্রতিশোধপরায়ণ হবেন না, বরং দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করবেন। আওয়ামী লীগের ভুলগুলোকে মানবিক ভুল হিসেবে দেখতে হবে তাদের আর সবকিছু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে খুলতে হবে স্বর্গের দরজা। তাদের মনে রাখতে হবে, পেট্রলবোমা-ককটেল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বটে, তা দিয়ে তাদের মন জয় করা যায় না।
হ্যাঁ, জনসভা করেই হোক অথবা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে, খালেদা জিয়াকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তাকে বলতে হবে- ক্ষমতায় গেলে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখবেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা থেকে বিরত থাকবেন এবং প্রতিশোধের রাজনীতি করবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, কথাগুলো বলতে হবে বিশ্বাসযোগ্যভাবে। আমি আবারও বলছি, আমাদের মনে যেন এমন কোনো সন্দেহ দেখা না দেয় যে, তিনি কোনো চালাকি করছেন।
অবশ্য আমরা ভালোভাবেই বুঝি, মিসেস জিয়া এভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে চাইবেন না। অথচ তিনি উপরের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কথা বললে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য আর জনগণকে জিম্মি করে পেট্রলবোমার ওপর নির্ভর করতে হবে না। সরকার দাবি না মানলে জনগণই রাস্তায় নেমে পড়বে।
পুনশ্চঃ আমার গত লেখাটির বেশ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এক পাঠক প্রশ্ন করেছেন, সক্রেটিস-গ্যালিলিওদের কাতারে অভিজিৎকে অন্তর্ভুক্ত করা কি ঠিক হয়েছে?
কেন ঠিক হয়নি বন্ধু? গাঁয়ের যোগী ভিখ পায় না, তেমন কোনো কারণে? সক্রেটিস-গ্যালিলিওরা যখন শাস্তি ভোগ করেছিলেন, তখন জনগণের দৃষ্টিতে তারাও অভিজিতের মতোই ছোট মানুষ ছিলেন। যতোই দিন, বছর, যুগ, শতাব্দী, সহস্রাব্দ পেরিয়েছে, ততোই তাদের মহত্ত্ব বেশি করে ধরা দিয়েছে। অভিজিৎ এ মুহূর্তে হয়তো বড় কিছু নন। কিন্তু একশ’ বছর পর স্বাধীন মত প্রকাশের প্রসঙ্গ এলেই তার নামটিও উচ্চারিত হবে।
দ্বিতীয়ত, ছোট বৃত্তও তো স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার কেন্দ্র আছে, ব্যাস, পরিধি সবই আছে। সক্রেটিস-গ্যালিলিও নামের বৃত্তের পরিধি অনেক বড় বুঝলাম; কিন্তু অভিজিতেরও তো একটা পরিধি আছে- হোক না তা ছোট।
আরেক পাঠক বলেছেন, লেখাটিতে অভিজিতের কোনো কথারই উদ্ধৃতি নেই, তাহলে কেমন করে বুঝবো তিনি উচ্চমার্গের চিন্তাশীল মানুষ?
ভাই, আমার প্রসঙ্গটা ছিল স্বাধীন মত প্রকাশ করার পরিণতি। মতটা কী, তা নয়। অভিজিৎ ছাইপাঁশ যাই লিখে থাকুন, মত প্রকাশের দায়ে তাকে হত্যা দূরে, তার ওপর কোনো ধরনের দৈহিক আক্রমণও সমর্থনযোগ্য নয়। একটি মতের বিপরীতে আরেকটি মত দেয়া যায়, খণ্ডনযোগ্য হলে তা খণ্ডন করাই উচিত; কিন্তু লাঠি-তলোয়ার-বন্দুক কেন?
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
[email protected]
লেখাটি ১৫ মার্চ, ২০১৫ খ্রি. দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত।
১৯ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭
হাসান শান্তনু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের কথা মাহবুব কামালকে জানিয়েছি। মন্তব্য করায় ধন্যবাদ।
২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: একেবারে মনের কথা বলেছেন ভাই
১৯ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
হাসান শান্তনু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের কথা মাহবুব কামালকে জানিয়েছি। মন্তব্য করায় ধন্যবাদ।
৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:২৫
তিক্তভাষী বলেছেন: মিসেস জিয়া?
১৯ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
হাসান শান্তনু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের কথা মাহবুব কামালকে জানিয়েছি। মন্তব্য করায় ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২২
ঢাকাবাসী বলেছেন: লেখাটি খুব ভাল লাগল্ । মোটামুটি একমত।