![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান পাকিস্তান টাইমস পত্রিকার সম্পাদক মাজহার আলি খানকে নিয়ে ঢাকার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ইয়াহিয়া খান মনে করছেন, আমাকে হত্যা করলেই আন্দোলন ধবংস করে দিতে পারবেন। কিন্তু তিনি ভুল করছেন। আমার কবরের ওপর স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে। আতাউস সামাদও সেদিন রাতে ৩২ নম্বরের ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। লাইব্রেরি কক্ষে দেখা হতেই বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন, আমি তোমাদেরকে স্বাধীনতা দিলাম, এখন যাও, সেটা রক্ষা করো' (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়: একজন প্রত্যক্ষদর্শীর স্বাক্ষী, রেহমান সোবহান; বাংলাদেশ ১৯৭১, আফসান চৌধুরী, মাওলা ব্রাদার্স)।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধ, দেশের পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁকে সেদিন দুজন অবহিত করেন। একজন প্রয়াত আতাউস সামাদ, অন্যজন সাবেক কূটনীতিক শ্রদ্ধেয় ফারুক চৌধুরী। এসব বিষয়ে ২০১৩ সালে ঢাকার বিভাস প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আমার 'গণমাধ্যম নিপীড়ন ১৯৭২-২০১২' বইয়েও আলোচনা আছে।
প্রখ্যাত সাংবাদিক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার শ্রদ্ধেয় আতাউস সামাদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন। সাংবাদিকতা, বা পেশাগত কারণে আতাউস সামাদের বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়- এমনটা নয়, পারিবারিকভাবেও ছিল ঘনিষ্ঠতা। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর অনেক সংগ্রাম, আন্দোলনের স্বাক্ষী ছিলেন না, নিজেও ছিলেন ইতিহাসের অনেক অধ্যায়ের উপাদান। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন প্রখ্যাত আইনজীবী সিরাজুল হক ছিলেন আতাউস সামাদের ভগ্নিপতি। এখন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আতাউস সামাদের ভাগ্নে। আনিসুল হকের বাবা সিরাজুল হক।
আজ ফের এসব লেখার কারণ হচ্ছে, বিএনপি দাবি করে দলটির প্রতিষ্ঠাতা কালো চশমাপ্রিয় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নাকি 'স্বাধীনতার ঘোষক'! পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ দাবি করে, আতাউস সামাদ নাকি বিএনপির সমর্থক ছিলেন! বিএনপির এ দাবির মধ্যে স্ববিরোধিতা আছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু যে ২৫ মার্চ রাতে (তা প্রচারিত হয় রাত ১২টার পর, এজন্য ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস) স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখন ইতিহাসসহ এর আরেক স্বাক্ষী রেহমান সোবহান, আতাউস সামাদ প্রমুখরা। আতাউস সামাদকে 'বিএনপিপন্থী' দাবি করে মেজর জিয়াকে 'স্বাধীনতার ঘোষক' বানানোর সুযোগ নেই। বিএনপিপন্থীদের এ দাবি তাই নিতান্তই রাজনৈতিক নষ্টামি।
আতাউস সামাদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সাংবাদিক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিনি বরাবরই ছিলেন সোচ্চার। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, নারীঘাতীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে আতাউস সামাদও যুক্ত হন তাতে।
মৃত্যুর আগে আতাউস সামাদের ২০১২ সালের আগস্টে (একই বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁর মৃত্যু হয়) সবশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানটিও ছিল বাংলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। সেদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটির বিষয়ে আলোচনা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আবেগঘন স্মৃতিচারণ করেন।
এটাও সত্য, আওয়ামী লীগের মাথামোটা কোনো কোনো নেতা আতাউস সামাদকে 'শতভাগ নিজের লোক' মনে করতে পারেননি। ২০১০ সালে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বেসরকারি টিভি চ্যানেলের একটি টকশো অনুষ্ঠানে আতাউস সামাদকে 'বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী' বলে 'গালিও' দেন! 'কয়েকজন আধুনিক আওয়ামী লীগার' আতাউস সামাদকে কেন 'নিজের লোক' মনে করতে পারেননি, এর কোনো কারণ অনেকের জানা নেই।
প্রখ্যাত কলামিস্ট শ্রদ্ধেয় গাফফার ভাইয়ের (আবদুল গাফফার চৌধুরী) মতে, 'আতাউস সামাদ ছিলেন বামঘেঁষা সাংবাদিক। ভাসানী ন্যাপের দিকেই তার টান ছিল বেশি। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, তার অন্তরঙ্গতা যতোটা ছিল মওলানা ভাসানীর সঙ্গে, ততোটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। ছয় দফা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যন্ত, যখন মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু দুই শিবিরে অবস্থান করছেন, তখন এই দুই নেতার মধ্যে গোপন যোগাযোগের একজন মাধ্যম ছিলেন আতাউস সামাদ। তিনি বঙ্গবন্ধুর বহু গোপন চিঠি মওলানা ভাসানীর কাছে নিয়ে গেছেন। তার জবাব বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দিয়েছেন' (সংবাদ-সাহিত্যে একটা বড় শূন্যতার সৃষ্টি হলো, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৮.০৯.'১২)।
আজ বঙ্গবন্ধুর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস।
'সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা...।'
রাষ্ট্রপিতার জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা...
হা.শা.
দৈনিক যায়যায়দিন
ভালোবাসা সড়ক
তেজগাঁও, ঢাকা।
১৯ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭
হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, সম্ভবত 'আবেগপূর্ণ' নয়, ঐতিহাসিক তথ্যযুক্ত। মন্তব্য করায় ধন্যবাদ।
২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩২
তিক্তভাষী বলেছেন: "কারণ, বঙ্গবন্ধু যে ২৫ মার্চ রাতে (তা প্রচারিত হয় রাত ১২টার পর, এজন্য ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস) স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখন ইতিহাসসহ এর আরেক স্বাক্ষী রেহমান সোবহান, আতাউস সামাদ প্রমুখরা। "
বঙ্গবন্ধ যদি ২৫ মার্চ রাতে ঘোষণা দিয়ে থাকেন তাহলে ২৫শে মার্চই স্বাধীনতা দিবস। আপনি এই ইতিহাস জেনে এখনও বসে রয়েছেন? আশ্চর্য কান্ড!
১৯ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৯
হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, ইতিহাসের সত্য তো স্পষ্ট। একে নিয়ে 'রাজনৈতিক' বাড়াবাড়ি করতে না যাওয়াই ভালো। মন্তব্য করায় ধন্যবাদ।
৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৫:১১
পামাআেল বলেছেন: বলতে দ্বিধা নেই, উনার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানিনা। যেটুকু জেনেছি তা এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়কার একমাত্র নির্ভরযোগ্য মিডিয়া বিবিসি বাংলা শুনার মাধ্যমে। তখন তিনিও ছিলেন আন্দোলনের জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আখতারুজ্জামানের মতই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। সে সময় থেকেই তার গুনমুগ্ধ হই। পড়ে উনার মেয়ে নাইমা সামাদের সাথে পরিচয় সূত্র ধরেও কিছু বিষয় জানার সুযোগ হয়েছিল।
পরে যেখানেই তার লেখা দেখতাম সাথে সাথে পড়ে ফেলতাম। সেসব পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে উনাকে কোন ভাবেই আওয়ামী লীগ সমর্থক বা শুভাকাঙ্খী হিসেবে মানতে পারছি না। পারছি না নিরপেক্ষ কোন ব্যক্তি হিসেবেও। সেসব থেকে উনাকে প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি সমর্থক বলেই মনে হয়েছে। সুযোগ থাকলে আমার দেশ পত্রিকায় লেখা উনার কলাম গুলো পড়ে দেখতে পারেন। তবে বিএনপি সমর্থক হওয়া উনার জন্য কোন দোষের কিছু তা বলতে চাচ্ছিনা। বিষয়টি উল্লেখ করলাম, আপনার বক্তব্যের সাথে কেন একমত নই তা উল্লেখ করার জন্য।
- পামাআলে
১৯ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৫
হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, আপনি আতাউস সামাদ স্যারের মেয়ে সাথী আপার কাছ থেকে স্যার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন। তবে এমন কোনো তথ্য নিশ্চয়ই জানতে পারেননি যে, তাঁর বাবা 'বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী' ছিলেন! আতাউস সামাদ কিছুতেই বিএনপির সমর্থক ছিলেন না। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট ছিল। যদিও বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির মতাদর্শে সামান্য হলেও পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য ভুলে দল দুটি যেহেতু একসঙ্গে 'রাজনীতির ঘর-সংসার' করছে, তাই যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গটি টানলাম।
দৈনিক আমার দেশ'এ প্রকাশিত আতাউস সামাদের কলামের কথা বলছেন? নীতিবান সাংবাদিকদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, তাঁরা যে কোনো শাসকদলের গঠনমূলক সমালোচনা করেন। নিরেট দলবাজি, অজ্ঞতাযুক্ত চামচামি করেন না। আতাউস সামাদ তাই করেছেন। এরকম সাংবাদিক সংখ্যায় এদেশে কম হলেও এখনো আছেন। যেমন, ডেইলি স্টারের সম্পাদক শ্রদ্ধেয় মাহফুজ আনামের গত কয়েক মাসের মধ্যে প্রকাশিত লেখাগুলো পড়লে অনেকেই বলবেন, তিনি বিএনপির সমর্থক! বাস্তবতা তো এর সম্পূর্ণ উল্টো। তাই না, ভাই?
মন্তব্য করায় ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:১১
অগ্রভাবুক নাসীর বলেছেন: সত্যি অনেক আবেগপূর্ণ কথা