নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপর্না হালদার

always want to know

অপর্না হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিখে তো যেতেই হবে..... লেখার আগে ভাবছিলাম এই ইস্যূতে আমার আর কি করণীয় বাকী আছে। হিসেব করে দেখলাম একটাই কাজ এখন আমার বাকী আছে, সেটি হলো- কোন একদিন পাড়ার মুদি দোকানে গিয়ে দুইটাকা দিয়ে একটি দেশলাই কিনবো। সোজা ঘরে এসে দুই সন্তানকে বলবো- তোমরা যে দাদুদের নিয়ে গর্ব করো সেই সব কিছুই নিতান্ত মিথ্যা কথা। এই মিথ্যাচারের জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। বলে নিজের হাতে জ্বালিয়ে দেবো শহীদ জয়ন্ত রায়ের ডেথ সার্টিফিকেট।

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৫৬















অনেক বিষয়েই কথা বলা বিব্রতকর। বিশেষকরে বিষয়টি যদি নিজেকে নিয়ে হয়, তাহলে বিব্রতবোধ আরো বাড়ে। তারপরেও আজ নিজের একটি বিষয় নিয়েই লিখতে চাই। আরিফ এমএসএস করছে লেখা কই? হ্যা লিখিনি প্রায় কুড়ি দিন, এতে আরিফের বিরক্ত লাগাটা স্বাভাবিক- লেখা কই এসএমএসটাও যৌক্তিক। হ্যাঁ আরিফ, লেখা আছে। লেখার বিষয় আমি নিজে।





এক ধরণের ক্লান্তি থেকে একটি বিষয় আজকে সামনে আনতে চাই- সেটি হলো, সাধারণ সহনাগরিকেরা আমাকে খুবই ভাগ্যবান মনে করেন। কারণ গত কয়েক বছর টানা একটা রাজনৈতিক টকশো উপস্থাপনার ফলে আমার ভালোই পরিচয় আছে দেশের দ্বিদলীয় রাজনীতির শক্তিশালী মানুষগুলোর সঙ্গে। প্রতি রাতে তাদের সঙ্গে একঘন্টা করে সময় কাটাতে কাটাতে অনেকের সঙ্গেই সম্পর্কটা হয়ে গেছে কাছের মানুষের মতো। শুধু টকশো না, এর রাইরেও কারণে অকারণে কুশল বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। আমার মতো তুচ্ছ মানুষকেই দেশের অনেক প্রভাবশালী বেশ গুরুত্বও দেন। যাই হোক এবারে মূল প্রসংগে যাই।





পাঠক এবারে আমার নিজের গল্প শুনুন, আমার পিতা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করেছেন। রাজনৈতিক বন্দী হিসাবে কারাগারে কাটিয়েছেন প্রায় ২০ বছর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার ভাই জয়ন্ত কুমার রায় ১২ এপ্রিল পাবনা শহরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগিদের হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হন। পরবর্তীতে স্বাধীন দেশে হঠাৎ করেই শহীদ জয়ন্ত রায়ের সকল জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে পাবনার জেলা প্রশাসন। সেই সময় থেকেই আমরা পারিবারিকভাবে এই বিষয়ে আবেদন নিবেদন করে আসছি। এই আবেদন নিবেদনের ধারাবাহিকতায় আমরা ২০০৭ সালের ১৫ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন করি। বিষয়টি আমলে নিয়ে তৎকালীন সময়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে উঠে আসে সঠিক তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, জয়ন্ত রায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি নয়।



২০০৭ সালের ১২ জুন সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে শহীদের উত্তরাধিকারীদের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসন এ কাজ শেষ করার জন্য সরকারের কাছ থেকে ষাট দিন সময় চান; কিন্তু পরবর্তীতে এই সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়নি।



শেষ পর্যন্ত আমরা বিষয়টি সুরাহার জন্য উচ্চ আদালতে যাই। আদালত শহীদের সম্পত্তি কেন উত্তরাধিকারদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না তা জানতে চেয়ে গত বছরের ৪ জুন জেলা প্রশাসকের প্রতি রুল দেন। একই সঙ্গে আদালত উক্ত সম্পত্তি অর্পিত তালিকা থেকে সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসক এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও রুলের কোনো জবাব দেননি, এবং এই জমিতে একের পরে এক স্থাপনা নির্মাণ হলেও প্রশাসন নীরব। শেষ পযন্ত নিজেই পরিচয় দিয়ে ফোন করেছি পাবনার জেলা প্রশাসনের কাছে, তিনি আমার সঙ্গে খুবই সুন্দর ব্যাবহার করেছেন। যখন তাকে প্রশ্ন করেছি- উচ্চ আদালতের নিষেধ থাকার পরেও কেন একজন শহীদের জমিতে অবৈধ নির্মাণকাজ চলছে? তখন তিনি আর সেই প্রশ্নের উত্তর দেননি। অন্য কোন প্রসঙ্গের অবতারণা করে ফোন রেখে দিয়েছেন।



এই বিষয়টি নিয়ে অনেক অনেক বার কথা বলেছি, যোগাযোগ করেছি সরকারের (শুধু বর্তমান সরকার নয়-অতীতেরও বেশ কয়েকটি সরকার) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কাছে। দরখাস্ত করতে করতে প্রায় ফুরিয়ে গেছে প্রিন্টারের কালি। না-আমি কোন সমাধান পাইনি, উচ্চ আদালতের রুলের পরবর্তীতে কোন জবাব না দিয়েও বেশ আরামে আছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিরা। আর আমি শুনছি বিভিন্ন মাপের হুমকি। নিজের ভুল আর পরিস্থিতি মিলিয়ে নিজের শহর পাবনা এখন হয়ে গেছে মানচিত্রের অপর পাড়ের কোন দেশ। যেখানে যেতে হয় স্বপ্নে- বাস্তবতায় নয়। প্রতিটি ছুটিতে সবাই যখন ঘরমুখী হয়, আমি তখন হই এ্যলবামমুখী। ছবিতে দেখি আমার শহর- আমার স্বজন।



অনেকদিন ধরেই নিজের প্রাপ্য অধিকারের জন্য লড়াই করেছি, ধর্ণা দিয়েছি অনেক ক্ষমতাবানদের দরজায়। রাস্তার ভিক্ষুকের মতো হাত পেতে থেকেছি শহীদ স্বজনের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তোলার জন্য। যে সামান্য বেতনে চলি সেখান থেকে অর্থ খরচ করে মামলার তদবির করেছি। কিন্তু ফলাফল শূন্য। আমি চারপাশে অনেক মানুষের বাগাড়ম্বর শুনি- মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেখি চেতনার ছড়াছড়ি। দেখি অনেকেই বেশ ভালোই থাকে শুধুমাত্র ’৭১ কে অবলম্বন করে। কিন্তু মাঝখানে আমিই আছি বিপদে- নিজের প্রাপ্য চাইতে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এমন এক খাদের কিনারে- যেখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে না। সেই কারণেই তীব্র বিরক্তি নিয়ে লিখছি এই লেখাটি। লেখার আগে ভাবছিলাম এই ইস্যূতে আমার আর কি করণীয় বাকী আছে। হিসেব করে দেখলাম একটাই কাজ এখন আমার বাকী আছে, সেটি হলো- কোন একদিন পাড়ার মুদি দোকানে গিয়ে দুইটাকা দিয়ে একটি দেশলাই কিনবো। সোজা ঘরে এসে দুই সন্তানকে বলবো- তোমরা যে দাদুদের নিয়ে গর্ব করো সেই সব কিছুই নিতান্ত মিথ্যা কথা। এই মিথ্যাচারের জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। বলে নিজের হাতে জ্বালিয়ে দেবো শহীদ জয়ন্ত রায়ের ডেথ সার্টিফিকেট। যে সার্টিফিকেটে লেখা আছে তিনি পাকিস্তানীদের হাতে নিহত হয়েছেন। তারপরে একই আগুনে পোড়াবো আমার পিতার প্রতিকৃতি- শুনেছি এই লোকটি নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে করিমপুর শিকারপুর ক্যাম্পের পরিচালক ছিলেন। ২০ বছর এই দেশের জন্যে জেল খেটেছেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র অভ্যুত্থান করেছেন ১৯৫০ সালে রাজশাহী জেলখানায়। আমি এই কাজটি করতে চাই, কারণ বিরক্তির শেষ সীমানায় পৌঁছে এখন আর কিছুই ভালো লাগছে না।



লেখক-অঞ্জন রায়, একটি বেসরকারী টেলিভিশনে কর্মরত।

[email protected]

CLICK HERE

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.