![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। বিশ্ব নিখিলের
চিরসুন্দর সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-
এর পবিত্র জন্মদিন।
যাঁকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ্ রাববুল
আলামীন কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না,
সেই মহানবী (সা.) প্রায়
সাড়ে ১৪শ’ বছর আগে এই
দিনে পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ
করেন। তিনি কেবলমাত্র মুসলমানদের
নবী নন, তিনি সারা বিশ্বের নবী-
বিশ্বনবী। আল্লাহ্পাকের
সবচেয়ে প্রিয় বান্দা ও রাসূল
মুহাম্মদ (সা.) এ বিশ্বে সর্বকালের
সকল মানুষের অনুকরণীয়-অনুসরণীয়
আদর্শ। তিনি মানব জাতির শ্রেষ্ঠতম
শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু, মুক্তিদাতা ও
ত্রাণকর্তা। তিনি সাইয়েদুল
মুরসালিন-নবীকুল সম্রাট এবং তিনিই
খাতামুন্নাবিয়িন- সর্বশেষ নবী।
তিনি সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমতস্বরূপ-
রাহমাতুল্লিল আলামীন। বিশ্বের এই
সুন্দরতম, শ্রেষ্ঠতম মহামানবের
জন্মদিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র
নির্বিশেষে সকল মানুষের পরম
প্রাপ্তির এক পবিত্র দিন।
মহানবী (সা.) অন্ধকার
পৃথিবীকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন
এবং তিনিই আলো ও অন্ধকারের সুস্পষ্ট
পার্থক্যকারী। অজ্ঞানতা, কুসংস্কার,
পাপ-পঙ্কিলতা ও পৌত্তলিকতার
বিপর্যয়কর পথ থেকে তিনি মানব
জাতিকে আল্লাহ্ পাকের সরলপথ
পরিচালিত করেছেন।
বিশ্বকে পৌঁছে দিয়েছেন সত্য, জ্ঞান,
কল্যাণ ও প্রগতির পথে। জুলুম-
নিপীড়ন, অনাচার-অবিচার, শোষণ-
বঞ্চনার শিকড় উপড়ে ফেলে মানুষের
মুক্তি, শান্তি, সাম্য ও মানবাধিকার
নিশ্চিত করেছেন।
মানুষে মানুষে কোনই ভেদাভেদ নেই-
এই অমোঘবাণী প্রচার করে তিনিই
বিভেদ ও অনৈক্যের স্থলে এক্য-
মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ব
প্রতিষ্ঠা করেছেন। সমাজে শ্রমিকের
অধিকার, পরিবারে নারীর অধিকারসহ
সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অধিকার
প্রতিষ্ঠা করেছেন। আদর্শ মানুষ,
আদর্শ পরিবার, আদর্শ সমাজ ও আদর্শ
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি অনাগত
মানুষের জন্য অনুকরণীয় মহোত্তম
দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।
মানব জাতির জীবনে পবিত্র
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর মত
মহোত্তম কোন দিন নেই। এ দিনেই
মানব জাতির প্রত্যাশিত মহামানব,
মুক্তিদাতা, ত্রাণকর্তা ও সমগ্র
সৃষ্টির রহমতের আবির্ভাব হয়। পবিত্র
এই দিনটি বাংলাদেশসহ
সারাবিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদা,
সম্মান, শ্রদ্ধায় অতীব আন্তরিকতার
সঙ্গে পালিত হচ্ছে। আজকের এই
পবিত্র দিনটি যেমন স্মরণের,
আনন্দের ও উৎসবের,
তেমনি আত্মনুসন্ধান ও
আত্মবিশ্লেষণেরও। মুসলিম উম্মাহ আজ
জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি-উন্নয়ন,
মানবিক ঐশ্বর্য ও শৌর্য-বীর্যেই শুধু
পশ্চাৎপদ নয়, তারা পরমুখাপেক্ষী,
অবনত ও বিপর্যস্তও। মুসলমানরা আজ
আগ্রাসন-আক্রমণ, জুলুম-নির্যাতন
এবং সর্বোপরি বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্রের
শিকার। কারণ মুসলমানদের
মধ্যে অতীতের ঐক্য ও সংহতি নেই।
সর্বত্রই অনৈক্য-বিভেদ, হানাহানি-
সন্ত্রাস, শোষণ-বৈষম্য, দারিদ্র্য।
ইহুদী-খৃষ্টান চক্রের
ইন্ধনে নিজেরাই
নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং
নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের
ঘটনাও ঘটাচ্ছে। বিগত কয়েক
বছরে বহু মুসলিম দেশ সংঘাতের
শিকারে পরিণত হয়েছে।
মুখে ইসলামের কথা বললেও
তারা ইসলামী আদর্শ-ঐতিহ্য অনুসরণ
করে সৌভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠার
পরিবর্তে সংঘাত বৃদ্ধি করছে।
বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্র-
জালে পা দিয়ে তাদের ক্রীড়নক
হয়ে ক্ষমতার সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে।
আফগানিস্তানে, ইরাকে চরম অনৈক্য ও
সংঘাত চলছে। বিশ্ব বাস্তবতায়
আফ্রিকার মুসলমানদের এখন অগ্রসর ও
সমৃদ্ধ থাকার কথা। মিসর, সিরিয়ায়,
লেবানন প্রভৃতি দেশে আজ শুধু
মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে সংঘাত-
হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ছে না, উত্তর
আফ্রিকায়, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই
আজ বিদেশীদের ইন্ধনে সম্পদ-
শক্তি ক্ষয় হচ্ছে, বিপর্যয়
দেখা দিচ্ছে। অথচ বিশ্ব
অর্থনীতি থেকে শুরু করে নৈতিকতা,
মননচর্চা সকল ক্ষেত্রে যে অধপতন,
যে মন্দদশা, তাতে মুসলিম উম্মাহ্রই
অর্থবিত্তে,
ভাবসম্পদে শীর্ষে অবস্থান করার
কথা। বিশ্বের দর্শন ও জ্ঞান
চর্চাকারীরাও আজ স্বীকার করছেন
যে, বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা,
উন্নয়ন, কল্যাণ নিশ্চিত
করতে পারে একমাত্র ইসলাম
তথা ইসলামের মহানবী,
বিশ্বনবী রাসূলপাক (সা.)-এর আদর্শ।
আল্লাহ্পাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন
এবং মানুষের জীবন-বিধান
হিসেবে মহানবী (সা.)-এর ওপর
নাযিল করেছেন পবিত্র কুরআন
এবং তার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন
করেছেন কোরআনের শিক্ষা ও দীক্ষা।
মহানবী (সা.) শুধু ইসলামের সত্য,
সুন্দর, কল্যাণকর আদর্শ প্রচার
করেননি, বাস্তব
জীবনে তিনি তা প্রতিষ্ঠাও
করে গেছেন। মানবমন্ডলীর সর্বোত্তম
আদর্শ তিনি। তাঁর কর্ম ও আচরণ
অর্থাৎ সুন্নাহ্র অনুসরণ করেই মানব
জাতি ইহকাল ও পরকালের শান্তি-
সাম্য, মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত
করতে পারে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের
জন্য দু’টি সম্পদ রেখে গেলাম, যতদিন
তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকবে,
ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।
একটি হচ্ছে আল্লাহ্র কুরআন
এবং অপরটি হচ্ছে রাসূলের সুন্নাহ।
আজকের দিনে মুসলমানরা উন্নয়ন ও
উৎকর্ষ সাধনের
পরিবর্তে যে ষড়যন্ত্র, সংঘাত, আক্রমণ
ও বিপর্যয়ের শিকার, তার অন্যতম
প্রধান কারণ ঐক্য ও সংহতির অভাব।
আর এ জন্যই আত্মি-শক্তির
দুর্বলতা দেখা দিয়েছে এবং জ্ঞান-
জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ার
ঘটনাও ঘটতে পারছে। আজ মুসলমানদের
স্বার্থে, মানব জাতির বৃহত্তর
স্বার্থে কুরআন ও সুন্নাহকে ধারণ
করতে হবে। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর
আদর্শের কার্যকর চর্চা ও বাস্তব
জীবনে তার যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত
করতে হবে। তাহলেই আমাদের
ইহকালে ও পরকালে শান্তি, মুক্তি ও
কল্যাণ লাভ করা সম্ভব হবে।
আল্লাহ্পাক সুবহানাহু
তা’আলা আমাদেরকে মহানবী (সা.) এর
পবিত্র সীরাত থেকে শিক্ষা লাভের
তাওফীক দিন। আমীন।
©somewhere in net ltd.