নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদকথা

একেএম সাইফুল্লাহ

একেএম সাইফুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলোকপ্রাপ্ত পথদ্রষ্টা - ঈশ্বরচন্দ্র (বন্দ্যোপাধ্যায়) বিদ্যাসাগর

১৯ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫১


সত্যি সত্যি ল্যাম্পপোস্টে টিকি বেঁধেছিলেন কি না, অথবা মায়ের টানে দামোদর নদ পারি দিয়েছিলেন কি না সে নিয়ে আজো আলোচনা হয়। আলোচিত হয় এসবের তথ্যগত সত্যতা নিয়ে। তবে পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ আর তার মাতৃভক্তি নিয়ে কখনো কোন সংশয় ছিল না। আজো নেই। যেমন সংশয় নেই শিক্ষা আর সমাজ সংস্কারে তাঁর ভূমিকা নিয়ে।

বাবা-মা নাম রেখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। অগাধ পান্ডিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি পেয়েছিলেন মাত্রই ঊনিশ বছর বয়সে। তিনি দয়ার সাগর বা করুণার সাগর নামেও পরিচিত। তবে, বিদ্যাসাগর নামেই পরিচিতি পেয়েছেন সবচে বেশি।

আজ থেকে ঠিক দু’শ বছর আগে (১৮২০ খৃষ্টাব্দ) জন্মানো বিদ্যাসাগর ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা! তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, জনহিতৈষী, গদ্যকার ইত্যাদি।

বাংলা ভাষা শিক্ষাকে সহজবোধ্য আর সর্বজনগ্রাহ্য করতে লিখেছিলেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য ‘বর্ণ পরিচয়’। বারটি স্বরবর্ণ আর চল্লিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে গঠন করেছিলেন নতুন বাংলা বর্ণমালা। সেসময়ের আগেও বাংলা ছিল। তবে তিনি ভাষার সহজবোধ্য রূপ, সংক্ষিপ্ত বাক্য, দূর্বোধ্য শব্দের বর্জন, যতি চিহ্নের প্রয়োগ নৈপুন্যে সহজ শিক্ষার জন্য সাবলীল বাংলার পথ প্রশস্ত করেছিলেন।

তাঁর প্রবর্তিত গদ্য ছিল গতিশীল, ছন্দময়, মধুর। সংস্কৃত বলয়ের জটিল স্রোতস্বিনী থেকে বাংলা গদ্যকে সরস আর সরলরূপ দেয়া বিদ্যাসাগরকে তাই আধুনিক বাংলা গদ্যের জনকও বলা হয়ে থাকে। তাঁর গদ্যের এই গুণ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "গদ্যের পদগুলির মধ্যে একটা ধ্বনি-সামঞ্জস্য স্থাপন করিয়া তাহার গতির মধ্যে একটি অনতি লক্ষ্য ছন্দঃস্রোত রক্ষা করিয়া, সৌম্য এবং সবল শব্দগুলি নির্বাচন করিয়া, বিদ্যাসাগর বাংলাকে সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতা দান করিয়াছেন।"

গ্রহণ-বর্জনের অসামান্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। সেই প্রয়াস থেকেই তিনি মৌলিক সাহিত্য রচনা, পাঠ্যপুস্তক লেখার পাশাপাশি ইংরেজি এবং সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ (ভাবানুবাদ) করেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহিত্য।

সমাজে প্রচলিত কু-আচার কে সঠিক শাস্ত্রমতে ব্যাখ্যা করে সত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাল্যবিবাহ রোধ আর বিধবাবিবাহ প্রচলনে দেশ-কাল-সময়ের বিরুদ্ধস্রোতে প্রবল প্রতাপে লড়াই করেছিলেন শাস্ত্রীয় প্রমাণ উপস্থাপন এবং সেটার সঠিক ব্যাখ্যা দ্বারা। দৃষ্টান্ত স্থাপনে তাঁর নিজের ছেলের বিয়েও হয়েছিল একজন বিধবার সাথে।

তৎকালীন সমাজ নারী শিক্ষাকে ব্র্যাত্য করে রেখেছিল। লেখাপড়া ছিল পুরুষদের বিষয়। তাঁর প্রচেষ্টায় প্রথম মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। কুসংস্কার আর অজ্ঞতার আঁধার সরিয়ে সমাজ সচেতনতা তৈরী করতে তিনি জেলায় জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনীর প্রতিষ্ঠা করেন।

সমাজের চলমান বর্ণ বিভাজনকে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। আর তাই, সংস্কৃত কলেজে অ-ব্রাক্ষণ শ্রেণীর ছাত্রদের ভর্তির ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয়, তিনি রবিবার ছুটির প্রচলন করেন।

দয়ার্দ্র কোমল মানসিকতা আর উপকারব্রতের জন্য তিনি বিদিত ছিলেন। অসংখ্য এতিম ও দুস্থের আশ্রয় ছিলেন তিনি। বিদেশে ঋণগ্রস্ত মাইকেল মধুসূদন দত্তকে তিনি কর্জ করে সাহায্য করেছিলেন। সহায়তা করেছিলেন কবি নবীনচন্দ্র সেনকে।

বাংলা ভাষাশিক্ষা ও জাগরণের অন্যতম পুরোধা ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা আধুনিকমনষ্ক এবং প্রগতিশীল বিদ্যাসাগরের প্রভাব প্রথাগত শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারের গন্ডি ছাড়িয়ে বাঙালী জাতির নীতিবোধ তৈরীতেও প্রবল প্রভাব রেখেছিল। তার মত সুপন্ডিত ও সংস্কারমুক্ত মনন সে যুগ কেন এ যুগেও বিরল।

এই ক্ষণজন্মা বাঙালীর জীবনাবসান হয় ১৮৯১ সালে, ৭০ বছর বয়সে।

(১৮ই জুলাই ২০২০)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

২| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সেই যুগে এমন প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী হওয়া সত্যিই অনেক কঠিন কাজ ছিল।অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি।এমন লোক যুগে যুগে দরকার সমাজের অগ্রগতির জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.