![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খৃষ্টবর্ষের চতূর্থ শতাব্দিতে কাশ্মিরসহ হিন্দুস্থানের বিশাল অঞ্চলের রাজা ছিলেন বাদশা দাবশালিম।একসময় রাজা বুঝতে পারেন ধীরে ধীরে জনগণ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।দেশের আইন কানুন মানতে তাদের চরম অনীহা।ফলে চিন্তিত রাজা ডেকে পাঠান দেশের প্রখ্যাত জ্ঞানী দার্শনিক বায়দাবাকে।উপদেশ দিতে বলেন দার্শনিককে।গুরু তার নিয়ম মতো গল্পে গল্পে উপদেশ দেয়া শুরু করেন।একটু শুনেই লাফিয়ে উঠেন রাজা।আত্মসম্মানে ঘা লেগেছে।মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়ে গুরুকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।কিন্তু কি মনে হতেই আবার ডেকে পাঠান গুরুকে।পুনরায় উপদেশ দিতে বলেন,গুরুর কথা আস্তে আস্তে রাজার ভাল লেগে যায়।এবার গুরুকে নির্দেশ দেন উপদেশের গল্পগুলো বই আকারে লিপিবদ্ধ করতে।এভাবেই পৃথিবী পায় সাহিত্যের অনেক বড় এক উপাদান।
পারস্য ও আরব বণিকদের সুবাদে এই সাহিত্যকর্মের সুনাম দুনিয়ায় ছড়িয়ে পরে।সর্বপ্রথম গ্রন্থটি ইরানের বিখ্যাত সম্রাট আনুশেরওয়ান (৫৩০-৫৭৮ খ্রিস্টাব্দ)-এর আদেশে ইরানী চিকিৎসক বোরজাভি হিন্দুস্থানের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ইরানে নিয়ে আসেন এবং পাহলাভি ভাষায় অনুবাদ করে দুইটি শৃগালের নামে গ্রন্থটির নামকরণ করেন।( কালিলা ও দিমনা।)(অধিকাংশ ইতিহাসবিদদের মতে এর প্রথম নাম ছিল পঞ্চ অধ্যায়سنسكريتية: पञ्चतन्त्र پنچاتنترا)।
খৃষ্টবর্ষের অষ্টম শতাব্দিতে আব্বাসিয়া শাসনামলে বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক আব্বুল্লাহ ইবনে আল মুক্বাফ্ফাعبد_الله_بن_المقفع আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন।এবং এই অনুবাদটাই এই বইয়ের প্রাচিন মৌলরুপে বাকি আছে।
এরপর গ্রন্থটির জনপ্রিয়তা এতোই বেড়ে যায় যে,গ্রন্থটি দশম শতাব্দীতে সামানীয় শাসক আবুনাসর বিন আহমদের নির্দেশক্রমে ‘কালিলা ওয়া দিমনা' এই নাম পরিবর্তন না করে আরবী থেকে ফারসীতে অনুবাদ করানো হয় এবং কবি রোদাকী এ গ্রন্থখানা ফারসী ভাষায় কাব্যরূপ দান করেন। লাহোরের শেষ গজনবী সুলতানের প্রধানমন্ত্রী নাসর-আলাহ ইবনে মুহাম্মদ ১১৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ গ্রন্থ ফারসীতে অনুবাদ করেন।
কালিলা ওয়া দীমনা হাজার বছর ধরে যেভাবে শিল্প ও সাহিত্যগুণে পাঠকের সমাদর পেয়ে আসছে তা দেখে অনেক লেখকেরই সাধ জেগেছে জীব জন্তুর চরিত্রে বই লেখার।
যেমন আব্বাসি কবি শরিফ ইবনে হাব্বারিয়া লিখেছেন ‘আসসাদেহ ওয়াল বাগেম’। ঐতিহাসিক ইবনে আরব শাহ (মৃত ৮৮৪) জীব জন্তুর যবানে লিখেছেন ‘ফাকিহাতুল খুলাফা ওয়া মুফাকাহাতুজ জুরাফা’ [খলীফা ও প-িতদের হাস্যরস]।
অরিয়েন্টালিস্ট গবেষক গোল্ড জিহার বলে, ‘ইখওয়ানুছ ছফা’ নামটিও মূলত কালিলা ওয়া দিমনার ‘আলহামামাতুল মুতাওওয়াকাহ’ [কবুতর কাহনী] গল্প থেকে ধার করা।
এরপর বাংলা, ইংরেজি, ফারসি, উর্দু, ফ্রেঞ্চ, লাতিন, ইতালিক, স্প্যনিশ, স্লাভিক, জার্মানিক, পোলিশ, হিব্রু, সুরিয়ানিসহ পঞ্চাশেরও বেশী ভাষায় বইটির অনুবাদ করা হয়েছে।
আমাদের দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও গবেষক গোলাম সামদানী কোরাইশী বইটির ফারসি অনুবাদ ‘আনওয়ারে সুহাইলি’ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। ১৯৬৫ সালে বাংলা একাডেমী থেকে বইটি প্রকাশিত হয়।
নিচে কালিলা ও দিমনার বিখ্যাত কিছু উক্তি দেয়া হল:
● শিষ্টতার শিখরে উড্ডয়ন বড় কঠিন, কিন্তু সেখান থেকে অধঃপতন খুব সহজ। একটি ভারী পাথরকে কাঁধে তোলা কঠিন, কিন্তু ফেলে দেয়া সহজ।
● দুনিয়াটা লবণাক্ত পানির মতো, যতই পান করবে ততই তৃষ্ণা বাড়বে।
● চারটি জিনিসের মাঝে কখনো মিশ্রণ ঘটে না; দিন-রাত, পাপ-পুণ্য, আলো-আঁধার এবং ভালো-মন্দ।
● পানি যতই আগুনে গরম করো, তা আগুনকে এক নিমিশেই নিভিয়ে দেবে।
● যে বাক্যটা তুমি এখনো বলোনি, তুমি সে বাক্যের মালিক, যে বাক্যটি বলে ফেলেছো তুমি সে বাক্যটির দাস।
● প্রতিটি দহনেরই একটি দমন আছে; আগুনের জন্য যেমন পানি, বিষের জন্য দাওয়া, দুঃখের জন্য ধৈর্য, এশকের জন্য বিচ্ছেদ কিন্তু হিংসানামক দহনের কোনো দমন নেই।
● মানুষ নিজেকে ভালোবাসে তাই সে বেঁচে থাকতে চায়। আর অন্যকে ভালোবাসে কারণ সে নিজের জীবনকে আনন্দিত করতে চায়।
সহস্রাব্দ যাবৎ জনপ্রিয়তার শীর্ষ আসন দখল করে থাকা মাত্র ২০০ পৃষ্ঠার এই বইটি এখনো যারা পড়েননি, পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
©somewhere in net ltd.