নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হার না মানা হা‌রেই অা‌মি পরা‌জিত

ANIKAT KAMAL

ANIKAT KAMAL › বিস্তারিত পোস্টঃ

যৗেতুক রাে‌গরে কারণ ও প্র‌তিকার

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৮

‌ যৌতুক রো‌গের কারণ ও প্র‌তিকার
‌অ‌নিকেত কামাল




পৃ‌থিবী এ‌গি‌য়ে চল‌ছে ত‌ড়িৎ গ‌তি‌তে। প‌রিবর্ত‌নের দূরন্ত গ‌তিপ্রবা‌হে বদ‌লে যা‌চ্ছে প্রায় সব‌কিছুই। পালা বদ‌লের মঞ্চে অ‌নেক কিছুর হ‌চ্ছে রুপান্তর, হ‌চ্ছে অাধু‌নিক‌ীকরণ। অত্যাধু‌নিক সভ্যতার হাত ধ‌রে অামা‌দের অগ্রযাত্রা অব্যাহত র‌য়ে‌ছে। অামরাও অামা‌দের ব্য‌ক্তিগত, পা‌রিবা‌রিক, সামা‌জিক ও রা‌ষ্টের অবা‌ঞ্ছিত প‌রি‌বেশ, প্রথা, প‌রি‌স্থি‌তি ও সমস্যার সমাধা‌নে য‌থোপোযু‌ক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ক‌রে চ‌লে‌ছি। ‌কিন্তু অ‌নেক ক্ষে‌ত্রে যতটা প্রা‌প্তি যতটা অগ্রগ‌তি ঠিক কিছু কিছু ক্ষে‌ত্রে ততটা অপ্রা‌প্তি ততটা অবণতি যেন পাল্লা দি‌য়ে চল‌ছে। ক্ষুদ্র এই দেশ ব‌াংলা‌দেশ। পৃ‌থিবীর মান‌চি‌ত্রে বাংলা‌দেশ শব্দ‌টি লেখার জায়গা হয় না। তবুও বাংলা‌দেশ তার স্বকীয় বৈ‌শি‌ষ্ট্যে বি‌শ্বের দরবা‌রে অাপন অাসন গ্রহণ ক‌রে‌ছে। স‌ত্যিই এ প্রা‌প্তি গৌর‌বের এ প্রা‌প্তি সম্মা‌নের। লজ্জার ই‌তিহাসও যে নেই, তা‌তো নয়। তবুও অামরা অাশাবাদী। তৃতীয় বি‌শ্বের দা‌রিদ্র্য পী‌ড়িত এ দেশ অজস্র সমস্যার ভা‌রে জর্জ‌রিত। অামরা যেন অামা‌দের সৃজনশীল ম‌নোভাব, অাদর্শ মূল্য‌বোধ, ধর্মীয় চেতনা‌বোধ সব ধু‌লোয় লু‌ন্ঠিত কর‌ছি। হৃদ‌য়ের মহৎ প‌রিকল্পনাগু‌লো খোয়া‌তে ব‌সে‌ছি।

সম‌য়ের পথ প‌রিক্রমায় দুষ্টক্ষ‌তের মতই বাসা বেঁ‌ধে‌ছে যৌতুক প্রথা অামা‌দের অন্ত‌রে ও সমা‌জে। অামা‌দের শরী‌রে যেমন অসংখ্য রো‌গের প্রাদুর্ভাব ঘ‌টে তেম‌নি অামা‌দের সমাজেও র‌য়ে‌ছে অজস্র রো‌গের বিস্তার ও বিচরণ। তার ম‌ধ্যে অন্যতম হ‌চ্ছে যৌতুক রোগ। সংক্রামক ব্যা‌ধির মতই যৌতুক রোগ বি‌ভিন্ন জা‌তি ও সমা‌জের র‌ন্দ্রে র‌ন্দ্রে প্র‌বেশ ক‌রে গোটা সমাজ ব্যবস্থা‌কে ভয়ংকর বিভী‌ষিকার দি‌কে ঠে‌লে দি‌চ্ছে। যৌতুক নামক প্রথা, রোগ, বাy বিষবৃক্ষ‌কে সমাজ থে‌কে সমূ‌লে উৎপাটন কর‌তে হ‌লে যৌতু‌কের কারণ, উৎপ‌ত্তি ও বিকাশ সম্ব‌ন্ধে জ্ঞান থাকা অাবশ্যক। যৌবন‌কে তুচ্ছ জ্ঞান করাই হ‌চ্ছে যৌতুক রোগ।‌ বি‌য়ের সময় কণ্যাপ‌ক্ষের অ‌ভিভাবক ই‌চ্ছে বা অ‌নিচ্ছায় পাত্র পক্ষ‌কে যে অর্থ সম্পদ, অলংকার, অাসবাবপত্র দি‌য়ে থা‌কে তা‌কে যৌতুক ব‌লে। অার এ উপঢৌকণ প্রদা‌নের রেওয়াজ‌কে বলা হয় যৌতুক প্রথা।অাবার দেখা যায়, পাত্র‌কে চাকুরীর নিশ্চয়তা দি‌য়ে কিংবা বি‌দে‌শে পাঠা‌নোর প্র‌তিশ্রু‌তি দি‌য়ে কণ্যা‌কে পাত্রস্থ করা হয়। সেটাও যৌতু‌কের অাওতাভুক্ত। কখ‌নো দেখা যায় পাত্র‌কে প্র‌তি‌ষ্ঠিত হওয়ার উ‌দ্দে‌শ্যে কণ্যা প‌ক্ষের অ‌ভিভাবক পাত্র‌কে লেখাপড়া শেখা‌নোর যাবতীয় দা‌য়িত্ব গ্রহণ ক‌রেন বি‌নিম‌য়ে মে‌য়ে‌কে পা‌ত্রের নিকট বিবাহ বন্ধ‌নে অাবদ্ধ করান। বাস্ত‌বিক প‌ক্ষে সেটাও যৌতুক হি‌সে‌বে গণ্য হয়। কখ‌নো বা মে‌য়ের বাবা জামাই‌কে শ্বশুড় বাড়ী যাতাযা‌তের জন্য গাড়ী কি‌নে দেন অথবা মে‌য়ের সুখ শা‌ন্তি নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা বিধা‌নের জন্য বা‌ড়ি বা‌নি‌য়ে দেন সেটাও একরকম যৌতুক হি‌সে‌বে ধরা হয়।

‌ যৌতুক প্রথা অ‌তি প্রাচীন প্রথা। তদানীন্তন হিন্দু সমা‌জে কণ্যা‌কে দশ/বার বছ‌রের ম‌ধ্যে পাত্রস্থ বা বি‌য়ে দি‌তে না পার‌লে পুরুষ নরকবাসী হ‌বেন ব‌লে ভয় দেখা‌নো হ‌তো। এমন কি সমাজ চ্যূত করার বি‌ধিও ছিল। হিন্দু সমা‌জে পিতা ও ভাতার সম্প‌দে ক‌ণের অ‌ধিকার নেই বিধায় সনাতন বা হিন্দু ধ‌র্মের বি‌ধি‌ বিধান থে‌কেই যৌতুক প্রথার প্রচলন হ‌য়ে প‌ড়ে। অর্থ ছাড়া জীবন অচল সত্য কিন্তু অ‌তি‌রিক্ত অর্থ‌লিপ্সা হ‌তেই যৌতু‌কের সৃ‌ষ্টি। যৌতু‌কের সূচনা হিন্দু সম্প্রদা‌য়ের ম‌ধ্যে সূত্রপাত হ‌লেও মুস‌লিম সমা‌জের শিরায় শিরায় অাজ যৌতুক প্রথা স্থায়ী অাসন দখল ক‌রে‌ছে। যৌতুক যেন অ‌ঘো‌ষিত বিধা‌নে প‌রিণত হ‌য়ে‌ছে।

‌ যৌতু‌কের নীল দংশ‌নে দং‌শিত হ‌চ্ছে নববধু। অাগুন জ্বল‌ছে স্বামী গৃ‌হে। ভষ্ম হ‌চ্ছে সাজা‌নো গোছা‌নো ম‌নের ম‌তো সংসার। যৌতু‌কের কার‌ণে কত কুম‌ারী নারীর স্ব‌প্নের মে‌হে‌দি রঙ মু‌ছে গে‌ছে, কত অসহায় পিতা মে‌য়ে‌কে বি‌য়ে দি‌তে না পারার অক্ষমতায় অাত্নহত্যা ক‌রে‌ছে অথবা মে‌য়ে পিতার অবস্থার কথা বি‌বেচনা ক‌রে অাত্নহত্যা ক‌রে‌ছে তার স‌ঠিক কোন প‌রিসংখ্যান নেই ।প্র‌তি‌দিন প‌ত্রিকার পাতায় চোখ রাখ‌লে এর সত্যতা কতটুকু উপল‌দ্ধি করা যায়। মি‌ডিয়া কর্মী, সাংবা‌দিক, অনুসন্ধান কমী বি‌শেষজ্ঞ‌দের অগচ‌রেই থেকে যায় কত ঘটনা। যৌতুক যেন সভ্যতার ললা‌টে এঁ‌কে দি‌য়ে‌ছে কল‌ঙ্কের পদ‌চিহ্ন।

নারী চিরকালই কোমলমনা, সুশীলা। নীর‌বে নিভৃ‌ত্যে সহ্য ক‌রে শ্বশুড় বাড়ীর অমান‌বিক নির্যাতন। অত্যাচার, অনাচার, উপহাস, অবজ্ঞা, অব‌হেলা যেন তা‌দের নিত্য জীবন যাপ‌নের সঙ্গী। শা‌রি‌রিক মান‌সিক যন্ত্রণা যেন তা‌দের অদৃ‌ষ্টের লিখন। ভাব‌লে অবাক হ‌য়ে যায়!! কি অসহায় অাত্নসমর্পণ। মুখবু‌জে অাঁচ‌লের অাড়া‌লে স্রষ্টার দরবা‌রে কান্নার সান্ত্বনা বেঁ‌চে থাকার পা‌থেয়। প্র‌তিবা‌দের ভাষা যেন নারী রপ্ত কর‌তে শি‌খে‌নি।

কোম‌রে অাঁচল পেঁ‌চি‌য়ে যে নারী প্র‌তিবাদ কর‌তে পা‌রে সে হয়ত কিছুটা অ‌ধিকার অর্জন কর‌তে সক্ষম হয়। কিন্তু যে বধু সহ্য ক‌রে সে হয় যৌতু‌কের ব‌লি। কখ‌নো দেখা যায় শারী‌রিক নির্যাত‌নে যখন কোন নারী মারা যায় সেটা‌কে অাত্নহত্যার না‌মে চা‌লি‌য়ে দেওয়ার জন্য মু‌খে বিষ ঢে‌লে দেওয়া হয় অথবা সি‌লিং ফ্যা‌নের সা‌থে ঝু‌লি‌য়ে রাখা হয়। কখ‌নো বা লাশ‌টি পর্যন্ত গুম করা হয়। অাশ্চর্য এই পুরুষ শা‌সিত সমা‌জে নারীর অবস্থান। নারী যেন এখা‌নে ভো‌গের সস্তা পণ্য, নগণ্য প্রাণী। তারা পুরু‌ষের স্বাধীনতার র‌শি‌তে বাঁধা, ই‌চ্ছে অ‌নি‌চ্ছের কারাগা‌রে বন্দী। তারা পুরু‌ষের খেলার পুতুল, সংসা‌রের স্বীকৃত দাসী।অামা‌দের দে‌শে এ যাবৎ যে সকল কুমারী নারী ও গৃহবধু অাত্নহত্য‌া ক‌রে‌ছে তার শতকরা নব্বই ভাগই যৌতু‌কের কার‌ণে। যৌব‌নের মি‌স্টি মধুর বাতাস যখন একজন নারীর শরী‌রে স্পর্শ ক‌রে তখন হ‌তেই ফু‌লের মত সে মে‌য়ে‌টি বু‌কের সবুজ জ‌মি‌নে স্বামী সংসা‌রের র‌ঙিন স্বপ্ন বুন‌তে থা‌কে। কিন্তু ভা‌গ্যের নির্মম প‌রিহা‌সে স্বামীগৃ‌হে তা‌কে হ‌তে হয় দাসী, নির্যা‌তিতা নিপী‌ড়িতা গৃহবধু। চালা‌নো হয় অত্যাচা‌রের স্টীম রোলার। অাল‌তা রাঙা অাল‌তো পা‌য়ে, মে‌হেদী রাঙা কোমল হা‌তে প‌রি‌য়ে দেওয়া হয় দাসী‌ত্বের বেড়ী। স্বামী-স্ত্রী'র মধুর সম্পর্ক হ‌য়ে উ‌ঠে বেদনা বিধুর । নারীর ম‌নে নি‌র্মিত স্বপ্ন মিনার ভে‌ঙ্গে হয় খানখান। বাসর শয্যা হয় নির্যাতন শয্য। জীবন সংসার ফু‌লে ফু‌লে সমৃদ্ধ হওয়ার পূ‌র্বেই চ‌লে যে‌তে হয় অন্য জগতে। বু‌কের সমস্ত ভা‌লোবাসা উজাড় ক‌রে দি‌য়েও যখন একজন নারী চির অাপন হ‌তে পা‌রে না সংসা‌রে তখন স্বামীর স্বর্গ সংসার হয় নরকযজ্ঞ।

নারীর অপ‌রিসীম অপ‌রি‌মেয় প্রেম, প্রী‌তি, ভা‌লোবাসা, স্নেহ-মায়া মমতা সব‌কিছুই যৌতুকের মত ভয়ংকর দান‌বের নিকট তুচ্ছ। যৌতুক প্রথার নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা ও নারী নিয়াতন অাজকাল সর্বজন বি‌দিত। স্বামী বা‌ড়ির লোভী দানব‌দের লো‌ভের বা‌জেট যখন স্ত্রী তার বা‌পের বাড়ী হ‌তে অণু‌মোদন কর‌তে পা‌রে তাহ‌লে বউটা হয় খুব ভা‌লো, ঘ‌রের লক্ষ্মী। অার না পার‌লেই যত সমস্যা , যত বিপ‌ত্তি তখন বউট‌ি হয় খারাপ, অলক্ষ্মী। তার প্র‌তি‌টি কথায় লা‌গে তে‌তো, বি‌ষের ম‌তো। নিস্পাপ নারী চ‌রি‌ত্রের উপর লেপন কল‌ঙ্কের কাদা। শুরু হ‌য়ে যায় দৈ‌হিক ও মান‌সিক অকথ্য নির্যাতন নিপীড়ন। চ‌লে হত্যার চক্রান্ত, খু‌নের পাঁয়তারা। নির্যাতন নিপীড়‌নের নিত্য নতুন কৌশল উদ্ভা‌বিত হয়। কপা‌লে জো‌টে অবজ্ঞা, উপহাস অার অব‌হেলা। তিরস্কা‌রের তীক্ষ্ম ছোঁড়া তী‌রের অাঘা‌তে ক্ষত‌বিক্ষত হয় বু‌কের পাঁজর। রক্তাত হয় হৃদ‌য়ের কোমল ভূ‌মি। অা‌র্শিবা‌দের পৃ‌থিবী হ‌য়ে উ‌ঠে অ‌ভিশা‌পের দ‌লিল।
স্ব‌প্নের অাকা‌শে মেঘ জ‌মে, হয় বৃ‌ষ্টি। নি‌য়ে যায় সব ভা‌সি‌য়ে। ধী‌রে ধী‌রে ম‌ু‌ক্তির উপায় হি‌সে‌বে বে‌ছে নেয় অাত্নহত্যা।যৌতুক প্রথার বিষ‌ ক্রিয়ায় সমা‌জে সৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছে অ‌স্থিরতা, অশা‌ন্তি, ক্ষো‌ভের বারুদ। ঘট‌ছে সম্প‌র্কের অবণ‌তি। ঘৃণ্য যৌতুক প্রথা সমাজ রা‌ষ্টে বিশৃঙ্খলা সৃ‌ষ্টির পাশাপা‌শি সামা‌জিক কাঠা‌মো‌তে অাঘাত কর‌ছে। সামা‌জিক ও রাষ্ট্রীয় প্র‌তিষ্ঠানগু‌লো‌কে ছিন্ন ভিন্ন ও ধ্বংস ক‌রে দি‌চ্ছে। র‌ক্তের বন্ধন ও সামা‌জিক সম্প‌র্কে ধর‌ছে ফাটল। নারীর মৌ‌লিক মান‌বিক অ‌ধিকার হ‌চ্ছে ক্ষুন্ন। এই যৌতুক প্রথাই হ‌চ্ছে নারী নির্যাত‌নের প্রথম ধাপ। এটা অত্যন্ত অমান‌বিক ও জঘন্য প্রকৃ‌তির সামা‌জিক নিয়ম।

একক কোন কার‌ণে যৌতুক প্রথার উদ্ভব ঘ‌টে‌নি। এর জন্য বহু‌বিধ কারণ‌কে দায়ী করা যায়। যেমনঃ-

১। অাই‌নের চো‌খে নারী পুরুষ সমান মর্যদার অ‌ধিকারী হ‌লেও নারী‌কে নিম্ন সামা‌জিক মর্যাদার কার‌ণে সমা‌জে যৌতুক প্রথার বিস্তার ঘ‌টে‌ছে।

২। দা‌রিদ্রতার নিষ্ঠুর ছোবল হ‌তে মু‌ক্তির একটা মাধ্যম হি‌সে‌বে যৌতু‌কের বিকাশ ঘ‌টে‌ছে।

৩। অ‌তি‌রিক্ত সম্পদ লা‌ভের মান‌সিকতা হ‌তে যৌতু‌কের সূত্রপাত হ‌য়ে‌ছে।

৪। কণ্যার দৈ‌হিক খুঁত, অ‌ধিক বয়স, সৌন্দ‌র্য্যের বা রু‌পের অভাব প্রভৃ‌তি কার‌ণে কণ্যাপক্ষ যৌতুক দি‌য়ে বি‌য়ে‌তে রা‌জি হন।

৫। প্রকৃত শিক্ষার অা‌লো‌ক বিব‌র্জিত মান‌সিকতা যৌতু‌কের জন্য দায়ী।

৬। পা‌ত্রের বাবার ব্যবসা‌য়িক ম‌নোভাবও যৌতু‌কের প্রসা‌রে সহায়তা ক‌রে।

৭। কণ্যা সন্তা‌নের প্র‌তি পিতা মাতার অত্য‌ধিক স্নে‌হের কার‌ণে মে‌য়ের সু‌খের জন্য জামাই‌কে অর্থ সম্পদ প্রদান ক‌রে যৌতুক বৃ‌দ্ধি‌তে সহায়তা ক‌রে।

৮। কণ্যার চে‌য়ে বর বে‌শি উপযুক্ত হ‌লে মে‌য়ের অ‌ভিভাবক মোটা অং‌কের যৌতুক প্রদান ক‌রে মে‌য়ে‌কে পাত্রস্থ ক‌রে বিধায় যৌতু‌কের প্রসার ঘ‌টে।

এছাড়াও র‌য়ে‌ছে মেয়ে‌দের সামা‌জিক নিরভরতা- নিরভরতার অভাব, অ‌ভিজাত শ্রেণীভুক্ত হওয়ার বাসনা, সামা‌জিক নী‌তি, সামা‌জিক মূল্য‌বোধ, অনুকরণ প্রিয়তা, জামাই ক্র‌য়ের ম‌নোভাব, হিন্দু সমা‌জের নী‌তি ঐ‌তি‌য্যের বাড়াবা‌ড়ি ইত্যা‌দি ইত্যা‌দি।

পুঁইডাটার মতো লকল‌কি‌য়ে বে‌ড়ে উঠ‌ছে যৌতুক প্রথা এবং তা ছ‌ড়ি‌য়ে পড়‌ছে সমা‌জের সর্বস্ত‌রে। বিষাক্ত সা‌পের লালার মতই যৌতুক প্রথা দংশন কর‌ছে অামা‌দের সমাজকে অামা‌দের মূল্য‌বোধ‌কে। ধনী, গ‌রিব, উচ্চ‌বিত্ত, মধ্য‌বিত্ত, শি‌ক্ষিত-অ‌শি‌ক্ষিত কোন শাখা‌তেই এর কম‌তি নেই। শ্রেণী‌ভি‌ত্তিক যৌতু‌কের মূল্য নির্ধা‌রিত হয়। সামা‌জিক, নৈ‌তিক, মান‌বিক মূল্য‌বো‌ধের অবক্ষ‌য়ের এই যু‌গে যৌতুক প্রথা যে কলং‌কের অধ্যায় রচনা ক‌রে চ‌লে‌ছে , অদুর ভ‌বিষ্য‌তে এই প্রথার প্র‌তি‌রোধ কর‌তে না পার‌লে অামা‌দের স‌চেতন বি‌বে‌কের কবর রচনা কর‌তে হ‌বে। সৃ‌ষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হি‌সে‌বে অামা‌দের অহংকার করার অব‌শিষ্ট অার কিছুই থাক‌বে না। উপল‌দ্ধির এ সম‌য়ে নারী জা‌তির প্র‌তি অজস্র ভা‌লোবাসা, অকৃ‌ত্রিম শ্রদ্ধা ও অন্তহীন সম‌বেদনা জ্ঞাপন কর‌তে হ‌বে, ম‌নে রাখ‌তে হ‌বেঃ- যৌতুক অশা‌ন্তি ডে‌কে অা‌নে, স্বামী স্ত্রী'র মা‌ঝে ভা‌লোবাসার ঘাট‌তি অা‌নে, দাম্পত্য জীব‌নে কলহ অানয়ন ক‌রে।‌যৌতুক অার ভা‌লোবাসার মধুর মিলন একসা‌থে বাস কর‌তে পা‌রে না।

যৌতুক দেয়-‌নেয়া কোন ধ‌র্মের বিধান নয়, যৌতুক চাওয়া অার ভিক্ষা চাওয়ার মা‌ঝে কোন পার্থক্য নেই। অাত্নার বন্ধ‌নে অাত্নীয়তার সম্পর্ক তৈ‌রি হয়, যৌতু‌কের বি‌নিম‌য়ে নয়।‌ যৌতুক প‌রিবা‌রে ভাঙ্গ‌নের বাঁ‌শি বাজায়, যৌতু‌কের প‌রিণ‌তি কখ‌নো শুভ হয় না, যৌতুক কখ‌নো মান‌সিক সুখ শা‌ন্তি দি‌তে পা‌রেনা। যৌতুক চাওয়ার পূ‌র্বে ম‌নে রাখা উ‌চিত অাপ‌নিও এক সময় মে‌য়ের পিতা হ‌বেন।

যৌতুক প্রথা সামা‌জিক কুসংস্কার ব্যতীত অন্য কিছুই নয়। ক্ষয়‌রো‌গের মতই যৌতুক প্রথা অামাদের‌কে মননশীল বি‌বেক বো‌ধের অকাল মৃত্যুর দি‌কে ঠে‌লে দেয়। যৌতুক অাত্নমর্যদা‌কে ধূ‌লোয় মি‌শি‌য়ে দেয়। যৌতুক চাওয়া মা‌নে নি‌জের অক্ষমতার নির্লজ্জ ব‌হিঃপ্রকাশ। বিনাশ্র‌মে অ‌ন্যের সম্পদ পাওয়া গৌর‌বের নয় বরং লজ্জার ও ঘৃণার, অপমান ও অব‌হেলার, বঞ্চনার ও অবজ্ঞার। যৌতু‌কের বি‌নিম‌য়ে শুধু পাত্রই না, পা‌ত্রের প‌রিবার প্রত্যক্ষ প‌রোক্ষভা‌বে সবাই , পাত্রী ও পাত্রীর প‌রিবা‌রের নিকট বি‌ক্রি হ‌য়ে যায়। এর চে‌য়ে ঘৃণা, লজ্জ অার অপমা‌নের বিষয় খুব কমই অা‌ছে।

যৌতুক এক‌টি সামা‌জিক ব্যা‌ধি, এ‌টি মানবতা বি‌রোধী কুপ্রথা। এই স্বীকৃত মনুষ্য কুপ্রথা নির্মু‌লে অামরা নিম্ন লি‌খিত ব্যবস্থা গ্রহণ কর‌তে পা‌রি।‌যেমনঃ-

ক। সরকারী ও বে-সরকারীভা‌বে সম‌ন্বিত উ‌দ্যোগ গ‌ড়ে তুল‌তে পা‌রি।

খ। ১৯৮০ সা‌লের যৌতুক বি‌রোধী অাই‌নের প্র‌য়োগ ঘটা‌তে হ‌বে। প্র‌য়োজ‌নে নতুন অাইন পাস ও বাস্তবায়ন কর‌তে হ‌বে।

গ। অ‌ভিভাবক‌দের স‌চেতন হ‌তে হ‌বে।

ঘ। শি‌ক্ষিত যুব সমাজ‌কে এ‌গি‌য়ে অাস‌তে হ‌বে।

ঙ। পেপার প‌ত্রিকায় যৌতুক বি‌রোধী প্র‌তি‌বেদন ছাপা‌তে হ‌বে।

চ। সমাজ থে‌কে অ‌শিক্ষা, কু‌শিক্ষা ও অজ্ঞনতা দূর ক‌রে শিক্ষার অা‌লো ছড়া‌তে হ‌বে।

ছ। অর্থ-সম্প‌দের প্র‌তি তীব্র লোভ প‌রিহার কর‌তে হ‌বে।

জ। পাঠ্যপুস্ত‌কে যৌতুক বিষয়ক প্রবন্ধ অন্তভুক্ত কর‌তে হ‌বে।

ঝ। মাদ্রাসা, মস‌জিদ তথা ধর্মীয় প্র‌তিষ্ঠান গু‌লো‌তে হুজুর ইমাম‌দের যৌতু‌কের কুফল তু‌লে ধর‌তে হ‌বে।

ঞ। ‌যৌতুক দেওয়া নেওয়া সামা‌জিক অপরাধ সেটা জনগণ‌কে অব‌হিত কর‌তে হ‌বে।

ট। হীন যৌতুক প্রথা ব‌ন্ধের জ‌ন্যে সভা-‌সে‌মিনার, ্য কর‌তে হ‌বে।

ঠ। মান‌বিক মূল্য‌বোধ ও দৃ‌ষ্টি ভ‌ঙ্গির প‌রিবর্তন কর‌তে হ‌বে।

ড। নারী শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থা‌নের ব্যবস্থা কর‌তে হ‌বে।

ঢ। মি‌ডিয়া ও গণমাধ্য‌মের দা‌য়িত্ব স‌চেতনতা বাড়া‌তে হ‌বে।

ণ। সক‌লের সাহায্য স‌হযোগিতা অার ঐ‌ক্যের একই প্লাটফর্ম তৈ‌রি কর‌তে হ‌বে।

এছাড়াও নারী‌দের‌কে ভোগ উপ‌ভো‌গের পণ্য কিংবা দাসী না ভে‌বে অর্ধাঙ্গনী ভাব‌তে হ‌বে, নারী পুরুষ সমমর্যদার অ‌ধিকারী মনে কর‌তে হ‌বে এবং যৌতুক দেব না যৌতুক নেব না এই মন মান‌সিকতা বাস্ত‌বে রুপান্ত‌রিত কর‌তে হ‌বে। লেখক, ক‌বি, সা‌হি‌ত্যিক‌দের যৌতুক বি‌রোধ‌ী লেখা প্রকাশ কর‌তে হ‌বে~ ইত্যা‌দি ইত্যা‌দি

মানু‌ষের ম‌ধ্যে যত‌দিন সামা‌জিক, নৈ‌তিক ও মান‌বিক মূল্য‌বোধ জাগ্রত হ‌বেনা তত‌দিন সমাজ থে‌কে যৌতু‌কের ম‌তো মহামারী রোগ‌কে নির্মূল করা সম্ভব হ‌বে না। সক‌লের সাহায্য , সহ‌যে‌া‌গিতা অার সহম‌র্মিতায় যৌতু‌কের ম‌তো সমাজ স্বীকৃত মহাজঘণ্য, ‌নি‌ন্দিত, অ‌ভিশপ্ত, দৈন্যদশা গ্রস্থ সমা‌জের কলংকময় অধ্যায়‌কে চিরত‌রে বিদূ‌রিত করা সম্ভব। ভিক্ষাবৃ‌ত্তি অার যৌতুক প্রথার ম‌ধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যৌতুক প্রথার অর্থ লালসার কা‌ছে তুচ্ছ ক‌রে দি‌য়ে‌ছে নারী ম‌নের স্বাভা‌বিক অা‌বেদন, প্রে‌মের পরম পাওয়া‌কে নস্যাৎ ক‌রে‌ছে তুচ্ছ বা‌নি‌জ্যিক লেন‌দেন ক‌রে। এই যৌতুক প্রথা সৃ‌ষ্টি কর‌ছে শত্রুতা, ভে‌ঙ্গে দি‌চ্ছে পা‌রি বা‌রিক স্নে‌হের বন্ধন, সৃ‌ষ্টি কর‌ছে সামা‌জিক অশা‌ন্তি, নি‌য়ে যা‌চ্ছে অাদাল‌তে, দাঁড় করা‌চ্ছে কাঠগড়ায়। নববধূর বাসর শয্যা‌কে কর‌ছে এ‌লো‌মে‌লো, সৃ‌ষ্টি কর‌ছে নতুন নতুন ট্রা‌জেড‌ী, কলং‌কিত কর‌ছে সমাজ, দেশ ও জা‌তি‌কে। এই লজ্জাজনক এমন কি অপরাধ মূলক ঘৃণ্য নি‌ন্দিত যৌতুক প্রথার চির অবসান হোক এটাই অামা‌দের জাগ্রত বি‌বে‌কের একান্ত কামনা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:০১

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: "অাশ্চর্য এই পুরুষ শা‌সিত সমা‌জে নারীর অবস্থান" এর বিরুদ্ধে তো প্রায় ১৮৪৮- বর্তমান পর্যন্ত স্পেশাল আন্দলন চলছেই . হয়তো সফলাত হবে।

"যৌতুক এক‌টি সামা‌জিক ব্যা‌ধি, এ‌টি মানবতা বি‌রোধী কুপ্রথা। এই স্বীকৃত মনুষ্য কুপ্রথা নির্মু‌লে অামরা নিম্ন লি‌খিত ব্যবস্থা গ্রহণ কর‌তে পা‌রি"
উক্ত ব্যবস্থা কি শুধু বাংলার জন্য না কী পুরো পৃথিবীর জন্য?

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:২৬

ANIKAT KAMAL বলেছেন: প্রথ‌মেই ব্লগ ভুব‌নের সারথী হি‌সে‌বে অাপনা‌কে জানাই প‌রিশুদ্ধ ভা‌লোবাসা। অপদা‌র্থের লেখা‌কে পদার্থ বা‌নি‌য়ে মন্তব্য করায় ভীষণ প্রেরণায় সিক্ত হলাম ভা‌লো থাক‌বেন খুব ভা‌লো

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৫১

শিখণ্ডী বলেছেন: যৌতুক সমস্যা এক জটিল বিষয়। এটি যেমন পিতার কণ্যার ওপর অত্যাচার,জুলুম নিয়ে আসে- আবার অনেক সময় সামর্থ্য সম্পন্ন পিতার উপহার দেযার ইচ্ছা ফিরিয়ে দিলে সে অপমানিত হয। আমার একটাই মাত্র সন্তান - আমি খুশি হযে কিছু দিতে চাইলে যদি প্রত্যাক্ষাণ করা হযে আমি তো কষ্ট পাব।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:২৪

ANIKAT KAMAL বলেছেন:

সু-স্বাগতম অাপনা‌কে। মন্ত‌ব্যের জন্য অফুরান কৃততজ্ঞতা। ম‌নু‌ষের প্রত্যাশা অসীম । কেউ য‌দি কাউ‌কে অান্ত‌রিকতার সা‌থে উপহার দি‌তে চাই‌লে সেটা ভিন্ন কথা।
বা‌হি‌রে সৌজন্য‌বো‌ধের কার‌ণে মু‌খে মখে হয়ত বল‌বে অামার প্র‌য়োজন নেই স্রষ্টা অামা‌কে অ‌নেক দি‌য়ে‌ছেন অাস‌লে সেও মোখশ ধারী। তাহ‌লে ব‌লেন, যে সরাস‌রি চে‌য়ে নেয় সে বে‌শি অপরাধী না‌কি যে কৌশ‌লে নেয় সে বে‌শি অপরাধী

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:০২

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: এখনো কি যৌতুক প্রথা আছে? বর্তমানে তো ছেলেদের উপরেই বিশাল অংকের দেনমোহরে বোঝা চাপানো হয়।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৩২

ANIKAT KAMAL বলেছেন: খুব ভা‌লো ব‌লে‌ছেন বন্ধু বিষয়‌টি তো এ‌তো গভ‌ি‌রে ভে‌বে দে‌খিনী। ত‌বে কিন্তু দেনা পাওনার সা‌র্বিক বিচা‌রে দেন মোহর হ‌য়ে থা‌কে য‌দি সেখা‌নে ঘাপলা না থা‌কে tnx

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২২

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: এখন সম্ভবত যৌতুক প্রতা খুব একটা নেই!!!



সুন্দর পোস্ট!

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:০৪

ANIKAT KAMAL বলেছেন: বন্ধু জীব‌নের সা‌থে যেটা মি‌শে যায় সেটা নি‌য়ে মাতামা‌তি কম হয়, মন্ত‌ব্যের জন্য একমত, তবুও বল‌তে হয় র‌বি ঠাকু‌রের ভাষায় ' শেষ হ‌য়েও হইল না শেষ" শুভচ্ছা অফুরান বন্ধু

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.