নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতির খালের হাওয়া ১৩ - ভালোবাসায় বিশ্বাস করতো না যে লোকটি

০৯ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪৮



অনেক অনেক দিন আগে, পৃথিবীতে এক লোক বাস করতো। প্রাচীন পুরানের গল্পের মতো সে ছিল না কোন দেবতার অবতার, বা দেবতার পুত্র। বরং সে ছিল আমাদের মতই সাধারণ একজন মানুষ, কিন্তু তার বিশেষত্ব ছিল এই যে - সে ভালোবাসা নামে কোন মূর্ত - বিমূর্ত বস্তুর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো না। এমন না যে সে কখনো কোন রমণীর সঙ্গ লাভ করে নি। এমন নয় যে সে প্রনয়ের রাজপথে, অলিতে গলিতে হাঁটে নি কখনো মাজনুন অবস্থায়। কিন্তু সে যত মিশেছে, যত জড়িয়েছে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে, তার ভালোবাসার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হতে হতে বিশ্বাস একদম উঠে গেছে।

সে ছিল আমাদের মতই সাধারণ মানুষ, কিন্তু সে ছিল তাত্ত্বিক। জ্ঞানী। বাগ্মী। সে যা বিশ্বাস করতো, তা সে যুক্তি দিয়ে গুছিয়ে বলতে পারতো, এবং সে এমন আবেগের সঙ্গে কথা বলতো, শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনত তার কথা, এবং মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্বীকার করতে বাধ্য হতো যে, সে যা বলছে তা সঠিক।

লোকটি বলতো, ভালোবাসা স্রেফ কবিদের আবেগি মনের সৃষ্টি। বিবিধ ধর্মও আমাদের ভালোবাসার শিক্ষা দেয়, তাও দুর্বল মনের মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করবার জন্যে। ভালোবাসা বলে বাস্তবে কিছু নেই। মানুষ যুগে যুগে ভালোবাসা খুঁজেছে, ভালোবাসার জন্যে বড় বড় আত্মত্যাগ করেছে, অন্যান্যরা তাদের আত্মত্যাগ, আত্মপ্রবঞ্চনাকেই সেলিব্রেট করেছে, উৎসবের উপলক্ষ বানিয়েছে। কিন্তু ভালোবাসা কোথায়, কীভাবে খুঁজে পাওয়া যায়, তা কেউ কখনো বলতে পারে নি নির্দিষ্ট করে।

লোকটি আরও বলতো, ভালোবাসা হচ্ছে নেশার দ্রব্যের মতো। যখন কেউ এর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তার পা মাটিতে থাকে না, সে কল্পনার জগতে, সাত আসমানের ওপরে ভেসে বেড়ায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে না যে, সে ক্রমশ তার এই অনুভূতির দাসে পরিণত হচ্ছে সে, ক্রমান্বয়ে। সম্পর্কে দুজনের মধ্যে যার এই অনুভূতির চাহিদা বেশী - সে নেশাগ্রস্থের মতো আচরণ করে; যার এই চাহিদা কম, সে নেশার বস্তু সরবরাহ করে। আর এই দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার চাহিদা কম, সে পুরো সম্পর্কটাকে নিয়ন্ত্রন করে। সম্পর্কের লাগাম তার হাতে থাকে। অপরদিকে যে নেশাগ্রস্থ, যার চাহিদা বেশী, তার ভেতরে সবসময় কাজ করতে থাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। তার ভেতরে জন্ম নেয় পজেসিভনেস। 'কি হবে, যদি সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়?' - এই ভয়ে সে যার কাছ থেকে তার রেগুলার ভালোবাসার ডোজ লাভ করে, তাকে খুশী রাখার জন্যে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে থাকে। সে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করে তার পছন্দের মানুষের ইচ্ছা - অনিচ্ছার ওপর।

লোকটি, যে ভালোবাসায় বিশ্বাস করতো না, সে বলতো - ভালোবাসা হচ্ছে ভয়ের উপর ভিত্তি করে একে অপরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার অপর নাম। এই সম্পর্কে সম্মান কোথায়? ভালোবাসা কোথায়, যার খোঁজে তারা প্রাথমিকভাবে একত্রিত হয়েছিল? এতো এক চিরকাল ধরে চলতে থাকা পরস্পরের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করবার যুদ্ধ। এই প্রক্রিয়া চলতে চলতে, তরুণ প্রেমিক - প্রেমিকারা যে কখন তাদের ভালোবাসার ভ্রূণ, যা তাদের প্রাথমিকভাবে একত্রিত করেছিল, সেটাকে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে ফেলে, তারা টেরও পায় না।

তারপরেও তাদের কেউ কেউ একত্রে থাকে, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। এভাবে কারো কারো ত্রিশ বছর, কারো কারো চল্লিশ বছর, পঞ্চাশ বছর কেটে যায়। তারা হাসিমুখে বলে, আমাদের সৌভাগ্য, আমরা টিকে গিয়েছি একসঙ্গে এতোগুলো বছর। তারা টিকে যায়, কারন তাদের একাকী হয়ে যাওয়ার ভয় তাদের একসঙ্গে রাখে। তারা ভয় করে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর লোক গঞ্জনাকে। তারা ভয় করে, আলাদা হয়ে গেলে তারা নিজেরা নিজেদের কি বলে প্রবোধ দেবে, তাদের অতীতের ভুল সিদ্ধান্তের জন্যে। তারা নিজেরা নিজেদের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়াকে ভয় পায়। কিন্তু এতো ভয়ের দ্বারা টিকিয়ে রাখা এক সম্পর্ক। এতে ভালোবাসা কোথায়?

লোকটা বলতো, আমি চাই না ভালোবাসা নামের ভুয়ো কোন নেশার দ্রব্য। আমি চাই না আমার মনের লাগাম অন্যকারো হাতে তুলে দিতে।

একদিন লোকটা পার্কে হাঁটছিল। এমন সময় সে এক সুন্দরী রমণীকে পার্কের এক বেঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলো। সে কাঁদছিল। আকুল সে ক্রন্দন। লোকটা কৌতূহলের বসে তার পাশে গিয়ে বসলো, এবং জিজ্ঞেস করলো, তার কি হয়েছে।

উক্ত রমণী বললেন - আমি কাঁদছি, কারন আমি সদ্যই আবিষ্কার করেছি পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই।

জ্ঞানী মানুষটি, যে ভালোবাসায় বিশ্বাস করতো না, সে খুশী হয়ে গেল। অবশেষে একজনকে সে খুঁজে পেয়েছে, যে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ভালোবাসার অনস্তিত্বে বিশ্বাস করে। সে মহিলাটিকে অনুরোধ করলো আরও খুলে বলবার জন্যে।

উক্ত মহিলা বলে চললেন তার জীবনের দুঃখের গাঁথা। তিনি যখন সদ্য তারুণ্যে পা দিয়েছেন, তখন তিনি ভালোবাসার টানে তার প্রেমিককে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর খুব দ্রুতই দেখা যায়, তার প্রাক্তন প্রেমিক এবং বর্তমান স্বামী তার জীবনের প্রায়োরিটি পাল্টে ফেলেছে। সে তার বাইরের কাজ, তার ব্যবসা, সামাজিক পরিচয় ইত্যাদিতে এত মজে গেছে যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ঘরে দেবার মতো কোন সময় - সুযোগ আর তার হয়ে উঠছে না একদমই। ভালোবাসার মোহভঙ্গ হতে উক্ত রমণীর বেশী দেরী লাগে না। কিন্তু ততদিনে তার দুটি সন্তানের জন্ম হয়ে গেছে। তাদের পিতাকে প্রয়োজন। কাজেই তিনি নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা, চাওয়া পাওয়া - দূরে সরিয়ে রেখে সংসার করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার সন্তানেরা বড় হয়ে গেলে তারাও তাকে ছেড়ে চলে যায়, এদিকে তার স্বামীর তাকে দেয়ার মতো সময় ছিল না। ফলশ্রুতিতে এতদিন পর, আজ তিনি তার স্বামীকে চূড়ান্তভাবে ত্যাগ করে চলে এসেছেন। তার আর স্রেফ দায়িত্ব পালন করে যেতে ভালো লাগছিল না। তার ভালোবাসা দরকার ছিল। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, ভালোবাসা বলে আদৌ কিছু পৃথিবীতে নেই।

উক্ত জ্ঞানী লোক খুব সহজেই উক্ত রমণীর মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি তার কাঁধে হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিলেন - 'আপনি ঠিক বলেছেন। আমরা ভালোবাসা খুঁজি, অন্যের হাতে আমাদের মন সঁপে দিই, নিজেদের দুর্বলভাবে উপস্থাপন করি পছন্দের মানুষের সামনে, আর দিনের শেষে জবাবে পাই স্রেফ স্বার্থপরতা। আমাদের অন্তর রক্তাক্ত হয় ভালোবাসা নামক এই অস্তিত্বহীন বস্তুর খোঁজে। আমরা বারবার বারবার এক দরোজা থেকে আরেক দরোজায় ঘুরি ভিখারির মতো, কিন্তু প্রতিবারই ফল এক হয়। তার কারন, ভালোবাসা বলে আসলে কিছু নেই পৃথিবীতে।'

এই দুটি মানুষের মধ্যে আঙ্গুলের তুড়ি বাজানোর মতো , বিনা আয়াসে এক সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেদিন থেকেই। তাদের মনমানসিকতা, চিন্তাভাবনার মিল এতো বেশী ছিল যে, এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে তাদের আলাদা করে কোন চেষ্টাই করা লাগে নি। তারা একে অপরের মতামতকে শ্রদ্ধা করতো, কখনো নিজের মতামতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্যে একে অপরকে ছোট করতে চাইতো না। কোন হিংসা তাদের সম্পর্কের মধ্যে ছিল না। ছিল না কোন পজেসিভনেস। কেউ কাউকে দখলে নেয়ার প্রবৃত্তি প্রদর্শন করতো না। এভাবে দীর্ঘ শৈত্যের পর বসন্তে বেড়ে ওঠা এক দারুণ সবুজ তরুর মতো দ্রুত বেড়ে চলল তাদের সম্পর্ক। তারা একে অপরের সঙ্গের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লো, কারন তারা যখনই একসঙ্গে থাকতো, তারা প্রচুর মজা করতো, হাসিঠাট্টা করতো। একে অপরকে স্ব স্ব কাজে, চিন্তায় উৎসাহ দিত। যখন তারা একসঙ্গে থাকতো না, তারা একে অপরের অভাব বোধ করতো।

একদিন উক্ত জ্ঞানী লোকের মাথায় এক অদ্ভুত চিন্তা আসে। সে ভাবে - 'আমি কি তবে ঐ মেয়েটিকে ভালোবাসতে শুরু করেছি? কিন্তু ওর প্রতি আমার যে অনুভূতি, তা তো কবিরা তাদের কবিতায় যা বাড়িয়ে চাড়িয়ে বলে, তার থেকে একদম ভিন্ন। কারন, ওর উপর আমার কোন দায়দায়িত্ব নেই, আমিও ওর কাছে কেবল ওর সঙ্গ ভিন্ন আর কিছু চাই না। আমি চাই না ও আমার দেখভাল করুক, আমি আমার কোন ব্যার্থতার জন্যে ওকে দোষারোপ করতে আগ্রহী নই, আমার কোন নাটুকেপনা সমাধান করার দায়ভার নেই ওর কাঁধে। আমরা স্রেফ একসঙ্গে থাকতে পছন্দ করি, একে অপরের সঙ্গ পছন্দ করি। ও যেভাবে পৃথিবীকে দেখে, আমি তা শ্রদ্ধা করি, আমি ওর অনুভূতির প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। ও আমাকে জনসম্মুখে বিব্রত করে না, আমিও করি না। ও যখন অন্য কারো সঙ্গে থাকে, কথা বলে - আমি হিংসা বোধ করি না। ওর জীবনের কোন অর্জন আমাকে খাটো করে দেয় না, বরং আমি নির্মল আনন্দ লাভ করি ওর অর্জনে।

হয়তো ভালোবাসা বলে আসলেই কিছু একটা আছে, কিন্তু এটা সবাই যেভাবে ভালোবাসার বর্ণনা করে, বা ভালোবাসাকে দেখ, সেরকম কোন বিষয় বা বস্তু না।'

লোকটি উক্ত রমণীকে গিয়ে তার অনুভূতির কথা বলা মাত্রই তিনি বললেন, তিনিও তার ব্যাপারে একই অনুভূতি পোষণ করেন। কিন্তু তিনি কখনো সেটা তার সঙ্গে ভাগ করেন নি, কারন তিনি মনে করতেন, উক্ত পুরুষ ভালোবাসার অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না।

অতঃপর তারা একসঙ্গে বসবাস করা শুরু করলো - অসাধারণ এক প্রেমময় সম্পর্কে, যাতে কোন হিংসা ছিল না, পারস্পারিক চাহিদার বিষাক্ততা ছিল না, একে অপরকে ছোট করে নিজেকে বড় প্রমাণ করবার তাড়না ছিল না। একসঙ্গে, একছাদের নীচে থাকার, জীবন ভাগ করে নেয়ার ছোট ছোট বিষয়গুলি তাদের মনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে দিত। তারা একসঙ্গে খেতো, ঘুমাতো, ঘুরতে যেত, আড্ডা দিতো। তাদের মধ্যে কোন জাজমেন্টের উপস্থিতি ছিল না।

এক রাতের ঘটনা। উক্ত রমণী তখন ঘুমিয়ে আছে। আর পুরুষটি জানালার কাছে দাঁড়ানো। আকাশ ভরা নক্ষত্রপুঞ্জ। থালার মতন বিশাল এক চাঁদ। তার মন আনন্দে, কৃতজ্ঞতায় কানায় কানায় পূর্ণ। এমন সময় একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটলো। আকাশের তারাগুলির মধ্যে সবচে উজ্জ্বল, এবং সুন্দর যেটি, সেটা খুব সন্তঃপর্ণে এসে বসলো তার হাতের উপর, যেন তার আনন্দে আনন্দিত হয়ে, আনন্দকে পরিপূর্ণতা দানের উদ্দেশ্যে। তারপর ঘটলো দ্বিতীয় অলৌকিক ঘটনাটি। উক্ত ভদ্রলোক পুরো ঘটনায় এতো আনন্দ পেলেন যে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার আত্মা বের হয়ে এসে মিশে গেলো তারাটার সঙ্গে। সে তার জীবনসঙ্গীকে না জানিয়ে একা একা ঘটনাটি উপভোগ করতে রাজি হল না। সে যেই না ঘুরে তার সঙ্গীর বিছানার দিকে এগুবে, সে দেখতে পেল, তার সঙ্গী, উক্ত রমণী তার দিকেই তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ বিস্ময়ে পরিপূর্ণ।

লোকটি তার সঙ্গী রমণীর প্রতি নিজের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে তারাটি তার হাতে হাতে তুলে দিতে চাইলে তার সঙ্গী রমণী এতো বড় উপহার নেয়ার ব্যাপারে মুহূর্ত কালের জন্যে সন্দেহ আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। আর এরই ফাঁকে দুজনের হাত গলে তারাটা মাটিতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

পৃথিবী জুড়ে আজ হেঁটে বেড়ায় এক বুড়ো মানুষ, যে সবাইকে বলে বেড়ায় - ভালোবাসা বলে আসলেই কিছু নেই, কখনো ছিল না, কখনো হবে না। তবে তার আর আগের মতো বাগ্মীতা নেই। তার যুক্তির পৌনঃপুনিকতা সে হারিয়ে ফেলেছে। সে আর গুছিয়ে চিন্তা করতে পারে না। বলতে পারে না - কেন ভালোবাসা বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। কারন, সে জানে, জীবনের শেষ সম্পর্কটিতে সে যে অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল, তা আসলেই ভালোবাসা ছিল, কিন্তু সেটা সে ধরে রাখতে পারল না কেন, তা তার জানা নেই। এদিকে হাজার হাজার মাইল দূরে এক বৃদ্ধা মহিলাকে একা কুটিরে বসে অপেক্ষা করতে দেখা যায় কারো জন্যে। তার চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ থাকে, সেই স্বর্গের কথা ভেবে, যা সে রচনা করেছিল একদিন এই মর্ত্যের পৃথিবীতে, যা মুহূর্তের সন্দেহে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল, এবং আর কখনো জোড়া লাগে নি।

আকাশের তারারা আজও কথা বলে এই হতভাগ্য নরনারীকে নিয়ে, যারা কবিতার জগতের অবাস্তব ভালোবাসার প্রতি ছিল বীতিশ্রদ্ধ, এবং যারা পরে ভালোবাসাকে আবিষ্কার করেছিল ভালোবাসা যেমনটা হওয়া উচিৎ, ঠিক সেভাবে, কিন্তু তবুও তারা একত্রে থাকতে পারে নি।

উক্ত জ্ঞানী পুরুষ না জানলেও আকাশের তারারা জানে, তাদের একত্রে থাকা হয়ে ওঠে নি, কারন, পুরুষটি চেয়েছিল তার সুখের উৎসমুখকে, তার সুখের ভাণ্ডকে ভালোবাসার প্রমাণস্বরূপ তার সঙ্গী রমণীর হাতে তুলে দিতে। ঐ তারাটাই ছিল তার বিমূর্ত সুখের মূর্তরূপ, এবং সেটা সে তার সঙ্গীর হাতে তুলে দিতে চাওয়াটাই ছিল ভুল। ভালোবাসার প্রমাণ স্বরূপ কেউ কাউকে নিজের সুখের উৎস উপহার দিতে পারে না, দেয়া উচিৎ নয়। কারন যে সুখ মানুষকে আসলেই স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়, যে সুখ চিরস্থায়ী, তা কেউ কারো হাতে তুলে দিতে পারে না, তা বাহির হতে চাপিয়ে দেয়া যায় না। বাইরের উৎস থেকে আগত সুখ আদতে সুখ নয়। তারা দুজনেই সুখী ছিল পরস্পরের সঙ্গে, কারন তাদের অভ্যন্তর থেকে সুখ উৎসারিত হচ্ছিল এই সম্পর্কে। কিন্তু যে মুহূর্তে লোকটি তার সঙ্গী নারীকে তার সুখের দায়ভার নেয়ার রেসপন্সিবিলিটি চাপিয়ে দিতে চাইল, তখনই মহিলাটি পুরো ঘটনার গুরুদায়িত্ব অনুধাবন করে তার হাত থেকে তারাটা ফেলে দিলো অসচেতনতা, সন্দেহ, আর ভীতির কারনে।

তারারা বলে, একজন মানুষ কখনোই আরেকজন মানুষকে সুখী করতে পারে না, কারন তার পক্ষে কখনো জানা সম্ভব নয় যে তার পছন্দের মানুষটি সুখী হবে কিসে। মানুষ তো নিজেই জানে না যে সে কিসে সুখী।

যদি মানুষ তার সুখের উৎস হিসেবে অপর একজন মানুষকে বেছে নেয়, তবে আজ হোক অথবা কাল, সে কষ্ট পাবেই। যদি মানুষ তার সুখের উৎস অন্যকারো হাতে তুলে দেয়, তবে সে কখনো না কখনো তা নষ্ট করে ফেলবে, ভেঙ্গে ফেলবে, হারিয়ে ফেলবে, বা নিজেই উধাও হয়ে যাবে।

মানুষের সম্পর্কে আনন্দের উৎস হওয়া উচিৎ অন্তর্মুখী। তারা একে অন্যের কাছে, মাঝে সুখ খোঁজার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের ওপর অন্যায় অন্যায্য দাবী চাপিয়ে দেয় বলেই তারা কখনো প্রকৃত অর্থে সুখী হতে পারে না।

(মেসোঅ্যামেরিকান/ টোলটেক উইজডম অবলম্বনে গল্পের নির্মাণ আমার। ছবিসুত্রঃ ফাইন আর্ট অ্যামেরিকা ওয়েবপেইজ। )

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:০২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: যে যুগ এখন সারা দুনিয়া মানুষের হাতের মুঠে দিলেও বলবে আরো চাই । এই চাই চাই আর খাই খাই এর কারণে সুখ দেওয়া সম্ভব নয়।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: জনাব, প্রাচীন কালের সব গল্প আমাদের ভুলে যেতে হবে। এই আধুনিক যুগে এসেও প্রাচীনকাল নিয়ে পড়ে থাকলে- সামনে এগিয়ে যাবে কিভাবে বিশ্ব?

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার লেখাগুলো কোথায়ও যাচ্ছে না, পড়ে সময় নষ্ট হয়।

৪| ১২ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:০১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: একজন মানুষ কখনোই আরেকজন মানুষকে সুখী করতে পারে না, কারন তার পক্ষে কখনো জানা সম্ভব নয় যে তার পছন্দের মানুষটি সুখী হবে কিসে। মানুষ তো নিজেই জানে না যে সে কিসে সুখী।

১২ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:০৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: মন্তব্যে ধন্যবাদ আপা! : )

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.